আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নূরুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পূণর্মিলনী-২০১১ ইং

সূদুর অতীতের পানে চেয়ে বেদনার গান গাওয়া
গত ১৮-০৩-২০১১ ইং রোজ শুক্রবার নুরুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল পূণর্মিলনী-২০১১ ইং । অনুষ্ঠানটি শ্লোগান ছিল-''আমাদের স্কুলকে ভালবাসি, স্কুলকে সমৃদ্ধ করি, স্কুলকে উপস্থাপন করি। '' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এম. শাহনেওয়াজ আলী- ডীন বাণিজ্য অনুষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চেয়াম্যান, রাকাব; বিশেষ অতিথি : প্রফেসর মুহঃ নুরুন-নবী চৌধুরী- অধ্যক্ষ (অবঃ) কারমাইকেল কলেজ, রংপুর। এই অনুষ্ঠানের দিক নিদের্শনা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সভাপতি ও শক্তি ইনজিনীয়ারিং লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ. মো. মু. নুরুল আনাম। সদা হাসোজ্জ্বল এই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিটি সুদূর ঢাকা থেকে স্কুলটিকে পরিচালনা করছেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুধীজনের ভাষ্যানুযায়ী স্কুলটি খুব ভাল চলছে।

অনুষ্ঠানটির মুল উপস্থাপনায় ছিলেন আমাদের সকলের পূজনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ মোসলেহউদ্দীন-এর সুপ্রতিষ্ঠিত ছেলে সালাহ্‌উদ্দীন আহেমদ। আমি ১৯৯২ ইং সালে এই প্রতিষ্ঠান হতে এস.এস.সি. পাস করি। আমরা ভাই-বোনরা সকলেই এই স্কুল থেকে পড়ালেখা করি। আমার বাবাও এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। আমাদের গোটা পরিবার এই স্কুল থেকে শিক্ষা অর্জন করে।

বলা চলে স্কুলটি আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের মতো। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলটি দক্ষিণে ২ কি.মি. দূর হত। আমরা হেঁটে হেঁটে আমাদের গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে স্কুলে যেতাম। এখানে একটি বৃহৎ রেলের পরিত্যক্ত লোহার স্টোরেজ ছিল। রেলের সব ভাঙ্গা যন্ত্রাংশ এখানে এনে জমা রাখা হত।

আমাদের স্কুলের রাস্তাটি ছিল সেই স্টোরেজের মধ্য দিয়ে। পথ দিয়ে যেতে যেতে দেখতাম অদ্ভুত অদ্ভুত সব নাম না জানা যন্ত্রাংশ। সেখানে খেলনার মত গোল, চ্যাপ্টা, চারকোনা, ঠোটওয়ালা চাকতি পাওয়া যেত। আমাদের মত গ্রামের ছেলেদের খেলনার রসদ ছিল সেগুলো। স্টোরেজ পেরিয়ে পথের দুধারে পড়তো বিস্তৃর্ণ আখের খেত।

মাঝে মাঝে একাকী যেতে খু-উ-ব ভয় করত। সুনসুন নিরব সেই আখ ক্ষেতের মাঝে ঠায় আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে ছিল একটি লম্বা খেজুর গাছ। আর সেই খেজুর গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে বাসা বাধত বাবুই পাখি। তাদের কলকাকলিতে পথটি কিছুটা সরব থাকতো। রোদ-ঝড়, বৃষ্টি-বাদল মাথায় নিয়ে আমরা পথ ভেঙ্গে স্কুলে পৌঁছতাম।

সেই সময় স্কুলটি দিনাজপুর জেলার মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুব নাম ছিল। এর মূলে ছিল প্রতিষ্ঠানটির কঠোর অনুশাসন ও নিয়ম-শৃংখলা। স্কুলটি প্রথমের দিকে একটি সিনিয়র মাদ্রাসা হিসেবে পরিচালিত হত এবং এখান থেকে শিক্ষাগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের এবং দেশের বাইরে নিজ নিজ অবস্থানে জাজ্বল্যমান কৃতি ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁরা তাঁদের বক্তৃতায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকেই মনে করেন এই পুণর্মিলন অনুষ্ঠান প্রতি ০৩ বছর অন্তর অন্তর হলে ভাল হয়।

আবার কারো কারো মত ১০ বছর পর। সে যাই হোক প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সুধীজন তাঁরা তাঁদের সময় স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্মৃতি চারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা তা বলতে পারেননি। অনুষ্ঠানে স্কুল নিয়ে সবার কাছে মতামত চাওয়া হয়। অনেকেই অনেক সুন্দর সুন্দর প্রস্তাবনা ও মতামত উপস্থাপন করেন। আমি মাননীয় সভাপতি মহোদয়ের নিকট আমার প্রস্তাবনা দিয়েছি- ''ইন্টারনটের অসীম দুনিয়ায় আমারদের প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র একটি অস্তিত্ব থাকা আমার মনে হয় বাতুলতা হবে না ।

অর্থা্ৎ একটি ওয়েব-সাইট থাকলে মন্দ হতো না। এখন আর ওয়েব-সাইট পরিচালনা করাও তেমন ব্যয়-বহুল নয় (স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র রাজশাহী ইউনিভার্সিটির প্রফেসর.এঁর প্রস্তাবনায় স্কুলে একটি আইসিটি নির্ভর কম্পিউটার ল্যাবের কথা বলেছেন)। প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের আক্ষেপ তাঁরা আবেগ-আপ্লুত হয়ে স্মৃতিচারণ করতে পারলেন না। আমার মনে হয় ওয়েব সাইটে ব্লগিং-এর একটি বিষয় থাকলে পুরাতন ছাত্র-ছাত্রীরা রেজিস্ট্রেশন করে প্রতিষ্ঠান নিয়ে তাঁরা তাঁদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন এবং অন্য রেজিস্ট্রেশনকৃত ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে মন্তব্য প্রকাশ করতে পারবেন; শুভকামনা জানাতে পারবেন। আর ওয়েবসাইটে এ্যালামনাইয়ের একটি বিষয় থাকতে পারে।

যাতে পাশ করা সব ছাত্র-ছাত্রী সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে তাঁদের অবস্থান, বর্তমান পজেশান, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ফোন নাম্বার ... ইত্যাদি সব ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় যে কেউ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। আমার মনে হয় তিন বছর বা দশ বছর পর পুণর্মিলনী কেন? যে কেউ ইচ্ছা করলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই সবার সঙ্গে পুণর্মিলিত হতে পারে। যাই হোক অনুষ্ঠানে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের দেখে খুব ভাল লাগলো। ক্লাশ কক্ষে যাঁদের দুর্দান্ত-ব্যক্তিত্ব-সম্পন্ন দাপটে এবং প্রজ্ঞাময় অভিব্যক্তিতে কোন ছাত্র-ছাত্রীই টু শব্দ করতে পারতোনা।

তাঁদের অনেকেই আজ এরই মধ্যে অবসর নিয়েছেন আর কেউবা অবসর নেয়ার পথে। আমাদের যে শিক্ষকগণ দীক্ষা দিয়ে আদর্শ পথে পরিচালিত হবার পথ নির্দেশনা দিয়েছেন; সেই সকল গুণী শিক্ষকগণের চরণে স্বশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন করে আমার এই লেখা উৎসর্গ করলাম। দোয়া করবেন আমি যেন ভাল থাকতে পারি। আমরা সকলেই যেন ভাল থাকতে পারি। লক্ষ প্রাণের মূল্যে অর্জিত এই মা মার্তৃকার দেশ যেন ভাল থাকে; বিজয়ের মাসে এই সুভকামনা রইল---" দেশ তুমি ভালো থেকো; ভাল থেকো মা!"
 



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.