আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"নামাজ আমার হইলো না আদায় রে আল্লাহ্"...দেশের বিভিন্ন মসজিদের মৌলভিগণের কাছে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।

গেদু চাচার খোলা চিঠি।

শ্রদ্ধেয় মৌলভি বৃন্দ, আস্ সালামু ওয়ালাইকুম। আশা করব আল্লাহ্ পাকের আশেষ কৃপায় আপনারা ভাল আছেন। আপনারা ব্যাস্ত মানুষ...সারা দিন আল্লাহ্ পাকের নানা রকম বাণী সমাজের বিভিন্ন মুসুল্লিদের কাছে পৌছে দিতে আপনাদের সময় চলে যায়...আর সাথে সাথে নামাজকালাম এবং সামাজিক অনেক কাজ কর্মতো আছেই। জনাবেরা,আপনারদের কাছে এই দীন দরিদ্র আর অশিক্ষিত গেদু মিয়া আজকে কিছু দুঃখ প্রকাশ করবে...আশা করবো আপনারা পুরা ব্যাপারটা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।

মাননীয় মৌলভি বৃন্দ,আমি নিতান্ত অসুস্থ একজন ব্যাক্তি...যে কিনা যে কোন দিন আল্লাহ পাকের ইশারার অপেক্ষায় আছি। আমি নানাবিধ ওষুধ সেবন করে ঘুমাই...তাই ভোর বেলার আজানই আমাকে জাগানোর জন্যে একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বাবাজিরা...মাঝে মাঝে কিছু কিছু মসজিদ দিয়ে যে আজান দেওয়া হয় তা শুনলে ঘুম আমাকে আরো বেশি বিছানায় টেনে নিয়ে যায়। কিছু কিছু মুয়াজ্জিন বা মৌলভি বৃন্দ এমন ভাবে আজান দেন যে মনে হয় তাদের জিবন বের হয়ে যাচ্ছে...তাদের কেউ কেউ মনে হয় পৃথিবী থেকে আজান নামক বস্তু উঠে গেলে ভাল হতো। তারা আজান দিতে দিতে একপ্রস্থ ঘুমিয়ে নেন।

বাবাজি রা,ইসলাম ধর্ম কি এত সোজা জিনিষ...যে আপনারা যেমন করে পালন করবেন তেমনি হবে?কবি কায়কোবাদ আপনাদের এই ধরনের দায়সারা গোছের আজান শুনলে তার বিখ্যাত কবিতা "আজান" তুলে নিতেন। বাবাজিরা,দেশের তরুণ সমাজকে আমরা মাঝে মাঝে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে দেই...তারা খারাপের পথে চলে যাচ্ছে,তারা আজেবাজে ছবি নাকি দেখে...বাপ মা কে মানতে চায়না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা তরুণদের কেমন সামাজিক পরিবেশ দিচ্ছি?তাদের কে ধর্মীয় বিধিগুলা বুঝাতে গেলেতো...সাথে সাথে তারা যাদের পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ কালাম পড়বে তাদের ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা থাকতে হবে। শিক্ষক যদি ভাল না হয় তাহলে ছাত্র-ছাত্রীতো ফাযলামী করবেই। আমার নাতী হুরমত কে সকালে নামাজে ডাকতে গেলে সে বলে দেখ দাদা...মুয়াজ্জিনি ঘুমায় ঘুমায় আজান দিচ্ছে...আমাকে কেন ডাকছো?।

বাবাজি রা, হযরত বেলাল (রাঃ) যখন আজান দিতেন তখন নাকি দু্র দুরান্তের মানুষ তার আজানের ধ্বনি শুনে ছুটে চলে আসতো। আমার প্রশ্ন হলো তখন কি মাইক আবিস্কার হয়েছিলো?অথচ মাইক আবিস্কার আরও কত কি ভাল ভাল শব্দ যন্ত্র আবিস্কারের পরও আমরা চালকের অনিয়ন্ত্রিত চালনার কারণে মন থেকে ইসলামের প্রতি আসল টান টা হারিয়ে ফেলছি। তাই আপনারা আশা করব এই গুরুত্বপুর্ন ব্যাপারটা আপনাদের মাথায় নিবেন। যোহর ওয়াক্ত এর নামাজে যেতে হবে...ধীরে ধীরে মসজিদের দিকে যাচ্ছি...প্রায় পৌছে গেছি ঠিক এই সময় মসজিদ লাগোয়া চারপাশ ঘেরা হুজুরের বাসা থেকে এক মহিলা আর বাঁচ্চার বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার...দৌড়ে যেয়ে দেখি বাসা থেকে আগুনের ধোঁয়া...কিন্তু বাসা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। হুজুর বাড়ির বাইরে গেছেন...কখন আসবেন ঠিক নেই অতঃপর বাসার তালা ভেঙ্গে তাদের উদ্ধার করা হলো।

ব্যাতিক্রম এই ঘটনা কিন্তু আমার মনটাই ভেঙ্গে গেল...এক জনের মানবিকতা না থাকলে তার পেছনে দাঁড়িয়ে আর নামাজ পড়া যায়না। শুক্রবার...জুম্মার ওয়াক্ত। হুজুর সাহেব একটানা খুব দ্রুত আরবিতে খুৎবা দিচ্ছেন যার বুঝতেছিনা কিছুই...এক পর্যায় তিনি ইশারায় মুয়াজ্জিন কে দান বাক্স সবার কাছে দিয়ে দিতে বল্লেন...কাজ না হওয়াতে আস্তে করে মাইকে বল্লেন "দান বাক্স"...শুরু হয়ে গেল দান পর্ব যা প্রতি শুক্রবারের একই চিত্র। দান গ্রহন শেষ হলে এবার হুজুর বল্লেন আমাদের মসজিদের বিদ্যুৎ বিল বাকি হয়েছে...সাথে সাথে পেছন থেকে মসজিদ কমিটির বিপক্ষের লোকজন চেচামেচি শুরু করলেন..."কোথায় গেল টাকা","কেন বিদ্যুৎ বিল শোধ হলনা",...যাহোক শেষ হয়েছিল সেই তর্ক বিতর্ক...ততক্ষনে নামাজের প্রতি মুল আগ্রহটা হারিয়ে গেছে। মাননীয় হুজুররা,খুৎবা যদি আমরা বুঝতেই না পারি তাহলে তা বয়ান করে কি লাভ?আর এভাবে দ্রুত না পড়ে ধীরে ধীরে সুন্দর ও পরিস্কার ভাবে যাতে সবাই বুঝতে পারে এমন ভাবে পড়লে হয়না?আর দান পর্ব বা মসজিদের জরুরি হিসাব কিতাব নামাজের পরে বল্লেই আমার মতে ভাল...কারণ যারা অংশগ্রহন করবে তারা থাকবেই অযথা নামাজের পরিবশটা নষ্ট করে কি লাভ? কুরবাণী ঈদ...যেদিন আবার জুম্মার বারও ছিল...সবাই বসে আছি কিন্তু যিনি আমাদের নামাজ পড়াবেন উনার দেখা নেই।

আর মুয়াজ্জিন থাকলেও তিনি নামাজটা চালায় নিতে পারেন...কিন্তু সেও নেই। অতঃপর কি আর করা...আমাদের মধ্যে থেকে একজন নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষ হলে বের হয়ে দেখি হুজুর আর মুয়াজ্জিন সারা পাঞ্জাবিতে রক্ত আর হাতে ছুরি নিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলছেন কুরবাণী জবাই দিতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছেন...কিছু বলার প্রয়োজন দেখলাম না। মাননীয় হুজুর বৃন্দ,উপরে যা লিখলাম তা হয়ত দেশের সামগ্রীক চিত্র না কিন্তু এটা আমাদের সমাজের অংশ যা কোথাও বেশি বা কোথাও কম। আমরা মনের থেকে শ্রদ্ধা নিয়ে নামাজ পড়তে চাই যেটা আপনারাই আমাদের মধ্যে বপন করে দেবেন।

আশা করব এই অধম আর অশিক্ষিত গেদু মিয়ার চিঠি আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ্ পাক আপনাদের হায়াৎ দিন। আপনাদের, গেদু মিয়া। ১২-০৩-২০১১ "নামাজ আমার হইলো না আদায় রে আল্লাহ্"...দেশের বিভিন্ন মসজিদের মৌলভিগণের কাছে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.