আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নো ম্যান্স ল্যান্ডের পরী কে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।

আমার বলার কিছু নেই।

মা ফেলানি, তোকে লিখব লিখব করে লেখা হয়ে ওঠে না। কি লিখব বল?লিখব কেমন আছিস?স্বর্গে তোকে নতুন জামা দিয়েছে কিনা?কি কি খাবার ওখানে তোকে দেয়?আমি জানি আমার এই চিঠিটা তোর হাতে পৌছালে অভিমানে তুই কেঁদে দিবি...বাংলাদেশ থেকে এসেছে বুঝলে তুই তোর মা এর কাছে ছুটে আসতে চাইবি। না মা এমনটা করিস না;ছোট্ট ফেলানি তোকে হারিয়ে আমরা এমনি অনেক লজ্জা আর কষ্টের মধ্যে আছি...আর যদি এমন করিস তাহলে আমাদের কষ্ট আবারও বেড়ে যাবে। ফেলানি,তুই হয়ত দেশের সেরা অর্থনীতিবিদের মত রেমিটেন্স কি জিনিস জানিস না,জানিস না এটা কিভাবে আসে...কিই বা তার ব্যবহার? আমি কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম তুইও আমাদের কিছুটা রেমিটেন্স দিয়েছিস...কারণ মা-বোন রেখে তোকেও সুদুর ভারতের কোথাও জিবনযাপন করতে হতো।

তুই তো আর আকাশ পথে ভারতের শিমলায় বেড়াতে যাসনি...যে আরামে ফাইভ ষ্টার হোটেলের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে খাওয়ার সুযোগ ছিল। তোকে তোর বাবার সাথে যেতে হয়েছে মই দিয়ে পার হয়ে...যা আমাদের অবাক করে দেয়। ফেলানি তুই কি জানার সুযোগ পেয়েছিলি কখনও ভারতের সাথে আমাদের কি দহরম মহরম খাতির?আহারে!!!ঐ বিএসএফ আগে জানলে হয়ত তোকে নিজেই পার করে দিত পরপারে পাঠানোর আগে। তুই কাঁদিস না মা,তোর মত হাজারটা বড় ভাই মিশর সীমান্তে এখন রাত কাটাচ্ছে...কেউ জানেনা তারা কবে দেশে ফিরবে। টাকার মায়া ভুলে তোর পাঁচটা বড় ভাই জাহাজে উঠতে চেয়েছিল...পারেনি।

আমরা জানিনা ওদের লাশ দেশে এসেছে কিনা...ওদের মায়েরা ওদের বুকে লূটে পরে কাঁদতে পারছে কিনা...ওদের বাবারা ছেলের মস্তবড় ভারি লাশটা এক বুক ব্যাথা নিয়ে বহন করতে পারছে কিনা...দিতে পারছে কিনা কবরে এক মুঠ মাটি। মা ফেলানি,তোকে তোর লাল জামাটায় খুব মানায়ছিলরে !!!!ঠিক যেন লাল টুকটুকে একটা পাখি...যে অকালে ঘর বাঁধার স্বপ্নে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে আসতে চেয়েছিল...স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে আমাদের পরমাত্মীয় প্রতিবেশির বূলেট। ফেলানি, তুই বোধহয় আমার কোন গল্পে পড়া নায়িকার ছোট বেলার রুপ...যার চোখেমুখে দুষ্টামির আভা খেলত...অস্পষ্ট তোকে দেখে মনে হল আগের বারে চটপট পার হয়ে যাওয়া তুই মৃত্যুর যন্ত্রনার বদলে আটকে যাওয়া পোষাক খুলতেই বেশি ব্যাস্ত ছিলি। ফেলানি,তোকে আমরা তোর দুরন্ত কৈশর দিতে পারবো না,দিতে পারবনা স্কুলে যাবার জন্যে উৎসাহ...লাল ফিতা চুরি মালা তো নাইই। তোর বাল্যবিবাহের কথা এখন আর বলব না...যদি সেটাও দিতে পারতাম...হয়ত দরিদ্র,অপুষ্টিতে ভোগা ফেলানির কোল আলো করে নতুন কেউ আসত।

আচ্ছা ফেলানি আমরা কি তোকে কিছুই দিতে পারিনি?ভেবে দেখত একটু...বেঁচে থাকলে হয়ত তুই বলতি বেশি বাহানা না করে বল কি দিছো?...হ্যাঁ আমরা তোকে একটা নতুন পরিচয় দিচ্ছি...তুই আমাদের অন্য গ্রহের ছোট্ট পরী...আমাদের দেশের কেউ না...আমাদের কেউ হলে নির্লজ্জের মত ওদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যে বসে থাকেতে হত না। আমাদের না বলেই তোর মত একটা লাল নীল পরী অভিমান করে নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকেই আবার চলে গেছে। ফেলানি, তোর খুব কষ্ট হয়েছিলো তাই না মা?...তীব্র ব্যাথা নিয়ে কাঁটাতার থেকে নিজেকে ছুটাতে?অনেকক্ষণ মাথা নিচে দিয়ে ঝুলে থাকাতে?...। মা রে,এদেশে আমার তোর মত দীন দরিদ্র মানুষের অকারণ মৃত্যুও খারাপ...কারণ আইন কানুন আমাদের বেলাতেই কড়া। ছোট্ট পরী তোকে হয়ত কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছিল...সুরত হাল এর জন্যে...তারপর আবার সেলাই দিয়েছে।

এ যেন মাটির পুতুল ভেঙ্গে তাকে আবার জুড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। বেঁচে থাকতে আমরা তোকে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের মত মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা দিতে পারিনি কিন্তু মরে কেন গেলি সেটা জানতে আইন মেনে ফেলা হলো ঠিকই। ভাল থাকিস মা। বেহেস্তের ডাক্তাররা আমাদের ডাক্তারদের মত টাকার অভাবে থাকেনা তাই ওদের তোর সমস্যার কথা ঠিক মত খুলে বলিস। পারলে আমাকে স্বপ্নে চিঠি দিস...দিস তোর মা কেও জানিসতো তুই এখনো ফিরে আসতে পারিস এই আশায় দরজায দাঁড়িয়ে থাকে সজল আখিতে।

আজকে রাখি মা,তোর হেনা আপাকে লিখতে হবেযে...আর তুই এবং হেনা একই জায়গায় থাকার চেষ্টা করিস...তোদের হোষ্টেল সুপার কে বলে। পারলে সিমি,ইয়াস্মিন কে খুঁজে দেখার চেষ্টা করিস। ইতি, তোর গেদু চাচা, ১০-০৩-২০১১ ইং। নো ম্যান্স ল্যান্ডের পরী কে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।