আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডঃ মুঃ ইউনুস কে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।

আমার বলার কিছু নেই।

স্নেহের ইউনুস, আশা করি ভাল আছ। পত্রিকায় পড়লাম সামনেই তোমার ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে থাকা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের রীট আবেদনের শুনানি। অবশ্য আমার লেখা প্রকাশ হবার আগেই তোমার রীট আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছে...এবং তুমি আইনি লড়াইয়ে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছো। আশা করব তাতে তোমার আশার প্রতিফলন ঘটবে।

বাবাজি, কিছু বিষয় নিয়ে তোমাকে চিঠি লেখা। পত্রিকায় পড়লাম আদালতে তোমার আইনজীবি রোকন উদ্দিন মাহমুদ সাহেব বলেছেন “এক সময় আমাদের দেশের পাসপোর্ট বাইরের কোন দেশ দেখলে ছুড়ে ফেলে দিতো...আর এখন তোমার নোবেলে বিজয় আর পরিচয়ের কারনে তা করা হয়না’’। বাবাজি,তোমার আইনজীবি কি কথাটা ঠিক বল্লেন?দেশের শীর্ষ স্থানীয় একজন আইনজীবি হয়ে উনি আমাদের দেশটাকে কতটুকু শ্রদ্ধা দেখালেন?বাবাজি,নোবেল পেয়েছো তা আমাদের দেশের জন্যে র্গবের ব্যাপার কিন্তু তোমার আইনজীবি যদি উল্টা বলেন দেশের আগে তোমাকেই চেনে তাহলে শুনতে এবং দেখতে খারাপই লাগে। বাবাজি,তুমি,তোমার পরিচয়,তোমার কর্মকান্ডের প্রসার সব বাংলাদেশকে ঘিরেই। বাংলাদেশেই তোমার স্বপ্নের শুরু...এবং এখানেই তোমার সেরা অর্জন।

বাবাজি,সময় পাল্টেছে...আমাদের সময়ে আমরা পরিক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলে দৌড়ে এসে বাবা মাকে সালাম করতাম,তারপর তাদের পায়ের কাছে বসে থাকতাম...যতক্ষণ না তারা রেজাল্ট দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করবে আর এখন আমরা অর্জনটা হয়ে গেলে বলি আমার বাপ মা ক্লাস ফোর পাশ ছিলো...আর আমি পিএইচডি ডিগ্রীধারী। বাবারে,আমাদের দেশটা কবে কোন সময় কি ছিলো তা প্রকাশ করা তোমার দায়িত্ব না...তাকে আরও গর্বের অংশীদার করাটাই তোমার দায়িত্ব। বাবাজি,নষ্টা মা এর ছেলে যদি সমাজের উঁচু আসনে চলে যায় তাহলে সে তার মাকে সমাজের কটু কথার হাত থেকে বাঁচায়;বলে বেরায় না তার মা নষ্টা ছিলো। বাবাজি, তোমার ভাষ্যমতে তোমাকে অন্যায় ভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের শীর্ষ পদ থেকে আর সে কারনেই তুমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছো...খুবই ভাল কথা। তা বাবাজি,তোমার আইনজীবি রোকন সাহেব বেশ কটাক্ষ করে দেশের চলমান বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিষদগার করেছেন...উনি বলেছেন আট দিনেও যেখানে রীট হয়নি সেখানে ১৫ দিনে হবেনা।

বাবারে,আমার প্রশ্ন হলো আস্থাই যদি না থাকল তাহলে গেলে কেন আইনের দরজায়?দেশের চলমান বিচার ব্যবস্থাকে বিশ্বের সামনে আরও ছোট করতে?তোমার আইনজীবি যদি দেশপ্রামিকই হতেন তবে তিনি চোর বাটপারের হয়ে আইনের লড়াইয়ে নামতেন না। আমি চোরের পক্ষে নেমে তাকে জেল থেকে বের করব আবার কারো পক্ষে নেমে বলব দেশে আইন নেই তা কেন বাবা?আর দেশের সম্মানিত নাগরিকরা যদি দেশের আইন কে এভাবে খাটো করে তাহলে আর লোকজনের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা থাকবে কিভাবে? আসলে যারা আইনের চর্চা করতেছে তারাই দুর্নিতীতে জর্জরিত। ফখরুদ্দিনের সময় দেখতাম এক শ্রেণীর আইনজীবি একই সাথে দুই দলের নেত্রীর পক্ষে নেমে দেশের গণতেন্ত্রর কথা বলছেন আর ফখরুদ্দিনের পিন্ডি চটকাচ্ছেন...আর এখন তারাই আবার দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিষদগার করছেন তাহলে এক মুখে দুই কথা হয়ে গেল না?আইন আর আইন নেই...আইন হয়ে গেছে ব্যাবসা। বাবাজি,খুব ভাললাগে পত্রিকায় আমেরিকা বা জাপানের শীর্ষস্থানীয় কারো মুখে যখন তোমার নাম শুনি। কিন্তু বাবাজি একটা ব্যাপারে আমি রাগ না করে পারলাম না আর তা হলো দেশের ভেতরের ব্যাপার নিয়ে কেন তুমি হিলারীর সাথে কথা বলবা?সব ব্যাপারে যদি হিলারী নাক গলান তাহলে আমাদের অস্তিত্ব কোথায় থাকবে? আর এতে তোমার ব্যাক্তিত্বের ভেতরে কি দুর্বলতা প্রকাশ পায় না?একটা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থান ধরে রাখার জন্যে একটা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করা মানে কি নিজ দেশের খেয়ে বাইরের দেশের পা ধরা না?আজকে জেমস্ এফ মরিয়ার্টি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আমার প্রশ্ন হলো কেন?...আমার দেশের কেউ কি উইকিলিক্সের কর্নধারের বিচার কেমন হচ্ছে তা জানতে যাচ্ছে বা পারছে?আমাদের দিপু মা কি তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে?আসলে মুল ব্যাপার হলো আমরাই তাদের কে সেই সুযোগটা করে দিচ্ছি আর এতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আরও অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। তাই বাবাজি তোমাকে অনুরোধ আমাদের পেঁজকিতে ফেলবে না দয়া করে...তোমার কিছু হলে আমেরিকা দেখবে কিন্তু আমাদের কিছু হলে আমরা কি করব?বাবারে...অনেকদিন আগে আমার এক ভাবি রাগ করে কাকে জানি বলছিলেন,"ভাত খাস ভাতারের আর গীত গাচ্ছিস পড়শীর"...তাই বাবাজি একটা ছোট স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ কে ছোট করোনা। বাবাজি,আবারও আসি আইনজ়ীবি ব্যারিষ্টার রোকন সাহেব এর একটা কথাতে...উনি বলেছেন,“এরপর কেউ নোবেল পেলে আর বাংলাদেশে আসবেননা”। তারমানে কি এই দাড়াল নোবেল পেলেই সে হেনস্তা হবে?তোমার বিরুদ্ধে ওঠা সরকারের অভিযোগ কি নোবেল অর্জন?নাকি তোমার প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়?আর কিছু হলেই দেশে আসব না...এটা কেমন কথা?মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইব্রাহিম কি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন?অথবা মায়ানমারের অং সান সুচি?বাবাজি,নোবেল কারা পায় বা কিভাবে পায় তা বলে আর বিতর্ক উস্কে দিব না...শুধু একটা অনুরোধ,দেশকে যদি ভালবাসই তাহলে ধৈর্য্য ধরে থাক...দেশবাসি তোমার সাথেই আছে। আর দেশবাসি সবার আগে চিনে তুমি বাংলাদেশি তাই সব ক্ষেত্রে নোবেল কে সামনে আনবে বা।

ছোট একটা ঘটনা বলে আমার চিঠির আজকের কিস্তির সমাপ্তি টানব। একটা ছবি দেখেছিলাম, ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’...তাতে সিনেমার নায়কের উপরে দায়িত্ব আসে একদল মহত্মা গান্ধীজির ভক্তকে তার(মহত্মা গান্ধীজি)সমন্ধে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে...এক পর্যায় গান্ধীজির আত্মা তাকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। নির্দিষ্ট দিনে নায়কের দিকে প্রথম প্রশ্ন আসে, “কেউ একজন দেখেছে...মহত্মা গান্ধীর মুর্তির হাত ভেঙ্গে দিচ্ছে এক তরুণ...এর কি করা যায়?’’। নায়ক মহত্মা গান্ধীজির আত্মার সাহায্য নিলেন উত্তরের জন্যে...মহত্মা গান্ধীজি একে একে দেশের সব মুর্তি ভেঙ্গে দিতে বল্লেন,দেশের সব স্থান থেকে তার ছবি নামিয়ে ফেলতে বল্লেন...নায়ক এক এক করে গান্ধীজির মত করে ভক্তদের বল্লেন আর ভক্তরা শুনেতো অবাক। বলে কি এই ছেলে?শেষে মহত্মা গান্ধীজি বলেন এবার তাদের হৃদয় থেকে আমাকে(মহত্মা গান্ধীজিকে)সরিয়ে দিতে বল...পারবে?সুতরাং কোন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানে না,নোবেলের গায়ে না...ইউনুস তুমি আমাদের হৃদয়ে থাকো তোমাকে কেউ সরিয়ে দিতে পারবে না।

ভাল থাকো...সুস্থ থাক এই কামনায় শেষ করছি। ইতি, তোমার গেদু চাচা। ০৯-০৩-২০১১ ইং। ink

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।