আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক ঘন্টা সময় -একটি কণা গল্প



খুন খারাবির কথা শুনলেই বুক ধড়ফড় করে। অথচ আজ আমাকেই খুনি সাজতে হবে। একেই বলে কপালের ফের। খুনের জন্য নির্ধারিত হলো পুরো একটি ঘন্টা সময়। যাই হোক খুনের একটি পরিকল্পনাও তৈরি হয়ে গেলো।

পরিকল্পনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিলো সেই ছাপড়া চায়ের দোকানটি। চায়ের দোকানটির মালিক কাম ম্যানেজার পাখি ভাই। প্রধান সেফও বলা চলে। জুতসই দেখে একটি বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। এখান থেকে চারদিক ভালো করে দেখা যায়।

দোকানে আজ তেমন ভীড় নেই। আড্ডাবাজ গ্রুপগুলো আজ উধাও। চায়ের অর্ডার দিতে পাখি ভাই নিজেই চা বানিয়ে টেবিলে সার্ভ করলো। অন্য সময় পাখি ভাই চা বানায় আর সার্ভ করে সহযোগী ছেলেটি। আজ এর ব্যতিক্রম।

দেখলাম সহযোগী ছেলেটি বিমর্ষ চেহারায় একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। পাখি ভাই চায়ের কাপটি এমনভাবে রাখলো, তাতে কিছু চা ছলকে টেবিলে পড়লো। পাখি ভাইয়ের মেজাজটা আজ তেমন সুবিধার মনে হলো না। কোন সমস্যা হয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করলাম। পাখি ভাই যেনো এরই অপেক্ষায় ছিলো।

সুযোগ পেয়ে তার মুখের কপাটটি খুলে গেলো। বুঝে গেলাম কম করে হলেও আধা ঘন্টার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলো। নবাবজাদার কারবারটি দেখেন। মাসের শেষে বেতনের সব টাকাই দিয়ে দিলাম। বাড়ি গেলো।

একদিন থাকার কথা। দুই দিন পার করে এলো। এখন বলছে মায়ের অসুখ। এজন্যই এদেরকে একসাথে দিতে নেই। ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিতে হয়।

পুরোটা দিলে পেট ভরে যায়। পেটে ক্ষিধা না থাকলে এরা নবাব বনে যায়। বল্লামতো, বাড়ি যা। বাড়িতে গিয়ে জমিদারী দেখাশোনা কর। এখানে আর কাজ করার কি দরকার।

মুখ খোলা পানির কলের মতো গল গল করে কথা ওগড়াতে থাকে পাখি ভাই। ছেলেটি ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। তার সমসত্ম চেহারা জুড়ে দারীদ্রের প্রলেপ। একবার আমার দিকেও তাকায় সে। তার চোখ ভরা জল।

চেহারায় মিনতি। কাজ থেকে না তাড়ানোর মিনতি। দৃশ্যপটে তখন হাজির হয় মনা পাগলি। হাতে ঢাউস সাইজের একটি পাউরুটি। কেউ হয়তো দিয়েছে।

সঙ্গে সেই কুকুরটিও। মনা পাগলির মতো তারও স্বাস্থ্য। হাড্ডিসার লিকলিকে। মনা পাগলি পাউরুটি ছিড়ে ছিড়ে কুকুরটিকে দেয়। সে নিজেও খায়।

কুকুরটির লেজটি অবিরাম নাচতে থাকে। লেজের সাথে তার কঙ্কালসার শরীরটিও নাচে। সেই পুরনো কথা, কুকুর নয় লেজই যেনো কুকুর নাড়ায়। মনা পাগলি সবসময় কুকুরটিকে মারে। তাড়াতে চায়।

কিন্তু কুকুরটি তার সঙ্গ ছাড়ে না। এবারও সেই একই দৃশ্য। মনা পাগলি হঠাৎ একটি ইটের টুকরো তুলে কুকুরটির উপর ছুড়ে মারে। আঘাত পেয়ে কুকুরটি সরে যায়। কিছু সময় কাই কুই করে।

ফের এসে পাগলির পাশ ঘেষে দাঁড়ায়। পাগলির হাতে আধা খাওয়া পাউরুটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর প্রবল ভাবে লেজ নাড়তে থাকে। সেই সাথে তার সমসত্ম শরীরও নড়তে থাকে। লেজে শরীর, না শরীর লেজ নাড়ায় ঠিক বুজা যায় না। আমার হাত ঘড়িটির দিকে তাকালাম।

এক ঘন্টা সময় তখন শেষ হওয়ার পথে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।