আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড. ইউনূসের একক সিদ্ধান্তনিজস্ব প্রতিষ্ঠানকে বিনা সুদে ঋণমুনাফাবঞ্চিত সরকার ও ব্যাংক সদস্যরা----- মজুমদার বাবু (কালের কন্ঠ--০৫/০৩/১১) গ্রামীণ ব্যাংককে লোকসানের মুখে ঠেলে দিয়ে এর কয়েকটি প্রকল্পের টাকা



নিজেদের আরেক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফান্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একক সিদ্ধান্তে এ অর্থ স্থানান্তর ঘটে। বাংলাদেশ সরকার ও গরিব মানুষের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ গ্রামীণ ফান্ডকে দেওয়া এই ঋণের অধিকাংশই ছিল সুদবিহীন। তবে পরে গ্রামীণ ফান্ড চড়া সুদে লাভজনক অনেক খাতে বিনিয়োগ করে, যেগুলোর কোনোটিই দরিদ্র মানুষের প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে গরিব মানুষের জীবনমান উন্নয়নের অর্থ যেমন ভিন্ন খাতে যায়, তেমনি সরকারসহ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরাও তাদের প্রাপ্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়।

বিষয়টি সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়ে। এরপর বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যাও চান বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে নিযুক্ত কর্মকর্তারা। তখন গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের একটি প্রকল্পের কর্মসূচিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে গ্রামীণ ফান্ড সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ব্যাংকের সম্পদ অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগী প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রামীণ পরিবারের সদস্য দাবি করলেও গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো আইনগত সম্পর্ক নেই।

' জানা যায়, তৎকালীন গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কার্যত অকার্যকর ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিচালনা পর্ষদকে জানাতেন মাত্র। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের সভাগুলোর কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে পর্ষদ সভার কার্যক্রমে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারধারক ৯ জন পরিচালকের কোনো কার্যকর ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি। ' বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এসআইডিই (স্টাডিজ, ইনোভেশন, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এঙ্পেরিমেন্টেশন) কর্মসূচির আওতায় বিদেশি দাতা সংস্থার সহায়তায় ৫১টি প্রকল্পে অর্থায়ন করে। পরবর্তী সময়ে এসআইডিই প্রকল্পগুলোকে সোস্যাল ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ডের (এফভিসিএফ) আওতাভুত করা হয়।

১৯৯৩ সালে এসআইডিইর ১০টি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। বাকি ৪১টি প্রকল্পকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফান্ডে হস্তান্তর করা হয়। এসব প্রকল্পের বিতরণকৃত ঋণ ও সব সম্পত্তি গ্রামীণ ফান্ডকে দিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ ব্যাংক গরিব মানুষের কল্যাণের ৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণ দেয় গ্রামীণ ফান্ডকে। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ১৫ লাখ টাকাই বিনা সুদে দেওয়া হয়েছিল।

অথচ গ্রামীণ ফান্ড বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে চড়া সুদে ঋণ দেয়। জানা যায়, গ্রামীণ ফান্ড চকোরিয়া মৎস্য খামারকে আড়াই কোটি, গ্রামীণ সাইবারনেটকে ৫১ লাখ, গ্রামীণ বাইটেককে ২০ লাখ, গ্রামীণ ব্যবসাসেবাকে ১০ লাখ, গণস্বাস্থ্য ও গ্রামীণ টেঙ্টাইলকে এক কোটি ৪৮ লাখ, গ্রামীণ নিটওয়্যারকে এক কোটি ১০ লাখ, গ্রামীণ সিকিউরিটিজকে এক কোটি ৫০ লাখ, টিউলিপ ডেইরিকে ৫০ লাখ এবং গ্রামীণ সফটওয়্যারকে ১৬ লাখ টাকা চড়া সুদে ঋণ দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই গরিব মানুষের প্রতিষ্ঠান নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণ ফান্ডের চুক্তির ৩ নম্বর শর্তানুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকার মধ্যে চার কোটি ৮৩ লাখ টাকার ওপর গ্রামীণ ফান্ড ২ শতাংশ হারে গ্রামীণ ব্যাংককে সুদ প্রদান করবে। এ টাকা গ্রামীণ ব্যাংক লস রিজার্ভ ফান্ডে রাখবে।

বাকি ৪৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা সুদবিহীন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। আবার ৫ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, এই ঋণের ৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকার মধ্যে ৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ১০ বছর রেয়াতে ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'দীর্ঘসময়ের পরিসরে পরিশোধের ফলে টাকার অবমূল্যায়নজনিত কারণে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকৃতপক্ষে আসল টাকাই ফেরত পাবে না। ' প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'গ্রামীণ ফান্ড গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক প্রায় বিনা সুদে প্রদত্ত নগদ তহবিল উদ্দেশ্যপরিপন্থীভাবে অন্যত্র বিনিয়োগ করিয়াছে। গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরও নীরবতা পালন করিয়া চলিয়াছে।

' এ ছাড়া গ্রামীণ ফান্ডের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পাদিত চুক্তিতেও একটি বড় ফাঁক রয়েছে। চুক্তির ১০ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, এ ঋণের টাকা আদায় না হলে তা ব্যাংকের দায় বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংক এ ঋণের টাকা ফেরত না পেলে গ্রামীণ ফান্ডকে দায়ী করা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এ চুক্তির মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালেই গ্রামীণ ফান্ডের অধিকাংশ ঋণ সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রামীণ ফান্ডকে সাড়ে ৯ কোটি টাকা মওকুফ করতে হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংককে।

গ্রামীণ ফান্ডের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণ সম্পর্কে গ্রামীণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এম শাহজাহান সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ প্রতিষ্ঠানটিকে যে সুদবিহীন ঋণ দেওয়া হয়েছে তা আমাদের এসআইডিই ফান্ডের টাকা থেকেই। এসআইডিইর উদ্দেশ্য ছিল অপ্রচলিত খাতে ঋণ বিতরণ। গ্রামীণ ফান্ডও অপ্রচলিত ব্যবসা খাতেই ঋণ দিয়েছে। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।