আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয় ভ্যাকসিনের গিনিপিগ হলেন আড়াই লাখ মীরপুরবাসী?

all in one

পোস্টটি সচলায়তন থেকে কপি পেস্ট মারলাম। লেখকের অনুমতি আছে ছড়িয়ে দেওয়ার। লেখকঃ যুষ্টিধর। মূল পোস্ট এখানে ঃ http://www.sachalayatan.com/judhishthir/37803 সামুতে এ টপিক্সের উপর একটি পোস্টঃ Click This Link জানুন আমাদের উপর কেমন গবেশনা চলেঃ ১. কৌতুহলের শুরু: বিবিসি, এএফপি অথবা টাইম ম্যাগাজিনের রিপোর্টগুলো সত্যি হয়ে থাকলে ঢাকার মীরপুরে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলেরা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। রিপোর্ট অনুযায়ী মীরপুর এলাকার আড়াই লাখ লোকের ওপরে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হবে।

যে ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে সেটি ভারতে তৈরী এবং সস্তা। চার বছর ধরে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। প্রাপ্ত ফলাফল থেকে বোঝা যাবে বাংলাদেশে এবং পৃথিবীর অন্য যে কোন জায়গায় কলেরার প্রতিষেধক টীকা বৃহত্তর জাতীয় পরিসরে ব্যবহার করা যাবে কি না। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। রিপোর্ট থেকে এটাও জানা যাচ্ছে যে, ট্রায়ালের জন্য বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন থেকে অনুদান পাওয়া গেছে।

ভ্যাকসিন অবশ্যই ট্রায়ালের অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এটাও জানা গেলো আমেরিকার সিডিসি (সেণ্টার ফর ডিজিজ কণ্ট্রোল অ্যাণ্ড প্রিভেনশন)-ও এই ট্রায়ালের সাথে জড়িত, এবং তারা বেশ উৎসুক হয়ে এর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। এর চেয়ে বেশি কিছু রিপোর্টে নেই। জানার দরকারও হয়তো নেই, কারণ আপাত দৃষ্টিতে খবরটা দারুণ। প্রথমত: দেশে কলেরা মোকাবেলার জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো পদক্ষেপ হবে।

এর আগে কখনো জাতীয় পর্যায়ে কোন দেশে কলেরার প্রতিষেধক দেয়া যায় নি এর উচ্চমূল্যের কারণে। এবার সেটা হয়তো সম্ভব হবে কারন এই নতুন প্রতিষেধকটি আগেরটির চেয়ে দামে দশ ভাগের এক ভাগ। দেশের অনলাইন পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত চোখ বুলাই, তাই এরকম বড় একটা খবর বিদেশের পত্রিকাগুলোতে কেন পড়লাম প্রথম, সে ব্যাপারটি ভাবালো। একটু উৎসুক হয়ে দেশের পত্রিকাগুলো খুঁজতে গিয়ে মোটামুটি বড় ধরণের ধাক্কা খেতে হলো। একমাত্র প্রথম আলো ছাড়া আর কোন পত্রিকায় এটির কোন খবর খুঁজে পেলাম না, প্রথম আলোতেও পাওয়া গেলো ১৮ই ফেব্রুয়ারির পত্রিকায়, অর্থাৎ কর্মসূচি শুরু হবার একদিন পরে, তাও তৃতীয় পৃষ্ঠার এক কোনায়।

উপরের লিঙ্কগুলো খেয়াল করলে দেখবেন বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো এ খবরটি দিয়েছে একদিন আগে বা ঘটনার দিনে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে কিছু পাওয়া গেলো না, সেটা আসলে আশা করাও উচিৎ হয় নি। আইসিডিডিআরবি-র ওয়েব সাইট দেখে মনে হলো সেটি একটি ভালো এবং নিয়মিত যত্ন-আত্তি নেয়া সাইট, সেখানেও কোন খবর নেই। এমনকি কোন উল্লেখ নেই তাদের প্রেস-রিলিজের পৃষ্ঠাতেও। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক,এই রাখঢাক কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেলো।

২. তথ্য সংগ্রহ : ২.১. ভ্যাকসিনটার নাম হলো ShanChol১,২। নির্মাতা ভারতের Shantha Biotechnics, যেটি ফ্রান্সের Sanofi Aventis-এর একটি প্রতিষ্ঠান। সহযোগিতায় ছিলো সিউল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান International Vaccine Institute (IVI)। একজন মানুষকে ভ্যাকসিনটির দুই ডোজ নিতে হয় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। শুধু ভ্যাকসিনের মোট দাম পড়ে ৪ ইউ এস ডলারের মত।

৩ এটা নিয়ে এত হৈচৈ এর কারণ হলো এর আগে যে ভ্যাকসিনটা প্রচলিত ছিলো (Dukoral), সেটি অত্যন্ত কার্যকর, কিন্তু দাম ৪০ ইউ এস ডলারের বেশি, তাই ব্যাপক আকারে টীকা দেয়া বাস্তবসম্মত ছিলো না। ৩ ২.২. ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ এটি অনুমোদন করছে,কিন্তু বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখনও করে নি। চিন্তার বিষয় হলো, ভারত সরকার ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও জাতীয় পর্যায়ে বিশাল আকারের কোন কর্মসূচী নেয়ার কোন পরিকল্পনা তারা অনুমোদন করেনি। ৩ এমন কি হতে পারে যে একটি ভ্যাকসিন অনুমোদন করার আগে হয়তো WHO বড় আকারের ট্রায়াল আশা করে, যেটা এখন বাংলাদেশে করা হচ্ছে? পাকিস্তানে বন্যার পরে কলেরার প্রকোপ ঠেকানোর জন্য এই একই ড্রাগ দিয়ে বড় আকারে টীকা কার্যক্রম চালানোর জন্য IVI গত বছর ব্যাপক তদবীর চালিয়েছিলো, কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাজী হয়নি৩। ২.৩. ভারত ও পাকিস্তান সরকারের এই অনীহা আসলে বেশ যুক্তিসঙ্গত – এর কারণটি মূলত রোগ প্রতিরোধের বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিয়ে।

WHO সবসময়ই বলে এসেছে, কলেরা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কখনোই একমাত্র সমাধান নয়, বরং পরিস্কার খাবার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো তৈরী করাটা প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তাদের মতে ভ্যাকসিনের ব্যবহার করতে হবে একটি সহযোগী পদক্ষেপ হিসেবে, অথবা ভুমিকম্প বা বন্যার মত বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে শেষ রক্ষা হিসেবে। ৪ ২.৪. যদিও নতুন ভ্যাকসিনটির দাম আগেরটির চেয়ে দশ ভাগের এক ভাগেরও কম, তারপরও কলেরার জন্য জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষেধক টীকা দানকে WHO এবং অন্য অনেক বিশেষজ্ঞরা কার্যকর পদক্ষেপ মনে করেন না। ভ্যাকসিনের খরচ ছাড়াও এরকম একটি কর্মসূচি চালাতে অন্যান্য যে খরচ হয় সেটি অনেক। ইন্দোনেশিয়ার সুনামির পরে বান্দা আচেহতে কলেরার পূর্বপ্রচলিত ভ্যাকসিন Dukoral প্রয়োগের সময় মাথাপিছু অতিরিক্ত ৮ ডলার লেগেছিলো শুধু প্রাথমিক ডোজগুলো দিতেই৩।

তাদের মতে, এর পেছনে টাকা খরচ করার চাইতে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে যদি খাবার পানি এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটি বাংলাদেশের মত দেশের জন্য বেশি কার্যকর। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে কলেরার ভাইরাসকে ঠেকানোর চাইতে pneumococcus (নিউমোনিয়ার জীবানু) আর rotavirus (জটিল ডাইরিয়ার জীবানু) এগুলোকে ঠেকানো বেশি জরুরী আর কার্যকর ৩। একটি দাতা সংস্থা Global Alliance For Vaccines And Immunisation (GAVI)এর মধ্যেই ঘোষনা করেছে যে ২০১৩ পর্যন্ত তারা কোনরকম কলেরা টীকাদান কর্মসূচীতে অনুদান দেবে না, যাতে করে তারা pneumococcus এবং rotavirus-এ বেশি মনোযোগ দিতে পারে৩। ২.৫. ShanChol এর প্রাথমিক ডোজের কার্যকারিতা বছর দুয়েকের মধ্যে অনেক কমে যায়৩, এবং তখন বুস্টার ডোজ দেয়া জরুরি। এই খরচটি মূল হিসাবে ধরলে, ভ্যাকসিন কর্মসূচীর পেছনে টাকা খরচ করার উপযোগিতা আরও কমে যায়।

তারপরও প্রশ্ন থাকে বাংলাদেশের মত তথ্য অব্যবস্থাপনা আর স্বাস্থ্য অসচেতনতার দেশে এই বুস্টার ডোজটি নিশ্চিত করা কতটুকু সম্ভব সেটি নিয়ে। ২.৬. অন্যসব ট্রায়ালের মতই এখানে প্ল্যাসিবো ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ আড়াই লাখ লোকের এক তৃতীয়াংশ লোককে আসলে ভ্যাকসিন দেয়া হবে না, এবং এই ৮০ হাজার লোককে কণ্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ২.৭ কলকাতায় ২০০৬ সালে ShanChol-এর একটি ফেজ-থ্রী ট্রায়াল শুরু হয়েছে ৩,৫। এখনও এটি চলছে কি না সে ব্যাপারে কোন তথ্য আমি পাইনি।

তবে এর অন্তর্বর্তী ফলাফল এর মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। এটুকু মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে যে এই ট্রায়ালটি ৬৬০০০-৭০০০০ লোকের উপরে চালানো হয়েছে। নতুন কোন সাবজেক্ট আর নেয়া হচ্ছে না, তবে এই ৭০ হাজার মানুষ হয়তো এখনো পরীক্ষাধীন আছেন। অনুমান করছি সে কারণে এটিকে এখনও চলমান ট্রায়াল বলা যেতে পারে। বাংলাদেশে যে কোন পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে সেটি আমি জানতে পারিনি।

উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারছি, ফেজ-থ্রী ট্রায়াল একটার বেশি করা হতে পারে। এর পরের ধাপ হলো ফেজ-ফোর ট্রায়াল, যেটি করা হয় শুধুমাত্র ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণের অনুমতি পেলেই। সেটি যেহেতু এখনও পাওয়া যায় নি, তাহলে এটা ধরে নেয়া যেতে পারে যে বাংলাদেশে যেটি হচ্ছে, সেটিও আসলে ফেজ-থ্রী ট্রায়াল। তাহলে এটি কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়াল থেকে আলাদা কেন? তাছাড়া এটাও উল্লেখ করার মত, বর্তমানের ট্রায়ালটি clinicaltrials.gov তে তালিকাবদ্ধ নেই, যেখানে পথিবীর প্রায় সব ট্রায়ালের খোঁজই থাকে। ২.৮ আশির দশকে শেষভাগে ভিয়েতনামের VA Biotec কলেরার আরেকটি সস্তা ভ্যাকসিন বের করেছিলো।

এটি তৈরীতে সাহায্য করেছিলো সুইডেন সরকার, Dukoral এর উদ্ভাবকদের সহায়তায়। এটি এ পর্যন্ত ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে স্বার্থকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। কলকাতার ফেজ-থ্রী ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী ফলাফল থেকে জানা গেছে, ShanChol এর কার্যকারিতা ভিয়েতনামের এই ভ্যাকসিনের সমপর্যায়ের (৬৭%) ৩। ৩. তারপর স্বাভাবিকভাবেই আরও কৌতুহল, আরো প্রশ্ন: ৩.১. প্রথম প্রশ্ন, ভারতীয় কম্প্যানীর তৈরী ভ্যাকসিনটির ব্যাপক আকারের ট্রায়াল ভারতে হলো না কেন? ভারতের তৈরি টীকা বাংলাদেশে পরীক্ষা করাটা শুনতে ভালো লাগে না, যখন ভারত নিজেই এই পরীক্ষা করতে চায় না। ভারত কিন্তু কলেরামুক্ত কোনো দেশ নয় যে তাদের এই পরীক্ষা করার দরকার নেই।

মীরপুরের আড়াই লাখ লোকের উপরে চার বছর ধরে যে পরীক্ষা হবে, সেটি করার মত এলাকা এবং জনগন ভারতেও ছিলো। ভারত সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহ না দেখানোর কারনটি যদি হয় WHO এর নির্দেশনা অনুসারে ভারত পরিস্কার পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবকাঠামো নির্মানে বেশি আগ্রহী, তাহলে বাংলাদেশ কেন ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারে উৎসাহী হলো সে প্রশ্ন দেশের নাগরিকরা জানতে চাইতেই পারেন। আমার জানামতে কলেরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সমস্যা নয়। আইসিডিডিআর,বি এবং অন্যান্য অনেক সরকারী বেসরকারী সংগঠনের কার্যক্রমের কারণে কলেরা এবং অন্যান্য ডায়রিয়াজনিত রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। গত ২০-২৫ বছরে আমাদের দেশে যে বড় বড় বন্যা আর সাইক্লোন হয়েছে, কোনটিতেই কলেরা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি।

বিদেশি রিপোর্টগুলোতে আইসিডিডিআর,বি-র নাসমিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের ফলাফল অন্যান্য দেশে জাতীয় পর্যায়ে কলেরা টীকা প্রকল্প চালু করতে সাহায্য করবে। মীরপুরের মানুষরা তাহলে ভ্যাকসিন বাজারজাত করার গিনিপিগে পরিণত হলো? যদিও এটা নতুন না, বাংলাদেশে বস্তির মানুষরা ১৯৮৫ সালেও কলেরার আরেকটি ভ্যাকসিনের (Dukoral)গিনিপিগ হয়েছিলেন। ৩,৫ আমার জন্য এ খবরটিও অজানা ছিলো। ৩.২. আইসিডিডিআর,বি মূলত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যে কোন গবেষণায় অংশগ্রহণের প্রতি এর বিজ্ঞানীদের আগ্রহ থাকবে এটাই হয়তো স্বাভাবিক, তারপরও দেশের দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণের কথা তারা ভাববেননা কেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।

সম্প্রতি হাইতির ভূমিকম্প-পরবর্তী কলেরার প্রকোপ আমেরিকাতে বেশ হৈ চৈ ফেলেছে। ফ্লোরিডাতে হাইতি-ফেরত একজন কলেরাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। সিডিসি আর গেইটস ফাউণ্ডেশনের এই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে উৎসাহের কারণ এখান থেকে অনুমান করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন এখানে জড়িত, সেখানে একটা পারস্পরিক দায়বদ্ধাতার হিসাব রাখা জরুরী ছিলো। প্রথম আলো-র ২০০৯-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফিরদাউসি কাদরি বলেছেন, “আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই মিরপুর থেকে আসে।

তাই এই টিকা পরীক্ষার জন্য ওই এলাকাকেই প্রথম বেছে নেওয়া হয়েছে। ” যদি ধরে নেয়া যায় যে সবকিছু মিলিয়ে মাথাপিছু ১০ ডলারও খরচ হবে প্রাথমিক পর্যায়ের টীকাগুলো দিতে,তাহলেও ১ লাখ ৬০ হাজার লোকের পেছনে খরচ হবে সাড়ে ১১ কোটি টাকারও বেশি, বুস্টার ডোজ দিতে ধরে নিলাম দু’বছর পরে খরচ হবে এর আরও অর্ধেকটা। এই যে দু’বছরে যে প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচ হবে, সেটি দিয়ে মীরপুর এলাকার আড়াই লাখ লোকের জন্য পরিস্কার পানি আর স্বাস্থ্যকর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা যেত বলেই মনে হয়, যেটি দীর্ঘ মেয়াদে কলেরা নির্মূল করতে পারতো। সেটি WHO এর নির্দেশনা অনুযায়ীও সঠিক কাজই হত। বিল অ্যাণ্ড মেলিণ্ডা গেইটস ফাউণ্ডেশন টাকা দিচ্ছে বুঝলাম, সেটি আমরা কেন আমাদের প্রয়োজনমত খরচ করতে পারবো না? ৩.৩. দেশের সংবাদ মাধ্যমে আর জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে এই বিষয়টি প্রকাশ না করাটাও বেশ বিরক্তিকর।

এটা কি বাংলাদেশি মিডিয়ার উদাসীনতা? নাকি এটা ইচ্ছে করে গোপন রাখা হয়েছে? বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলো যেহেতু এ খবর সময়মত পেয়েছে, তার মানে এই দাঁড়ায় যে খবরটা দেশীয় মাধ্যমগুলো থেকে ইচ্ছেকৃতভাবে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেটার কারণ কি? এই টীকার কার্যকারিতা দুই বছরে কমে আসে, এবং বুস্টার ডোজ দিতে হয়, এ কথাও কোন রিসার্চ পেপার বা ভ্যাকসিনের বাক্সের ভেতরের কাগজ না পড়লে জানা সম্ভব না। সরকার এখানে কত টাকা খরচ করছেন সে ব্যাপারেও কোন তথ্য কোথাও চোখে পড়েনি। ৩.৪. ShanChol এর জন্য WHO এর কাছে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে। সেটি এখনো মেলে নি।

WHO বেশ স্পষ্ট করেই বিভিন্ন সময় বলেছে, কলেরার জন্য ভ্যাকসিন এককভাবে যথেষ্ট নয়, সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি আর পয়োব্যবস্থার অবকাঠামো ঠিক করতে হবে। তাছাড়া, দুই ডোজের এই ভ্যাকসিন পনেরো দিনের ব্যবধানে দিতে গিয়ে অনেকটা প্রয়োজনীয় সময় কেটে যাবে, সে কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও এটি তেমন কার্যকর হবে না। পাকিস্তান সরকার সম্ভবত এ কারণেই এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে বাধা দিয়েছিলো। Shantha Biotechnics এবং IVI এর মধ্যেই এক ডোজের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। ৩ তাহলে এ সময়ে এই ভ্যাকসিনকে দেশে দেশে ছড়িয়ে দেয়াটা জরুরী কেন? এ মুহূর্তে এমনটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ShanChol-এর গবেষণার অর্থ উঠিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন আছে তার নির্মাতাদের কাছে, এবং সেটি সম্ভব একমাত্র ভ্যাকসিনটির ব্যপক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, “দিশারি প্রকল্পটির (পাইলট প্রজেক্ট) কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে সারা দেশে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে কলেরা টিকাকেও সম্পৃক্ত করা হবে। এখন যে টিকাটি খাওয়ানো হচ্ছে, সেটি ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। তবে শিগগির বাংলাদেশেও টিকা তৈরি হবে। কমপক্ষে চারটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে” এই খবর নিঃসন্দেহে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য আনন্দের, বিশেষ করে WHO-এর অনুমোদন ছাড়াই যদি এতটা পাওয়া সম্ভব হয়। ৩.৫. কলকাতার ট্রায়াল শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে তার তিন গুন বড় আকারের একটি ট্রায়ালের প্রয়োজন পড়লো কেন এবং সে প্রয়োজনটি কোথাও ব্যাখ্যা করা হলো না কেন? যে ভ্যাকসিন ভিয়েতনামে ২০ মিলিয়ন শিশুর উপরে ইতিমধ্যে পরীক্ষিত, সেটি ব্যবহার না করে একটা নতুন ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে আমাদের দেশের লোককে কেন অংশগ্রহণ করতে হবে সে উত্তরটাও জানা জরুরী।

৩.৬ ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে সারা পৃথিবীতে কেলেংকারি কম হয় নি। বিশেষ করে প্ল্যাসিবোর ব্যবহার নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক আছে। তবে আজকাল মানুষকে সাবজেক্ট হিসাবে ব্যবহার করা হলে ন্যুনতম কিছু নীতিমালা পালন করা হয়৬। সাবজেক্টের কাছ থেকে সজ্ঞান অনুমতি নিতে হয়। ম্যাস ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সমাজের বা দেশের নেতারা এই অনুমতি দিতে পারেন এলাকার মানুষের পক্ষে।

প্রশ্ন হলো, ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এরকম এথিকস কতটুকু অনুসরণ করা হচ্ছে? মীরপুরবাসীরা কি জানেন তারা একটি পরীক্ষার সাবজেক্ট? যে ৮০ হাজার লোক প্ল্যাসিবো পাবেন, তারা কি জানবেন যে তারা কনট্রোল গ্রুপের সাবজেক্ট মাত্র? নাকি আমাদের দেশের সরকার আর অন্য দেশের ভ্যাকসিন নির্মাতারা আমাদের ভালোটা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন, তাই এসব খবর মীরপুরবাসীদের না জানানোই ভালো? ১৯৮৫ সালের Dukoral-এর ট্রায়ালে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যদি কিছু হয়ে থাকে, সেটির খোঁজ কেউ রেখেছে? সেই মানুষগুলোর সরকার বা নেতারা কি তাদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন? কেন যেন সন্দেহ হয় করেননি। আমার সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণিত হোক, এই আশা করি। কৃতজ্ঞতা: সচল অনার্য সঙ্গীত ও স্বাধীন-এর প্রতি, তথ্য আর বিশ্লেষণ দিয়ে সাহায্য করার জন্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.