আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাঙ্গারু'র দেশ ও কিছু ভাবনা-১



হুমায়ূন আহমেদ সম্ভবত একবার লিখেছিলেন যে যারা বিদেশে যায় তাদের মধ্যে নাকি দু'রকম মানুষ থাকে-১। বিদেশের সবকিছুই তাদের ভাল লাগে, ২। বিদেশের কোন কিছুই তাদের ভাল লাগে না, আর লেখক নাকি দ্বিতীয় দলে পড়েন!! দুর্ভাগ্যবশত আমি নিজেকে এই দু'দলের কোনটার মধ্যেই ফেলতে পারছি না আপাতত, কারণ আমার মনে হয় যে বিদেশে যেমন অসহনীয় কিছু ব্যাপার আছে, তেমনি ভাল কিছু দিকও আছে যেগুলো অবশ্যই আমাদের প্রশংসার দাবি রাখে। যাই হোক, সংক্ষেপে এটুকু বলতে চাই যে বাইরে পড়তে আসার পরে আমার অনুভূতি মিশ্র-একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার অপার সম্ভাবনার হাতছানি, অন্যদিকে শিকড় ছিড়ে যাওয়ার বেদনায় আমি আক্রান্ত। এদেশে এসে যে জিনিসটা প্রথমেই চোখে পড়ে তা হল এদের নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা।

এখানে জানমালের নিরাপত্তাও তাই যেন অনেক বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়। জাতি হিসেবে এরা যতই অদ্ভুত হোক না কেন, সর্বত্রই এরা নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করে, তা সেটা আকাশচুম্বী জরিমানা বা শাস্তির ভয় থেকেই হোক, আর আন্তরিকতা থেকেই হোক। কাজেই দেশ থেকে এখানে এসেই যারা এ ব্যাপারটি দেখে অবাক হয়ে যান, তাদের জ্ঞাতার্থে সবিনয়ে জানাতে চাই যে এমন কঠোর শাস্তি ও জরিমানার বিধান থাকলে আমাদের দেশটাতেও সবাই নিয়ম মেনে চলত এদেশের অসহনীয় একাকিত্ব এদের সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক। পরিবারের বন্ধনের অভাব সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়, ঝাঁ-চকচকে জীবনযাত্রার মাঝেও। অনেক বাড়িতেই দেখছি যে বয়স্করা একা একা থাকেন, সংগীসাথীবিহীন জীবনে তারা যতই অভ্যস্ত হওয়ার ভাব দেখান না কেন, আমার কাছে কেন যেন তাদের কষ্টটা ফুটে উঠে।

রাতের বেলায় আবাসিক শহরতলীগুলো যেন মৃতের এলাকায় পরিণত হয়, তাতে থাকে না মানুষের কোলাহল, থাকে না হই-হট্টগোল, গাড়ির হর্ণ, আলোকমালার ঝলকানি, প্রাণের ছোঁয়া। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী বিশ্বে বসবাস অনুপযোগী দ্বিতীয় শহর হতে এসেও তাই কেবলই মনে হচ্ছে, আহা আমার দেশ, তুমি যেমনই হও না কেন, তোমার প্রাণ আছে, আন্তরিকতা আছে, যা পৃথিবীর কোন দেশের নেই, জয়তু বাঙ্গলাদেশ, জয়তু ঢাকা, আমার জন্মস্থান, আমার মায়ের কোল...... ....(চলবে)....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।