আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই মেলা ও বইয়ের দাম



প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শুরু হয় একুশে বই মেলা। আমরা পাঠকেরা সারা বছর এই মাসটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি- কারণ এই মাসেই দেশের পাঠকপ্রিয় লেখকদের বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে বই মেলায় একটা সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে- সেটা হচ্ছে বইয়ের দাম। আমি যতদূর জানি, ২০০০ সাল থেকেই বইয়ের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। ১৯৯৯ সালে ৭৮-৮০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম যেখানে রাখা হত ৫০ টাকা, ২০০০ সালে সেখানে দাম রাখা হয় ৬০-৬৫ টাকা।

আর এখন, এই ২০১১ সালে এসে দেখা যাচ্ছে ঐ একই আকারের বইয়ের দাম রাখা হচ্ছে ১১০-১৫০ টাকা বা তারচেও বেশি! অথাৎ এগার বছরে দাম বেড়েছে তিন গুন! বইয়ের এই দাম বৃদ্ধির কারণ জিজ্ঞেস করলে একেকজন একেকরকম উত্তর দেন। বেশিরভাগ প্রকাশকরাই বলেন কাগজের দাম বেড়েছে। আমার প্রশ্ন, দশ এগার বছরে কী কাগজের দাম তিন গুন বেড়ে গেছে? আমার খুব প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার "তোমাদের প্রশ্ন আমার উত্তর" বইয়ে বলেছেন, বইয়ের দাম প্রকাশকরাই নির্ধারণ করেন। দাম কমানোর অনুরোধ করলে তারা নাকি নানা রকম কারণ, নানা রকম হাইকোর্ট সুপ্রীম কোর্ট দেখিয়ে শেষে মুচকি হেসে বলেন, "বইয়ের দাম নিশ্চই বেশি নয়। তা না হলে বই মেলায় বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে কোটি কোটি টাকার বই কেমন করে বিক্রি হয়?" আমার মনে হয় বাংলাদেশে এরকম হাতেগোনা কয়েকজন প্রকাশক আছে যারা এমন অবিবেচকের মত কথা বলে।

এরা মূলত লেখকদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে অতি মুনাফার একটা ব্যবসা খুলে বসেছে- অতিরিক্ত দাম তাদের চোখে পড়েনা। আমি এটা বলছিনা যে বইয়ের দাম বাড়ানো যাবেনা, বিশ্ব বাজারে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি কাগজের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে বইয়ের দাম বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু সেটা হতে হবে সহনীয় পর্যায়ে। আমাদের দেশে অনেক লেখক ও প্রকাশক বইয়ের দাম পাঠকের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন- এজন্যে তাদের আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে অন্যান্য লেখক ও প্রকাশকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা পাঠকদের কথা বিবেচনা করে বইয়ের দাম কম রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কম দামি কাগজ ব্যবহার করুন, শক্ত বোর্ডের চটকদার বাঁধাই বাদ দিয়ে হালকা বাঁধাই দেন, রয়্যালিটির পরিমাণ কমিয়ে ফেলুন- সর্বোপরি বই লেখা ও প্রকাশনাকে ব্যবসায়ী মনোভাবের ঊর্ধ্বে মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচনা করুন।

আমার এই লেখা পড়ে অনেক পাঠকের হয়ত সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই বিখ্যাত উক্তি "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না" মনে পড়ে গেছে এবং আমার উপর যথেষ্ট বিরক্তবোধ করছেন, অনেকে হয়ত ভাবছেন- "দাম আবার কিসের সমস্যা? সত্যিকারের পাঠক কখনো বইয়ের দাম নিয়ে ভাবেনা। " তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলছি, হয় আপনাদের প্রচুর টাকা আছে নাহয় আপনারা লোক দেখানোর জন্য বই পড়েন। আমার বিশ্বাস আমি আমার লেখায় যে বক্তব্য তুলে ধরেছি অধিকাংশ পাঠকই তা সমর্থন করবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।