আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে হয় ভালোই হবে।



ঢাকার মায়া ছাড়ছেন পোশাক শিল্প মালিকরা আবুল কাশেম- কালের কন্ঠ গ্যাস নেই, বিদ্যুৎও থাকে কম; কিন্তু শ্রম সস্তা। শ্রমিকের ঘাটতিও নেই। সুবিধা-অসুবিধার হিসাব-নিকাশ করে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীতে একটি সোয়েটার কারখানা চালু করলেন সাউদার্ন গার্মেন্টের মালিক মো. শাহরিয়ার আলম। দেখলেন কারখানা চলছে ঢাকার মতোই। সমস্যার চেয়ে সুবিধাই বরং বেশি।

তাই সেখানে আরো একটি কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে শাহরিয়ার আলম জানান, 'সোয়েটার কারখানায় দুই ধরনের মেশিন থাকে_নিটিং ও লিঙ্কিং। এর মধ্যে নিটিং মেশিন চালাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ কিচ্ছু লাগে না। মোমবাতির আলোয়ও এ মেশিন চালানো সম্ভব। লিঙ্কিং মেশিনে সামান্য বিদ্যুৎ লাগে।

তাই সোয়েটার কারখানা চালু করতে গ্যাসের কোনো প্রয়োজনই নেই। ' পোশাক খাতের মালিকরা যখন ঢাকা, চট্টগ্রামের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না, তখন শাহরিয়ার আলমের রাজশাহী যাত্রাকে অনেকের কাছে উল্টোপথে হাঁটা বলেই মনে হবে। কিন্তু শাহরিয়ার তো আর হঠাৎই যাচ্ছেন না। নানা হিসাব-নিকাশ করেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সোয়েটার কারখানার মোট খরচের ৭০ ভাগেরও বেশি হয় নিটিং আর লিঙ্কিংয়ে।

ঢাকায় ১০ হাজার টাকার নিচে শ্রমিক পাওয়া যায় না। ঢাকার কারখানাগুলোয় বিপুল শ্রমিকের সংকট রয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে নিজের বাড়ি থেকে শ্রমিকরা কারখানায় আসছে। ফলে তারা কম বেতনেও কাজ করতে আগ্রহী। ' ঢাকায় মানুষের বসবাসের জন্য তৈরি বাড়িতে, ঘুপচি পরিবেশে চলছে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো।

আর শ্রমিকরাও বাস করছেন বস্তিতে, ঘিঞ্জি পরিবেশে। নগর পরিকল্পনাবিদ, সরকার ও অর্থনীতিবিদরা পোশাক কারখানাগুলোকে ঢাকার বাইরে স্থানান্তরের আহ্বান দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে এলেও ব্যবসায়ীরা তাতে কান দেননি। এখন ব্যবসায়ীদের মনোভাবেরও পরিবর্তন এসেছে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ নির্বাচিত হওয়ার পর পরই কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর ঢাকায় থাকার কোনো অর্থই নেই। কারখানাগুলোকে অবশ্যই ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা উচিত।

' সম্প্রতি বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেছেন, 'গার্মেন্ট কারখানার মালিকদের অনেকেই এখন আর ঢাকায় কারখানা রাখতে চান না। শুরুতে মানুষের ঘর-বাড়ি ভাড়া করে এখানে কারখানা চালু করেছেন। এখন সুযোগ পেলেই ঢাকার বাইরে যেতে চান তাঁরা। বিকেএমইএ নিটপল্লী করার জন্য যমুনা নদীর তীরঘেঁষে সিরাজগঞ্জে সরকারের কাছে জায়গা চেয়ে আবেদন করেছে। ' রাজশাহীতে কারখানা করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংসদ সদস্য শাহরিয়ার জানান, গত সংসদ নির্বাচনে এলাকায় সোয়েটার কারখানা গড়ার অঙ্গীকার করেছিলাম।

নির্বাচিত হওয়ার পর কারখানা গড়তে মনোনিবেশ করি। প্রায় পাঁচ বছর আগে রাজশাহী বিসিকে একটি আটার মিল কিনেছিলাম। সেটি চালু করার পর পাশেই নর্থ বেঙ্গল নিটিং লিমিটেড নামে সোয়েটার কারখানা করেছি। 'সোয়েটার কারখানা করার আগে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢাকা ছেড়ে কোনো ম্যানেজারই রাজশাহীতে চাকরিতে রাজি হননি।

পরে শ্রীলঙ্কা থেকে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছি। বেকারদের সোয়েটার শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিজে দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করেছি। শুরুতে ১০০ নিটিং মেশিন ও ৫০টি লিঙ্কিং মেশিন কিনে ২৩০ শ্রমিকনিয়ে কারখানা চালু করেছি। ঈশ্বরদীতে আরো একটি প্লট নিয়েছি। সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

ভবনটি নির্মাণ শেষ হলে ৪০০ নিটিং ও ২০০ লিঙ্কিং মেশিন দিয়ে আগামী এপ্রিলে আরো একটি কারখানা চালু করব। তাতে প্রায় ৭০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এদের প্রশিক্ষণ দিতে ইশ্বরদীতে শিগগরিই একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করব'_বলেন এমপি শাহরিয়ার। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, 'শুধু রাজশাহী নয়, পুরো উত্তরাঞ্চলেই সোয়েটার কারখানা হতে পারে। আমার মূল কারখানা ঢাকায় থাকবে।

সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করার মতো ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলছি রাজশাহীতে। এতে উৎপাদন খরচ কমবে। ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হলে এক বছরের মধ্যেই এ অঞ্চলে বহু সোয়েটার কারখানা গড়ে তুলতে পারেন। ' বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের তথ্যমতে, সারা দেশে কম-বেশি পাঁচ হাজার গার্মেন্টস কারখানার মাত্র দুটি কারখানা হলো উত্তরাঞ্চলে। রাজশাহীর বাইরে নওগাঁয় একটি পোশাক কারখানা রয়েছে।

বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সদস্যভুক্ত এক হাজার ১৯১টি কারখানার বেশির ভাগই ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম এলাকায়। মাত্র ২০টি কারখানা গড়ে উঠছে উত্তরাঞ্চলে। এর ১৭টিই আবার সিরাজগঞ্জে। বাকি তিনটি কারখানা একটি করে গড়ে উঠেছে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও পাবনায়। সম্প্রতি কোনো রাখঢাক ছাড়াই তৈরি পোশাক শিল্পকে ঢাকার বাইরে স্থানান্তরের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী।

তবে এজন্য তিনি ঢাকার বাইরে গার্মেন্ট পল্লী বা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে বলেছেন। না হলে কারখানাগুলো ঢাকা ছাড়বে না বলে মত দেন তিনি। সালাম মুর্শেদী বলেন, 'হঠাৎ কারখানাগুলোকে ঢাকা ছাড়তে বললে হবে না। বাউশিয়ার জায়গা আগের মতোই পড়ে আছে। পদ্মার ওপারে বিমানবন্দর হলে সেখানেও গার্মেন্ট পল্লী স্থাপন করা যায়।

রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর, খুলনায়ও গার্মেন্ট পল্লী করা যেতে পারে। এতে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলটির মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আসবে। তা ছাড়া খুলনা সমুদ্রবন্দরও ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে না। ওই অঞ্চলে পোশাক কারখানাগুলো স্থানান্তর হলে এ বন্দরের ব্যবহারও বাড়বে। ' মনে হয় ভালোই হবে, কি বলেন? ভারতীয় একজন এসে বললো , আর আমরা বিশ্বাস করে ফেলবো কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়া?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।