আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনলিপি-৪৮

............................................

ছোটবেলায় আমি ‘জন্মদিন’ শব্দটাকে উচ্চারণ করতাম ‘জর্মদিন’ বলে। আমাকে বারবার বড়রা বলে দিতো ‘জর্মদিন’ না হবে ‘জন্মদিন’। তাও আমি উচ্চারণ করতে পারতাম না। আমি উচ্চারণ করতাম ‘জমমোদিন’। এমনকি বানান করে পড়তে শেখার পরও ‘জমমোদিন’ বলতাম।

প্রথমে জর্মদিন, তারপর জম্মোদিন আর তার অনেকদিন পর জন্মদিন বলতে শিখেছিলাম। বাবু, জারিন, জনি বা আমার থেকে বয়সে ছোট অন্যান্য কাজিনরা কেউ খুলনায় আসলে আমি নিজেকে অনেক বড় ভাবতাম। কারণ ঐ সময় ওরা ছাড়া খুলনায় আমিই ছিলাম সবচেয়ে ছোট। জারিন বা জনি এরা মোটামুটি আমার ঘেষা ছিল। কিছু বললে ওরা শুনতো।

কিন্তু বাবু ছিল একটু ফাজিল প্রকৃতির। সে মাঝেমাঝে আমাকে অনেক জ্বালাতো। যেমন একবার সে অনেকগুলো তেলাপোকা মেরে পলিথিনে ভরে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। তারপর সে প্রায়ই হাতের ভিতরে শুকনা মরিচ লুকিয়ে রেখে আমাকে ভয় দেখাতো। হাত অল্প একটু ফাঁক করে শুকনা মরিচ দেখিয়ে বলতো, এই দেখো হাতের মধ্যে না একটা তেলাপোকা রেখেছি! এই সমস্ত কারণে ওকে আমি দেখতে পারতাম না।

কারণে অকারণে ওকে অনেক মারধর করতাম। শুরুতে জর্মদিন, তারপরে জম্মোদিন বলতে শেখার পর একদিন বাবু আসলো খুলনায়। সে বারবার জর্মদিন জর্মদিন করে কি কি যেন বলছিল। ‘জম্মোদিন’কে ‘জর্মদিন’ বলিস কেনো তুই!! - এই অপরাধে সেদিন ওকে অনেক মারধর করেছিলাম। ছোটবেলায় আমার জন্মদিন অনেক অন্যরকম ছিল।

আমার বড় বোনরা ও কাজিনরা রঙিন পেপার, বেলুন, চিকচিক রঙিন পেপার দিয়ে ঘর সাজাতো। আমার কোনো কোনো জন্মদিনের কেক আমার বড়মামা বানিয়ে দিতেন। আমার বড়মামার মতো গুণী মানুষ এই পৃথিবীতে অনেক কমই দেখেছি। সব বিষয়েই মামা পারদর্শী। এতো সুন্দর কেক বানাতেন মামা যা তখনকার দিনে কোনো বেকারি বানাতে পারতো না! আর আমিই ছিলাম সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যে কয়েকবার জন্মদিনে মামার বানিয়ে দেওয়া কেক দিয়ে জন্মদিন পালন করেছি!!!!!!!!!!!!! একটু বড় হবার পর আমি জন্মদিনে খুবই বিব্রতবোধ করতাম।

কারণ অত মানুষজনের মধ্যে কেক কাটাকাটি করতে আমার বড়ই লজ্জা লাগতো। আর একটু বড় হবার পর আমি কিছুটা হলেও মুখচোরা স্বভাবের হয়ে গেছি। জন্মদিন নিয়ে এখন লাফালাফি করতে একটুও ভালো লাগেনা। তবে কয়েকজনের উইশ পেলে অনেক ভালো লাগে, এটা সত্যি। দেখতে দেখতে আমার ভাগ্নেটার বয়স পাঁচ হয়ে গেল।

ভাগ্নেও দেখি ‘জন্মদিন’কে ‘জম্মোদিন’ বলে। গত ৪ বছরে ৪ বার তার জন্মদিন পালিত হয়েছে তবে জন্মদিনের তারিখে না! পালিত হয়েছে আমাদের সুবিধা মতো তারিখে। এতোদিন সে কিছু বুঝতো না। এখনও যে সে অনেককিছু বোঝে তাও না। কিন্তু এবার তার ৫ম জন্মদিনে, সঠিক তারিখেই জন্মদিন পালিত হয়েছে।

বড় হয়ে সেও তো মাইন্ড করতে পারে কেন তার জন্ম তারিখ অনুযায়ী তার জন্মদিন পালিত হয়নি! গতকালকে তার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বললাম, তুমি কি জানো আজ ১ আগস্ট তোমার আম্মুর জন্মদিন? সে বললো, না তো খালামণি! আম্মু তো কেক খাওয়ালো না! আমি বললাম, তুমি তো উইশই করোনি! উইশ করলে নাহয় কেক খাওয়াবে! যাও আম্মুকে গিয়ে বলো, শুভ জন্মদিন। সে খুবই এক্সাইটেড হয়ে গেল এতে। ফোনটা না কেটে পাশে রেখে দিয়ে ‘আম্মু আম্মু’ বলে চিল্লাতে লাগলো। আমিই শেষে ফোনটা কেটে দিলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।