আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন বসে না পড়ার টেবিলে



দুঃখ পেলে কেঁদো না/দুঃখ পেলে হেসো/তা যদি না পারো/তাহলে ভালোবাসো। ছেলেবেলা থেকেই সব কিছু বিশ্বাস করতে শিখেছিলাম। কারণ ছাড়া কোনো কিছু হয় না। যে কোনো কাজের পেছনে যুক্তি খোঁজার বদ অভ্যাস আমার আছে। ভূত প্রেত অলৌকিক রহস্যকে যুক্তি দিয়ে উড়িয়ে দেই।

কিন্তু কোনো একটা অলৌকিক দৃশ্য দেখতে পাওয়ার আজকাল খুব ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় অকারনে চশমা-টশমা নিয়ে চোখ দুটো খারাপ করে ফেলি। কিছু ব্যাপার দেখতে দেখতে একঘেয়ে হয়ে গেছে। এখন আমি যুক্তি ত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি। মধ্যরাত এখন।

চোখে ঘুম নেই। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করি। ইচ্ছে করে দূরে কোথাও চলে যাই। যেখানে আমার পরিচিত কেউ থাকবে না। দুঃখ এবং ভালোবাসা বলে কিছু থাকবে না।

আমার ভালো লাগে না। সত্যি বলছি কিছুই ভালো লাগে না। এখন আমি কি করব?মনে হচ্ছে বিশাল একটা ঝড় এসে আমার সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। রাগটা কিছুতেই কমছে না। একজন মানুষ ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে না।

একটা গাছ অথবা একটা পশু প্রেম ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে। যুদ্ধে যে মানুষটা গুলি করে মানুষ খুন করে,তারও একটা হৃদয় আছে। সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজন- বুদ্ধি,সাহস,চেতনা,মনের জোর। এসব আমার কিছুই নেই। এখন আমি সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে গেলেও হিমিকে নিতে ইচ্ছা করে না।

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হিমির কাছে যেতে ইচ্ছে করে না। হিমি নিয়ে নতুন কোনো স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে না। হিমির কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছা করে না। হতে চেয়েছিলাম মহাপুরুষ,হলাম কাপুরুষ। ঈশ্বরের হাত ধরতে পারলাম না।

আমার পায়ের নীচে কংক্রিট,চোখে নিওন আলো। প্রকৃতির মতো আমিও এখন ভীষন এলোমেলো মেজাজে থাকি। আমি বুঝে গেছি,সুখি হবার ক্ষমতা আমার নেই। তবে আমার মধ্যে যুক্তি ব্যাপারটি প্রবলভাবেই আছে। এখন খুব বুঝতে পারছি,অভিমানী হয়ে জন্মালে অনেক কষ্ট পেতে হয়।

অনেকদিন আগে একটা কবিতা পড়েছিলাম- "কখনো মৃত্যুর আগে/মানুষ জানে না-/নিজের সঠিক পরিনতি/পালকের ভাঁজে ভাঁজে/সর্বনাশ নিতেছে নিশ্বাস। "নিজের অক্ষমতা স্বীকার করতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। একবার রাত তিনটায় বিনা দোষে বাসা থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সাত ঘন্টা আমাকে হাজতে থাকতে হয়েছিল। আর একবার রাজশাহীতে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাকে একজন অন্যলোক ভেবে বন্দি করে রেখেছিল।

কেউ অপ্রত্যাশিত ভাবে অপমান করলে আমি চোখে অন্ধকার দেখি। গতবছর মধ্যরাত্রে চিটাগাং থেকে ঢাকা ফেরার পথে রাত দুইটায় হঠাৎ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমি গাড়ির কলকবজা বিষয়ে কিছুই বুজি না। গাড়িও আমার সাথে রসিকতা করে!আমার সব কিছুতেই ব্যর্থতা ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা। পাখি কি সুন্দর আকাশে উড়ে যায়- তেমন করে আমার যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট কেন উড়ে যায় না?কিভাবে ভালোবাসতে হয় বোকা মেয়ে গুলো বুঝেই না।

ছেলেদের মতো এক আকাশ আবেগ দিয়ে ভালোবাসতে জানে না। মেয়েদের হচ্ছে ভালোবাসা-ভালোবাসা খেলা। কিন্তু ছেলেদের ব্যাপার অন্যরকম। শোনো মেয়ে- "আমাকে দিও না দুঃখ,/দুঃখ দিলে,আমি- জলে স্থলে/হাওয়ায় হাওয়ায়/নীলিমায় গেঁথে দেব দুঃখের অক্ষর। "অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে নানান কথা ভাবি।

ঘুম আসে না। ক্লান্ত মন নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসি। সিগারেট ধরাই। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। চুপ করে বসে থাকি।

হঠাৎ এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগে। মনে হলো কেউ যেন ফিস ফিস করে আমায় কিছু বলছে। আমি একটু নড়ে চড়ে বসি। আবার এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগল। ফিস ফিস শব্দ হলো,কে যেন বলল- আহা-হা বেচারা বেচারা।

আমি আকাশের দিকে তাকাই। মনে হলো আকাশ থেকে কেউ যেনো বলছে,আহা-হা বেচারা বেচারা। (মনের ভুল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। )কিন্তু এরকম মন বা কানের ভুল হবেই বা কেন?বেশ কিছুক্ষন পর আর একটা সিগারেট ধরানোর পর আবার ফিস ফিস সুর... আহা-হা বেচারা বেচারা...!নিষ্ঠুর কৌতুক নয়। করুন সহানুভূতিময় সেই ফিস ফিস,যেন হাজার হাজার তারা আমার দিকে তাকিয়ে বলছে আহা-হা বেচারা বেচারা।

আমার চোখ থেকে একফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। (লেখাটা সম্পূর্ন অগোছালো ইচ্ছাকৃত ভাবে। এই লেখাটার নাম দিতে চেয়েছিলাম-"পোড়া কপাল আমার"। মন মেজাজ ভালো নেই,তাই নাম দিয়েছি 'মন বসে না পড়ার টেবিলে'। নিনা নাজনিন আপাকে লেখাটা উৎসর্গ করার লোভটা সামলাতে পারলাম না।

আপা,আপনি অনেক ভালো। ভালো থাকুন। প্রিয় মানূষকে ভালোবাসুন। জয় বাংলা। )



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।