আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আট মাসেও জামিন হয়নি দুলুর

বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক, নাটোর জেলা সভাপতি সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্থায়ী জামিন সুপ্রিম কোর্ট বাতিল এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার নাটোরের চিফ জুডিশিয়াল আদালত জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করায় নাটোরে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হকের ফুল বেঞ্চ দুলুকে দেওয়া হাইকোর্টের স্থায়ী জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার নাটোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নতুনভাবে জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক মো. লিয়াকত আলী মোল্লা জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করে ১৯ আগস্ট মামলার তারিখ ধার্য করেন। আটক হওয়ার প্রায় আট মাসেও জামিন না হওয়ায় পরিবার ও দলের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

এর আগে উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়ার পর হঠাৎ তা স্থগিত হওয়ার খবরে দুলুর মা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। দুলুর স্ত্রী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি অভিযোগ করেন, মিথ্যা অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে মামলা দিয়ে দুলুকে আটক রাখা হয়েছে। সরকার আগামী নির্বাচন থেকে দুলুকে দূরে সরিয়ে রাখতেই হয়রানি করছে। মঙ্গলবার হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থক দুলুকে একনজর দেখার জন্য আদালত চত্বরে ভিড় জমান। আদালত থেকে দুলুকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার পর পরই শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন ও দুলুর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছর ৮ ডিসেম্বর জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার অফিস থেকে ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ জিতে যাওয়া দেখে রাত পৌনে ১১টার দিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের বড় ছেলে সোহেল সরকারের নেতৃত্বে প্রায় ৩০টি মোটরসাইকেলে ৬০-৭০ জন যুবক স্টেশন বাজার ঘুরে ১১টার দিকে দুলুর বাড়িতে হামলা চালান। দুই পক্ষের গুলি বিনিময়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন এবং শহর যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক পলাশ চন্দ্র কর্মকার গুলিবিদ্ধ হন। রাতেই পুলিশ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ যুবদল কর্মী শামীম এবং বাড়ির কেয়ারটেকার আহমুদুল্লাহ ও আসলাম আলীকে আটক করে। দুলু জানান, একটি সাদা মাইক্রোবাস ও ২৫-৩০টি মোটরসাইকেলে করে আসা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায়। তিনি তিন তলায় থাকায় গুলিবিদ্ধ হননি।

যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বিএনপির কয়েকজনকে আটকের কথা পুলিশ সাংবাদিকদের জানালেও রাত ১টার দিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের চাপে পুলিশ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামীম, আহমুদুল্লাহ ও আসলাম আলীকে আটক করে। পলাশ চন্দ্র কর্মকার গুলিবিদ্ধ হলে প্রথমে আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিন দিন পর ১১ ডিসেম্বর পলাশ মারা যান। পলাশ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ৯ ডিসেম্বর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মূর্তজা বাবলু বাদী হয়ে দুলু এবং বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের মোট ১৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে পলাশ মারা যাওয়ায় মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত করা হয়।

যুবলীগ নেতা পলাশ চন্দ্র কর্মকার হত্যার পর পলাশের পরিবারের পক্ষ থেকে অথবা যুবলীগের কেউ বাদী না হয়ে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ মূর্তজা বাবলু বাদী হওয়ার বিষয়টিতে প্রশ্ন দেখা দেয়। ৮ ডিসেম্বর দুলু আটক হওয়ার পর থেকে নাটোর কারাগারে রয়েছেন। নাটোর আদালত জামিন না দিয়ে বার বারই দুলুকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে দুলু অসুস্থ হয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ২ জানুয়ারি নাটোর জেলা দায়রা জজ আদালত দুলুর জামিন আবেদন খারিজ করলে দুলু হাইকোর্টে রিট করেন।

শুনানি শেষে দুলুকে ১৬ জুন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্থায়ী জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। হাইকোর্টের স্থায়ী জামিনের আদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন। ১৮ জুলাইয়ের শুনানি ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হকের ফুল বেঞ্চ হাইকোর্টের স্থায়ী জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। দুলুর স্ত্রী বলেন, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে শত শত মানুষের সামনে বনপাড়া বাজারে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কে এম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন।

মামলার প্রধান আসামিসহ প্রায় সবাই জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে সংবর্ধনা নিয়েছেন আর সাজানো মামলায় দুলুকে আটক রাখা হয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।