আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেন গল্প ১০-১২: বাইসাইকেল: ভিজিটিং কার্ড: নিয়তি


বাইসাইকেল একদিন এক জেন শিক্ষক তাঁর পাঁচ ছাত্রকে সাইকেল চড়ে বাজার থেকে ফিরে আসতে দেখলেন। ছাত্ররা সাইকেল থেকে নামলে শিক্ষক ছাত্রদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা সাইকেল চড়েছো কেন?’ প্রথম ছাত্র বললো, ‘সাইকেলটি আলুর বস্তা টানছে। বস্তাটিকে যে আমার পিঠে নিতে হয়নি এতে আমি খুশী। ’ শিক্ষক ছাত্রটির প্রশংসা করে বললেন, ‘চালাক ছেলে, বুড়ো হলে তুমি আমার মত কুঁজো হবে না। ’ দ্বিতীয় ছাত্র বললো, ‘পথ চলার সময় দু’পাশের গাছপালা, মাঠ আমাকে মুগ্ধ করে।

’ শিক্ষক প্রশংসা করে বললেন, ‘তোমার দৃষ্টি উন্মুক্ত। তুমি বিশ্বকে দেখো। ’ তৃতীয় ছাত্র বললো, ‘আমি সাইকেল চড়লে মন্ত্র জপ করি। ’ শিক্ষক প্রশংসা করে বললেন, ‘তোমার মন নতুন চাকার মত চলমান থাকবে। ’ চতুর্থ ছাত্র বললো, ‘সাইকেলে চড়ে আমি সকল সত্ত্বার সঙ্গে একাত্ম হই।

’ শিক্ষক খুশী হয়ে বললো, ‘তুমি অ-অনিস্টের মহাপথে এগোচ্ছ। ’ এবার পঞ্চম ছাত্র বললো, ‘ চড়ার জন্য সাইকেল চড়ি। ’ শিক্ষক ছাত্রের কাছে এগিয়ে গিয়ে ছাত্রের পায়ের কাছে বসে বললেন, ‘আমি তোমার শিষ্য। ’ ভিজিটিং কার্ড মেইজি যুগের বিখ্যাত জেন শিক্ষক কেইচু কিয়োতোর তোফুকু মঠের প্রধান ছিলেন। একদিন প্রথমবারের মত কিয়োতোর গভর্ণর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন।

এক অনুচর গভর্ণরের ভিজিটিং কার্ডটি কেইচুকে দিলেন। তাতে লেখা: কিতাগাকি, কিয়োতোর গভর্ণর। কেইচু অনুচরকে বললেন, ‘এমন লোকের সঙ্গে আমার কোন কাজ নেই। উনাকে চলে যেতে বলো। ’ অনুচর কার্ডটা নিয়ে গিয়ে ফেরত দিয়ে ক্ষমা চাইতে গভর্ণর বললেন, ‘না, আমারই ভুল হয়েছে।

’ এরপর পেন্সিল দিয়ে কার্ডের ওপরের ‘কিয়োতোর গভর্ণর’ কথাটুকু কেটে ফেলে বললেন, ‘তোমার শিক্ষককে আরেকবার বলো। ’ জেন শিক্ষক কার্ডের দিকে তাকিয়ে এবার উৎসাহের সঙ্গে বললেন, ‘ওহ্‌, এ যে কিতাগাকি! তাঁকে নিয়ে আসো। ’ নিয়তি নোবুনাগা নামে এক জাপানি বীর যোদ্ধা একবার শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন যদিও শত্রুপক্ষ সংখ্যায় তাঁর সৈন্যসংখ্যার দশগুণ। তিনি বুঝেছিলেন যে তিনি জিতবেন কিন্তু তাঁর সৈন্যরা দ্বিধায় ছিল। পথে তিনি এক শিন্‌তো উপাসনালয়ে থামলেন এবং সৈন্যদের বললেন, ‘প্রার্থনা শেষ করে এসে আমি একটি মুদ্রা দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করব।

সামনের দিক পড়লে আমরা জিতবো। আমরা এখন নিয়তির হাতে। ’ নোবুনাগা ভেতরে গেলেন। নীরবে প্রার্থনা সারলেন। বেরিয়ে এসে মুদ্রা উপরে ছুঁড়ে দিলেন।

সবাই দেখল মুদ্রার সামনের দিক দেখা যাচ্ছে। সৈন্যরা প্রচন্ড উৎসাহে যুদ্ধ করল। নোবুনাগা যুদ্ধ জিতলেন। যুদ্ধ জয়ের পর নোবুনাগার অনুচর বললেন, ‘কেউ নিয়তির হাত পাল্টাতে পারে না। ’ ‘অবশ্যই না,’ নোবুনাগা মন্তব্য করলেন।

তিনি সেই মুদ্রাটি দেখালেন। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দু’দিকেই একই ছাপ আঁকা। সবক’টি পর্বের লিংক: আর কোন জেন গল্প নয়: Click This Link জেন গল্প ১০-১২: Click This Link জেন গল্প ৭-৯: Click This Link জেন গল্প ৪-৬: Click This Link জেন গল্প ১-৩: Click This Link দ্রষ্টব্য: এসব গল্পই ইন্টারনেট হতে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। অনূদিত ৯৯টির মধ্যে ১০টি গল্প দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘সাহিত্য সাময়িকী’ ও দৈনিক সমকাল এর ‘কালের খেয়া’-তে প্রকাশিত হয়েছে। সবশেষ কিস্তিতে ভূমিকাটি উপস্থাপনের আশা রাখছি।

ধন্যবাদ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।