আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেট বিশ্বকাপের বোধন কাল

রাসেল.নেট এর ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।

শ্রীলঙ্কান কয়েকজন নৃত্যশিল্পী মাঠ থেকে বেরোলেন। চোখে-মুখে ক্লান্তি। একটু পর দল বেঁধে ঢুকল বাংলাদেশের একঝাঁক স্কুলছাত্রছাত্রী। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভেতরটা ততক্ষণে বিশাল এক আনন্দমঞ্চ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা আগে এই নিবিড় মহড়ায় আটকে যায় চোখ। আগামীকাল এই মঞ্চেই চোখ রাখবে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। স্বাগতম বিশ্বকাপ! বাইরে থেকে সুনসান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্বর। দোকানপাট বন্ধ। চিরচেনা কোলাহল নেই।

হেঁটে গেলে কেমন জানি অন্য রকম অনুভূতি হয়। বাইরে সারি বেঁধে ১৪টি রিকশা চালিয়ে মহড়া দিচ্ছেন ‘সৌভাগ্যবান’ ১৪ চালক। ঢাকার প্রতীক হয়ে ওঠা এই রিকশায় চড়েই সাকিব আল হাসান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রিকি পন্টিং, শহীদ আফ্রিদিসহ সব অধিনায়কেরই হবে বিরল এক অভিজ্ঞতা। তাঁদের পেয়ে আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১১-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হবে ধন্য। উদ্বোধন খেলারই একটা অংশ, এর ব্যাপ্তিটা আঁকা হচ্ছে বড় ক্যানভাসে।

উপমহাদেশে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের যাবতীয় তোড়জোড় সেটিকে করে তুলেছে জীবন্ত এক ছবি। প্রথমটি ১৯৮৭ সালে, যৌথ আয়োজক ভারত-পাকিস্তান। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে তৃতীয় আয়োজক হিসেবে যুক্ত হলো শ্রীলঙ্কা। আর এবার বাংলাদেশও! দুঃখ হতে পারে পাকিস্তানিদের, নিরাপত্তার কারণে তাদের দেশে কোনো ম্যাচ হচ্ছে না। কাগজে-কলমে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আয়োজক তিন দেশ।

আর এই আয়োজনেরই গর্বিত অংশীদার এই ১৬ কোটি মানুষের দেশ। লাল-সবুজের ক্রীড়া ইতিহাস তো বটেই, গোটা বাংলাদেশের জন্যই এ এক মাহেন্দ্রক্ষণ, যাকে বরণ করতে প্রস্তুত সাড়ে ৫৫ হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপ। আয়োজকদের সূচি মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায়। তবে সাধারণ মানুষ তো আর সেটির পরোয়া করবে না। কাল সূর্য ওঠার পর থেকেই তারা আসলে শুরু করে দেবে উৎসব।

পথে পথে ছড়াবে রং। নিজের আঙিনায় বিশ্বকাপের উদ্বোধন বলে কথা! অনুষ্ঠানটা দুই ঘণ্টা ১৮ মিনিটের। বাংলাদেশ পর্বের সঙ্গে ১২ মিনিট করে ভারত ও শ্রীলঙ্কার পর্ব। তিন দেশের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি তুলে ধরার আগে থাকছে বাংলাদেশের আটজন শিল্পীকে নিয়ে ‘প্রি শো’। চারজন পুরুষ ও চারজন নারী শিল্পীর আটটি গানের পর মাগরিবের নামাজের বিরতি।

এর পরই মূল অনুষ্ঠান শুরু। ২০ মিনিটের বাংলাদেশ পর্বে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কোরিওগ্রাফি, বৃহত্তর আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধ ফুটিয়ে তোলা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গীতি-আলেখ্য ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গীতিনাট্য...ইত্যাদি পরিবেশনা থাকছে। এগুলো বাঙালির আত্মপরিচয়। এর সঙ্গে থাকছে বাংলাদেশকে নতুন করে চেনার ডাক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামে আসার পর গান বাজবে, স্বাগত পৃথিবী...।

টেলিভিশনের কল্যাণে যে গান ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের নানা প্রান্তে। ‘এভরিথিং আই ডু’-এর কানাডিয়ান গায়ক ব্রায়ান অ্যাডামস গাইবেন দুটি গান। গাইবেন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, মমতাজ। সনু নিগমও শামিল। এরই ফাঁকে বিশ্বকাপের থিম সং ‘দে ঘুমাকে’ শোনা যাবে বাংলা, হিন্দি ও সিংহলিজ ভাষায়।

মাঠে আড়াই হাজার কুশীলবের ডিসপ্লে শেষে আতশবাজি, এলইডি কাইট শো, লেজার শো...। মন ভরানোর জন্য আর কী চাই! বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে এই মন ভরানোর ব্যাপারটা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। উপমহাদেশে দ্বিতীয় বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করার বাড়তি চেষ্টা ছিল। ২০০৩ সালেও দক্ষিণ আফ্রিকার আয়োজন ছিল চোখকাড়া। গতবারও তা-ই।

এবার তো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ মহড়াই হলো! অলিম্পিক, এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনের সঙ্গে তুলনীয় নয়, তবে ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও এখন আগ্রহের কেন্দ্রে। ক্রিকেট এখন আর আগের ক্রিকেট নেই। এই বদলের হাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে অনেক। সাকিবরা কোয়ার্টার ফাইনাল পেরিয়ে এগিয়ে যান সেমিফাইনাল, ফাইনালের দিকে—মুখে মুখে এমন আকাঙ্ক্ষা। সে পর্যন্ত যেতে পারলে সোনায় সোহাগা।

তবে কোয়ার্টার ফাইনালের আপাত লক্ষ্য পূরণে উদ্বোধনের আমেজ মুছতে না-মুছতেই ঝাঁপাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়ে শুরু দশম বিশ্বকাপের মাঠের লড়াই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের বাইরে কাল দেখা গেল বিশাল এক নৌকা, উদ্বোধনীর মহড়ার জন্য। এমন এক নৌকায় চড়িয়ে দুদিন আগে বিশ্বকাপ ট্রফি ঘোরানো হলো ঢাকার কিছু সড়কে। এই ট্রফি দেখে অনেকেই বলেছেন, টিকিট না পেয়ে মাঠে বসে বিশ্বকাপ দেখতে না পারার আক্ষেপটা তাঁদের ঘুচে গেছে।

দুধের স্বাদ ঘোলে না মিটিয়ে অবশ্য কোনো উপায়ও নেই। টিকিটের যে বড় আকাল! সেই আকালের সঙ্গে লড়ে জয়ী হয়েছেন যাঁরা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট পাওয়া সৌভাগ্যবান দর্শকদের জন্য কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গেট খুলবে বেলা দুইটায়। প্রায় ৩৬ কোটি টাকার সংস্কারকাজে বদলে যাওয়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এখন বেশ ঝকঝকে—কৃত্রিম ফোয়ারা, গোটা এলাকায় ফুলের টব কিংবা ফুলের গাছ লাগানো। কিন্তু স্টেডিয়ামের চারপাশের সড়ক সেভাবে সাজেনি, যতটা আশা করা গিয়েছিল। তাতে কী, বিশ্বকাপ চলবে তার আপন গতিতে।

গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের ছয়টি ম্যাচই নিজ মাঠে। সঙ্গে দুটি কোয়ার্টার ফাইনাল। একটি কোয়ার্টার ফাইনাল, একটি সেমিফাইনালসহ শ্রীলঙ্কায় ১২টি, ফাইনালসহ বাকি ২৯ ম্যাচ ভারতে। আগামী ২ এপ্রিল ফাইনাল দিয়ে মুম্বাইয়ে থামবে বিশ্বকাপ-যাত্রা। সূত্র: প্রথম আলো


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।