আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সফল ও বিস্ময়কর আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব পীরে কামেল হযরতুল আল্লাম আলহাজ্ব শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী (দা.বা.)



সৃষ্টির আদিকাল হতে কেবল এ উদ্দেশ্যেই আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌সালাতু ওয়াস্‌সালাম প্রেরিত হয়েছিলেন যে, তাঁরা আল্লাহ্‌ পাকের সম্পর্কহারা মানবজাতিকে ওয়াজ-নসীহত এবং ইরশাদ ও হিদায়াতের সাহায্যে পুণরায় আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে তাদের সম্পর্ক স্থাপন করে দিবেন। এর প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ্‌ তাআলা ইরশাদ করেন, “উদ্‌-উ ইলা সাবিলি রাব্বীকা বিল হিকমাতি ওয়াল মাওইজাতিল হাসানাতি”। অর্থাৎ- “[হে মুহাম্মদ (সা•)]! আপনি (বিভ্রান্ত মানব জাতিকে) সুন্দর নসীহত এবং হেকমতের সাথে আপনার প্রভুর পথের দিকে আহ্বান করুন”। এ জন্যই যে সমস্ত ওলামায়ে কেরাম উক্ত উদ্দেশ্যকে স্বীয় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য রূপে অবলম্বন করেছেন এবং উক্ত উদ্দেশ্য সাফল্যমন্ডিত করার জন্য দুনিয়ার যাবতীয় লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি ও তিরস্কার-ভর্ৎসনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে দাওয়াতে হকের মশাল হাতে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছেন, একমাত্র তাঁরাই নবীর সত্যিকারের ওয়ারিস বলে দাবী করতে পারেন। এই পবিত্র ও মহান মনীষীদের বদৌলতে অসংখ্য ঝড়-ঝঞ্ঝা ও বাধা-বিঘ্নের মোকাবিলায় আজও পৃথিবীর বুকে ইসলামের মশাল প্রজ্বলিত রয়েছে।

ইন্‌শাআল্লাহ্‌, ক্বিয়ামত পর্যন্ত এটা প্রজ্বলিতই থাকবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্‌ (সা•) ইরশাদ করেছেন- “লা ইয়াযালু ত্বায়িফাতুন্‌ মিন উম্মাতি মানসূরীনা আলাল হক্বক্বি লা ইয়াদুররুহুম্‌ মান খাযালাহুম”। অর্থাৎ- “আমার উম্মতের এক দল সর্বদা সত্যের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। শত্রুপক্ষ তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না”। সুতরাং কোন শতাব্দী এবং কোন যুগই এই পবিত্র সত্যপন্থীর দল হতে শূন্য থাকতে পারে না।

প্রত্যেক যুগেই এদের এক দল বিদ্যমান থেকে ইসলাম প্রচার করেন এবং আল্লাহ্‌ পাকের বাণীকে সর্বোচ্চে তুলে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এরা খোদা প্রদত্ত প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায় বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট মানব সমাজকে প্রদান করে থাকেন সীরাতে মুস্তাকীমের দিশা। তাই মানব সমাজের জন্য সে সব মহাপুরুষগণ অপরিহার্য ও অমূল্য ধন। সাথে সাথে তাঁরা জগতবাসীর কাছে চির অম্স্নান হয়ে বেঁচে থাকেন আজীবন। এ শ্রেণীর যে ক’জন ত্যাগী পুরুষ লালন করে উপমহাদেশ বিশেষতঃ পূর্বাঞ্চলীয় ভূ-খ ৈতথা আজকের বাংলাদেশ খ্যাতির মহিমায় অধিষ্ঠিত, শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহ্‌মদ মাদানী (রাহ্‌•)এর অন্যতম খলীফা তবীবুল উম্মাত হযরতুল আল্লাম আল্‌হাজ্ব শাহ্‌ আহমদ শফী (দা•বা•) তাঁদেরই অন্যতম একজন।

দোলনা থেকে কবর অবধি একটি পবিত্র সফর, সাধনা ও আত্মত্যাগের পথ বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব এবং বর্ণিল বার্ধক্য, ইলম, আমল, ইখলাস, ইসলাহ্‌ ও দাওয়াতের পুণ্যময় আলোয় উদ্‌ভাসিত কর্মগাঁথা, মহিমামন্ডিত জীবন, সৌন্দর্যমন্ডিত এ সফর কাহিনী যাঁর, যে সংযমী, সাধক, বিনয়ী অভিযাত্রী, যিনি এ দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন, তিনিই হযরত আল্লামা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী (দা•বা•)। যে নামটির সঙ্গে জড়িত আলেম উলামা থেকে আরম্ভ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের শ্রদ্ধা মিশ্রিত অনুভূতির ছোঁয়া। হযরতুল আল্লাম আলহাজ্ব মাওলানা আহ্‌মদ শফী সাহেব (দা•বা•) নামটির সঙ্গে জড়িত পঙ্কিলতার আবর্তে ডুবে যাওয়া সমাজে আত্মশুদ্ধির মঞ্চে শুদ্ধতার ছড়ি হাতে এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বের ধীর ও দৃঢ় কদমে এগিয়ে এসে দু’দিনের পৃথিবীতে থেকেও পরপারের কামিয়াবী ও জান্নাতের দিকে ধাবমান এক সফল সাধকের অগণন কৃতিত্বের কাহিনী। এই মহামনীষী ১৯৩০ খ্রীস্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫১ হিজরী সনে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া থানাধীন পাখিয়ার টিলা নামক গ্রামে এক অভিজাত সম্্‌ভ্রান্ত ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীনদার আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। হযরতের মেহেরবান মরহুম পিতার নাম জনাব বরকত আলী এবং মরহুমা মায়ের নাম মুসাম্মত মেহেরুন্নেছা বেগম।

জন্মের পর হযরতের মরহুম আব্বা-আম্মা এ আশায় বুক বেধে ছিলেন যে, তাঁদের এ কলিজার টুকরাকে পথহারা উম্মতকে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করার জন্য দ্বীনের ধারক-বাহক হিসাবে গড়ে তুলবেন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন এ মেহেরবান পিতা-মাতাকে নিরাশ করেননি। এ মহান উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে শিশুকালে হযরতের পিতা-মাতা তাঁকে কুরআনে কারীম শিক্ষার জন্য জনাব মৌলভী আজিুজুর রহ্‌মান (রাহ্‌•)এর নিকট প্রেরণ করেন। এর ফাঁকে নিয়মিত চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষাও শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর শরফভাটা মাদ্রাসায় প্রাথমিক কিতাব পাঠে মনোনিবেশ করেন।

ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, বিনয়ী, চিন্তাশীল, প্রখর মেধাবী, তিক্ষ্ন বুদ্ধির অধিকারী হওয়ায় অতি অত্ম বয়সেই কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত ও প্রাথমিক শিক্ষা-দীক্ষা সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করে কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হন। অতঃপর এই প্রতিভাবান কিশোর জ্ঞান আহরণের অদম্য স্পৃহা নিয়ে ছুটে যান ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আরাবিয়া ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসায়। জিরি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সেখানে ৫/৬ মাস অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে বৃটিশ ও জার্মানের যুদ্ধদামামা বেজে উঠার ফলে সেখান থেকে ১৩৬১ হিজরীতে জনাব হাফেজ ইমতিয়াজ সাহেবের প্রচেষ্টায় এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামে ভর্তি হন। তখন হযরতের বয়স মাত্র ১০ বছর।

ইত্যবসরে তাঁর মাতা-পিতা ক্রমান্বয়ে তাঁকে চিরকালের জন্য এতিম করে শোক সাগরে ভাসিয়ে আল্লাহ্‌ পাকের ডাকে সাড়া দেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। এখানে এসে তিনি একাধারে ১০ বছর কাল পরম আত্মত্যাগ ও খোদাপ্রদত্ত মেধা, সদাচার, লেখা-পড়ায় একাগ্রতা প্রভৃতি গুণাবলীর মাধ্যমে অতিক্রান্ত করেন। সাথে সাথে যুগশ্রেষ্ঠ আসাতিযায়ে কিরামগণের স্নেহ, ভালবাসা এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে উর্দু, ফার্সী, আরবী ভাষা ও সাহিত্যসহ ইল্‌মে নাহু, ইল্‌মে সরফ্‌, ইল্‌মে ফিক্বাহ্‌, মানতিক (যুক্তিবিদ্যা), ফালসাফা (দর্শনবিদ্যা), বালাগাত (অলংকারবিদ্যা) প্রভৃতি বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করতে সক্ষম হন। দারুল উলূম মুঈনুল ইসলামে হযরত যাঁদের কাছে লেখা-পড়া করে ধন্য হন, সে সব আসাতিযায়ে কিরামগণের মাঝে বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য হলেন, প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক, উপমহাদেশ খ্যাত ইসলামী আইন বিশারদ মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা ফয়যুল্লাহ্‌ (রাহ•), শাইখুল হাদীস আল্লামা সুফী আবদুল কাইউম (রাহ্‌•), শাইখুল আদীব আল্লামা মুহাম্মদ আলী নিজামপুরী (রাহ্‌•) ও শাইখ আল্লামা আবুল হাসান (রাহ্‌•) প্রমুখ।

এই নবী প্রেমিক বুযুর্গের বাল্য, প্রাথমিক ও উচ্চতর শিক্ষার স্তরটা ছিল খুবই অভিনব ও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ভরপুর। দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে হযরত মিশকাত শরীফ, জালালাইন শরীফ ও কাজী মুবারক ইত্যাদি কিতাব শেষান্তে সকল প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে সত্য ন্যায়ের উৎস সন্ধানে ব্যাকুল হয়ে ইল্‌মে হাদীস ও ইল্‌মে তাফসীরের উচ্চতর শিক্ষা হাসিল করার অদম্য বাসনা নিয়ে ১৩৭১ হিজরী সনে ছুটে যান ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, ঐতিহ্যবাহী হাদীস শিক্ষার পাদপীঠ, সকল ইল্‌মের সূতিকাগার, এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনি বিদ্যানিকেতন দারুল উলূম দেওবন্দে। দারুল উলূম দেওবন্দে হযরত ফুনুনাতে আলীয়া, দাওরায়ে হাদীস, দাওরায়ে তাফ্‌সীর-এর কোর্স অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে অধ্যয়নকালে তিনি যাঁদের সংশ্রবে ধন্য হন, তাদের মাঝে প্রথমেই উলেস্নখ করতে হয়- শাইখুল আরব ওয়াল আযম, আওলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যুগশ্রেষ্ঠ ও বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিস, জ্ঞান ও খোদাভীতির সুউচ্চ মর্যাদার সুমহান আসনে অধিষ্ঠিত, জালেম ইংরেজদের হিংস্র থাবা হতে হিন্দুস্তান মুক্তি সংগ্রাম ও অসহযোগ আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহ্‌সালার, মুজাহিদে মিল্লাত, আল্লামা হুসাইন আহ্‌মদ মাদানী (রাহ•)এর নাম। দেওবন্দে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই এই মহা মনীষীর হাতে বাইআত গ্রহণ করতঃ খিলাফত প্রাপ্ত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।

দারুল উলূম দেওবন্দে হযরতের সম্মানিত ওস্তাদবৃন্দ হলেন, ফুনুনাতে আলীয়ার উস্তাদ হযরত মাওলানা ইব্রাহীম বলিয়াবী (রাহ্‌•) ও মাওলানা ফখরুল হাসান (রাহ্‌•) প্রমুখ। বুখারী শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা সৈয়দ হুসাইন আহ্‌মদ মাদানী (রাহ্‌•), তিরমিযি ও আবু দাঊদ শরীফের উস্তাদ শায়খুল আদব হযরত মাওলানা ই’জায আলী (রাহ্‌•), নাসাঈ শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান (রাহ্‌•), মুসলিম শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা ইব্রাহীম বলিয়াভী (রাহ্‌•), তাহাভী শরীফের উস্তাদ হযরত মাওলানা মুবারক (রাহ্‌•), মুয়াত্তা মুহাম্মদের উস্তাদ হযরত মাওলানা জহীরুল হাসান (রাহ্‌•), মুয়াত্তা মালেকের উস্তাদ হযরত মাওলানা জলীল আহ্‌মদ (রাহ্‌•) এবং বাকী কিতাব অপরাপর উস্তাদগণ থেকে অধ্যয়ন করেন। ইল্‌ম, আমল ও আধ্যাত্মিকতায় ধন্য এই মহামনীষী একাধারে ৪ বছর বিরামহীন অধ্যয়ন ও বিশ্ববিখ্যাত আসাতিজায়ে কিরামদের খেদমত ও তাঁদের পদাংক অনুসরণের মাধ্যমে হাদীস, তাফসীর, ফিক্বাহ্‌শাস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করে যুগের অন্যতম মুহাদ্দিস প্রজ্ঞাবান বুযুর্গ আল্লামা মাদানীর ইল্‌মী ও আমলী প্রতিনিধি হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দারুল উলূম দেওবন্দ হতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর হযরত তাঁর পরম হিতাকাঙ্খী উস্তাদ জামিয়ার তৎকালীন মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্‌ আব্দুল ওয়াহ্‌হাব (রাহ•)এর সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন। আল্লামা আব্দুল ওয়াহ্‌হাব (রাহ্‌•) তাঁর উচ্চরিত্র মাধুরী, অসংখ্য গুণাবলীরগ্ত্র্নারা ভূষিত জ্ঞান-প্রজ্ঞা, পান্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, উৎকৃষ্ট বোধশক্তি, সততা, উদারতা, আত্মত্যাগ, ইখলাস ও দায়িত্ব সচেতনতা সর্বোপরি ইল্‌মের গভীরতা অবলোকন করে অত্যন্ত বিমোহিত হয়ে যান।

ফলশ্রম্নতিতে অত্র জামিয়ার শিক্ষক পদে হযরতকে নিয়োগ দান করেন। তৎকালের সৃজনশীল আলেম, খোদা প্রেমের মাঞ্জিলকে লক্ষ্য করে ছুটে চলা এই মহান অভিযাত্রী তাঁর কর্ম জীবনের সূচনা করেন এ জামিয়া থেকেই। তাঁর অত্যন্ত শ্রম্নতিমধুর প্রাঞ্জল ও সরল ভাষায় অব্যাহত অধ্যাপনার সুনাম সু-খ্যাতি দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে জামিয়ার সর্বত্র। অন্যদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তৃষিত জ্ঞান পিপাসু উলামায়ে কিরাম তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মত ছুটে আসতে শুরু করল হযরতের জ্ঞান ভাwৈর ও উন্নত সাহিত্যিকতার গভীর সমুদ্র থেকে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য। নববী আদর্শের প্রতিচ্ছবি বলেই আসমানী জ্যোতির কিরণ অর্জন করে তাযকিয়ায়ে নফ্‌স বা আত্মশুদ্ধির উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আজো ছুটে আসেন বিভিন্ন স্তরের লোকেরা হযরতের সুপ্রসন্ন জ্ঞানের ঝর্ণা হতে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য।

১৪০৭ হিজরী সালে তদানীন্তন জামিয়ার মহাপরিচালক হাফেয ক্বারী আল্লামা হামেদ (রাহ•) পরলোক গমন করলে জামিয়ার সর্বোচ্চ মজলিসে শূরার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামিয়া পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় বর্তমান স্বনামধন্য মুহ্‌তামিম হযরতুল আল্লাম আল্‌হাজ্ব শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী (দা•বা•)এর উপর। হযরতের সুযোগ্য পরিচালনায় এ পর্যন্ত অত্র জামিয়া অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, ইল্‌মী ও আমলী তথা সর্ব ক্ষেত্রেই প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। বর্তমানে প্রধান পরিচালকের সাথে সাথে শাইখুল হাদীসের মহান দায়িত্বও তিনি অতি দক্ষতার সাথে সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। হযরত নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ বলেই দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম দিন দিন সর্বদিক দিয়ে উন্নতির চরম শিখরে ধাবিত হচ্ছে। বস্তুতঃ হযরত আল্লামা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী (দা•বা•)এর দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম হাটহাজারী পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে নিঃসন্দেহে।

দারুল উলূম সত্যিকারের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে তাঁর আমলেই। হযরতের সফল উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় দারুল উলূমের নজিরবিহীন সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে। হযরতের আমলেই ছাত্রদের আবাসন সংকট নিরসনকল্পে বহু আবাসিক ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেমন- চারতলা বিশিষ্ট “দারে জাদীদ! ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণ, চারতলা বিশিষ্ট “নূর মঞ্জিল” ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণ, জামিয়ার উত্তরাংশে চারতলা বিশিষ্ট “মাদানী মঞ্জিল” ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণ, চারতলা বিশিষ্ট নতুন মেহমানখানা ভবন নির্মাণ, দারুল আমান ছাত্রাবাস ও দারুল হাদীস ভবনের সম্প্রসারণ, দুই তলা বিশিষ্ট তিনটি এবং একতলা বিশিষ্ট একটি শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, জামিয়ার উত্তরাংশে তিন তলা বিশিষ্ট নতুন জামে মসজিদ নির্মাণ, জামিয়ার পশ্চিম পার্শ্বে রেলওয়ে থেকে পরিত্যক্ত ভূমি স্থায়ী লিজ নিয়ে সেখানে ছয় তলা বিশিষ্ট দু’টি আবাসিক স্টাফকোয়ার্টার ভবন নির্মাণ, নতুন ছয়তলা বিশিষ্ট সুপরিসর শিক্ষা ভবন নির্মাণ, চার তলা বিশিষ্ট “আহ্‌মদ মঞ্জিল” ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণ, সুপরিসর মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ, নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ এবং জামিয়ার অন্যান ভবনের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ হযরতের সফল উদ্যোগেই সম্পন্ন হয়। এবং বিগত এক কথায় হযরতের আমলেই জামিয়ার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ব্যাপক সাফল্য আসে।

হযরতের উদ্যোগেই বিভিন্ন জায়গায় বেহাত ও জবরদখল হওয়া বহু মূল্যবান জমি জামিয়ার দখলে পুণরায় আসে। তাছাড়া হযরতের সুদক্ষ পরিচালনায় ১৯৯৫ইং সালে জামিয়া প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ ফূর্তি উপলক্ষে “শত বার্ষিকী দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন” সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে দেশ-বিদেশের প্রতিথযশা উলামায়ে কিরাম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন। সম্মেলনে জামিয়ার প্রায় ১০ সহস্রাধিক ফুজালায়ে কেরামকে দস্তারে ফযীলত প্রদান করা হয়। উক্ত শত বার্ষিকী মহাসম্মেলনের সুশৃঙ্খল ও মনোমুগ্ধকর সফল আয়োজন দেখে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

শত বার্ষিকী মহাসম্মেলন পরবর্তী ২০০২ইং সালে হযরতের তত্ত্বাবধানে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তবার্ষিকী দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন। উক্ত সম্মেলনও সাফল্যজনকভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং সর্বত্র ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে। জামিয়ার দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) ক্লাস-এর ফুজালায়ে কেরাম-এর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হওয়াতে সপ্তবার্ষিকী মহাসম্মেলনের পর থেকে নিয়ে বর্তমানে প্রতি বৎসর বার্ষিক মাহফিলের সাথে হযরতের তত্ত্বাবধানে দস্তারবন্দী সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যাতে ফুজালায়ে কেরামকে দস্তারে ফযীলত প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়া হযরতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আগ্রহে দারুল উলূমের শিক্ষা বিভাগে উচ্চতর ক্বিরাত ও তাজবীদ বিভাগ, তাহফীজুল কুরআন বিভাগ, উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ, আরবী সাহিত্য বিভাগ, বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ, কম্পিউটার বিভাগ, দারুল মুতালাআ, মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর নিয়মিত প্রকাশনা, মজলিসে ফিক্বহিল ইসলামী, সাপ্তাহিক সাহিত্য মজলিস, ফাত্‌ওয়ায়ে দারুল উলূম ও গুলশানে হাবীব-এর প্রকাশ ইত্যাদি চালু হয়েছে।

হযরতের পরিচালনায় জামিয়ার সাফল্যের ফিরিস্তিô এত সল্পপরিসরে দেয়া সম্ভব নয়। এক কথায় হযরতের আমলে জামিয়ায় যেন উন্নতির জোয়ার বয়ে গেছে। জামিয়ার উস্তাদ এবং ছাত্র, সবার জন্যই হযরত যেন এক ছাতা সদৃশ। যে কারো আপদ-বিপদ এবং সমস্যায় হযরত পরম মমতায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। অপরদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও হযরতের প্রচেষ্টা কম নয়।

আপন উস্তাদ ও পীর শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ্‌•)এর সংগ্রামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে শরীক হয়েছেন তিনি। তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের সমর্থক ও সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। হযরত বর্তমানে সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ-বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-এর চেয়ারম্যান এর গুরু দায়িত্ব সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। ইসলাম ও মুসলমানদের যে কোন প্রয়োজনে ও দুর্দিনে যখনই যেখানে আহ্বান করা হয়, হযরতের মুখে কখনো ‘না’ শব্দটি উচ্চারণ হয় না। এক কথায় বলা যায় যে, হযরত হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-সংগঠন ও ইসলামী আন্দোলনের সমন্বয়স্থল।

যে কোন সমস্যায় ইসলামী নেতৃবৃন্দ হযরতের কাছে ছুটে আসেন এবং হযরতের পরামর্শ সবাই মাথা পেতে মেনে নেয়। বর্তমান ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান তথা মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা উপমহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে হযরতের ইলম ও প্রজ্ঞার উৎস থেকে অনুপ্রেরণা লাভকারী ছাত্র, শিষ্য, মুরীদ ও অনুসারী। এদের সংখ্যা বর্তমানে কোটির ঘর ছড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে আরব দেশগুলোতে রয়েছে হযরতের আকাশ চুম্বী পরিচয়। তাঁর নম্রতা, খোদাভীরুতা, ইলম ও প্রাজ্ঞা দেখে পবিত্র হেরেম শরীফের ইমামগণ তাঁকে শায়েখ বলে সম্বোধন করে থাকেন।

উলেস্নখ্য, বিগত ১৯ আগস্ট ২০০১ইং তারিখে লনৈ থেকে দেশে ফেরার পথে পবিত্র ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমন করলে হারামাইন শরীফাইনের মহাপরিচালক শাইখ সালেহ বিন আল হুমাইদ-এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি হযরতকে পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফের একটি অংশ হাদিয়া স্বরূপ প্রদান করে সম্মানিত করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় সীরাত কমিটি কর্তৃক হযরতকে ২০০৫ সালের “শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব” ঘোষণা করে স্বর্ণ পদক প্রদান হযরতের বর্ণাঢ্য জীবনের এক অন্যতম স্বীকৃতি। সূর্যের আলোকরশ্মি যেমনিভাবে বিশ্ববাসীকে পথ দেখায়, ঠিক তেমনি একজন বা-আমল সত্যিকারার্থে নায়েবে নবীও বিশ্ববাসীকে সত্যের সন্ধান দিতে সক্ষম। মুসলিম উম্মাহর এই ত্যাগী, সংগ্রামী, শিক্ষানুরাগী বিপস্নবী সমাজ সংস্কারক আল্লামা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী সাহেব জীবনের সূচনা থেকে শির্‌ক, বিদ্‌আত, কবর পূজা, মাযার পূজা তথা সকল কু-সংস্কার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে সদা জাগ্রত। হযরতের আবেগঘন, জ্বালাময়ী ও সারগর্ভ উপস্থাপনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

বাংলার সর্বশ্রেণীর জনসাধারণের মানস্‌পটে তাওহীদের বাণী পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত ওয়ায, বক্তৃতা, গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করে যাচ্ছেন। তাঁর চুম্বকময় আকর্ষনীয় বক্তৃতা শ্রবণ করে অসংখ্য বনী আদম ফিরে এসেছেন কুসংস্কার ও অন্ধ অনুসরণের বেষ্টনী থেকে। ঠিক তেমনিভাবে ঈমান, আক্বীদা ও কাঙ্খিত পথের সঠিক সন্ধান পেয়ে ধন্য হচ্ছেন ভিত্তিহীন ধারণায় জর্জরিত কিংকর্তব্যবিমূঢ় অগণিত মানব সন্তান। মাঝে মধ্যে হযরত জামিয়ার বাইতুল করীম প্রধান জামে মসজিদে জামিয়ার শিক্ষার্থীদের মাঝে কুরআন-সুন্নাহ্‌র আলোকে দিক-নির্দেশনামূলক সারগর্ভ বক্তৃতা প্রদান করতে গিয়ে বলেনঃ “হে জামিয়ার সুযোগ্য সন্তানেরা! তোমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, তোমরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের লক্ষ কোটি ধর্মপ্রাণ তাওহীদী জনতাকে ধর্মীয় ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস ও পশ্চিমা কৃষ্টি-কালচার, তাহ্‌যীব-তামাদ্দুনের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা তোমাদেরকেই করতে হবে।

ইসলামী ঝান্ডার ধারক ও বাহক হয়ে ইসলামের সুদৃঢ় সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় তোমাদেরকেই অবতীর্ণ হতে হবে। সেহেতু ইল্‌ম, আমল ও সচ্চরিত্রের আসমানী শক্তি সঞ্চয় করে তাগুত তথা সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণে নিজেদেরকে তৈরী করে নাও”। এমনিভাবে বহছ-মুবাহাছার তথা তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে সমাজ থেকে কুসংস্কার ও বিদ্‌আতকে দূরীভূত করার ব্যাপারে হযরতের অবদান অতুলনীয়। আধ্যাত্মিকতাঃ কর্মময় জীবনে হাজারো ব্যস্ততা সত্ত্বেও সময় ও নিয়মানুবর্তিতা হযরতের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দিবা-রাত্রির মূল্যবান সময়গুলোকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে অধ্যাপনা, মাদ্রাসা পরিচালনা, সাথে সাথে নামায-তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দর্শনার্থী ও শুভার্থীদেরকে সাক্ষাতদান ইত্যাদি সম্পাদন করে থাকেন।

গভীর রজনীতে বিশ্ববাসী যখন গভীর নিদ্রায় বিভোর, ঠিক সেই মুহূর্তে নিদ্রা ত্যাগ করে জরুরত সেরে দাঁড়িয়ে যান তাহাজ্জুদে এবং একান্ত নির্জনে বসে আদায় করেন বিভিন্ন ধরনের অযীফা। কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন নিজের জন্য, দেশের জন্য, মুসলিম উম্মাহ্‌র জন্য। এক কথায় চূড়ান্ত পার্যায়ের মুত্তাক্বী ও পরহেযগার, খোদাভীরু, তাক্বওয়া ও পরহেযগারীর মূর্তপ্রতীক এ মহান ব্যক্তিত্ব আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত থাকতে সাধনায় সদা নিজেকে ব্রত রাখেন। প্রকাশ্যে-গোপনে, শয়নে-স্বপনে, সরবে-নিরবে, আনন্দে-বেদনায়, সুখে-দুঃখে, সুস্থতায়-অসুস্থতায়, ভ্রমণে-বাসস্থানে, মোটকথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হযরতের তাক্বওয়ার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য চির অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। যেমনিভাবে হযরতের ইল্‌মে যাহেরীর মাধ্যমে অসংখ্য লোক হিদায়াতের দিক নির্দেশনা পাচ্ছে, তেমনিভাবে হযরতের ইল্‌মে বাতেনী অর্থাৎ- আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমেও বহু লোক আত্মশুদ্ধির মত দৌলত লাভ করতে পেরেছেন।

আধ্যাত্মিক ধারায় হযরতের কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় চার শত জন ভাগ্যবান সরাসরি ইজাযতপ্রাপ্ত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। যাঁদের তালিকা হযরতের লিখিত “ফয়ূজাতে আহ্‌মদিয়া” নামক গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন দিকে রয়েছে যেমনি হযরতের কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা, ঠিক তেমনিভাবে কলমী জিহাদের ময়দানেও রয়েছে হযরতের অসাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তিক্ষ্ন গবেষণার দুর্লভ প্রতিভার বাস্তব প্রতিফলন। যিনি হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও শির্‌ক বিদ্‌আত ও অসংখ্য ভ্রান্ত মতবাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে রচনা করে যাচ্ছেন অতি মূল্যবান গ্রন্থ। লিখনীর ময়দানে হযরতের ক্ষুরধার কলম বাতিলের আতঙ্ক স্বরূপ।

হযরতের রচিত অনেক কিতাব বাতিলের ভিতকে নড়বড় করে দিয়েছে। এসব গ্রন্থাবলী থেকে সাধারণ মুসলমানদের পাশাপাশি উলামায়ে কিরামও যথেষ্ট উপকৃত হচ্ছেন। হযরতের রচিত সাহিত্যিকতা, কোমলতা ও সাবলিলতায় পরিপূর্ণ ভ্রান্ত মতবাদের মুখোশ উম্মোচনকারী যেসব গ্রন্থসমূহ আলেম উলামাসহ সর্বস্তরের পাঠক মহলে সমাদৃত, সাথে সাথে গ্রহণযোগ্যতারও শীর্ষে, সেগুলো হল- উর্দুঃ ১• আল বয়ানুল ফাসিল বাইনাল হক্কে ওয়াল বাতিল, ২• আল হুজাজুল ক্বাতিয়াহ্‌ লিদাফয়িন নাহ্‌জিল খাতেয়াহ, ৩• আল-খায়রুল কাসীর ফী উসূলীত্‌ তাফ্‌সীর, ৪• ইসলাম ওয়া ছিয়াছত, ৫• ইজহারে হাক্বীক্বত, ৬• তাক্‌ফীরে মুসলিম, ৭• চান্দ রাওয়েজাঁ ৮• ফয়ূজাতে আহ্‌মদিয়া, ৯• বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফয়জুল জারী এবং মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রমুখ। বাংলাঃ ১• হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ২• ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ৩• ইসলাম ও রাজনীতি, ৪• ইজহারে হাক্বীক্বত বা বাস্তব দৃষ্টিতে মওদূদী মতবাদ, ৫• তাক্‌ফীরে মুসলিম বা মুসলমানকে কাফির বলার পরিণাম, ৬• সত্যের দিকে করুণ আহ্বান, ৭• ধুমপান কি আশীর্বাদ না অভিশাপ, ৮• একটি সন্দেহের অবসান, ৯• একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া, ১০• তাবলীগ একটি অন্যতম জিহাদ, ১১• ইছমতে আম্বিয়া ও মি’য়ারে হক্ব, ১২. সুন্নাত-বিদআতের সঠিক পরিচয় এবং ১৩• বায়আতের হাক্বীক্বত। এছাড়াও উর্দু ও বাংলা ভাষায় হযরতের আরো অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

আজ আমরা তথা সমগ্র জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ফেরেস্তা সুলভ স্নিগ্ধতায় স্নাত বুযুর্গ হযরতুল আল্লাম আলহাজ্ব মাওলানা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী (দা•বা•)কে পেয়ে গৌরবান্বিত বোধ করছি। তিনি কেবল গতানুগতিক একজন মুহ্‌তামিম বা শাইখুল হাদীস নন, বরং ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রতিভাবান ব্যক্তি গঠনের এক অভিনব কারিগরও বটে। তাই তো আজ বিশ্ববাসী সন্ধানী নজরে অবলোকন করছেন যে, হযরতের হাতে গড়া অসংখ্য ভক্ত ও শাগরিদবৃন্দ বিশ্বের আনাচে কানাচে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে দ্বীনের সুবাসিত সুঘ্রাণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এক কথায় যে আদর্শ পুরুষের প্রজ্ঞাময় আচরণে ব্যক্তিত্বে প্রিয় নবীর শিক্ষা ও আদর্শের পরিপূর্ণ প্রতিফলন ঘটে। যাঁদের দেখে হযরত সাহাবায়ে কিরামের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে উঠে, যে মহান চরিত্রের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নায়েবে নবীর সুউচ্চ মর্যাদার সুমহান আসনে অধিষ্ঠিত করা যায়।

সেরকমই একজন ব্যক্তিত্ব হযরত আল্লামা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী সাহেব (দা•বা•) বর্তমান নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের তোড়ে ভেসে যাওয়া মানব গোষ্ঠীকে একটা স্থির ও পুতঃপবিত্র পথে টেনে আনার লক্ষ্যে অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তি গড়ার জন্য যে ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন, হযরতুল আল্লাম আল্‌হাজ্ব মাওলানা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী (দা•বা•)এর জীবন প্রবাহ সে চাহিদা পুরণ করতে পূর্ণ সক্ষম হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমরা প্রার্থনা করি, তিনি যেন হযরতের আফিয়াতময় হায়াতে বরকত দান করেন এবং হযরতকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অর্পিত দায়িত্বে ব্রত রাখেন। যাতে হযরতের ফয়েজ, বরকত এবং দিক-নির্দেশনা আরো দীর্ঘকাল আমরা লাভ করতে পারি। তাছাড়া হযরতের অনলঝরা ওয়াজ-নসীহতে বহু পথহারা লোক সঠিক পথের দিশা লাভ করবে এবং বর্তমান ইসলাম ও মুসলমানদের সংকটকালীন সময়ে পথহারা মুসলমানরা যেন হযরতের কাছ থেকে পথের দিক-নির্দেশনা পান, সে কামনাই করি।

আমীন আবু সাঈদ যশোরী ০১৭২৬২৭৫৬৬৫/০১৯১৮৬২০০০৫

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.