আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পাসপোর্ট বিড়ম্বনা!!!!!!!

সত্য প্রকাশে সর্বদা আপোষহীন ১৩ই ফেব্রুয়ারী সকাল ৭টায় পাড়ার এক আঙ্কেলের সাথে না খেয়ে ছুটলাম যশোরে, গন্তব্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস,যশোর । একেতো নিজের কোন পাসপোর্ট নেই, তার উপর কখনও পাসপোর্ট অফিসেও যাইনি, সবমিলে আমার ভিতর কিছুটা রোমাঞ্চ আর কিছুটা শঙ্কা কাজ করছিলো। পাসপোর্ট অফিসের কাজ বলতে, আমার জানা ছিল- নির্দিষ্ট ফরম পুরন,তাতে পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি লাগান,জন্ম নিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি ও যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৩০০৫/=(তিন হাজার পাঁচ টাকা মাত্র) ব্যাংক ড্রাফট করে অফিসে জমা দিতে হবে, অতঃপর- আমাকে ছবি তোলা এবং ফিঙ্গারিং সংরক্ষণের তারিখ দেওয়া হবে। তো এই তালিকাবদ্ধ কর্ম সম্পাদনে আমরা যশোর শহরের পালবাড়ির মোড়ে নামলাম । সামান্য নাস্তা সেরে ইজিবাইক যোগে ব্যাংক ড্রাফট করতে সোনালি ব্যাংক যশোর কর্পোরেট ব্রাঞ্চে গেলাম ।

ব্যাংকে পৌঁছে দেখি, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষের আনাগোনা । ইতর ভাষায় এদেরকে- “দালাল” বলা হয় । এদের একজন(সবুজ, বেজপাড়া, যশোর) আমাদেরকে বলল- পাসপোর্ট করবেন? ফরম নিয়েছেন? আমরা হ্যাঁ বলাতে উনি বলল- এ ফরমে হবেনা। আমরা জানি যে, এই ফর্মেই হবে কিন্তু কি আর করা!অতপর আমরা ব্যাংক ড্রাফট করার জন্য ফর্ম পূরণ করলাম, এই সময় অন্য একজন বলল- ভাই, ফর্ম ঠিক মত পূরণ করা হয়নি। আমার কাছে দেন।

আমরা সহজ সরল ভাবে দিলাম। ওমা! ফর্মের উল্টোপিঠে নাম ঠিকানা লিখতে বলে, আমার কাছে ১০ টাকা দাবি করল। কিছু না ভেবেই দিলাম। এরপর আমার সবুজের আগমন-নতুন ফর্ম, ছবি আর পাসপোর্ট ফর্ম সত্যায়িত বাবদ ১০০ টাকা দিতে হবে। চরম বিরক্ত হয়ে তাও দিলাম।

সবুজ জানালো, আমাকে ১০০০ টাকা দিলে আজকের মধ্যে ছবি তোলা এবং ফিঙ্গারিংের কাজ সেরে দিব। আমরা রাজি হলাম না কারন আমাদের জানা মতে- সরকার বর্তমানে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও পাসপোর্ট অফিসকে দালাল মুক্ত করেছেন । এমনই বদ্ধমূল ধারনা নিয়ে আমরা দুইজন পাসপোর্ট অফিসে গেলাম। পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছানোর পর দেখি বাইরে কমপক্ষে ৫০-৬০ জন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের মতই মহৎ উদ্দেশে। দশ মিনিট আমরা সামগ্রিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করলাম।

এই সময়ে যা পেলাম তা হল- দালাল চক্র টাকার বিনিময়ে আমাদের মত মক্কেলদের কাছ থেকে ফর্ম নিয়ে ভিতরে জমা দিচ্ছে আর যারা সততা নিয়ে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট করবে বলে সংকল্পবদ্ধ তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, লাইন আর সামনে এগুচ্ছেনা!!!!! ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গনপ্রায় অবস্থায় আমরা একজন দালালের শরণাপন্ন হলাম। তিনি আমাদের পরিস্কার জানালো- একবারে ১৭০০ টাকা দিলে ফর্ম জমা দিয়ে আজকের মধ্যে ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। আমরা দর কষাকষি করলে লোকটি জানান- কি করব!বিশ্বাস করেন, হারাম করে এর মধ্যে মাত্র ২৫০ টাকা আমার থাকবে, ভিতরের স্যারদের বেশি দিতে হচ্ছে। আমরা ভিরমি খেলাম! এতো টাকা দিতে হবে!!!!! একটু পর দেখলাম একজন পুলিশ কনস্টেবল( আলমগীর) ফাইলের মধ্যে কিছু ফর্ম জমা নিয়ে অফিসে ঢুকছে। আমরা ডাক দিতেই জানালো- একদাম ১৫০০ টাকা আজকেই ছবি তোলা।

রাজি হলাম না। আলমগীর চলে গেল, আসলো মামুন(পু.ক.) চাইলো ১৪০০ টাকা ছবিতোলা আগামিকাল। মন খারাপ হয়ে গেল! অগত্য, স্মরণ করলাম সবুজ কে । সবুজ জানালো ১০০০ টাকা লাগবে ছবি তোলা আগামিকাল। ঘড়ির কাঁটা তখন চারটা ছুঁই ছুঁই, অফিস বন্ধের উপক্রম প্রায়।

ভাবলাম, অনেক হয়েছে বাবা, এবার ক্ষ্রান্ত হওয়া যাক। দর কষাকষির মাধ্যমে ৯৫০ টাকায় মিটমাট করে ফর্ম জমা দিয়ে আমরা ফিরতি গাড়িতে উঠে বসলাম। অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন, গাড় কণ্ঠে বলল- আপনি মাহবুব হাসান? জি বলায়, তিনি বলল- আপনার ছবি তোলা ১৭ তারিখে(ফেব্রুয়ারী), আর আগামিকাল ছবি উঠতে চাইলে আরও ৪০০ টাকা দিতে হবে। আমি তো অবাক!!!অতঃপর, আরও অতিরিক্ত ৩০০ টাকা প্রদানের মাধমে পরদিন ছবি এবং ফিঙ্গারিং এর কাজ শেষ করলাম। ২৮ ফেব্রুয়ারী, বিকাল ৫ টা ১৩ মিনিট হঠাৎ ফোন আসলো- আপনি মাহবুব হাসান?ডিএসবি(DSB)অফিস থেকে বলছি!আপনি পাসপোর্টের আবেদন করেছেন, তাই ভেরিফিকেশন করতে আসছি।

দুলাভাইকে ফোনে জানালাম, অতপর তাকেও ৫০০ টাকা দিতে হল। এমতাবস্থায়- অপেক্ষায় আছি কবে পাসপোর্ট পাবো!!!!!!! আচ্ছা বলুন তো? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের নেত্রী যে সুশাসনের স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সুবাতাস আমাদেরকে ভোগ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন সে জন্য তাঁকে সাধুবাদ(!!!!!!!) না জানিয়ে আর পারছিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের নেত্রী যে সুশাসন,স্বচ্ছ,জবাবদিহিমূলক-কথা গুলো পুরোমাত্রায় ব্যর্থ, বিশ্বাস না হলে কেও একবারের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যান। বহুল প্রতীক্ষিত এমআরপি(Machine Readable Passport) যেটার জন্য আমাকে সরকারের তহবিলে মাত্র ৩০০৫ টাকা দিলেই হত, সেখানে আমাকে দিতে হল- ১০+১০০+৩০০৫+৯৫০+৩০০=৪৩৬৫(চার হাজার তিনশত পয়ষট্টি) টাকা মাত্র। উল্লেখ্য, উক্ত খরচ গাড়ি ভাড়া এবং হোটেল খরচ ব্যতিরেকে।

অনেকেই হয়ত বলবেন-দালালের কাছে যাবেন কেন? তাদের কাছে আমার অনুরধ, আপনি উত্তর পাওয়ার জন্য একবার এই পুণ্যস্থান! থেকে ঘুরে আসুন?????? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.