আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষমতায় গেলেই কি মগজটাকে ডিপ ফ্রিজে জমা রেখে যেতে হয়?

একবার আপনারে চিনতে পারলে রে , যাবে অচেনা রে চেনা

(এটা আমার আগের পোস্টটিকে সংস্কার করে রি-পোস্ট করা হয়েছে, সেই অর্থে এটি একটি সংস্কারপন্থী পোস্ট) ক্ষমতায় গেলেই কি মগজটাকে ডিপ ফ্রিজে জমা রেখে যেতে হয়? তা না হলে খুব সাধারন অশিক্ষিত মানুষ ও যে সরল সত্যটা বোঝে ক্ষমতাবানরা কেন তা বোঝেন না? নাকি ক্ষমতাবানদের মগজ মোহের হলুদ আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। এ দেশে এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কানসাট,ফুলবাড়ীর পর এবার আড়িয়াল বিল। সেই একই নিয়মে সরকার নিজেকে দাঁড় করিয়েছে জনগনের মুখোমুখি। এবার দশ লক্ষ্ মানুষের বিপরীতে সেই মানুষের সরকার।

সরকারের কি দরকার? নাম, বিমানবন্দর, মানুষ, নাকি মানুষের রক্ত? আড়িয়াল বিল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে লেখালেখি হচ্ছে। নানান তথ্যউপাত্তসহ চমৎকার সব লেখা লিখেছেন আমদের ব্লগাররা। পত্রিকার কলাম লিখিয়েরাও চুপ করে নেই। শুধু সরকার ঘুমিয়েছিলেন কড়া ডোজের আফিম খেয়ে। এ আমাদের দূর্ভাগ্য ও বটে।

নাহলে কেন প্রতিবারই আমাদের এরকম দেখতে হবে? আমাদের সরকার আমাদেরই বুকে চালাবে তার ক্ষমতার তপ্ত সিসা ! বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নতুন আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মান করার, যার নাম হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। কিন্তু এটা কি আদৌ জনগনের দাবি ছিল? আরো একটি বিমান বন্দরের কি খুব প্রয়োজন ছিলো? ক্ষমতায় আসার পর ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রথমে এ বিমান বন্দরের জন্য প্রাথমিকভাবে স্থান নির্ধারন করা হয়। সেখানেও প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল সরকার। পরে সেখান থেকে সরে এসে ঢাকার কাছে মুন্সিগঞ্জের আড়িযাল বিলে বিমান বন্দর নির্মান করার জন্য স্থান নির্ধারন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত এ বিমান বন্দরের জন্য আড়িয়াল বিলে পচিঁশ হাজার একর জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু করবে সরকার ।

এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে এলাকার মানুষ । তাদের দাবী আড়িয়াল বিলে বিমান বন্দর হলে তাদের ফসলী জমি নষ্ট হবে । ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ কয়েকটি জেলার অধিবাসীরা ওই বিলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বিমানবন্দর নির্মাণ করা হলে হাজার হাজার লোক বেকার হয়ে পড়বে। দেশে খাদ্যশস্যের ঘাটতি দেখা দিবে।

তবে সরকার বলছে আড়িয়াল বিল এক ফসলী জমি । যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে। এখানেই মজাটা দেখেন-ফুলবাড়ীর মানুষ গুলোকেও এরকম গল্প শুনিয়েছিল আমাদের সেইসময়ের সরকার বাহাদুর আর তাদের বশংবদেরা। তখন তাদের বলা হয়েছিল উন্মুক্ত কয়লা খনি করতে গিয়ে যারা ভূমি হারাবেন তাদের জন্য নির্মাণ করা হবে আধুনিক ফ্লাট বাড়ি। কিন্তু মানুষগুলো যেন কবিতার সেই বাবুই পাখির মত।

“নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা”। সেদিন দা-খুন্তি নিয়ে বেরিয়েছিল নিজেদের ঠিকানা রক্ষার স্বার্থে। এবারও তাই ঘটলো। আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মানের সরকারী পরিকল্পনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে শতশত মানুষ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। আড়িয়াল বিলে নতুন বিমান বন্দর নির্মানের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন পুলিশ নিহত এবং ১২জন গুরুতর আহত হয়েছে ।

এই মৃত্যুর দায় কার? এই পুলিশগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের সরকারেরা। যারা মারা যায় তাদের পরিবারের সদস্যরা কাদের অভিশাপ দেয়? বিক্ষুব্ধ মানুষদের নাকি সরকার কে?তাদের অভিশাপের আগুনে কে পোড়ে? মানুষ নাকি সরকার?ইতিহাস কি বলে? ইতিহাসের এ বড় নির্মম শিক্ষা-ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আমরা কেবল পুনরাবৃত্তি দেখি। একি ঘটনা। কেবল পাত্র পাত্রী চেঞ্জ।

সেবারে মাহমুদুর রহমান এবারে শফিক আলম মেহেদি(বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব) কিংবা আবদুল মান্নান(গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী)। আসুন তাদের বানী গুলো শুনি। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব শফিক আলম মেহেদি কয়েকদিন আগে বিবিসিকে বলেন -বিমান বন্দরের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সাধারন মানুষের সম্পৃক্ততা নেই । মি: মেহেদি আরো বলেন , “আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর না করে অন্য যে কোন জায়গায় বিমান বন্দর করলে এর চেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বিমান বন্দর হলে স্থানীয় মানুষের কর্মস্থান হবে৻ ” মন্ত্রী মহোদয় তো বিমান বন্দরের জন্য জান দিয়ে দেবেন-"আমার শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকতে আমি আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধুর নামে বিমানবন্দর করবোই" ।

বিক্ষোভকারীরা তার ভাষায় "ওরা বিএনপি জামাত চক্র! যদ্ধাপরাধীদের বিচার বাঞ্চাল করতে এই ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সাধারণ মানুষে্র সাথে এর সম্পৃক্ততা নাই। " কি নির্লজ্জ আর হাস্যকর এই সব মানুষ আমাদের মন্ত্রী! এইসব অন্ধ মানুষদের নিয়ে আমাদের সরকার! সরকার বদল হবে,পাত্রপাত্রী বদল হবে শুধু সংলাপ গুলো একই রকম রয়ে যাবে। নামকরন আওয়ামীলীগের একটি ম্যনিয়া। রোগটি পুরোন।

ধারনা করি দুরারোগ্যও। মাঝখান থেকে বঙ্গবন্ধু মারা যান বহুবার। ডালিম,ফারুক,রশীদ’রা যেরকম নির্মম ভাবে মেরেছিলেন তার চেয়ে বহুগুণ নিষ্ঠূরতায় মা্রা পড়েন ‘পড়নে মুজিবকোট’দের হাতে। অসহায় বঙ্গবন্ধু। মগজহীণ লোভী মানুষগুলো তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আড়িয়াল বিলের মানুষদের সামনে।

এই ‘মুজিবকোট’দের কাছে বঙ্গবন্ধু আসলে কিছুনা। (কিছু যে না তা আমরা দেখেছি আগস্ট’৭৫ এর পরবর্তী সময়টিতে তাদের অদ্ভূত নীরবতায়)। ধারণা করি এরা এই নামকরণের খেলায় মাতে এক ধরণের কমপ্লেক্স থেকে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষতি করা ছাড়া যে এরা কোনদিন কিছু করেনি তা এরা খুব ভালো করেই জানে । জাতিকে ও এরা কিছু দিতে পারেনি।

তাই নামকরণে নিজেদের বিশ্বস্ততা প্রমাণের ফালতু চেষ্টা। আরেকটা অংক আছে এখানে। নতুন বিমানবন্দর সমান কয়েক শ কোটি টাকা। পুরনো গুলো সংস্কারে তাই তাদের আগ্রহ দেখিনা। পাটিগনিতের ঐকিক নিয়মের অংক এটা।

আমরা সাধারণ মানুষ এই অংকে কাঁচা। তাই আমরা আম পাব্লিক। ওনারা মিনিস্টার। সরকারের লোক। সরকার আসলে কি? সরকার কি কোন নির্জীব সত্তা? শুধুই কি একটা কনসেপ্ট? নাকি এর প্রাণ আছে? মানুষের মত এর বিবেক আছে কি? বিলের কান্না শোনার মত মন কি তার আছে? বিলের বুকে যে ডাহুকের গান নিঃসংগ সন্ধ্যার বুকে বিরহের মত বাজে-তার গান শোনার মত কান কি তার আছে? কিংবা হলুদ ফসলের গায়ে যে বাতাস শিস কেটে যায় সেই শিসটূকু শোনার মত কান কি আছে তার? সরকার কি শুনতে পাবে নিহত হওয়া পুলিশ সদস্যটির স্বজনদের কান্না।

মনে প্রশ্ন জাগে। উত্তর মেলেনা । দুঃখ লাগে-আমাদের সরকার গুলো এমন অসাড় হয় কেন? এমন বধির কেন হয়? তথ্য ঋণঃ বিবিসি,প্রথম আলো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.