আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু হা দী স সংগ্রহ



সংগৃহিত : http://www.islam.net.bd/content/view/195/41/ بسم الله الرحمن الرحيم সি হা হ্‌ সি ত্তা’ র অ ন্ত র্ভু ক্ত সুনান আবু দাউদ হা দী স গ্র ন্থ হ তে চ য়ি ত কিতাবুত তাহারাত ১। হযরত আয়েশা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালার যিকিরে মশগুল থাকতেন। (হাদীস নং-১৮)। ২।

মুআয ইবন জাবাল (রা•) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি অভিসম্পাতযোগ্য কাজ থেকে দূরে থাকঃ পানিতে থুথু ফেলা, যাতায়াতের পথে এবং ছায়াদার স্থানে মলত্যাগ করা। (হাদীস নং-২৬)। ৩। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যদি আমি মুমিনদের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে তাদেরকে এশার নামায বিলম্বে (রাত্রির এক-তৃতীয়াংশের পর) পড়তে ও প্রত্যেক নামাযের সময় মেসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। (হাদীস নং-৪৬)। ৪। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন।

তিনি ইরশাদ করেছেনঃ কুকুর যদি তোমাদের কারও পাত্রে লেহন করে খায় বা পান করে, তবে তা পাক করার নিয়ম এই যে, তা সাতবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে, প্রথমবার মাটি দ্বারা ঘর্ষণ করতে হবে। (হাদীস নং-৭১)। ৫। ছাওবান (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তিনটি কাজ কারও জন্য বৈধ নয়।

(১) যে ব্যক্তি কোন কাওমের ইমামতি করে এবং সে তাদেরকে বাদ দিয়ে কেবল নিজের জন্য দু’আ করে। যদি কেউ এরূপ করে তবে সে নিশ্চয়ই তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। (২) কেউ যেন পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে কোন ঘরের অভ্যন্তরে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে। যদি কেউ এরূপ করে, তবে যেন সে বিনানুমতিতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করার মত অপরাধ করল। (৩) মলমূত্রের বেগ চেপে রেখে তা ত্যাগ না করার পূর্ব পর্যন্ত কেউ যেন নামায না পড়ে।

(হাদীস নং-৯০)। ৬। আলী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (বিবেক-বিবেচনা) উপর নির্ভরশীল হত, তবে মোজার উপরের অংশে মাসেহ না করে নিম্নাংশে মাসেহ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হত। রাবী হযরত আলী (রা•) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা•) কে তাঁর মোজার উপরের অংশে মাসেহ করতে দেখেছি।

(হাদীস নং-১৬২) ৭। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ নামাযের মধ্যে থাকাকালীন যদি অনুভব করে যে, তার পশ্চাৎ- দ্বার দিয়ে কিছু নির্গত হয়েছে বা হয়নি এবং তা তার মনে সন্দেহের উদ্রেক করে- তবে তার নামায ত্যাগ করা উচিৎ নয়; যতক্ষণ না সে বায়ু নির্গমনের শব্দ শোনে অথবা দুর্গন্ধ অনুভব করে। (হাদীস নং-১৭৭) ৮। হযরত আলী (রা•) হতে বর্ণিত।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ঘরে ছবি, কুকুর ও অপবিত্র লোক থাকে- সেখানে রহমতের ফেরেশতাগণ (নতুন রহমতসহ) প্রবেশ করেন না। (হাদীস নং-২২৭) ৯। আয়েশা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। অতঃপর তিনি ফজরে নামায পড়তেন।

তাঁকে আমি গোসলের পর আর নতুনভাবে উযু করতে দেখি নাই। (হাদীস নং-২৫০) ১০। আতা (রহ) থেকে আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•)-র সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দুই ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে নামাযের সময় উপনীত হওয়ায় তারা পানি না পাওয়ায় তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে।

অতঃপর উক্ত নামাযের সময়ের মধ্যে পানি প্রাপ্ত হওয়ায় তাদের একজন উযু করে পুনরায় নামায আদায় করল এবং অপর ব্যক্তি নামায আদায় করা হতে বিরত থাকে। অতঃপর উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করল। (তিনি (সা•) বলেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি নামায পুনরায় আদায় করেনি সে সুন্নাত মোতাবেক কাজ করেছে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি উযু করে পুনরায় নামায আদায় করেছে তার সম্পর্কে বলেনঃ তুমি দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হয়েছ। (হাদীস নং-৩৩৮) ১১।

আওস ইবন আওস আছ- ছাকাফী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করাবে (জুমুআর নামাযের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা সুগন্ধিযুক্ত দ্রব্রাদি দ্বারা ভালরূপে গোসল করবে, অতঃপর সকাল-সকাল মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে বসে খুতবা শুনবে এবং যাবতীয় অপ্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম হতে বিরত থাকবে তার মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসাবে পরিগণিত হবে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ এক বছরের দিনের রোযা এবং রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদের নামায আদায়ের ছওয়াবের সমতুল্য হবে। (হাদীস নং-৩৪৫) কিতাবুস সালাত ১২। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন অত্যধিক গরম পড়বে তখন যুহরের নামায বিলম্বে আদায় করবে। কেননা নিশ্চয়ই অত্যধিক গরম জাহান্নামের প্রচণ্ড তাপের অংশ বিশেষ। (হাদীস নং-৪০২) ১৩। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের নামাযের এক রাকাত আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, সে যেন পুরা নামায (ওয়াক্তের মধ্যে) আদায় করল (এবং তা কাযা গণ্য হবে না)।

অপরপক্ষে যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের নামাযের এক রাকাত আদায় করতে পারল সে যেন পুরা নামাযই (ওয়াক্ত থাকতেই) আদায় করল। (হাদীস নং-৪১২) ১৪। ইবন উমার (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আসরের নামায হারাল (পড়ল না) সে যেন তার পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ সব থেকে বঞ্চিত হল। (হাদীস নং-৪১৪) ১৫।

আসেম (রহ) থেকে মুআয ইবন জাবাল (রা)- র সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা এশার নামায আদায়ের জন্য নবী করীম (সা•)-এর প্রতীক্ষায় ছিলাম। তিনি সেদিন এত বিলম্ব করেন যে, ধারণাকারীর নিকট এরূপ প্রতীয়মান হয় যে, তিনি আদৌ বের হবেন না। আমাদের কেউ কেউ এরূপ মন্তব্য করল যে, হয়ত তিনি ঘরেই নামায আদায় করেছেন। আমরা যখন এরূপ অবস্থায় ছিলাম, তখন নবী করীম (সা•) বের হলেন।

তখন সাহাবায়ে কিরাম যা বলাবলি করছিলেন নবী করীম (সা•)- কে তাই বলেন। নবী করীম (সা•) বলেনঃ তোমরা এই নামায বিলম্বে আদায় করবে। কেননা এই নামাযের কারণেই অন্যান্য উম্মাতগণের উপরে তোমাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত। ইতিপূর্বে কোন নবীর উম্মাত এই নামায আদায় করেনি। (হাদীস নং-৪২১) ১৬।

আবু কাতাদা ইবন রিবঈ (রা•) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন- নিশ্চিত আমি আপনার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি নিজের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিঃ যে ব্যক্তি তা সঠিক ওয়াক্তসমূহে আদায় করবে- আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি তার হেফাজত করে না- তার জন্য আমার পক্ষ থেকে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। (হাদীস নং-৪৩০) ১৭। আবু যার (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আবু যার! যখন শাসকগণ নামায আদায়ে বিলম্ব করবে- তখন তুমি কি করবে? জবাবে আমি বলি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ কি? তিনি বলেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে একাকী নামায আদায় করবে।

অতঃপর যদি তুমি ঐ ওয়াক্তের নামায তাদেরকে জামায়াতে আদায় করতে দেখ, তবে তুমিও তাদের সাথে জামায়াতে শামিল হবে এবং তা তোমার জন্য নফল হবে। (হাদীস নং-৪৩১) ১৮। আনাস (রা•) থেকে বর্ণিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লোকেরা মসজিদে পরস্পরের মধ্যে (নির্মাণ ও কারুকার্য নিয়ে) গর্ব না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। (হাদীস নং-৪৪৯) ১৯।

আয়েশা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং তা পবিত্র, সুগন্ধিযুক্ত ও পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশ দেন। (হাদীস নং-৪৫৫) ২০। আনাস ইবন মালিক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমার উম্মাতের কাজের বিনিময় (ছওয়াব) আমাকে দেখান হয়েছে- এমনকি মসজিদের সামান্য ময়লা পরিষ্কারকারীর ছওয়াবও।

অপরপক্ষে আমার উম্মাতের গুনাহসমূহও আমাকে দেখান হয়েছে। নবী করীম (সা•) বলেনঃ আমি এ থেকে অধিক বড় কোন গুনাহ দেখিনি যে, কোন ব্যক্তি কুরআনের কোন আয়াত অথবা সুরা মুখস্ত করবার পর তা ভুলে গেছে। (হাদীস নং-৪৬১) ২১। আবু কাতাদ (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে পৌঁছে বসার পূর্বেই যেন দুই রাকাত (তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ) নামায আদায় করে।

(হাদীস নং-৪৬৭) ২২। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতক্ষণ কোন বান্দা মসজিদে নামাযের জন্য অপেক্ষা করবে, ততক্ষণ সে নামাযী হিসেবে গণ্য হবে। ঐ ব্যক্তির উযু নষ্ট না হওয়া বা ঘরে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য এইরূপ দু‘আ করতে থাকেঃ “ইয়া আল্লাহ! তাকে মাফ করে দাও! ইয়া আল্লাহ! তার উপর তোমার রহমত নাযিল কর। ” আবু হুরায়রা (রা•)কে ‘হাদাছুন’-এর অর্থ জিজ্ঞেস করা হলে- তিনি বলেন, যদি পায়খানার রাস্তা দিয়ে আস্তে বায়ু নির্গত হয়।

(হাদীস নং-৪৭১) ২৩। আবু হুরায়রা (রা•) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে কাউকে চীৎকার করে হারানো জিনিস তালাশ করতে শুনে সে যেন বলে, আল্লাহ তোমাকে তোমার ঐ জিনিস ফিরিয়ে না দিন। কেননা মসজিদ এইজন্য নির্মাণ করা হয়নি। (হাদীস নং-৪৭৩) ২৪। আবদুল মালিক থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত।

তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও এবং যখন তাদের বয়স দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদের শাস্তি দাও। (হাদীস নং-৪৯৪) ২৫। আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে- তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আযান শেষে) আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে।

কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা কর এবং ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহ তা’য়ালার একজন বিশিষ্ট বান্দা ঐ স্থানের অধিকারী হবে এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলার দু‘আ করবে তাঁর জন্য শাফাআত করা আমার উপর ওয়াজিব হবে। (হাদীস নং-৫২৩) ২৬।

আবুদ-দারদা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যখন কোন গ্রামে বা বনজঙ্গলে তিনজন লোক একত্রিত হয় এবং জামায়াতে নামায আদায় না করে- তখন শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। অতএব (তোমরা) অবশ্যই জামায়াতের সাথে নামায আদায় কর। কেননা দলচ্যুত বকরীকে নেকড়ে বাঘে ভক্ষণ করে থাকে। (হাদীস নং-৫৪৭) ২৭।

ইবন আব্বাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুআযযিনের আযান শুনে বিনা কারণে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতে নামায আদায় করবে না তার অন্যত্র আদায়কৃত নামায আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না (অর্থাৎ তার নামাযকে পরিপূর্ণ নামায হিসেবে গণ্য করা হবে না)। সাহাবীরা ওজর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সা•) বলেনঃ যদি কেউ ভয়ভীতি ও অসুস্থতার কারণে জামায়াতে হাজির হতে অক্ষম হয় তবে তার জন্য বাড়ীতে নামায পড়া দুষনীয় নয়। (হাদীস নং-৫৫১) ২৮। উছমান ইবন আফফান (রা•) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি এশার নামায জামায়াতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করল। আর যে ব্যক্তি ফজর ও এরশাদ নামায জামায়াতে আদায় করল সে যেন সারা রাতব্যাপী ইবাদতে মশগুল থাকল। (হাদীস নং-৫৫৫) ২৯। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদ হতে যার অবস্থান (বাসস্থান) যতদূরে, সে তত অধিক ছওয়াবের অধিকারী।

(হাদীস নং-৫৫৬) (ইবনে মাজা)। ৩০। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামায়াতের সাথে এক ওয়াক্তের নামায- একাকী পঁচিশ ওয়াক্ত নামায (আদায়ের) সমতুল্য। যখন কোন ব্যক্তি মাঠে বা বনভূমিতে সঠিকভাবে রুকু-সিজদা সহকারে নামায আদায় করবে, তখন সে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের সমান ছওয়াব পাবে।

(হাদীস নং-৫৬০) ৩১। বুরায়দা (রা•) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যারা অন্ধকার রজনীতে মসজিদে হাযির হয়ে জামায়াতে নামায আদায় করে- তাদেরকে কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। (হাদীস নং-৫৬১) ৩২। আবু ছুমামা আল-হান্নাত হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, মসজিদে গমনকালে কাব ইবন উজরা (রা•)-র সাথে পথিমধ্যে তাঁর সাক্ষাত হয়। রাবী বলেন, তখন আমি আমার হাতের অংগুলি মটকাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে ঐরূপ করতে নিষেধ করে বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযু করার পর মসজিদে গমনের ইচ্ছা করে, সে যেন তার হাতের অংগুলী না মটকায়। কেননা ঐ ব্যক্তিকে তখন নামাযী হিসেবে গণ্য করা হয়। (হাদীস নং-৫৬২) ৩৩।

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে (জামায়াতের পর) একাকী নামায আদায় করতে দেখে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নাই কি- যে এই ব্যক্তিকে সদকা দিয়ে তার সাথে একত্রে নামায পড়তে পারে? (হাদীস নং-৫৭৪) ৩৪। ইবন আব্বাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ তোমাদের মধ্যেকার উত্তম ব্যক্তি যেন আযান দেয় এবং বিশুদ্ধরূপে কুরআন পাঠকারী যেন তোমাদের ইমামতি করে। (হাদীস নং-৫৯০) ৩৫।

আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা•) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা তিন ব্যক্তির নামায কবুল করেন না। যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করে, অথচ মুকতাদীরা তার উপর অসন্তুষ্ট। যে ব্যক্তি নামাযের সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নামায আদায় করে এবং যে ব্যক্তি স্বাধীন মহিলা অথবা পুরুষ লোককে ক্রীতদাসী বা দাস বানায়। (হাদীস নং-৫৯৩) ৩৬।

আবু হুরায়রা (রা•) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলমান ইমামের পেছনে (জামায়াতের) ফরয নামাযসমূহ আদায় করা বাধ্যতামূলক- চাই সে (ইমাম) সৎ হোক অথবা অসৎ- এমনকি সে কবীরা গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে থাকলেও। (হাদীস নং-৫৯৪) ৩৭। হযরত জাবের ইবন আব্দুল্লাহ (রা•) হতে বর্ণিত। হযরত মুআয ইবন জাবাল (রা•) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এশার নামায আদায়ের পর স্বীয় সম্প্রদায়ে ফিরে গিয়ে পুনরায় তাদের ঐ এশার নামাযে ইমামতি করতেন।

(হাদীস নং-৫৯৯) ৩৮। আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যখন ইমাম নামাযের শেষ পর্যায়ে তাশাহুদের পরিমাণ সময় বসার পর তার উযু নষ্ট হবে তিনি কোন কথা (সালাম) বলার পূর্বে- এমতাবস্থায় নামায আদায় হয়ে যাবে এবং মোক্তাদীদের নামাযও পূর্ণ হয়ে যাবে- যারা ইমামের সাথে পুরা নামায পেয়েছে। (হাদীস নং-৬১৭) ৩৯। ইবন মাসউদ (রা•) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নামাযের মধ্যে অহংকার করে স্বীয় পরিধেয় বস্ত্র (লুংগি, জামা, পাজামা বা প্যান্ট গোছার নীচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখে, ঐ ব্যক্তির ভাল বা মন্দের ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালার কোন দায়িত্ব নেই । (হাদীস নং-৬৩৫) ৪০। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন এক ব্যক্তি তার পাজামা (টাখনু গিরার নীচ পর্যন্ত) ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ তুমি যাও উযু করে আস! সে গিয়ে উযু করে ফিরে আসে।

তিনি তাকে পুনরায় গিয়ে উযু করে আসার নির্দেশ দেন। সে পুনরায় উযু করে আসলে উপস্থিত এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তাকে (উযু থাকাবস্থায়) কেন পুনরায় উযু করার নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ এই ব্যক্তি কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল এবং আল্লাহ তা’য়ালা এরূপ ব্যক্তিদের নামায আদৌ কবুল করেন না। (হাদীস নং-৬৩৬) ৪১। আয়েশা (রা•) থেকে বর্ণিত। নবীর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলারা ওড়না ছাড়া নামায আদায় করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

(হাদীস নং-৬৪১) ৪২। নুমান ইবন বশীর (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত হয়ে তিনবার বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর। আল্লাহর শপথ! তোমরা কাতার সোজা করে দন্ডায়মান হবে, অন্যথায় আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করবেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি মুসল্লীদেরকে পরস্পর কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা এবং গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি।

(হাদীস নং-৬৬২) ৪৩। আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ কাতারের ডানদিকের মুসল্লীদের উপর রহমত বর্ষণ করে থাকেন। (হাদীস নং-৬৭৬) ৪৪। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে প্রথম কাতারে গিয়ে দাঁড়াতে দেরী করতে দেখে বলেনঃ তোমরা প্রথম কাতারে এসো এবং আমার অনুসরণ কর। অতঃপর পরবর্তী লোকেরাও তোমাদের অনুসরণ করবে। এক শ্রেণীর লোক সবসময় সামনের কাতার থেকে পেছনে থাকবে। মহান আল্লাহও তাদেরকে পেছনে ফেলে রাখবেন। (হাদীস নং-৬৮০) ৪৫।

আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (কোন খোলা স্থানে) নামায আদায় করবে, তখন সে যেন সুতরা হিসাবে তার সামনে কিছু স্থাপন করে। যদি কিছু না পায় তবে সে যেন একটি লাঠি তার সামনে স্থাপন করে। যদি তার সাথে লাঠি না থাকে, তবে সে যেন তার সামনের মাটিতে দাগ টেনে নেয়। অতঃপর কেউ তার সম্মুখভাগ দিয়ে যাতায়াত করলে তার কোন ক্ষতি হবে না।

(হাদীস নং-৬৮৯) ৪৬। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামাযে রত অবস্থায় তার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে যথাসাধ্য বাধা দিবে। যদি সে বাধা উপেক্ষা করে তবে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কারণ সে একটা শয়তান।

(হাদীস নং-৬৯৭) ৪৭। সাঈদ ইবন গাযওয়ান থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে গমনকালে তাবূকে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি এক খোঁড়া ব্যক্তিকে দেখতে পেয়ে তার কারণ জিজ্ঞেস করেন। ঐ ব্যক্তি বলে, আমি তোমার নিকট এমন একটি বিষয়ের অবতারণা করব যা অন্যের নিকট প্রকাশের যোগ্য নয়।

অতঃপর সে বলে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকে একটি খেজুর গাছের নিকট অবতরণের পর বলেনঃ এটা আমাদের জন্য কিবলা বা সুতরা স্বরূপ। অতঃপর তিনি সেদিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। তখন আমার বয়স কম থাকায় আমি তাঁর ও খেজুর গাছের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে দৌড়িয়ে যাই। তখন নবী করীম (সা•) বলেনঃ সে আমাদের নামায নষ্ট করেছে, কাজেই আল্লাহ তার চলার শক্তি রহিত করুন। অতঃপর আমি আজ পর্যন্ত আর দাঁড়াতে সক্ষম হইনি।

(হাদীস নং-৭০৭) ৪৮। ইবন আব্বাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায়কালে একটি বকরীর বাচ্চা তাঁর সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দেন। (হাদীস নং-৭০৯) ৪৯। আবু সাঈদ (রা•) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কোন কিছু নামাযীর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার কারণে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না, তবে তোমরা সাধ্যানুযায়ী এরূপ করতে বাধা দেবে। কেননা (নামাযীর সামনে দিয়ে) গমনকারী একটা শয়তান। (হাদীস নং-৭১৯) ৫০। মালিক ইবনুল হুয়ায়রিছ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাত উঠাতে দেখেছি।

আমি তাঁকে রুকূতে গমনকালে এবং তা হতে উঠার সময় স্বীয় হস্তদ্বয় কানের উপরিভাগ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। ( রাফউল ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীস) (হাদীস নং-৭৪৫) ৫১। আলকামা (রহ•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা•) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায সম্পর্কে শিক্ষা দেব না? রাবী বলেন, অতঃপর তিনি নামায আদায়কালে মাত্র একবার হাত উত্তোলন করেন। ( রাফউল ইয়াদাইন না করা সম্পর্কে হাদীস) (হাদীস নং-৭৪৮) ৫২।

আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফরয অথবা নফল নামাযের প্রথমে, মাঝে বা শেষে যে কোন সময়ে দু‘আ পাঠ করা যায়। (হাদীস নং-৭৬৯) ৫৩। আম্মার ইবন ইয়াসির (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ এমন অনেক লোক আছে যারা নামায পড়ে কিন্তু তাদের নামায পুরাপুরি কবুল না হওয়ায় পরিপূর্ণ ছওয়াব প্রাপ্ত হয় না।

বরং তাদের কেউ ১০ ভাগের ১ ভাগ, ৯ ভাগের ১ ভাগ, ৮ ভাগের ১ ভাগ, ৭ ভাগের ১ ভাগ, ৬ ভাগের ১ ভাগ, ৫ ভাগের ১ ভাগ, ৪ ভাগের ১ ভাগ, তিনের- একাংশ বা অর্ধাংশ ছওয়াব প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (হাদীস নং-৭৯০) ৫৪। আব্দুল্লাহ ইবন আবু কাতাদা থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, সম্ভবতঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামায়াতে অধিক লোকের শরীক হওয়ার সুযোগ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রথম রাকাত দীর্ঘ করতেন। (হাদীস নং-৮০০) ৫৫।

উবাদা ইবনুস সামিত (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ফজরের নামাযের জামায়াতে শরীক ছিলাম। নামাযে কুরআন পাঠের সময় তার পাঠ তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। নামায শেষে তিনি বলেন, সম্ভবতঃ তোমরা ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ করেছ। আমরা বলি, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বলেন, তোমরা সূরা ফাতিহা ব্যতীত অন্য কিছু পাঠ করবে না।

কেননা যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়বে না, তার নামায হবে না। (হাদীস নং-৮২৩) ৫৬। আল-বারাআ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা, রুকু ও দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে প্রায় একই পরিমাণ সময় ব্যয় করতেন। (হাদীস নং-৮৫২) ৫৭।

আনাস ইবন মালিক (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায যেরূপ সংক্ষেপে কিন্তু পরিপূর্ণভাবে আদায় করতেন, আমি এরূপ নামায আর কারো পেছনে পড়ি নাই। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার পর এত দীর্ঘক্ষণ দন্ডায়মান থাকতেন যে, আমাদের মনে হত হয়ত তিনি ভুলে গেছেন। অতঃপর তিনি তাকবীর বলে সিজদা করতেন এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে এত বিলম্ব করতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি হয়ত দ্বিতীয় সিজদার কথা ভুলে গেছেন। (হাদীস নং-৮৫৩) ৫৮।

আবু মাসউদ আল-বদরী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রুকু হতে উঠার পর সোজা হয়ে দাঁড়াবে না এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বিরতির সময় সোজা হয়ে বসবে না তার নামায যথেষ্ট হবে না। (হাদীস নং-৮৫৫) ৫৯। আবদুর রহমান ইবন শিবলী (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাকের ঠোকরের ন্যায় (অর্থাৎ তাড়াতাড়ি) সিজদা করতে, চতুষ্পদ জন্তুর মত বাহু বিছাতে এবং মসজিদের মধ্যে উটের মত নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে নিষেধ করেছেন।

(হাদীস নং-৮৬২) ৬০। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সিজদাকালীন সময়ে বান্দা আল্লাহ তা’য়ালার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হয়। অতএব তোমরা এ সময় অধিক দু‘আ পাঠ করবে। (হাদীস নং-৮৭৫) ৬১।

আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা যখন নামাযে এসে আমাদের সিজদারত অবস্থায় পাবে, তখন তোমরা সিজদায় শামিল হয়ে যাবে। তবে উক্ত সিজদা নামাযের রাকাত হিসাবে গণ্য করবে না। যে ব্যক্তি রুকু পেয়েছে, সে নামাযও পেয়েছে (অর্থাৎ ঐ রাকাত প্রাপ্ত হয়েছে)। (হাদীস নং-৮৮৯) ৬২।

আনাস (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সঠিকভাবে সিজদা করবে এবং কুকুরের ন্যায় হস্তদ্বয়কে যমীনের সাথে মিলাবে না । (হাদীস নং-৮৯৭) ৬৩। যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে একাগ্র চিত্তে নির্ভুলভাবে দুই রাকাত নামায আদায় করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

(হাদীস নং-৯০৫) ৬৪। আবু যার (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বান্দা নামাযের মধ্যে যতক্ষণ এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দৃষ্টি তার দিকে থাকবে। অপরপক্ষে যখন সে এদিক-ওদিক খেয়াল করবে, তখন আল্লাহও তাঁর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবেন। (হাদীস নং-৯০৯) ৬৫।

ওয়াইল ইবন হুজর (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “ওয়ালাদ্দাল্লীন” পাঠ করার পর জোরে “আমীন” বলতেন । (হাদীস নং-৯৩২) ৬৬। আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন ইমাম আমীন বলবে, তখন তোমরাও আমীন বলবে।

কেননা যে ব্যক্তির আমীন শব্দ ফেরেশতার আমীন শব্দের সাথে মিলবে তার পূর্ব জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে । (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজা)। ইবন শিহাব (রহ•) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা•)ও ‘আমীন’ বলতেন। (হাদীস নং-৯৩৬) ৬৭। হযরত আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ নামাযের মধ্যে ইমামের কোনরূপ ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে পুরুষেরা “সুবহানাল্লাহ” বলবে এবং স্ত্রীলোকেরা হাতের উপর হাত তালি মেরে শব্দ করবে। (হাদীস নং-৯৩৯) ৬৮। হযরত আবু যার (রা•) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (স•) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামাযে রত হয়, তখন তার সম্মুখভাগ হতে রহমত নাযিল হয়। অতএব নামাযী ব্যক্তি যেন সম্মুখ ভাগের পাথর (ইত্যাদি) অপসারণ না করে।

(হাদীস নং-৯৪৫) (নাসাঈ, ইবন মাজা, তিরমিযী)। অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা নামাযে রত অবস্থায় (সিজদার স্থান হতে) কিছু অপসারিত করবে না। অবশ্য বিশেষ প্রয়োজনে একবার পাথরকণা সরিয়ে সমতল করতে পার। (হাদীস নং-৯৪৬) ৬৯। ইবন আব্বাস (রা•) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন।

তিনি (স•) তাশাহুদের পর এই দু‘আ পাঠ করতেনঃ اللهم انى اعوذ بك من عذاب جهنم واعوذ بك من عذاب القبر واعوذ بك من فتنة المحيا والممات واعوذ بك من شر فتنة المسيح الدجال. “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন আযাবে জাহান্নাম ওয়া আউযু বিকা মিন আযাবিল কাবরে, ওয়া আউযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাত ওয়া আউযু বিকা মিন শার্‌রী ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল। ” অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, পানাহ চাই কবরের আযাব থেকে, পানাহ চাই জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ফেতনা থেকে এবং পানাহ চাই মাসীহি দাজ্জালের ফেতনা থেকে। (হাদীস নং-৯৮৪) ৭০। আবু উবায়দা (রহ•) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (পিতা ইবন মাসউদ) বলেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দুই রাকাত নামাযের পর বৈঠক এত সংক্ষেপ করেন যে, মনে হচ্ছিল তিনি যেন কোন গরম পাথর বা পাথরের টুকরার উপর বসেছিলেন।

(হাদীস নং-৯৯৫) ৭১। আল-আরযাক ইবন কায়েস (রহ•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমাদের ইমাম আবু রিমছা (রা•) জামাআতে নামায শেষে বলেনঃ একদা আমি এই ফরয নামায নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আদায় করি। নামাযে হযরত আবু বাকর ও উমার (রা•) রাসূলুল্লাহ (স)-এর ডানপাশে সামনের কাতারে দণ্ডায়মান ছিলেন। ঐ সময়ে অন্য একজন সাহাবীও তাকবীরে উলা বা প্রথম তাকবীরের সময় উপস্থিত ছিলেন।

ইমাম হিসাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে ডান এবং বামদিকে এরূপভাবে সালাম ফিরান যে, আমরা তাঁর গালের শ্রুভ্র অংশ অবলোকন করি। অতঃপর তিনি (স•) স্বীয় স্থান হতে উঠে দাঁড়ান, যেমন আবু রিমছা (রাবী স্বয়ং) উঠে দাঁড়ালেন। ঐ সময় প্রথম তাকবীর প্রাপ্ত ব্যক্তি নফল নামায আদায়ের জন্য উক্ত স্থানেই দণ্ডায়মান হন। তখন হযরত উমার (রা•) দ্রুত তাঁর নিকট গমন করে তার কাঁধে হাত দিয়ে তাকে একটু ঝাঁকুনি দিয়ে বলেনঃ বস, পূর্ববর্তী আহলে কিতাবগণ এ কারণেই ধ্বংস হয়েছে যে, তারা ফরয ও নফলের মধ্যে কোনরূপ ভেদাভেদ করত না। ঐ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকে দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহ তোমার দ্বারা সঠিক কাজ করিয়েছেন।

(এতে বুঝা যায় যে, মসজিদে ফরয নামায আদায়ের স্থান হতে সরে অন্যত্র অন্য নামায আদায় করা উত্তম এবং নবীর সুন্নাত। (হাদীস নং-১০০৭) । ৭২। আবু হুরায়রা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামাযে দণ্ডায়মান হয়, তখন শয়তান তার নিকট এসে তাকে ধোঁকা দিতে দিতে এমন পর্যাযে পৌঁছে দেয় যে, সে কয় রাকাত আদায় করেছে- তা স্মরণ করতে পারে না।

তোমাদের কারো যখন এমন অবস্থা হবে, তখন সে যেন বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা দেয়। (হাদীস নং-১০৩০) ৭৩। মুগীরা ইবন শোবা (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন ইমাম (তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে) দুই রাকাত আদায়ের পর না বসে দণ্ডায়মান হওয়া কালে সম্পূর্ণ সোজা হওয়ার পূর্বে এটা তার স্মরণ হয়; তখন তিনি সাথে সাথেই বসবেন এবং যদি তিনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে থাকেন তখন তিনি আর না বসে নামায শেষে দুইটি সাহু সিজদা করবেন। (হাদীস নং-১০৩৬) ৭৪।

যায়েদ বিন ছাবিত (রা•) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ফরয নামায ব্যতীত যে কোন ধরনের নফল নামায আমার এই ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।