আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা...মাগো...

প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯)

সিগারেট টা খেয়ে পরপর দু'কাপ চা পান শেষে একটা মিষ্টি পান চিবিয়ে আঁশ বানিয়ে দু'গ্লাস পানি। রোজ ঘরে ফেরার আগে এই ছিলো আমার নিত্যরুটিন। মা...মা গো...শুধু তোমার জন্যে। মুখ থেকে যদি বিন্দুমাত্র গন্ধ পাও,তুমি যে তোমার কোমল হাসি টা আলজিবেই আটকে দিতে! আমি এখন আর সিগারেট খাই না। তবে কেন তুমি এখন দরজা খুলে স্থির চেয়ে থাকো?একটিবার কি হাসতে পারো না?শুধু একটিবারের জন্যে? জানো,কতবার মনে মনে ভীষণ বকেছি তোমায়! কি হয় এক আধটু সিগারেট টানলে? ও পাড়ার ঘুষখোর কাস্টম অফিসারের ছেলে টা বাংলা থেকে রাম-জিন-গাঁজা সবই টানে, তবুও দেখো,সে প্রতি হপ্তায় নতুন জিন্স কেনার টাকা পায়! আর তুমি? এক আধটা সিগারেটে টানের জন্যে হাসি টুকুন পর্যন্ত আটকে দাও! মা...মাগো...তুমি এত কঠিন হয়ে গেলে কি করে? সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরেও কেন তোমার অভিমান যায় না! সেদিন তোমার নিষ্প্রাণ চোখের পাশে একটি নির্বোধ মাকড়সা বসে ছিলো পা ছড়িয়ে।

ভাবলাম,সরিয়ে দিই। কিন্তু পারলাম না। তাতে যে আমার হাতের স্পর্শ লেগে যাবে তোমার মুখে! তুমি যে আমায় তোমার হাতের আঙুল টা পর্যন্ত স্পর্শ করতে নিষেধ করেছিলে! এমনকি তোমার পানি খাওয়ার গ্লাসটাও না। জানো,সেদিন সারারাত আমি ঘুমাই নি। কি এমন অপরাধ ছিলো আমার? একবারই তো শিষ দিয়েছিলাম পাশের বাসার মেয়েটাকে দেখে! একবারই! অথচ তুমি অনেক বড় শাস্তি দিলে আমায়।

আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ঠাঁই দাঁড়িয়েছিলাম বারান্দায়, নিজের হাতে নকশা করা বাঁশের চোঙে লাগানো তোমার মানিপ্ল্যান্টের সামনে। শেষ রাতে কান্না পেলো খুব। রাগ হলো খুব। না,কাঁদিনি,কেবল তোমার সবগুলো মানিপ্ল্যান্ট উপড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।

আজ মনে হয় সেদিন কাঁদা খুব দরকার ছিলো। তাহলে হয়তো আজ সারাবেলা কেঁদে ফিরতে হত না। সেই সকালে কিছুই বলো নি। কেবল মানিপ্ল্যান্টের লাশগুলো জড়ো করে চুপচাপ বসেছিলে অনেকক্ষণ। মা...মাগো... সেদিন তোমার চুপচাপ বসে থাকা আমাকে বিজয়োল্লাসে ভাসিয়েছে।

আজ মনে হয় সেই আমার চিরপরাজয়। তুমি যে তারপর আর কখনো কথা বলো নি। চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলে, সাদা চাদরের তলায় শুয়ে থাকতে থাকতে একদিন হঠাৎ দেয়ালে ঝুলানো ছবি হয়ে গেলে। জানো,দরজা টা খুলে ভাবি,তুমি সিগারেট না টেনে আসার পুরষ্কারে হেসে উঠবে। শিষ না দেয়ার পুরষ্কারে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে দেবে।

কিন্তু তুমি অনেক কঠিন হয়ে গেছো। মাগো... এত কঠিন স্থির কি করে হলে,বলো! তোমার বাঁশের চোঙে রোজ দু'বেলা পানি দেই। না,ওতে কোনো মানিপ্ল্যান্ট নেই এখন। তুমিও তো নেই। তবুও পানি দেই।

কেন দেই,জানি না। মা...মাগো...আমায় কিছু মানিপ্ল্যান্ট এনে দেবে? এই তোমাকে কথা দিচ্ছি,আর কখনো উপড়ে ফেলবো না। দাও না এনে কিছু মানিপ্ল্যান্ট! ========================================== উৎসর্গঃ বন্ধু তানভীরের প্রয়াত আম্মা কে। পরশু রাত টা ওর বাসায় ছিলাম। বারান্দায় আড্ডা দিতে দিতে সে হঠাৎ আমাকে কিছু খালি বাঁশের চোঙ দেখায়,যেখানে ওর আম্মা মানিপ্ল্যান্ট লাগিয়েছিলো আর সে রাগের মাথায় সব উপড়ে ফেলেছিলো।

আমি স্থির হয়ে গিয়েছিলাম আর শুনতে পেলাম বন্ধুর দীর্ঘশ্বাস।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.