আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রং বদলায় যে খুশীর

আিম খুব পিজিটভ মানুষ। খারাপ যা িকছু বদেল িদেত চাই ভালবাসা িদেয়, পারতপেক্ষ লড়াই কের নয়।

ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেলাম। বড় হতে হতে বুড়োর খাতায় নাম উঠে যাচ্ছে; একান্ত অনিচ্ছাস্বত্তেও তা হচ্ছে। ইস, কেনযে ! বদলে যাচ্ছে সব, বদলে যাচ্ছি আমি, বদলে যাচ্ছে ঈদও।

শৈশব থেকে কৈশোরের প্রথম অংশ কেটেছে ঔষধ কোম্পনীর মালিক ডাক্তার নানার অঢেল প্রাচুর্যভরা লোকজনে কোলাহলময় বাড়ীতে। তখন ঈদ মানেই আনন্দ আর আনন্দ। রোজার শুরু থেকেই আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে উপহার আসা শুরু হয়ে যেত- তৃতীয় প্রজন্মের প্রথম আর তখন ও পরয্যন্ত একমাত্র শিশু হওয়াতে। রোজার সংখ্যা যত এগুতো বুকের ঢিপঢিপও তত বাড়তে থাকতো। আনন্দের ঢিপ ঢিপ! তখন টেনশান শুধু একটাই-বন্ধু-বান্ধবদের কেউ যেন নতুন জামাগুলো দেখতে না পায়! তবে রোজ রাতে নিজে একবার দেখা চাই জামা-জুতোগুলো।

প্রতিরাতে দেখে আবার নানুর হাতে তুলে দিয়ে বলতাম-“আলমারীতে তুলে রেখে ভাল করে তালাটা লাগিয়ে দাও। সাবধান, পাশের বাসার বিউটি, সুইটি, মুন্নি, সুমন, তপন, স্বপন ওরা যেন কেউ দেখতে না পায়। “ কৈশোরের শেষের দিকে চলে এলাম বাবার বাসায় (!)। শিক্ষক বাবার বাসায় এসে বুঝলাম রোজার শুরুতেই জামা-জুতো এসে হাজির হয় না, অপেক্ষা করতে হয় ঈদ বোনাসের জন্য। রোজার মাঝামাঝি আসে ঈদ বোনাস।

সেই ঈদ বোনাস এলে বসতে হয় ঈদ বাজেট করতে। সেই প্রথম বাজেট করাও শিখলাম। বাজেটের কত অংশ ঘরের সবার পোশাক, কত অংশ ঈদের খাবার প্রস্তুতি, কত অংশ অন্যদের উপহার কেনার জন্য আলাদা করে রাখতে হয়......ইত্যাদিও জানলাম। কৈশোর পেড়িয়ে তারুণ্য এলো। সেই সাথে এলো বন্ধুদের সাথে “ফ্যাশন শেয়ারিং/ফ্যাশন কম্পিটিশন”এর ঈদ।

ফ্যাশন এর দিকে নজর দেয়া শিখলাম, শিখলাম বাবার দেয়া বাজেটের পরিমাণকে কিভাবে যথাযথ ব্যবহার করে নিজে সুখী হতে হয়, সবাইকে সুখী করতে হয়। তারুণ্যের এক পরয্যায় এ এলো বিয়ে। বিয়ের পর আবার বদলে গেলো ঈদ। এবার নিজের চেয়েও খেয়াল রাখতে হল শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জন্য উপহার কেনা, বাবা-মাকে ছেড়ে উনাদের সাথে ঈদ করা, ওখানে গিয়ে নিজের সাধ্যমতো দু/একটি হলেও খাবার তৈরি করা, আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা, তাদের সুখ-সুবিধা দেখা, তাদের আনন্দ দেয়া......... ইত্যাদি বিষয়ে। একসময় পড়াশুনার জন্য যেতে হল দেশের বাইরে, জাপানে।

বিদেশের মাটিতে ঈদ তো আর দেশের মতো নয়! আবারও বদলে গেলো ঈদ। হাজব্যান্ড আর অন্যান্য ভাইয়েরা ঈদের দিন সকালে কোনমতে একটু সময় ম্যানেজ করে ঈদের নামাজ পড়েন ইন্টারন্যাশনাল হলের লবিতে আর শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিদায় নেন রাতের “ঈদ পার্টি” তে দেখা হবে বলে। তারপর সারাদিন ল্যাবে কাজ আর কাজ। রাতের “ঈদ পার্টি” তে সবাই হাজির হন নিজের হাতে রান্না করা একটি/ দুটি খাবার আইটেম নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল হলের লবিতে, সবাই সবার খাবার শেয়ার করে খান, কিছু ছবি তোলেন, আড্ডা চলে কিছুক্ষণ- এই হল দেশের বাইরের ঈদ। তবে ঈদ যদি রবিবারে হতো তবে “ডে টাইমে” দলবেঁধে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হতো (অবশ্য যারা ফ্রী থাকতো, তারা যেতো; কারন ছুটির দিনেও কাজে যেতে হতো প্রাইভেট স্টুডেন্ট আর কোন কোন ভাবীকে)।

এরপরে দেশে ফিরে আসা; দুজন থেকে চারজন হওয়া। ঈদ এখনো আসে; যেহেতু শিক্ষকতার পেশা-ফলে এখনও হিসেবের ঈদ। এখন রোজার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় “লিস্টিং অ্যান্ড বাজেটিং”। বাবার সময় অপেক্ষা করতাম ঈদ বোনাসের, আর এখন জীবন জটিল হয়ে যাওয়ায়, চারপাশে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় রোজার বেশ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন খাত থেকে টাকা বাঁচানো, যাতে ঈদ বোনাসের বাইরে যে বেশি টাকাটা লাগবে তা দিয়ে ঈদের খরচটা কোনমতে সামাল দেয়া যায়। এখন রোজার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় শপিং।

সবার প্রথম শপিং করি বাসার কাজের লোকেদের জন্য; তারপরে ভাই-বোন, তাদের বাচ্চা আর অন্যান্য আত্মীয়স্বজন এর জন্য। আমার মেয়েদের জন্য আর তাদের বাবার জন্য শপিং থাকে তিন নম্বরে আর নিজের জন্য বলতে গেলে এখন তেমন কোন আগ্রহই বোধ করি না। “একটা কিছু হলেই হল!”“ আর না হলেই কি ?”“আরে দূর............”, “ আচ্ছা আছে তো............”, “সময় আছে তো, পরে দেখা যাবে............” এভাবেই দূরে ঠেলে রাখি নিজের জন্য কেনাকাটা। মেয়েরা বড় হচ্ছে, ওরা জোড় করে; মেয়েদের বাবাও জোড় করে নিয়ে যায় দোকানে কিন্তু সত্যিই এখন আর তেমন আগ্রহ বোধ করি না নিজের জন্য কেনাকাটায়। যদিও এরই মধ্যে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও আসতে শুরু করে ঈদ উপহার।

এখন সারাক্ষন মাথায় শুধু চিন্তা ঘুরে-“আত্মীয়-স্বজন কারো জন্য উপহার কেনা বাকি রইলো নাতো ?”“উপহারগুলো ওদের পছন্দ হবে তো?” “সবার সাইজ মতো হয়েছে তো?” “কোন টা পাল্টাতে হবে কি?”“আরে জাকাতের টাকাটা ঠিকমত দেয়া হল তো?” ইত্যাদি............। আর মাঝে মাঝে ঘরের বাতি নিভিয়ে জানালা দিয়ে আমার ঘরে ঢুকে পড়া চাঁদের আলোয় গা ভিজিয়ে বসে বসে ভাবি-“কিভাবে বদলে গেল জীবন, আর কিভাবেই বা বদলে যাচ্ছে ঈদ!” একসময় হঠাত আসা মিষ্টি, দুষ্টু বাতাস আমার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে আমাকে মনে করিয়ে দেয় “যাও, নেটে বস; সব বন্ধুকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবে না? ঈদ তো এসেই গেলো! শুভেচ্ছা জানাতে আর কত দেরী করবে?” তো এখন এই নেটে বসা আর দিনে দিনে, পলে পলে বদলে যাওয়া আমার পক্ষ থেকে সবাইকে জানাচ্ছি- ঈদ এর অনেক শুভেচ্ছা! অনেক অনেক ভালবাসা!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।