আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টকশো'র সেই মেয়েটি হতে চেয়ে

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ হাসনাত আব্দুল হাইয়ের "ক্যামেরার সামনের মেয়েটি" গল্পের প্রতিক্রিয়ায় এই চরম অবাস্তব একটি গল্প লিখলাম। ১. আজকের ৭৫ জার্নালে আমি নবনীতা মজুমদার আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের সাথে আছেন.... ব্লা.... ব্লা.... ব্লা.... উপমা মুগ্ধ হয়ে ভাবে আহা কি গ্লামার। কি তার ঢং, উচ্চারন, বাচনভংগি। এই না হলে টক শো উপস্থাপিকা।

কি দারুনই না লাগছে নবনীতা আপুকে। টেলিভিশনে নবনীতার মতো মেয়ে যদি না থাকে তাহলে আর ঐ টিভি আর ইসলামিক টিভির মধ্যে কি পার্থক্য থাকলো? টিভিতে আজকাল নবনীতারাই ক্রেজ। একটু সুন্দরী, খোলামেলা, প্রগতিশীল। দর্শকেদের আপনার রেসিপি খাওয়ানোর জন্য আপনার দরকার মডেল, ঠিক মডেল না মডেলের ব্রান্ড নেম নিয়ে বাজারের সেরা লাস্যময়ীদের দরকার। এরা শুধু চেহারাই দেখায়না, গুছিয়ে মিথ্যাও বলতে পারে চমৎকার করে।

এদের চেহারায় যেমন করে গ্লস, গ্লিটার আর সিমারের পলেস্তারা দিয়ে আ্যাপিল তৈরি হয় ঠিক তেমনি করে নানান রং ও উপাদানের মিশেলে সত্যকে টুইস্ট করে কিংবা কখনো কখনো সরাসরি মিথ্যাও বলতে পারে খুব গুছিয়ে। টেলিভিশনের সামনে বসা লোভাতুর পুরুষ চেহারাগুলো এমন সেক্স বম্বদের ছোট ছোট মিশনের বলি হয়ে আকর্ষনীয় মিথ্যাগুলো গিলে খায় যেমন করে নবনীতাদের শরীরখানি গিলে খেতে চায়। উপমা টকশো উপস্থাপিকা হতে চায়। সে নবনীতা হতে চায়। নবনীতা হতে সে সব কিছু করতে চায়।

সে শুধু ঐ চেয়ারটায় বসে পায়ের উপরে পা তুলে চুড়িদারের ভেতরে নরম তুল তুলে উরুতে একটা হাত রেখে অন্য হাতের আংগুল তুলে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে চায় দ্বিমতকারী আমন্ত্রিত অতিথিকে, ঠিক যেমন টি করেন নবনীতা। তবেই না তুমি হবে জাঁদরেল উপস্থাপিকা। উপমা তার জিবনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সে টকশো উপস্থাপিকা হবে। দিনের শেষে সবকটা পত্রিকা নিয়ে বসবে, দু লাইন করে শোনাবে যেগুলো তার পছন্দের খবর তারপর বলবে.... বিএনপি-জামাত ও হেফাজত মিলে যে তান্ডব করছে এ সম্পর্কে.... ব্লা.... ব্লা...... ব্লা.... আর তাই উপমা চেহারায় গ্লামার আনার জন্য সময় করে প্রত্যেক সপ্তাহে বিউটি পার্লারে যায়। যেই সেই বিউটি পার্লার নয় শহরের সেরা বিউটি পার্লার 'পারসোনা'তে যায়।

সেখানে উলংগ হয়ে শরীর ম্যাসাজ করায়। ম্যাসাজ করানোর সময় উপমা একদিন খুব লজ্জা পেয়েছিলো মনে মনে। কারন তার হঠাৎ মনে হচ্ছিলো কোন এক সিসিটিভি অপারেটর বোধহয় বসে বসে কোন চিপার ক্যামেরাতে তার নগ্ন শরীর গিলে গিলে খাচ্ছে। চারদিকে ভালো করে চেয়ে দেখে কোন ক্যামরা নাইতো? থাকলেও সমস্যা নেই। টিভি উপস্থাপিকা চৈতিরওতো ভিডিও বের হয়েছে।

কই তার কি ক্যারিয়ারে কোন সমস্যা হয়েছে? বরং আরো উন্নতি হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষকে চেহারা দেখাতে হলে একটু ডেসপারেট হতেই হবে। তাছাড়া এটা একবিংশ শতাব্দী, ডিজিটাল হাওয়া বইছে দেশে। উপমা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশে মস্ত একটা চাঁদ, চাঁদটা দুহাতে জোছনা বিলাচ্ছে।

এমন পূর্নিমা রাতে উদাস হতে ইচ্ছে করে। উপমা বক্ষবন্ধনীর ভেতরে হাত ঢোকায়। প্যাকেট টা বের করে। পলিথিন আবরন ছিড়ে একটা শলা বের করে। টুশ করে দেশলাইের কাঠিতে আগুন ধরায়।

দীর্ঘ একটা টান দিয়ে খানিক ধোয়া ছাড়ে উপমা। আহ কি উদাস। দারুন উদাস লাগছে তার। উপমা এখন নাক দিয়ে ধোয়া ছাড়তে শিখেছে। প্রথম প্রথম দমই নিতে পারতো না।

খক খুক করে কাশতো। ধোয়া টানার অভ্যাসটা পার্টি নেতা রুদ্র শিখিয়েছে। রুদ্র বলেছে কোন একদিন সময় করে প্যানিক নেয়াও শেখাবে। প্যানিক নিলে নাকি অনেক বেশী উদাস উদাস লাগে। উপমা রুদ্রকে মনে মনে পছন্দ করে।

তাই রুদ্র যখন বলেছে প্যানিক ট্রাই তাকে করতেই হবে। উপমা ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে টিভি পর্দায় নিজেকে অবিষ্কার করে। দেখে তার শরীরের গ্লামারে অতিথিরাও কাত হয়ে আছেন, আর উপমা বলে যাচ্ছে, সুধী দর্শক আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি উপমা.... ব্লা.... ব্লা.... ব্লা.... গোপাল গঞ্জের মেয়ে হওয়ায় উচ্চারনে সামান্য ত্রুটি আছে উপমার। পুরুষকে প্রায়ই সে প্রুষ, অস্বাভাবিক কে অস্ভাবিক টাইপ কিছু ছোটোখাটো ভুল মাঝে মাঝে হয়ে যায়।

উচ্চারনগত এই ত্রুটিগুলো ঠিক করতে উপমা একটি আবৃত্তির কোর্সে ভর্তি হয়েছে। টিএসসিতে ক্লাস হয়। টিচার খাইরুল মাঝে মাঝে আড় চোখে লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকায় ওর দিকে। উপমা পাত্তা দেয়না। এইসব আবালদের টাইম দিলে স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।

তবে ও শুনেছে এই খাইরুলের হাত ধরে ডজন খানেক মেয়ে নাকি একদম উপরে উঠে গেছে। উপমার অবশ্য এর চেয়েও লম্বা হাত আছে। ২. ড্রইং রুমের একটা সোফায় জড়োসরো হয়ে বসে আছে উপমা। এটাকে ঠিক ড্রইংরুম না বলে মুখোশঘর কিংবা মুখোশ জাদুঘর বলে যেতে পারে। ঘরের দেয়ালা অনেকগুলো মুখোশ সাঁটানো আছে।

গুনে গুনে ঠিক ৭৮টা মুখোশ এই ঘরটিতে রয়েছে। বিদঘুটে সব মুখোশ। কিছু কিছু মুখোশ দেখলে মনে হতে পারে সাক্ষাত শয়তানের মুখোশ এগুলো। রাতে কেউ ঘুমালে নিশ্চিত ভয় পাবে। উপমা ভাবে মানুষের কত কি খেয়াল।

আচ্ছা ওরওকি এরকম কোন খেয়াল থাকতে হবে? মনে হয় এটার দরকার আছে। তাহলে কি সংগ্রহ করবে সে। মুখোশ না অন্য কিছু। এমন সময় নবনীতা মজুমদার প্রবেশ করলেন। একটা স্লিভলেস ব্লাউজমতো ফ্রক সাথে একটা হাফপ্যান্ট টাইপের শর্টস পরে এসেছেন।

টিভিতে যেমনটা দেখা যায় তেমনটা লাগছে না। মনে হচ্ছে মুখোশগুলোর ভেতর থেকে একটা পেত্নী বের হয়ে এসেছে। উপমা উঠে দাঁড়ালো। -স্লামালাইকুম। নবনীতা উত্তর দিলেন না।

বসতে বললেন। অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে নবনীতা উপমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে যেন তিনি নতুন কনে দেখছেন। বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা যাকে বলে। এবার মুখ খুললেন।

- কি করো তুমি? - জি আপু এইতো এখনো পড়াশুনা করছি। সাংবাদিকতায় অনার্স ফাইনাল ইয়ার। - সাংবাদিকতা করো? - জি টুকটাক ফিচার টিচার লিখি। প্রথম আলোতে। দলের এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে মতি ভাইয়ের সাথে পরিচয়।

- কি বিষয়ে লেখো। - এই নারী অধিকার, এনজিও, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, যুদ্ধপরাধ ইস্যু নিয়ে। - থাকো কোথায়। - শামসুন্নাহার হলে। -প্রগতীশীল অন্দোলনে ভুমিকা কি? - জি আমি প্রগতিশীল কমিউনিস্ট লীগের তথ্য সম্পাদিকা।

-শাহবাগ গিয়েছ? - জি অবশ্যই, শাহবাগ আমর হৃদস্পন্দনে জড়িয়ে আছে। দিন রাত কাটিয়েছি ওখানে। শ্লোগান ধরেছি। গান গেয়েছি। তাছাড়া কয়েকটা ফিচার লিখেছি শাহবাগের উপর।

উপমা একটু বাড়িয়েই বলছে। কারন সে জানে নবনীতার বিশেষ দুর্বলতার কথা শাহবাগীদের প্রতি। এবার নবনীতা মজুমদার মৃদু হাসলেন। এই হাসির মানে হচ্ছে পজিটিভ কিছু বলবেন তিনি। - ওয়ান্ডারফুল।

কিন্তু এখানেইতো শেষ নয়। এ লাইনে ক্যারিয়ার তৈরি করতে আরো কিছু চাই। গ্লামার একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়। টিভি উপস্থাপনা কিন্তু একটা পন্যের বিজ্ঞাপনের মতো এখানে তোমাকে পন্যের মতো নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। যে যত বেশী আকর্ষনীয়ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে তার অনুষ্ঠান ততোধিক বেশী জনপ্রিয়।

অনেক ত্যাগ স্বীকারও করতে হবে। তুমি তার জন্য প্রস্তুত। - জি আপু। অবশ্যই আমি প্রস্তুত। শুধু একটু সুযোগ যদি করে দেন আমার যোগ্যতা আমি দেখাতে সক্ষম হবো।

- শোন সামনের শুক্রবার একটা সুযোগ তুমি পাবে। যেটাকে বলে গোল্ডেন চান্স। নবনীতা মেরিল-প্রথম আলো আ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের একটা নিমন্ত্রনপত্র উপমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। বললেন ঠিক সময় মতো আসবে। একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।

বাকীটা তুমি নিজেই ম্যানেজ করতে পারবে আশা করি। উনার হাতেই তোমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। ভালো করে সেজে আসবে। একটু পার্লারে যেও। উপমা বিশ্বাসও আস্থা নিয়ে মাথা নাড়ায়।

- আর শোন আমাকে সালাম দিবে না কখনো। আরবী শুনলে আমার গা জ্বলে। উপমা গুন গুন করে গাইছে। এটা অনন্দের গান। উপমা জানে সে পারবেই।

তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামী শুক্রবার। নবনীতার চেহারা ভেসে উঠে। তখোড় উপস্থাপনা। ধারালো কথার মার প্যাঁচ।

নিজেকে তার স্বপ্নের নায়িকা নবনীতার জায়গায় দেখে। ওর ভেতরটা আন্দোলিত হচ্ছে। ও গাইছে, গুন গুন করে আবারো গাইছে। রাধারমনের একটা গান গাইছে সে। বলো বলোগো সখি কোনবা দেশে যাই উপমা টিভিটা ছাড়ে।

রাতের টকশো চলছে। শ্রদ্ধার মানুষ। যিনি তাকে নিজের আপন বোনের মতো সুযোগ করে দিচ্ছেন। হাজার দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তব হবে উনার হাত ধরে। আহা কি গ্লামারস।

কি তীক্ন ধারালো তার কথা বার্তা। সেলিব্রেটি। সেলিব্রেটি সাংবাদিক। টিভির ভলিউমটা বাড়িয়ে দেয় সে, নবনীতা চিৎকার করে বলছেন এই যে বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাত-বিএনপি হিন্দু ও আওয়ামীলীগের নিরীহ কর্মীদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে .... ব্লা.... ব্লা....ব্লা,... উপমা ঘুমিয়ে পরে। উপমা বসে আছে পারসোনাতে।

আর একজন পরেই তার সাজগোজের ডাক আসবে। নিজেকে খুব অস্থির লাগছে। প্যাডিকিউর, ম্যানিকিউর, ফেসিয়াল, বডি আরো কতো কি তারপর পার্টি সাজ। মোট ১৩৫০০ টাকা। টাকার অংকটা শুনতে বেশী হলেও সমস্যা নেই।

একবার যদি নিজের টেলেন্ট দেখাতে পারে কেল্লাফতে। কতো যে হাজার আসবে। কানিজ আলমাস নিজেই তাকে সাজিয়ে দিয়েছেন। ঠিক যেমনটি চেয়েছে তেমনটি হয়নি। সে চেয়েছিলো ডিসেন্ট পার্টি সাজ কানিজ তাকে দিয়েছে এমন সাজ যেটাকে ঠিক চিকনি চামেলি টাইপ বলা চলে।

হাজার হোক উপমা ড্যান্স করতে যাচ্ছেনা। সে যাচ্ছে একটা ডিসেন্ট পার্টিতে যেখানে তার একধরনের পরিক্ষা হবে, সাংবাদিক বা উপস্থাপনা পরিক্ষা। ১৩৫০০ টাকা দিতে খুব কস্ট হলো উপমার। অনেক কস্টে টিউশনির জমানো টাকা তার। রাত ৮টা বাজে।

হোটেল রূপসী বাংলা বল রুম। হাজারো সেলিব্রেটিতে ভর্তি। টিভি-সিনেমা, নাটক, ব্যাবসায়ী, সাংবাদিক, পরিচালক কে নেই এখানে। আহা এটাই যে তার স্বপ্নের ভুবন। উপমা টের পায় সে তার স্বপ্নের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।

নবনীতাকে ফোন করে। নবনীতা অপেক্ষা করতে বলেন। উপমা কোনায় কিছুটা ফাঁকা মতো একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আশে পাশে সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। আবৃত্তির খাইরুলের মতো লোভাতুর চোখগুলো যেনো তাকে গিলে গিলে খাচ্ছে।

নবনীতা আসলেন। সাথে আধা হ্যান্ডসাম একটা লোক। স্যুট পড়েছে, মনে হচ্ছে দুবাই থেকে মাত্রই ল্যান্ড করলো। ইয়া বড় কাচা পাকা গোঁফ। আরো একটু লম্বা হলেই ঠোঁটগুলো ঢেকে ফেলবে।

- হাই উপমা। কেমন আছো? তোমাকে তো রাজকন্যাদের মতো লাগছে। সো বিউটিফুল। - এইতো আপু ভালো। থ্যাংকস।

- পরিচয় করিয়ে দিই, ইনি হচ্ছেন আমাদের ৭৫ চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান পিয়াল রহমান। উনিই সব করেন। ইনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো বলেই তোমাকে এখনে নিমন্ত্রন করেছি। উপমা হাত তুলতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। না সালাম দেয়া যাবেনা।

শেষে আবার নবনীতা মজুমদারের গা জ্বালা করে। উপমা পিয়াল সাহেব কে 'হাই' বলে। পিায়ল সাহেব প্রতি উত্তরে 'হাই' বলে একটা হাত বাড়িয়ে দেন। উপমা সানন্দে হ্যান্ড শেক করতে তার হাতটা বাড়িয়ে দেয়। এতটুকন সৌজন্যতা না দেখালে প্রগতিশীল হওয়া যায়না উপমা তা খুব ভালো করেই জানে।

তাছাড়া রুদ্রতো সবার সামনেই গায়ের সাথে গা লাগিয়ে জড়াজড়ি করে। কিন্তু এই হাতটা রুদ্রের মতো নয়। কেমন জানি খসখসে, শক্ত। হায়েনা কিংবা পশুদের মতো। এবার নবনীতা একটু তাড়াহুড়ো করেই বিদায় নিতে নিতে বললেন।

তোমরা কথা বলো। তোমার মতো আরো কয়েকজন এসেছে তাদেরর সংগেও একটু দেখা করতে হবে। তাছাড়া পিয়াল ভাই তোমার দলেরই একজন সিনিয়র নেতা ছিলেন। পার্টি অফিসেই থাকতেন। আশা করি তোমরা সময়টা এনজয় করবে।

নবনীতা চলে গেলেন। পিয়াল সাহেবের শক্ত হাতটা এখনো উপমার নরম হাত ধরে রেখেছে। পিয়াল সাহেব কথা বলছেন। ধর্মান্ধ, মৌলবাদ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধ, বিএনপি, জামাত-শিবির, হেফাজত কোন কিছু বাদ রাখছেন না। বলছেন তার বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের কথা।

মাঝে মাঝে শুধু বলছেন তুমি খুব সুন্দরী। সর্গের দেবী অপ্সরার মতো। যেনো আগুন খনি, তোমাকে আমি নবনীতার মতো সুযোগ করে দেবো। উপমা বিগলিত হাসি উপহার দেয়। কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে।

শুধু বলে ভাইয়া আপনার কৃপা। একটা সুযোগ দেন আমি আপনার সম্মান রাখবোই। আমি দেখিয়ে দেবো আপনার দেয়া সুযোগের আমি যথযথ সম্মান দিয়েছি। পিয়াল সাহেব মুচকি মুচকী হেসে বলেন, তাতো বটেই, তাতো বটেই। অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে অনেকেই অনেক পুরষ্কার নিয়ে যাচ্ছেন।

পিয়াল সাহেব জানালেন আজকের অনুষ্ঠানে নবনীতাকে সেরা টিভি উপস্থাপিকার পুরষ্কার দেয়া হবে। আর এটির ব্যবস্থা করেছেন টিভির মালিক তোজাম্মেল তোজা সাহেব। এজন্য অবশ্য নবনীতাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। টিভি মালিকের সাথে সিংগাপুর যেতে হয়েছে তিনদিনের ট্যুরে। ওখানে টকশো করতে হয়েছে, ''বিদেশে টকশো'' নামের অনুষ্ঠান নিশ্চয় তুমি দেখেছো।

তোমাকেও আমি সে সুযোগ করে দেবো। নবনীতার মতো বানিয়ে দেবো বলে একটা হাত উপমার পিঠে রাখলেন। উপমা অস্বস্থি বোধ করছে। ওর মনে হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরায় কেউ একজন সব কিছু ধারন করছে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক চিৎকার করে বলছেন সেরা টিভি উপস্থাপকের পুরুষ্কার নিতে এবার মঞ্চে আসছেন।

একটা পজ নিলেন। ভাবখানা উনার গলা শুকিয়ে গেছে। উনার এক গ্লাস ঠান্ডা বরফ কুচিসহ পানি দরকার। উপস্থাপনায় এমন রিডিকিউলাস ঢং করতেই হয়। যতো বেশী ঢং ততো বেশী মজা।

নাম টা বলার পূর্বেই দাঁড়িয়ে গেছেন নবনীতা। তাহলে বিষয়টা তিনি নিজেও জানেন। - ওয়ান এন্ড অনলি নবনীতা মজুমদার। হাততালিতে মুখর হয়ে উঠলো পুরো হল ঘর। নবনিতা মাইক হাতে নিয়ে বলছেন।

আমাকে এই পুরষ্কায় দেয়ায় আমি বিচারক ও দর্শক মন্ডলীর কাছে (আসলে হবে ৭৫টিভি মালিক তোজাম্মেল) কাছে কৃতজ্ঞ। আমার ভবিষ্যৎ.... ব্লা.... ব্লা.... ব্লা..............। এবার পিয়াল সাহেবের উপমার একদম কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন ওর এই উন্নতির পিছনের মানুষটি কিন্তু আমিই। আমাকে ও সব দিয়েছে উজাড় করে। বিনিময়ে আমি ওকে বানিয়েছি সেলিব্রেটি।

এবার পিঠে রাখা হাতটা ঘাড়ের দিকে ঘুরিয়ে উপমার পিনোন্নত স্তনে রেখে মৃদু টিপে দিলেন। উপমা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু নবনীতার জন্য হাততালির শব্দে তার মৃদু চিৎকার হারিয়ে যায়। - আপনি একি করছেন? - কেনো কি সমস্যা? - কি সমস্যা মানে? আপনি আমার গায়ে হাত দিচ্ছেন ক্যানো? - উপমা তুমি একটা প্রগতিশীল মেয়ে। তোমার কাছে এমন রিএকশান আশা করিনি।

তুমি টিভি উপস্থাপিকা হতে চাও। এ লাইনে এসব স্বাভাবিক। তাছাড়া এখানে একটা রুম বুকিং আছে। রাতে একটু ড্রিংক করতে করতে আমরা আলোচনা করে ঠিক করবো কি বিষয়ের উপর তুমি টকশো করবে। - রাতে এখানে আপনার সংগে থাকতে হবে? আপনি এসব কি বলছেন! উপমা আকাশ থেকে পরে।

- ক্যানো নবনীতা তোমাকে বলেনি যে এ লাইনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। - হ্যা উনি বলেছেন। কিন্তু ত্যাগ স্বীকার মানে যে আপনার সাথে রাত্রি যাপন সেটা আমাকে বলেননি। উপমা মাথা নীচু করে বসে থাকে কিছুক্ষন। শরীরটা ঘৃনায় রি রি করছে।

চোখ টল মল করছে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। সমাজসেবা অফিসের কেরানী আর স্কুল শিক্ষিকা মায়ের মুখ ভাসছে। প্রতিদিন হার ভাংগা খাটুনি আড়াই মাইল পথ হেঁটে টিউশনিতে যাওয়া। আহা স্বপ্ন।

স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। উপমা ঝট করে উঠে দাঁড়ায়। মুখ শক্ত করে কট মট করে তাকায় শকুনটার দিকে। বলে আমি টক শো উপস্থাপিকা হতে চাইনা। গট গট করে উপমা চলে যাচ্ছে।

পিয়াল সাহেব হা করে তাকিয়ে রইলেন। ৩. বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টি। একটা খালি রিক্সা এই মামা যাবে? উপমা রিক্সায় বসে অঝোর ধারায় কাঁদছে। গলা ছেড়ে কাঁদছে।

স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার কান্না। উপমার বুকটা খুব ভারি হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে তার চোখের পাতা ধুয়ে নিয়ে যায়। রুমে ঢুকে উপমা টিভিটা ছাড়ে। রাতের টকশো চলছে।

আমি নবনীতা মজুমদার আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি..... ব্লা .... ব্লা.... ব্লা.. উপমা টিভিটা দুহাতে তুলে একটা আছাড় মারে। অস্ফুট একটা শব্দ বের হয় তার মুখ থেকে "শুওরের বাচ্চা"। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।