আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্টিকি-পরবর্তী সময়ে পোষ্টে গুরুত্বপূর্ন তথ্য সংযোগ কতটুকু নৈতিক?

কাঁদো, যখনি কাঁদতে ইচ্ছে করবে। কান্না শুদ্ধতম আবেগ প্রকাশের একমাত্র উতকৃষ্ট মাধ্যম। অতি সুখের সংবাদ এ মানুষ শুদ্ধতা খুজে পায়, অতি দু:খের সংবাদ এ মানুষ শুদ্ধতা খুজে পায়। কাজেই কাঁদো, কেঁদেই তোমার জীবনকে তুমি শুদ্ধতা দান করো। - তুর্কী মরমী কবি দাদায়েম ঈমাস

বেশ ভালো রাজনৈতিক জোয়ার চলছে।

যদিও তা অনেক পুরোন কনসেপ্ট। একটি মরদেহ কতটুকু শক্তিশালী অথবা দূর্বল, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে, কাটাছেড়া চলছে। তাকে একবার অধু কাধে তুলে নিচ্ছে, একবার মধু কোলে তুলে নিচ্ছে, একবার যধূ আদর করছে। পোষ্টের পর পোষ্টে ব্লগগুলো ভরে যাচ্ছে, অনেক আহা-উহু শোনা যাচ্ছে, মন্তব্যের পর মন্তব্য পড়ছে, তর্ক হচ্ছে, বিবাদ হচ্ছে, চায়ের কাপে ঝড় উঠছে, কম্পুর কী-বোর্ডে মাদল বাজছে নানা ছন্দে, পোষ্ট স্টিকি হচ্ছে, সে পোষ্টে হিট পড়ছে, পোষ্ট আপডেট হচ্ছে, মন্তব্য বাড়ছে, বিবাদ বাড়ছে, সাথে বাড়ছে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা। মনে পড়ে, অনেক আগে দুইজন ব্লগারের একটি পোষ্ট স্টিকি করা হয়েছিলো।

ব্লগীয় রাজনীতির বেড়াজালে জড়িয়ে স্টিকি হবার কিছুদিন পর তারা পোষ্টে কিছু এডিট করেছিলেন। তার পরের ঘটনা ইতিহাস। ব্যান-আনব্যান, ব্লগীয় আন্দোলন, ভার্চুয়াল হরতাল-ধর্মঘট আরো কত কি? যারা অনেকদিন ধরে ব্লগিং করছেন তাদের মনে থাকার কথা। স্টিকি পোষ্ট এডিটকারী দুই ব্লগারকে মাথা পেতে নিতে হয়েছিলো সাময়িক শাস্তি। এতক্ষন ধরে অতীত ইতিহাস ধরে টানাটানি করার মূল উপলক্ষ্য্ হচ্ছে আবারো সেই স্টিকি পোষ্টের তথ্য বিকৃতি।

একে আমি তথ্য বিকৃতিই বলবো। কাটাতারে একটি মরদেহের ছবি আমাদের আবেগকে উথলে দিয়েছে। ওটা যদি কাটাতারে না ঝুলে ডোবায় পড়ে থাকতো, বা ড্রেনের পাশে পড়ে থাকতো, শকুনের খাবার হতো কিংবা নদীর জলে ভেসে যেতো তবে আমরা হয়তো এতো আবেগ মথিত হতাম না। আবেগে-হুজুগে আমরা একবার ডানে যাচ্ছি, একবার বায়ে যাচ্ছি, একবার সরলপথে চলছি। মূলত কি করবো সেটাই বুঝে উঠতে না পেরে আমরা বাদানুবাদে লিপ্ত হচ্ছি।

এখন আসি স্টিকি পোষ্টে তথ্য সংযোগের কথায়। একটি পোষ্ট যখন স্টিকি হয় তখন তা কিসের উপর ভিত্তি করে স্টিকি হয় সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। অনেক সময় দেখা যায় ব্লগারদের তোপের মুখে কর্তৃপক্ষ কোন কোন পোষ্টকে স্টিকি করে প্রথম পাতায় ঝুলিয়ে রাখেন। অবশ্যই সেটা আলোচনা সাপেক্ষে হয় বলে ধারনা করি। এমন করা কতটুকু যৌক্তিক সেটাতে অবশ্য সন্দেহ থেকে যায়।

কোন কোন স্টিকি পোষ্টে তথ্য সংযোগ করাও হয়। যেমন আমরা দেখেছিলাম মন্জুর ভাইয়ের উপমা'কে নিয়ে পোষ্টগুলোতে। টাকার অংক এবং উপমা বিষয়ক অন্যান্য তথ্য তিনি পোষ্ট স্টিকি পরবর্তী নানা সময়ে আপডেট করেছিলেন। এমনটা আমরা আশা করতেই পারি এসব ক্ষেত্রে। তথ্য জানার অধিকার সবারই আছে।

তায়েফ আহমাদ আমার বেশ পছন্দের একজন ব্লগার। তাকে নিয়ে কি কানাঘুষা চলেছে তা আমার অজ্ঞাত, কারন দীর্ঘকালীন ব্লগ অনুপস্হিতি। তার জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান সিরিজটি আমি মুগ্ধ হয়ে পড়েছি এবং অনেক কিছু জেনেছি। ফেলানী'কে নিয়ে লেখা তার একটি পোষ্ট স্টিকি হয়েছে এবং এখন তা অনেকাংশে দন্ডিত। তিনি পোষ্ট দিয়েছেন, ব্লগারদের দাবীতে সামু তা স্টিকি করে ঝুলিয়ে রেখেছে প্রথম পাতায়।

কিছুদিন পর তিনি এই লেখায় কিছু তথ্যও যোগ করেছেন। যাই হোক, এমন তথ্য সংযোগ কতটুকু নৈতিকতার দাবী রাখে। যৌক্তিকভাবে বিচার করলে স্টিকি পোষ্টে ব্লগ কর্তৃপক্ষেরও একটি অধিকার স্হাপিত হয়। স্টিকি পোষ্ট অনেকাংশে একটি ব্লগের ইমেজকে প্রভাবিত করে। কাজেই ধরে নেয়া যায় স্টিকি পোষ্টে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন যেমন ধরা যাক, কারো নাম, কারো ফোন নাম্বার অথবা কারো যোগাযোগের ঠিকানা কিংবা কমিটি গঠনের খসড়া এবং সদস্যদের তালিকা ইত্যাদি ব্লগ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই করা হয়।

ব্লগ কর্তৃপক্ষের এখানে যদি করা কিছু না থাকে, ব্লগাররা যদি নিজ-ইচ্ছেতেই পোষ্ট পরিবর্তন করেন তবে তা ঠিক গ্রহনযোগ্য হয় না। স্টিকি পোষ্টে প্রথমে একধরনের তথ্য দিয়ে, তারপর ধীরে ধীরে তাতে বিস্তারিত তথ্য সংযোগ করলে অনেক ক্ষেত্রে তাতে বিভ্রান্তি বাড়ে এবং ব্লগ সম্পর্কে একটি সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। সমাবেশ-মানববন্ধন-মৌন মিছিল-আড্ডা-মিটিং ইত্যাদি সম্পর্কিত কোন স্টিকি পোষ্টে তা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সকল তথ্য পোষ্ট স্টিকি হবার পূর্বেই উল্লেখ করা কাম্য ছিলো। এসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে ব্লগকর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতেন, আলোচনা সাপেক্ষে বিবেচনা করতেন পোষ্টটি স্টিকি করা যায় কি না।

ব্লগাররাও আর হুজুগে মাতার সুযোগ পেতেন না বা আবগে ভেসে যেতেন না। ভবিষ্যতে আমরা এ ব্যাপারে আরো স্বচ্ছতার দাবী রাখি। এসব বিতন্ডা-বাদানুবাদ এবং সকল ব্যর্থতার দায়ভার এখন অবশ্যই লেখক এবং ব্লগ কর্তৃপক্ষকেই নিতে হয়। এবং এরূপ তথ্য বিভ্রাট যথারীতি নৈতিক মানদন্ডেও আমার মননের সাথে খাপ খায় না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।