আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওহে ডাক্তাররা, আমি তোমাদের আব্বু- 'সাংবাদিক' বলছি

যে নিরপেক্ষ সে একা, যে একা নয় সে বিশুদ্ধ নিরপেক্ষ নয়।

তোমরা বুঝে পাচ্ছ না আমি এখানে কেন, শুধু তাই না, তোমরা বেশ ইরিটেটেডও ফিল করছ আমায় দেখে। তোমরা এও বুঝে পাচ্ছ না আমি এত কিছু বুঝে ফেলছি কিভাবে। পেপার পত্রিকা পড় না বোধ হয়। নইলে তো অবশ্যই জানতে যে, আমরা, সাংবাদিকেরা, না দেখে না শুনেও অনেক কিছুই জানতে ও বুঝতে পারি ; একটি ঘটনার একাংশ দেখেই বলে দিতে পারি অদেখা অংশে কী ঘটেছে।

আর হ্যাঁ, স্বচ্ছতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের বরপুত্র আমরা, মানবতার কল্যাণে যখন তখন ফুরুত করে ঢুকে পড়তে পারি বাসরঘর থেকে নিয়ে OT পর্যন্ত যে কোন জায়গায়, আর তোমাদের এই ব্লগসাইট তো কোন ছার। যাক গে, এবার আমার পরিচয়টা দিয়ে নি। আমি বদিউজ্জামান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সম্পাদক। আমার সম্পাদিত পত্রিকা- 'শেষ আঁধার' - যা প্রতিদিন প্রাতঃরাশ সারার পূর্বেই ঢুকে পড়ে তোমার ড্রইংরুমে। হ্যাঁ এবার তুমি আমায় সম্যক চিনতে পেরেছ।

পত্রিকার নামটা তোমার মনে কৌতুহলের উদ্রেক করেছে। দেখ, সারাটা জগত জুড়ে আজ নেমে এসচে নিকষ কালো আঁধার, যা তার করাল গ্রাসে পুরে নিচ্ছে সব কিছু, এ আঁধার থেকে জগতের আর নিস্তার নেই, এ আঁধার অন্তিম আঁধার, আর এ আঁধারের জন্য দায়ী মূলত- ডাক্তাররা। এবারে আসি আজ আমার এখানে আগমনের হেতু প্রসঙ্গে। তোমরা - ডাক্তাররা, মানবতার প্রধান শত্রু, আর আমরা- সাংবাদিকরা, মানবতার পাহারাদার। ফলে আমাদের মধ্যে এক দা-কুমড়া সম্পর্ক বিরাজমান।

ডাক্তারদের আমি সেই ভর্তিপরীক্ষার সময় থেকে দুই চক্ষে দেখতে পারি নে, নিজ এলাকার প্রতিটি ডাক্তারের সাথে আমার শত্রুতা, পারতপক্ষে তাই ডাক্তারের কাছে যাই নে কখনও, নিজেই নিজের ডাক্তারি করি সাধারণত, একান্তই অবস্থা বেগতিক দেখলে গোপনে অন্যত্র গিয়ে ভুয়া পরিচয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসি। তো সম্প্রতি আমার আম্মাজান হঠাত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে আমিই ডাক্তারির চেষ্টা করি, পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়লে গোপনে তাঁকে নিয়ে 'অন্যত্র' রওনা হই ডাক্তার দেখাব বলে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, পথেই প্রাণবায়ু বেরিয়ে যায় আম্মাজানের। আর যায় কোথা, পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন হামলে পড়ে আমার ওপর, আমিই নাকি আম্মাজানকে মেরে ফেলেছি তাঁর যথাযথ চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটিয়ে। আমি অবশ্যি তাদের এটা বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি যে সব দোষ ঐ শালা ডাক্তারের, তবে এসব কথা তাদের কাছে বিশেষ কল্কে পায় নি।

মনে মনে অবশ্যি আমি ডাক্তারদের সাথে আমার শত্রুতাকেই দায়ী করছি ঐ মৃত্যুর জন্য, আমাদের শত্রুতা যে এভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে কে জানত। তাই আজ আমি তোমাদের কটি কথা বলতে প্রয়াসী হব। যা আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। আলোচনা করলে বিবেচনা আসে। প্রথমেই আমি আলোকপাত করতে চাই আমার কৃতি সাংবাদিক জীবনের ওপর, যাতে তোমরা সম্যক বুঝতে পার যে রাম-শ্যাম-যদু-মধুরা সাংবাদিক হতে পারে না, পারে কেবল অসম্ভব মেধাবী ও যোগ্যতম লোকেরা।

তোমরা তাকাও আমার অতীতপানে, কী দেখতে পাও? এক দুর্দান্ত ছাত্রের প্রেমিক, ফলশ্রুতিতে ব্যর্থ ছাত্র, ফলশ্রুতিতে ব্যর্থ প্রেমিক, ফলশ্রুতিতে ব্যর্থ রাজনীতিক, ফলশ্রুতিতে সাংবাদিক হয়ে ওঠার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনী। নিঃসন্দেহে আমিই ছিলাম ক্লাসের সেরা ছাত্র, যদিও দুর্বোধ্য কারণে ফার্স্ট সেকেন্ড হওয়া দূরের কথা, নিদারুণভাবে ফেইলুর মারতাম মাঝে মাঝেই। তখন থেকেই আমি বুঝতে পারি যে, পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে আর যাই হোক মেধা যাচাই হয় না। পরীক্ষায় ভালো করতে চাই লম্বা কালোহাত, যা দিয়ে আড়ালে কলকাঠি নাড়া যায়, স্যারদের প্রভাবিত করা যায় চা-পানি আর মাল-পানি খাইয়ে। নির্ঘাত এই কাজগুলোই করত আমাদের ফার্স্ট বয়টি, নইলে অমন IQবিহীন ছেলে অত ভাল করতেই পারে না; অবশ্যি SSC, HSC আর মেডিক্যাল ভর্তিপরীক্ষার রেজাল্ট সে কিভাবে মডিফাই করল তা আজো আমি ভেবে পাই নে, কালোহাত কতটা লম্বা হলে এসব করা সম্ভব ভাবতেই শিউরে উঠি।

আর এদের মতো দুইনম্বরীদের কারণে আমার মতো মেধাবীদের সাংবাদিক হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না, যা শাপেবর হয়, ঢুকে পড়ি সকল পেশার সেরা পেশা সাংবাদিকতায়। আর তখন থেকেই ডাক্তারদের আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি নে, কেননা আমি জানি কত দুইনম্বরী লোক যায় এ পেশায়। আর তাই তো ডাক্তার-বিরোধী লেখাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয় আমার পত্রিকায়, হপ্তায় পাঁচটি সম্পাদকীয়ই থাকে ডাক্তারদের বিরদ্ধে, নইলে যে আমার পরানজ্বালা জুড়োয় না, মানবতার প্রধান শত্রকে বিনাশ না করে যে আমার শান্তি নেই। সাংবাদিক জীবনের প্রথম দিকে আমায় অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয় অশেষ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে। প্রথমে আমি একটি পত্রিকায় ফ্রী-ল্যান্সিং করতাম।

যদিও তখন সাংবাদিকতার 'স'ও জানতাম না, তবে তীক্ষ্ণ মেধা খাটিয়ে সাংবাদিকতার নয়া দিগন্ত আবিস্কার করলাম। কোনও একটি বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে বাক্যগুলোকে একটু arrange-rearrange-permutation করে আমি খবর তৈরি করতাম অর্থাৎ আমি আদৌ ফিল্ডেই নামতাম না। তবে প্রমাদ গুণি যখন মামুজানকে ধরে একটি প্রথম শ্রেণীর ইংরাজি পত্রিকায় ঢুকে পড়ি। SSC HSC দুটোতেই ইংরাজিতে ফেইল্যুর মেরেছি। এ সমস্যারও সমাধান করি দক্ষভাবে।

আগের সিস্টেমেই খবর বানিয়ে মেসেজ করে দিতাম সেই ফার্স্ট বয়ের কাছে, সে তা ইংরাজিতে অনুবাদ করে পাঠিয়ে দিত আর আমি তা ছাপতে দিতাম নিজের নামে। হাঁ বন্ধুরা, এভাবেই অশেষ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে আমি পাড়ি দিই সাংবাদিকজীবনের কণ্টকাকীর্ণ পথ, সে পথ তোমাদের পথের মত ফুলবিছানো নয়। এবারে আমি তোমাদের বুঝিয়ে দেব সাংবাদিক কে ও কি। যে সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করে সে-ই সাংবাদিক। তবে সংবাদ যেনতেনভাবে পরিবেশন করলে হয় না, তা হতে হয় চিত্তাকর্ষক ও টনকনাড়ক।

যেমন ধর, এক ডাক্তার সারারাত ডিউটি করে টয়লেটে যাওয়ার অবসর পায় নি, সকালের দিকে একটু ফুরসত পেয়ে যেই না জরুরত সারতে গেছে অমনি এক রোগী সুযোগ বুঝে ওপার চলে গেছে। এখন আমি যদি লিখি- 'সারারাত নির্ঘুম ডিউটি করে বাথরুম করতে পারে নি ডাক্তার, সকালে পরিস্থিতি একটু শান্ত দেখে যেই না মলত্যাগ করতে গেছে, অমনি এক রোগী অক্কা পেয়েছে, মানবিক দৃষ্টিতে ডাক্তারের আসলে তেমন দোষ নেই। '- এটা কি কোনও খবর হবে? হবে না, এবং ডাক্তারদের অবহেলাও কমবে না। কিন্তু আমি যদি লিখি- 'মুমূর্ষু রোগীকে হেলায় ফেলে রেখে ডাক্তারের টয়লেটে টাইম পাস, ফলশ্রুতিতে রোগীর মৃত্যু। '- তাহলে সবার টনক নড়বে, এটা খারাপ রোগী ফেলে ডাক্তারের টয়লেটগমন বন্ধ করে দিবে।

কিম্বা ধর, আমি একদিন BSMMU আউটডোরে অডিট দিলাম, দেখলাম একটি আউটডোরে দশজন MOর জায়গায় পাঁচজন কর্মরত, সাথে সাথে আমি রিপোর্ট করব- 'BSMMUতে অগণিত রোগীকে দুর্ভোগে ফেলে রেখে ডাক্তারদের ACবেষ্টিত সেমিনারে গমন। ' একটু খোঁজ নিলে আমি হয়তো জানতাম যে পাঁচজন ডাক্তার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই সেমিনারে গেছে এবং উপস্থিত পাঁচজন ওদের ডিউটি কাভার করছে। কিন্তু আমি তো ডিটেকটিভ না, ঘটনার পেছনের ঘটনা বা লুকানো সত্য বের করে আনা তো আমার কাজ না। আমি সাংবাদিক, আমার কাজ চর্মচক্ষে যা দেখলাম তা-ই ছেপে দেয়া। যথার্থতা যাচাই করবে তদন্তবাহিনী।

ভুয়া সংবাদের কারণে কারো মানহানি হলে তাতে আমার কিসসু করার নাই। আবার ধর, বাসে করে এক ডাক্তার যাচ্ছে দশটি কঙ্কাল নিয়ে, উদ্দেশ্য- মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা, মধ্যিখানে পুলিশ একটু ফুলিশগিরি করে ঐ ডাক্তারকে আটক করে বসল। আমিও তৎক্ষণাৎ ফলাও করে ছেপে দিলাম- 'দশ লক্ষাধিক মূল্যের কঙ্কাল পাচারকালে অসাধু ডাক্তার হাতেনাতে আটক। '- পড়ার মতো সংবাদ বটে! কিন্তু মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সরবরাহের উদ্দ্যেশ্যে কঙ্কাল বহন যে আইনত বৈধ- তা তো আমার জানার দরকার নেই, আমি তো লইয়ার না। আর দশটি কঙ্কালের মূল্য যে দশ লাখ না, তাও আমার জানার দরকার করে না, আমি তো কঙ্কাল-ব্যবসায়ী না।

আবার, ঐ যে একবার, OTতে রোগী মেরে ফেলে ডাক্তাররা নানা টালবাহানা করছে- শুনে আমি OTতে ঢুকে পড়ার জন্য ছোঁকছোঁক করছিলাম, তখনই এক ডাক্তার বেরিয়ে আসে। আমি শুধোই- 'রোগী মেরেছেন তো মেরেছেন, এখন আবার স্যালাইন ব্লাড এসব লাগিয়ে পার্টির টাকার শ্রাদ্ধ করছেন কেন আপনারা?' ঐ ডাক্তার জবাবে- প্রায় আমার ঘাড় ধরে বের করে দিতে দিতে বলে- 'রোগী মরে নি, শকে আছে, রিসাসিটেশন করা হচ্ছে, অনেক বেশি বুঝে ফেলেছিস, এবারে বিদেয় হ। ' ভায়েরা আমার, শক-কোমা-ডেথ এর পার্থক্য তো আমার বোঝার দরকার নেই, আমি তো ডাক্তার না, আমার কাছে ওগুলো একই। তাই তো ওখান থেকে বেরিয়েই পত্রিকায় দিয়ে দিলাম- 'রোগী মেরে ফেলে OTতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীর গায়ে স্যালাইন ব্লাড লাগিয়ে ডাক্তারদের টালবাহানা। ' আমাদের তোমরা যতটা স্বাধীন ভাব, আমরা মোটেও কিন্তু তা না, এটা তোমাদের মনে রাখতে হবে।

সাংবাদিকদের লিখতে হয় সম্পাদকের মর্জিমাফিক, আবার সম্পাদককে সম্পাদনা করতে হয় পত্রিকামালিকের খেয়ালখুশিমতো। উদাহরণত- সম্পাদক যদি বলে- AIDS নিয়ন্ত্রণের উদ্দ্যেশ্যে ব্যতীত ধর্মপালনের পক্ষে লেখা যাবে না, সাংবাদিকদের তা-ই করতে হয়; পত্রিকামালিক যদি বলে- অমুক দলের বিরুদ্ধে লেখা যাবে না, সম্পাদককে তা-ই করতে হয়। তোমাদের বুঝতে হবে আমাদের সীমাবদ্ধতা, এত সহজ না! এবারে ডাক্তারদের সম্বন্ধে দুটো তিক্ত অভিজ্ঞতা বলি, এতে তোমরা বুঝতে পারবে কেন তোমাদের আমার সহ্য হয় না। একবার এক বড় সমাজশত্রুকে ফাঁসাতে তার বাসায় দাওয়াত খেয়ে গুরুতর অসুস্থতার ভং ধরি। উদ্যেশ্য- তাকে পয়জনিং কেইসে ফাঁসিয়ে হেনস্তা করা।

আমায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তারগুলো আমায় পরীক্ষা করে দেখেই 'ধীরে চল নীতি' গ্রহণ করে। তাদের আলসেমি লক্ষ্য করে আমার সহকর্মী চিৎকার করে- 'সমাজের অমূল্য সম্পদ VIP সাংবাদিককে শিগগীর চিকিৎসা দিয়ে যা ডাক্তাররা। নইলে পত্রিকায় রিপোর্ট করে ১২ টা বাজিয়ে দব'। এরপরই বলা নেই কওয়া নেই এক ডাক্তার এসে 'বিষ বের করতে হবে'- বলেই একটি নল মম নাক দিয়ে সোজা পেটে সেঁধিয়ে দেয়।

আরেক ডাক্তার এসে 'এন্টিডট দিতে হবে' - বলেই আমায় উপুড় করে দেয়। দাদাভায়েরা, বলতে লজ্জা নেই, মম পশ্চাৎদেশে সে অতি বেদনাদায়ক দুটো ইনজেকশন পুশ করে দেয়। এরপর আমার পক্ষে আর ভং ধরে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এক হেঁচকা টানে নল খুলে ফেলে বাড়ি চলে আসি। কিন্তু আমার একটু খটকা থেকে যাওয়ায় পরবর্তীতে একদিন আমার সেই ডাক্তার বন্ধুর সাথে পুরো ঘটনা খুলে বলি।

সে সব শুনে বলে- 'পয়জনিং এর অব্যর্থ ঔষধই তোমাকে দেয়া হয়েছে। এর নাম- পাতিত এইচটুও। তোমার আর কখনও জিন্দেগীতে পয়জনিং হবে না। ' কিন্তু ওহে ডাক্তারসমাজ, এরপর হাজারও ফার্মেসী খুঁজেও ঐ নামে কোন ঔষধ আমি পাই নি। এটাকে তোমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করবে? আরেকবার আরেক ডাক্তারের কাছে গেছিলাম মাথাব্যথা নিয়ে।

সে আমার কথা ভালভাবে না শুনেই একগাদা টেস্ট লিখে দেয়- S. bilirubin, ALT, AST, PT কি সব হাবিজাবি। যাক গে, টেস্টগুলোর রিপোর্ট নিয়ে একদিন যাই তার চেম্বারে। গিয়ে দেখি শালা চেম্বার তুলে দিয়ে পালিয়েছে। তার নাম্বারে কল দিলে সে বলে- 'রিপোর্ট তো আমার জানা। তুমি হলুদ সাংবাদিকতায় আক্রান্ত, তোমার রিপোর্টে ডীপ জন্ডিস আসবে এটা তো জানা কথা।

হে হে হে। ' ফাজলামোর একটা সীমা আছে। তোমাদের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক রাখা সম্ভব হে ডাক্তারসমাজ? পরিশেষে ওহে মিয়াভায়েরা, অনেক কথা হল। তোমরা আর রাজনীতিকরা, মানবতার প্রধান শত্রু আর আমরা- সাংবাদিকেরা, মানবতার পাহারাদার; তাই আমরা তোমাদের প্রধান শত্রু। কিন্তু রাজনীতিকগুলো আমাদের পাত্তা দেয় না, পাত্তা দিতে হয় না তাদের।

কারণ তাদের রয়েছে ক্ষমতা আর অন্ধভক্তকূল জনতা। অন্যদিকে আপাতদৃষ্টে দুর্বল প্রতিপক্ষ তোমরা, কিন্তু তোমাদেরও রয়েছে এক মোক্ষম অস্ত্র, যদ্দরুন বৃহত্তম ডাক্তারবিদ্বেষী ও গালিগালাজকারীকেও ছেরা ছোটামাত্রই এসে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় তোমাদের পায়ে। অস্ত্রটা হল- তোমাদের কারবার মানুষের জীবন নিয়ে। আবার তোমাদের প্রধান দুর্বলতা- নিজেদের বক্তব্য, কর্ম ও অবস্থান জনতার কাছে পৌঁছে দেয়ার মতো মাধ্যমের অভাব। এটা আবার আমাদের স্ট্রং সাইড, সত্য মিথ্যা যে কোনও বক্তব্যকে নিমেষেই জনতার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি আমরা, তাদের বিশ্বাস করাতে পারি যাচ্ছেতাই, একটি নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে ১২টা বাজিয়ে দিতে পারি যে কোনও দুই টাকার ডাক্তারের ক্যারিয়ার ও রেপুটেশনের।

আমাদের লড়াইটা তাই সেয়ানে সেয়ানে। অবশ্যি এই প্রাণঘাতী মানঘাতী শত্রুতার কিঞ্চিৎ প্রশমন হলে মন্দ হয় না, কি বল?। তোমরা আমাদের ভিআইপি-জ্ঞানে সেবা দেবে, আমরা তোমাদের সম্বন্ধে নেগেটিভ খবর প্রচার বন্ধ রাখব। এই দেখ না, কখনও কোন পত্রিকায় কোনও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোন খবর তোমাদের চোখে পড়ে না, বাকী সবার বিরুদ্ধেই খবর চোখে পড়ে, এর মানে কি সাংবাদিকরা ধোয়া তুলসীপাতা, তারা কখনও কোনও অপরাধে জড়ায় না? মোটেও না। এর মানে হল আমরা তাদের প্রটেকশন দিচ্ছি, তাদের কুকর্ম কাভার করে রাখছি।

ঠিক অমন প্রটেকশনটাই তোমাদেরও দব আমাদের ভিআইপি-সম্মান দিলে, আমাদের সুপিরিওরিটি মেনে নিলে। কিন্তু অমন সমঝোতা চাইলে নতি স্বীকার করে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে তোমাদেরই, কারণ, হরেক রকম আকাম-কুকাম করে তিক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি করেছ তোমরাই!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।