আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

*_*~* রক্তরাঙ্গা গোলাপের বৃষ্টিতে মোমের আলোয় একটি পায়েল *~*_*

এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সেই সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরেই চলেছে থামার নাম ও নেই , মাঝে মাঝে এর ধারা বেড়ে আবার কমে যাচ্ছে ... ধুর ! এই রকম আবহাওয়াতে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে কাটাতে পারলে বেশ হতো ... সেই সাথে আম্মুর হাতের ভুনা খিচুড়ী আর গরুর মাংস , সেই সাথে যদি একটু বেগুন ভাজি হয় তাহলে তো ফাটাফাটি ... আরে ! ফাটাফাটি শব্দটা মাথায় আসতেই তন্দ্রা ভাবটা মুহুর্তেই উধাও হয়ে গেল তুহিনের চোখ থেকে ... কারণ কিছুই না , শুধু ঐ মুহুর্তে আসা টেক্সট ম্যাসেজ ... তাতে লেখা আছে -- " রিক্সায় বসে আছি, ঘরে ঢুকবো না, ৫ মিনিটের মধ্যে বের হও... অপেক্ষা করছি " ... টেক্সট টা পড়তে পড়তেই মুখ দিয়ে অজান্তেই বের হয়ে গেল একটি শব্দ .... "হলো তো এইবার ? " ঝটপট ফ্রেস হয়ে কাপড় পরে সাড়ে চার মিনিটের মাথায় গেট খুলে সামনে তাকিয়ে আরেকবার ঝটকা খেল তুহিন ... আরে , কি কাহিনী ... ঝরঝর বৃষ্টির মধ্যে সে চুপচুপা ভিজে বসে আছে ... এক দৌড়ে রিকসার কাছে গিয়ে তুহিন জিজ্ঞেস করে >> কিরে ভিজলি ক্যামনে ? বাসায় আয়, চেন্জ করে এর পরে বের হই ... কেমন জানি রিমিঝিমি কন্ঠে সন্ধ্যার উত্তর :: আরে , আজকে তো এসেছি একসাথে রিক্সায় করে ঘুরবো আর ভিজবো বলে... >> বলিস কি ? ঠান্ডা লেগে যাবে তো :: আরে লাগবে না , আয় তো তুহিনের হাত ধরে টেনে রিক্সায় তুলে নেয় সন্ধ্যা , এর পর বলে -- :: আজ সারা দিনের প্ল্যান কি ? >> ঘুম, আর ভুনা খিচুড়ী ... :: ধুর, এমন দিনে কেউ কি ঘরে বসে থাকে নাকি ? আজ আমরা সারা বিকেল ঘুরে বেড়াবো রিক্সায়, আইসক্রীম খাবো , আর হাতে হাত দিয়ে কাক ভেজা হয়ে ঘরে ফিরবো ... >> কাকের মত যখন ভিজবি ঠিক করেছিস তখন ঘরে ফেরার কি দরকার ? তোরে কোনো গাছের মগডালে বসায়ে দিবো নে , কাকের মত কা কা করতে থাকিস সারা রাত ... :: দেখ, আজকে কিন্তু আমার মন অনেক ভাল, রাগাসনে আমাকে >> কা কা কা .... :: ভাল হবে না বলে দিচ্ছি .... >> কা কা কা :: কা কা কা করিস ক্যান ? >> তুই না কাক হতে চাচ্ছিস , এ জন্য কাকের ভাষায় উত্তর দিচ্ছি ... :: ফাজলামি করবি না বলে দিলাম ... চুপ থাক >> আাচ্ছা , (মুখে জিপার এটে দেয়ার অভিনয় করে তুহিন বলে) ... এই যে আমি চুপ ... কিছুক্ষন চুপচাপ কেটে গেল , দুজন দু দিকে তাকিয়ে, মাঝে মাঝে একে অপরের দিকে তাকালেও কথা হচ্ছে না ... এমন একটা সুন্দর বিকেল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখে সন্ধ্যা ও ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকে, আর ওর রাগে লাল হয়ে যাওয়া দেখে তুহিনের মনে অন্যরকম ভালবাসা বাড়তে থাকে ... এক সময় আর না পেরে সন্ধ্যা বলেই বসে ... :: কিরে কথা বলবি না ? >> তুই না চুপ করে থাকতে বললি , তাই তো চুপ করে আছি :: আচ্ছা এখন কথা বল ... >> জানিস রাগ করলে না তোকে আপেলের মত লাগে :: তোকে এই কথা বলার জন্য আমি মুখের জিপার খুলতে বলেছি ? >> তাইলে কি বলতে হবে বলে দে ... :: তুই নাম রিক্সা থেকে >> তুই নাম রিক্সা থেকে :: চুপ , তুই নাম রিক্সা থেকে >> চুপ, তুই নাম রিক্সা থেকে :: আরেক্টা কথা এমনে রিপিট করলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব বলে দিলাম >> এইটা আমি করলে তুই ব্যাথা পাবি অনেক , তাই বললাম না রিক্সাওয়ালা কে রিক্সা থামাতে বলে সন্ধ্যা বলে -- :: নাম রিক্সা থেকে >> আরে কি করিস ? আমি তো ফান করছিলাম ;; তুই নামবি নাকি আমি ? >> আচ্ছা যা, আর এমন করবো না, ওক্কে ? :: আমি সিরিয়াস, যে কোন একজন নামবে এখন রিক্সা থেকে , তুই না হয় আমি ... বল কে নামবে ? >> আচ্ছা , আমি নেমে যাচ্ছি ... তুহিন চুপচাপ নেমে যায় রিক্সা থেকে, সন্ধ্যা ওর দিকে একবার ও ফিরেও তাকায় না , অন্য দিকে তাকিয়ে রিক্সাওয়ালা কে বলে :: আপনি চালান ... বৃষ্টির মাঝে নেমেই তুহিনের মাথা ঘুর্নিঝড়ের মত চলতে থাকে, সে জানে একটু পরে কি হবে ... হাতে কতটুকু সময় আছে, আর এর মধ্যে কি করা যায় ... চিন্তা করতে করতেই সে সেলফোনটা বের করে পরিচিত একটি নম্বরে ফোন করে .... >> হ্যালো ... একটু ইমপর্টেন্ট কথা ছিলো ... সময় হবে ? অন্যদিকে সন্ধ্যার কিছু ভালো লাগে না , বার বার মন চায় ফেরত গিয়ে তুহিনকে তুলে নিতে , আবার অনেক রাগ ও হয় ... ও এমন করে ক্যান ? ... নিবোই না ওকে ... আবার একটু পরে খারাপ লাগা শুরু হয় ... শেষে আর না পেরে রিক্সা ঘুরিয়ে নেয় ... একটু পরেই দেকতে পায় তুহিন দাড়িয়ে আছে ঠিক সেখানেই, যেখানে ওকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ... সেখানে দাড়িয়ে কার সাথে জানি কথা বলছে ... ওকে দেখেই তড়িঘড়ি করে ফোনটা শেষ করে ফেললো ... এটা দেখে সন্ধ্যার কষ্ট লাগলেও কিছু না বলে শুধু বললো :: আয় , রিক্সায় ওঠ ! চুপচাপ রিক্সায় উঠে তুহিন রিক্সাওয়ালা কে বলে >> আপনি রিক্সা ঘুরান , যেদিকে যেতে বলবো সেদিকে যাবেন :: কৈ যাবো আমরা ? >> দেখি , কোথায় যাওয়া যায় (ঠান্ডা গলায় তুহিন উত্তর দেয়) এই কন্ঠটার সাথে সন্ধ্যা খুবই পরিচিত, সে জানে এখন রাগ করে বা অভিমান করেও কিছু হবে না সুতরাং .... সে অন্যভাবে কথা শুরু করলো :: কেমন আছিস ? >> ভাল , তুই ? :: এইতো ... >> রিক্সাওয়ালা ভাই আপনি ডান পাশের গলিতে যান ... :: আমরা কোথায় যাচ্ছি বলবি ? >> নিজের চোখেই দেখে নিস .. :: তুই কি অনেক রাগ করেছিস ? তুহিন কথা বলে না :: দেখ, তখন অমন করছিলি , এজন্য রেগে গিয়েছিলাম, স্যরি >> হুমম .. :: স্যরি , স্যরি, স্যরি ... তিনবার স্যরি বলেছি তো >> আচ্ছা ... :: তাও অমন করে থাকবি ? >> হুমমম ... সন্ধ্যার তখন চোখ ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু কানতে পারছে না , চোখ গড়িয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লেও মুখ দিয়ে একটুকুও শব্দ করেনা ... যদি তুহিন টের পেয়ে যায় ... তুহিন জিনিসটা টের পেয়ে আড়চোখে দেখে সন্ধ্যার কান্না ... তবুও চুপ করেই থাকে ... আগের মতই ... কারো মধ্যে কোনো কথা হয়না , তুহিন শুধু রিক্সাওয়ালাকে বলতে থাকে , কোন দিকে যেতে হবে ... অবশেষে একটি অচেনা রেস্টুরেন্টের সামনে থামিয়ে সন্ধ্যাকে বলে ... >> একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি সন্ধ্যা বসে আছে রিক্সায় , রেস্টুরেন্টের কালো কাঁচের দরজার ভিতরে কি হচ্ছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না , অন্যদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে , মনে মনে কেমন জানি অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে , তুহিনের মাথার ঠিক নেই, কি করছে সে ভিতরে ? ... কোনো সমস্যা করে নাই তো ? ... অর পক্ষে সবই সম্ভব ... কি করবে সে ? ... হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে , স্ক্রীনে ভেসে ওঠে তুহিনের ছবি ... অনেক উৎকন্ঠা নিয়ে ঝটপট ফোনটা কানে দিয়ে সন্ধ্যা জিজ্ঞেস করে ... :: সব ঠিক আছে তো ? আসিস না ক্যান বাইরে ? >> একটু ঝামেলা হইসে এবার সন্ধ্যা সত্যি কেদে ফেলে জিজ্ঞেস করে :: কি হইসে তোমার ? >> (খুবই ঠান্ডা কন্ঠে ) যদি ভয় না পাও তবে ভিতরে এসেই দেখে যাও ... নিজের চোখে হুড়মুড় করে রিক্সা থেকে নেমে এক দৌড়ে রেস্টুরেন্টের গেটের কাছে আসতেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো , এলোমেলো পায়ে ভিতরে পা দিতেই ঘটনার আকষ্মিকতায় থমকে দাড়িয়ে পড়লো সন্ধ্যা ... হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলো লাল গালিচার উপর হালকা মিষ্টি সুরের তালে ঝরে পড়া রক্তরঙ্গা গোলাপের পাপড়ী বৃষ্টির মাঝে ... আর ঠিক ওর মনের মত করে সাজিয়ে রাখা টেবিলের ওপর ওর সবচেয়ে ফেভারিট খাবার যেগুলোকে রেষ্টুরেন্টের আলো আধারির মাঝেও আলোকিত করে রেখেছে কয়েকটি মোমবাতি ... আর তার পাশে অসম্ভব সুন্দর "পায়েল" হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তুহিন ...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।