আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুটান বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার নেবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে থাকতে চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

ভুটান বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক নেবে। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিসহ দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অপর চুক্তিটি সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বিষয়ক সহযোগিতা চুক্তি। সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মঙ্গলবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি দুটি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া ভুটানের ভবিষ্যত জলবিদু্যত প্রকল্পে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ থেকে ভুটানে চিকিৎসক নিয়োগের চুক্তিতে ভুটানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব দাও পেনজো এবং বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্য সচিব হুমায়ুন কবীর। অপর চুক্তিটি সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বিষয়ক। ভুটানের পররাষ্ট্র সচিব দাও পেনজো এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি সচিব সুরাইয়া বেগম সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে মঙ্গলবার সংস্কৃতি বিনিময়ের একটি চুক্তি ও স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতার ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাৰরিত হয়েছে। চুক্তি স্বাৰর অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ভুটানে চাকরি করতে পারবেন।

আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদু্যত ঘাটতির কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের বাসত্মবায়ন ও বিনিয়োগ ব্যহত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টাই করছে। বিদ্যুত ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ভুটানের রয়েছে জলবিদ্যুত উৎপাদনে অমিত সম্ভাবনা। তিনি বিদু্যত খাতে বিনিয়োগে অংশীদার বা সম অংশীদার কিংবা বিদ্যুতের প্রত্যৰ ক্রেতা হিসাবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. এএফএম রম্নহুল হক, তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মাদ আবদুল আজিজ, মুখ্য সচিব এমএ করিম, পররাষ্ট্র সচিব মিজারম্নল কায়েস, প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ থিম্পুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশে তাঁর সরকার ঢাকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কের বিষয়ে সনত্মোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও সংহত ও শক্তিশালী হবে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

থিনলে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণে ভুটান খুবই আগ্রহী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপাৰিক সম্পর্ক বাড়াতে উভয় দেশের আগ্রহ প্রশংসাযোগ্য। সফরের তৃতীয় দিনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে খুলনা যাবেন। সেখানে তিনি সুন্দরবন পরিদর্শন করবেন। রাতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যান। সেখানে 'গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস' শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই মানুষকে সুখী করতে পারে না। পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলো ভেঙ্গে গেলে মানুষের সুখ কমে যায়। পশ্চিমা বিশ্বে এই সম্পর্কগুলো দুর্বল। এশিয়াতে এই সম্পর্ক এখনও অটুট থাকায় পশ্চিমাদের চেয়ে এখানকার মানুষ বেশি সুখী।

বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর 'গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস' বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভুটানের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরম্ন হয়। বক্তৃতার আগে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পৰ থেকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন। এ সময় ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারম্নন অর রশিদ, কোষাধ্যৰ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে বলেন, জিডিপির মতো ভুটানে জাতীয় সুখের পরিমাপ করা হয়।

জাতীয় সুখ এমন একটি বিষয় যা চারটি মুখ্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। ঠেকসই সামাজিক অর্থনৈতিক মডেল, সুস্থ পরিবেশ, সামাজিক বন্ধন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরৰণের ওপর ভিত্তি করে দেশের মানুষের সুখ নির্ভর করে। সুখ কেউ বাইরে থেকে তৈরি করে দিতে পারে না। এজন্য নিজেদেরও সুখভাব থাকতে হয়। মানুষের সুস্বাস্থ্যের ওপরও সুখ নির্ভর করে।

একটি দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ সুখী থাকতে পারে। কিন্তু দেশের সামষ্টিক হিসাবে সুখ ভিন্ন একটি বিষয়। এজন্য মানুষের মানবতা ও ধর্মীয় বিষয়কে গুরম্নত্ব দিতে হয়। তিনি বলেন, আমরা দিন দিন অর্থনীতির দাসে পরিণত হচ্ছি। ফলে আমরা সবকিছুই অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে করতে চাই।

মানুষের সুখ এই অর্থনীতি দিয়ে পরিপূর্ণ হয় না। তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে বলেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় নিরপেৰতা একটি বিশাল অর্জন। এছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিকরা অন্য দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ওপর শ্রদ্ধাশীল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রশংসা করেন। কাল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন ॥ চট্টগ্রাম অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসছেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

মাত্র ৪০ মিনিটের এ পরিদর্শনে তিনি প্রত্যক্ষ করবেন বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম এবং সুযোগ সুবিধা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিদেশী কোন প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন। ফলে ভুটানী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুধু বিদেশী অতিথি বলেই নয়, ভুটানকে ট্রানজিট প্রদান এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধানত্ম সরকারী পর্যায়ে গৃহীত হওয়ায় এ সফরকে অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ইয়োসার থিনলে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবেন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে।

তিনি বন্দরে অবস্থান করবেন বেলা সাড়ে ১১টা পর্যনত্ম। এ সময়ের মধ্যে ভুটানী প্রধানমন্ত্রী বন্দর অভ্যনত্মরে পণ্য ওঠানামা ও অপারেশনাল কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করবেন। সংক্ষিপ্ত এ সফরে তিনি বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কাজটিও সেরে নেবেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানী রাষ্ট্রদূত, ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতসহ দেশী-বিদেশী প্রায় ৩০ প্রতিনিধি। বন্দর পরিদর্শনের পর তিনি যাবেন কঙ্বাজারে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সচিব জানান, এই প্রথম অন্য কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসছেন। তাছাড়া একজন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে সম্মান জানানো উচিত সেভাবেই যাবতীয় আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। প্রসঙ্গত, ভুটানকে ট্রানজিট এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধানত্ম হয়েছে দু'দেশের সরকারী পর্যায়ে। এছাড়া ভারত ও নেপালসহ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশকেও ট্রানজিট প্রদানের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের কর্মক্ষমতা ও অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের যেটুকু ক্ষমতা তা দিয়েই প্রতিবেশী দেশকে সার্ভিস প্রদান শুরম্ন করা সম্ভব বলে মনে করছেন বন্দরের সঙ্গে সংশিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব জানান, বর্তমানে বন্দর ইয়ার্ডের কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৩১ হাজার টিইইউএস। গড়ে সেখানে কন্টেনার থাকছে ২২ থেকে ২৩ হাজার। তাছাড়া ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যেই রিচ স্টেকার, ফর্ক লিফটসহ ৩৯টি যন্ত্রপাতি সংগৃহীত হয়েছে। আগামী জুনের ভেতরে চট্টগ্রাম বন্দরে যন্ত্রপাতির বহরে যোগ হবে আরও ৪৯টি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ট্রানজিট প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার বন্দরের সুযোগ সুবিধা এবং আধুনিক অবকাঠামো আরও উন্নত করতে উদ্যোগী হয়েছে। চট্টগ্রাম পরিদর্শনের পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ইয়োসার থিনলে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) পরিদর্শন করবেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি আসবেন ইউএসটিতে।

এখানে তিনি ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও ইউএসটিসিসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ভুটানী ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে মিলিত হবেন। সুত্র

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।