আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরিবের টাকা ধনীর পকেটে

বাংলা আমার দেশ

কক্সবাজারের উখিয়ায় অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির ২১টি প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে। কাজ বন্ধ রেখে এবং অনুপস্থিত শ্রমিকদের উপস্থিত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্যরা সেই টাকা আত্মসাৎ করছেন। এ ছাড়া একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম দিয়ে একজনের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় উপজেলার রাজাপালং, রত্নাপালং, পালংখালী, হলদিয়াপালং ও জালিয়াপালং ইউনিয়নে ২১টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এতে তালিকাভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ৪৩৫ জন।

গত ৬ নভেম্বর থেকে রাজাপালং ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৪ ইউনিয়নে ৪০ দিনের এ কর্মসূচির কাজ শুরু হয়। রাজাপালং ইউনিয়নে কাজ শুরু হয় ৪ ডিসেম্বর। শ্রমিকপ্রতি দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরি পরিশোধের নিয়ম রয়েছে। এ জন্য এ উপজেলায় ৮৬ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্ধের দিন ছাড়া জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং ও পালংখালীতে ৩৫ দিন কাজ হয়েছে।

রাজাপালংয়ে কাজ হয়েছে ২০ দিন। সরকার অনিয়ম, দুর্নীতি ঠেকাতে শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে চেকের মাধ্যমে মজুরি পরিশোধের নিয়ম চালু করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতি শনিবার ও মাঝেমধ্যে সপ্তাহে আরও দু-এক দিন কাজ বন্ধ ছিল। এভাবে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ রাখার দিনের টাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রুমখাঁ হাতিরঘোনা চর সংস্কার প্রকল্প এলাকায় ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

গত ২৫ ডিসেম্বর ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীসহ একাধিক সদস্য রয়েছেন। এ তালিকায় ২০টি পরিবার রয়েছে। এ রকম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মোক্তার আহমদ ও তাঁর স্ত্রী গোল ছেহের। শ্রমিক মোক্তার আহমদ অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী গোল ছেহের কাজ করেও মজুরি পাননি।

তাঁর স্ত্রী ব্যাংক থেকে ওই টাকা তুলে হাসেম মেম্বারের হাতে দেন। শুরু থেকেই এ প্রকল্পে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্রকল্প কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হাসেম বলেন, ‘শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে শুধু আমি একা খাই না। প্রকল্প কমিটির সভাপতি, সদস্য, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ভাগ দিতে হয়। ’ হলদিয়াপালং প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা ও উপজেলা প্রশাসনের চাপে কিছু অনিয়মের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।

’ গত ২৬ ডিসেম্বর রত্নাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়ার ঘাঁটিপাড়া ও বিডিআর ক্যাম্প ঢালা সংস্কার প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ৬০ জন শ্রমিকের স্থলে মাত্র ২২ জন কাজ করছেন। রত্নাপালং ইউনিয়ন প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আসলে সবকিছু নিয়মের মধ্যে হচ্ছে, কর্তার ইচ্ছায় আমরা চলি। ’ জালিয়াপালং চরপাড়া, রেজুখালের সাইট (পার) সংস্কার প্রকল্পের শ্রমিকদের মাঝি শাহ আলম অভিযোগ করেন, ৯, ১৫ ও ১৮ ডিসেম্বর তিন দিন কাজ বন্ধ ছিল। প্রত্যেক শ্রমিককে বন্ধের দিনের এ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে প্রকল্প কমিটির সদস্য শামশুন নাহারের জামাতা ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জমির আহমদকে দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা জমির আহমদ বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন খরচ মেটাতে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটির সদস্য নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের দরিদ্র নেতা-কর্মীদের স্বার্থে কিছু এদিক-সেদিক করা হচ্ছে। ’ পিআইও এ বি এম সিরাজুল হক জানান, অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তাই কর্মসংস্থান কর্মসূচির বিষয়ে তিনি ঠিকমতো খোঁজ-খবর নিতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন প্রকল্পের সভাপতিরা এ কাজ তদারকির দায়িত্বে আছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আসিফ বিন ইকরাম বলেন, যেসব প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবং কাজের মান সন্তোষজনক নয়, সেসব প্রকল্পের সভাপতিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।