আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এত মেধাবী কোথা হইতে উদয় হইল দেশে??

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

সারাদেশে নতুন দুই ধরনের পরীক্ষা আরম্ভ হয়েছে। ২ ধরনের বললাম এই কারণে যে একটা পরীক্ষা দিতে হয় ৫ থেকে ৬ এ ওঠার আগে যার নাম দেয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী আর একটা দিতে হয় ৮ থেকে ৯ম শ্রেণী তে ওঠার আগে যেটার নাম জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট । আর সাথে মাদ্রাসা জুনিয়র সার্টিফিকেট পরিক্ষাও হয়েছে। ইতিমধ্যে ফলাফলটাও বের হয়ে গিয়েছে। ফলাফল বেশ আশাব্যাঞ্জক সেটা না বললেও হয়ত সবাই বুঝে নিয়েছেন।

কেউ বা আবার খবরেও শুনেছেন। সারা দেশব্যাপী আনন্দের বন্যা এখন। যারা ভাল ফল করেছে তাদেরকে অভিনন্দন আর যারা ভাল ফল করতে পারেনি তাদেরকে সুভাশীষ জানালাম তারা যেন পরের বার ভাল ফল করে এই প্রতাশ্যায়। এবার আসি কিছু জরুরি কথায়। গত কয়েক বছর ধরে এস এস সি ও এইচ এস সি তে ভাল ফলাফল চোখে পড়ার মত।

জি পি এ ৫, গোল্ডেন ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় কি খেয়াল করেছেন যে এতে একজন শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশ বা স্ফুরোণ কতখানি ঘটছে? আমার মনে হয় না খুব বেশি এর উন্নতি হয়েছে। কারণ আছে এটা বলার। একটা একটা করে আসি। আমার এক পরিচিত বড় ভাই আছেন।

তিনি আমাকে এক চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন। উনি এক কলেজ এর শিক্ষক। তিনি যেখানে পড়ান সেখানে নতুন ২ জন শিক্ষক / শিক্ষিকা কে নিয়োগ দেয়া হবে। যাদের কে নেয়া হবে তারা এস এস সি আর এইচ এস সি তে ৪.৯০ উপরে পেয়ে পাশ করেছে। এর মধ্যে একজন আবার ৫ পেয়েছে।

কিন্তু তাকে যখন ক্লাস ৫ বা ৬ এর কোন একটা অংক করতে দেয়া হল তখন সে পারে নাই। কিভাবে করতে হয় সে তাও জানে না। এর থেকেও আশ্চর্য এর ব্যপার হল তাকে যখন ইংলিশ এ ক্লাস নিতে বলা হল তখন সে বলতেই পারে না। তার মানে সে তখন কিছুই বলতে পারে না। এ সমস্যা গুলো এখন ভুরি ভুরি ঘটে চলেছে।

আমি এটা শুনে সেই ভাইকে বললাম তাহলে তারা কিভাবে পাশ করল আর এত ভাল ফলাফল করে বের হল? সেই ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে জানাল যে সরকার এর উচু লেভেল থেকেই নাকি টিচারদের বলা হয়েছে যে কেউ যদি হাফ অংক পারে তাহলে যেন তাকে ফুল নম্বর দেয়া হয়!!! খাতা দেখার সময় যেন তারা বেশ নমনীয় ভাবে দেখেন। তাই তাদের একটা চাপ এ থাকতে হয় সবসময়। ধরা যাক একটা অংক দেয়া হয়েছে। নম্বর আছে সেখানে ১০। সেই ছাত্র বা ছাত্রী সেই অংকে পুরো ঠিক মত করতে পারে নি বা ভুল হয়েছে।

এদিকে সে ধরেই নিয়েছে অংকে সে ভাল করতে পারবে না। ফেল হতে পারে। কিন্তু ফলাফল দেখে সে আসলেই তখন অবাক হয়ে যায়। কারণ সে পাশ করেছে। কি ভাবে করেছে সে বলতে পারে না।

কিন্তু বিশ্বাস করুন এখন এটাই বাস্তবে হচ্ছে। আর এরকম ব্যপার গুলো ধামাচাপা পরে থাকেই বলে হয়ত আমাদের কানে আসে না। হয়ত আরো কোন গোপন ব্যপার এখানে লুকিয়ে আছে। এতে সেই ছেলে বা মেয়ের লাভ কোন মতেই হচ্ছে না বরং সে ভবিষ্যতে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তখন যদি কেউ শিক্ষক হতে চায় তাহলে সেটা হবে লজ্জাকর।

কারণ সে তখন বেসিক ব্যপার গুলো না বুঝেই ছাত্র ছাত্রীদের পড়াবে। গোড়ায় যে গলদ সেটা থেকেই যাবে। কারণ ভেবে দেখেন যে বাংলা কিংবা ইংলিশ যেটাই আপনি ধরেন না কেন কোন বিষয় এই ফুল নম্বর পাওয়া এত সোজা ব্যপার না। আমরা জাতি হিসেবে ইংলিশ এ বরাবর ই কাচা ছিলাম এবং এখন ও আছি। হয়ত ভবিষ্যতেও থাকব।

যেখানে এই ইংলিশ নিয়ে যে ছাত্র ছাত্রী দের ভীতি রয়েছে সেটা সব মহলেই ভাল মত জানেন। আর আজ পর্যন্ত শুনিনি যে বাংলা রচনা তে কেউ ২০ এ ২০ পেয়েছে। এ নজির কেউ দেখাতে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি কেন এত আগে পরীক্ষা দিতে গেলাম?! পরে দিলেই তো হত। কারণ পরে দিলে আমিও জি পি এ ৫ পেয়ে যেতাম।

এরকম চিন্তা এখন অনেকেই করে থাকেন আর আফসোস করেন। তাদের এই চিন্তা হওয়াটা অমূলক নয়। কারণ হুট করে দেশ এ এত মেধাবী বেড়ে গেলে সেটা খুশির থেকে অখুশিই বেশি হওয়া উচিত। আমাদের সাবধান হওয়ার সময় হয়েছে কারণ সবসময় মনে রাখতে হবে যে কোন কিছুর পরিমাণ থেকে এর মুল্য বা মানটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।