আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাত ভাই চম্পা



অনেক অনেক দিন আগে এক দেশে ছিল এক রাজা আর এক মন্ত্রী। একদিন রাজা মন্ত্রীকে বললো, "মন্ত্রী! রাজ্যের লোক সুখে আছে না দুঃখে আছে তার কিছুই তো জানি না! আমি কেমন রাজা হলাম বলো তো!!" মন্ত্রী বললেন,-"মহারাজ! অভয় দেনতো একটা কথা বলি?" রাজা বললেন,-"নির্ভয়ে বল। " তখন মন্ত্রী বললেন, "মহারাজ, আগে রাজারা দিনের বেলায় শিকার করতেন আর রাত্র হলে ছদ্মবেশ নিয়ে প্রজার সুখ-দুঃখ দেখতেন। সে দিনও এখন আর নাই, নাই সে কালও নাই। প্রজার খোজ কে রাখে!!" একথা শুনে রাজা বললেন, "এই কথা? আচ্ছা আমি কালই শিকারে বের হবো।

" ২ রাজা শিকার করতে যাবেন, রাজ্যে হুলুস্থুল পড়ে গেল। হাতী, ঘোড়া, সিপাই, মন্ত্রী, পাত্রমিত্র নিয়ে রাজা শিকার গেলেন। রাজা দিনের বেলায় শিকার করেন, হাতী, বাঘ মারেন আর রাত হলে ছদ্মবেশ ধরে প্রজার সুখ-দুঃখ দেখে বেড়ান। একদিন রাজা গৃহস্থের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় শুনতে পেলেন, "ঘরের মধ্যে গৃহস্থের তিন মেয়ে গল্প করছে। " রাজা কান পাতে শুনতে লাগলেন (লুল) বড় বোন বলছে, "শোন, আমার যদি রাজবাড়ির ঘোড়সাওয়ারের সঙ্গে বিয়ে হতো তাহলে আমি মনের সুখে চানাচুর খাইতাম!" এই কথা শুনে মেঝ বোন উৎসাহিত হয়ে বললেন, "আমার যদি রাজবাড়ির বাবুর্চির সঙ্গে বিয়ে হতো তাহলে কত মজার মজার খাবার এম্নি এম্নিতেই খাইতে পারতাম!" তাদের কথা শুনে সবার ছোট বোনটা, কিছুই বলছে না দেখে অন্য দুই বোন তাকে ধরে বসলো "ঐ ছোট্টি, তুই কিছু বলিস না কেন?" ছোট্টি বললো, "আমি কি বলবো,আমার কিছু বলার নেই!" দুই বোনে কি ছাড়ে? শেষে অনেকক্ষণ ভাবার পরে ছোট বোন বললো, "আমার যদি রাজার সঙ্গে বিয়ে হতো, তাহলে আমি রাণী হতে পারতাম !" সে কথা শুনে দুই বোনে তো "হি" "হি!" করে হেসে উঠল, "ও মা, মা, পুঁটির যা সাধ না!!" ওদিকে রাজা কিন্তু দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব শুনেছে, সব শুনে টুনে রাজা সেদিনকার মতো চলে গেলেন! ৩ পরদিন রাজা দোলা-চৌদোলা দিয়া পাইক পেয়াদা পাঠিয়ে দিলেন, পাইক গিয়ে গৃহস্থের তিন মেয়েকে ধরে নিয়ে আসলো।

তিন বোন তো ভয়ে কেঁপে টেঁপে অস্থির। রাজা অভয় দিয়ে বললেন, "কাল রাত্রে কে কি বলছিলে, বল তো?" তিন বোন একেবারে চুপ, কেউ কিছু বলে না। শেষমেষ রাজা বললেন, "সত্য কথা যদি না বল তো, তোমাদের শাস্তি হবে" তখন বড় দুই বোন পটপট করে সব বলে দিল, ছোট্টু তখনও চুপ। সবকথা শুনে রাজা বলিলেন,"দেখ, আমি সব শুনেছি। ঠিক আছে তোমরা যে যা' হতে চেয়েছ, তাই করব " পরদিনই রাজা তিন বোনের বড় বোনকে ঘেসেড়ার সঙ্গে, মেজোটিকে বাবুর্চির সঙ্গে বিয়ে দিলেন আর ছোটটিকে রাণী করলেন।

তিন বোনের বড় বোন কটকটিওলার সাথে বাড়ি গিয়া মনের সাধে কটিকটি ভাজা খায়, মেজো বোন রাজার রান্নাঘরে বসে সবার আগে আগে মজার মজার খাবার খায় আর ছোট বোন রাণী হয়ে সুখে রাজসংসার করেন। ৪ কয়েক বছর পরে ছোট রাণীর সন্তান হবে। রাজা, রাণীর জন্য...... 'হীরার ঝালর সোনার পাত, শ্বেতপাথরের নিগম ছাদ' দিয়ে আঁতুড়ঘর বানিয়ে দিলেন। রাণী, রাজাকে বললো, কতদিন আমার বোনদের দেখি না, ''মায়ের পেটের রক্তের বোন, আপন বলতে আমারা বোন'- দাওনা সেই বোনদের আনিয়ে। তারা আমার সাথে আঁতুড়ঘরে থাকত।

" রাজা আর কিরবেন, রাণীর চাওয়া বলে কথা। সুতরাং রাজপুরী হতে লোকজন গিয়ে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে দুই বোন কে নিয়ে আসলো আতুর ঘর সামলাতে। কিন্তু রাজপুরী এসে বোনের সুখ সমৃদ্ধি দেখে দুই বোনে হিংসায় জ্বলে পড়ে গেল। ৫ রাণী তো আর বোনেদের মনের খবর জানে না। তিন প্রহর রাত্রে, আঁতুড়ঘরে, রাণীর চাঁদের পুতুলের মতো একটা ছেলে হল।

পাজী দুই বোনে তখন তাড়াতাড়ি করে কাঁচা মাটির ভাঁড় এনে তাতে বাবুটাকে তেলে, মুখে নুন, তুলা দিয়া নদীর জলে ভাসিয়ে দিল! রাজা জানতে চাইলেন, "কি হয়েছে?" বোনেরা বললো "ছাই! ছেলে না ছেলে,-কুকুরের ছানা!' দুইজনে এসে একটা কুকুরের ছানা দেখাল। রাজা চুপ করে রইলেন। তারপরের বছর রাণীর আবার ছেলে হবে। আবার দুই বোনে আঁতুড়ঘরে গেল। রাণীর এক ছেলে হল।

হিংসুকে' দুই বোন আবার তেম্নি করে মাটির ভাঁড়ে করে, নুন তুলা দিয়ে, ছেলে ভাসিয়ে দিল। রাজা খবর নিলেন,-'এবার কি ছেলে হয়েছে?' "ছাই! ছেলে না ছেলে-বিড়ালের ছানা!" দুই বোনে এসে এক বিড়ালের ছানা দেখাল! রাজা কিছুই বুঝতে পারলেন না! তারপরের বছর রাণীর এক মেয়ে হল...টুকটুকে মেয়ে, টুলটুলে' মুখ, হাত পা যেন ফুল-তুকতুক! হিংসুকে দুই বোনে সে মেয়েকেও নদীর জলে ভাসিয়া দিল। রাজা আবার খবর করলেন,-"এবার কি?" "ছাই! কি না কি, এক কাঠের পুতুল। " দুই বোনে রাজাকে একটা কাঠের পুতুল দেখাল! রাজা দুঃখে মাথা হেঁট করে চলে গেলেন। রাজ্যের লোক বলতে লাগলো, "ও মা! এ আবার কি! অদিনে কুক্ষণে রাজা না জানা, না শোনা কি এক মেয়ে বিয়ে করলেন, একনয় দুই নয়, তিন তিন বার ছেলে হল, কুকুর-ছানা, বিড়াল-ছানা আর কাঠের পুতুল! এ অলুক্ষণে, রাণী মানুষ না গো, এ নিশ্চয়ই পেত্নী কি ডাকিনী।

" রাজাও তাই ভাবলেন, "তাই তো! রাজপুরীতে কি অলক্ষ্মী আনলাম,ধুর এই রাণী আর ঘরে নিব না। " হিংসুকে দুই বোনে তখনা মনের সুখে হেসে গলে, পানের পিক ফেলে, নিজ নিজ বাড়ি চলে গেল। রাজ্যের লোকেরা ডাকিনী রাণীকে উল্টা গাধায় উঠিয়ে, মাথা মুড়িয়ে, ঘোল ঢেলে রাজ্যের বাইরে বের করে দিয়ে আসল। ওদিকে এক ব্রাহ্মণ নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে দেখেন কি, এক মাটির ভাঁড় ভেসে আসছে আর তার মধ্যে সদ্যজাত ছেলের কান্না শোনা যায়। আঁকুপাঁকু করে ব্রাহ্মণ ভাঁড় ধরে দেখেন, এক দেবশিশু! ব্রাহ্মণ তাড়াতাড়ি করে মুখের নুন তুলা ধুইয়ে শিশুপুত্র নিয়ে ঘরে গেলেন।

তার পরের বছর আর এক মাটির ভাঁড় ভাসে ভাসে সেই ব্রাহ্মণের ঘাটে আসল। ব্রাহ্মণ দেখলেন, আর এক দেবপুত্র! ব্রাহ্মণ সে দেবপুত্রও নিয়ে ঘরে তুললেন। তিন বছরের বছর আবার এক মাটির ভাঁড় ব্রাহ্মণের ঘাটে গেল। ব্রাহ্মণ ভাঁড় ধরে দেখেন,এবার এক দেবকন্যা! ব্রাহ্মণের ছেলে মেয়ে নেই, তার মধ্যে দুই দেবপুত্র, আবার দেবকন্যা!-ব্রাহ্মণ আনন্দে কন্যা নিয়ে ঘরে গেলেন। হিংসুক খালারা ভাসিয়ে দিয়েছিল, রাজপুত্র রাজকন্যা গিয়ে ব্রাহ্মণের ঘর আলো করল।

আর ওদিকে রাজার রাজপুরীতে আর বাতিটুকুও জ্বলে না। ক্রমশ............

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।