আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীত না আসতেই গ্যাস সংকটে নগরবাসী......ডিজিটালেরা কই?



........ রাজধানীতে রয়েছে হাজার রকমের যত সমস্যা। এগুলোর অন্যতম হল গ্যাস সংকট। সারাবছর গ্যাস সংকট মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে প্রতি বছর শীতকালে। কিন্তু এবার শীত না আসতেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে গ্যাসের প্রচন্ড সংকট। ফলে বেশ উদ্বিগ্ন রাজধানীবাসী।

ইতোমধ্যেই ঢাকাসহ ঢাকার চারপাশের গ্যাস সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। নতুন শিল্পে গ্যাস সরবারাহ বন্ধরাখা সহ সিএনজি ষ্টেশন গুলোতে গ্যাস রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার পরও এ সংকট কাটানো যাচ্ছেনা । বরং বর্তমান সময়ে গ্যাসের অভাবে ধুকছে রাজধানীর বেশীরভাগ সিএনজি ষ্টেশন এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান। গ্যাসের অভাবের কথা বলে মিটার বিহীন চলা সিএনজি এবং ট্যাক্সিগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ফলে তাদের ইচ্ছা মত ভাড়া হাকছে। আবাসিক গ্যাস সংকটের কারণে আরও বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন ।

সবার মনে একই প্রশ্ন এখনই যদি এমন হয় তবে জানুয়ারী-ফেব্রয়ারীতে কিরূপ আকার ধারণ করবে গ্যাসের সংকট? গ্যাসের বর্তমান সংকট নিয়ে কথা হল শ্যামলীর তিন নম্বর রোডের শাপলা হাউজিং এর ২৭৮/১ এর রোডের গৃহিনী লাকী আখতার এর সাথে। তিনি জানালেন আজ সকালের নাস্তা তৈরী করতে পারেননি গ্যাস না থাকার কারণে। ফলে দোকান থেকে না¯তা কিনে খাইয়ে তারপর মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে হয়েছে। একই এলাকার জাহানারা বেগম গ্যাস সংকটের কারণে কয়েকদিন দুপুরে রানাœ্ করতে পারছেন না বলে তার স্বামীকে হোটেল থেকে কিনে খেতে হচ্ছে । বর্তমানে রাজধানীর অনেক এলাকার চিত্র এরকমই।

ফলে বাধ্য হয়ে সংকট পূর্ণ এলাকার মানুষেরা কেরোসিনের চুলা কিনে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে গ্যাসের সংকট যাতে প্রকট আকার ধারণ না করে সে জন্য সরকার আগে থেকেই সিএনজি ষ্টেশন গুলো দিনে ছয় ঘন্টা বন্ধ রাাখার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বর্তমানে সিএনজি েেষ্টশন মালিক সমিতি ও সরকারের মধ্যে এ নিয়ে দরকষাকষি চলছে। এরপরও সিএনজি ষ্টেশন গুলো সঠিক চাপে গ্যাস পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন টেকনিক্যালের পূর্বাচল সিএনজি ষ্টেশনের পরিচালক। গ্যাস সংকটের সমস্যা শুধু নতুন ঢাকার এলাকাতেই নয় বরং পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়া,বকসী বাজার, ওয়ারী, দেওরী, স্বামীবাগ, গোলাপবাগ সহ প্রায় প্রতিটি এলাকাই মহামারী আকার ধারণ করেছে।

এছাড়া মিরপুর ১,২,৬,১০,১১,১২,১৩, নম্বর সেকশন, সেনপাড়া ,পর্বতা , কাজীপাড়া , পাইক পাড়া, পীরেরবাগ, কাফরুল,বাড্ডা মেরূল,মানিকনগর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, গোরান, সিপাইবাগ , ডেমরা, বনশ্রী, দক্ষিণ কমলাপুর,ফার্মগেট এলাকা, ধানমন্ডির রায়ের বাজার, মোহাম্মদ পুরের বেশীর ভাগ এলাকাতেই গ্যাস সংকটের কারণে দিনের বেলা বেশ কয়েক ঘন্টা করে চুলা জ্বলছেনা। এখনই কোথাও কোথাও সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত গ্যাস থাকেনা। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। আবাসিক এলাকাগুলোতে গ্যাসের সরবারাহ ঠিকমত রাখতে গিয়ে সিএনজি ষ্টেশন এবং শ্যামপুর, তেজগাওসহ অন্যান্য শিল্প এলাকা গুলোতে গ্যাস সরবারাহ বিঘিœত হচ্ছে । ফলে শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদনের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

তিতাস সূত্রে জানা গছে এবারের শীতে গ্যাস সংকটের সমস্যা নিয়ে তারা আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে । যদিও এ সমস্যা একেবারে সমাধান অসম্ভব। জনগণের চাহিদার কথা তারা সবার আগে বিবেচনা করছেন। বর্তমানে গ্যাস সমস্যা সর্ম্পকে কিছু অভিযোগ আসছে এবং তা সমাধানের জন্য জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছেন। তবে বর্তমানের গ্যাস সংকটের জন্য গ্রাহকদেরই অসচেতনতার কথাই বললেন।

তিতাসের সমীক্ষা মতে শীতকালে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ফলে যেসব এলাকায় গ্যাসের সরু পাইপ লাইন রয়েছে সেসব এলাকায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় । যা সমাধানের একমাত্র পথ গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মোটা পাইপ লাইন বসানো। তবে অভিযোগ কারীদের মধ্যে অনেক গ্রাহকই জানালেন তিতাস তাদের অভিযোগ মূল্যায়ন করছেনা। মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের তিন নম্বর রোডের তাহমিনা আখতার জানালেন, তার চুলা সকাল সাতটার পর থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত জ্বলেনা , ফলে তাকে গত কয়েকদিন ধরে কেরোসিনের চুলায় রান্না করতে হচ্ছে।

মিরপুর নম্বর চায়নিজের বাসিন্দা শশী বেগম জানান তার বাসায় সকাল থেকে প্রায় সারাদিনই গ্যাস থাকেনা । বাধ্য হয়ে তিনি কেরোসিনের চুলা কিনে রান্নার কাজ চালাচ্ছেন। রামপুরার পলাশবাগের ইতি বেগমের অভিযোগও একই রকম। তিনিও ঠিকমত গ্যাসের সার্ভিস পাচ্ছেনা বলে তার দুপুরের রান্না করতে চারটা বেজে যায় । গ্যাসের চাপ কম থাকায় রাজধানীর শতাধিক সিএনজি ষ্টেশন গুলোতেও সরবারাহে চরম সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন্ অঞ্চলের প্রায় ৩০ সিএনজি ষ্টেশন দিনে প্রায় চার ঘন্টা করে গ্যাসের চাপ কম থাকছে। এর মদ্যে মিরপুরের যমুনা ফিলিং ষ্টেশন, টেকনিক্যালের পূর্বাচল ফিলিং ষ্টেশন, মিরপুরের কিংশুসক রিফুয়েলিং ষ্টেশন, কল্যাণপুরের এস এ খালেক ফিলিং ষ্টেশন, কাজীপাড়ার সিডিসি মোহনা ডেনসো,এসএস ফিলিং ষ্টেশন সহ অন্যতম যেখানে গ্যাসের চাপ কম বলে অভিযোগ করেছে ফিলিং ষ্টেশন কতৃপক্ষ। শীত ঠিকমত শুরু না হতেই গ্যাসের সংকট প্রসঙ্গে তিতাসের এক কর্মকর্তা জানালেন প্রতিবছর গ্যাসের চাহিদা বেশী হয় । কিন্তু গত ৭ বছর কেউ গ্যাস নিয়ে কোন কাজ করেনি। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি না পাওয়ায় সংকট সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

বরং শিল্প তো দূরে থাক আবাসিক গ্যাসের সরবারাহ ঠিক রাখতে গিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সরবারাহ কমিয়ে দেওয়ার ফলে শিল্প উৎপাদনের ওপর যে প্রভাব পড়বে তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক জিএম জানান, সারা দেশে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ১ হাজার ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট কিন্তু এর বিপরীতে চাহিদা ২৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। উৎপাদনের বিপরীতে গ্যাসের সরবারাহের কমতি থাকার পর গ্যাস চোরেরা আবার মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গ্যাস চুরির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায় সরকারের আমলে অভিযান চললেও তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

তিতাসের মতে গ্যাস চোরেরা প্রতি বছর ৫৫ লাখ টাকার গ্যাস চুরি করে ফলে এ সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে। তবে শীতে কনডেন্স সেট ব্লক হযে যাওয়ার কারণ সমস্য আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে জানালেন জিএম। গ্যাস সংকটেরর সমাধান সহজেই হচ্ছেনা জেনে নগরবাসী হতাশ হলেও কোন আশার বাণী শোনাতে ব্যর্থ হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে গ্যাস সংকট সমস্যা বর্তমানে নগরবাসীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আসছে সিটি কবর্পোরেশন নির্বচনের ওপর এর বড় রকম প্রভাব পড়বে ভেবে প্রার্থীরা অনেকে নগরবাসীকে গ্যাস সমস্যা সমাধানের মত নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

#.................................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।