আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষ পর্যন্ত সুশীলরা কথা বললো!



Click This Link দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আজ আওয়ামী লীগ ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ, প্রসাশন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সব গুলো আজ এক ভয়াবহ দলীয়করণের কবলে পড়েছে। বাংলাদেশ আসলেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে সম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রে ও আওয়ামী লীগের সহযোগীতায়। কিন্তু যে সমস্ত সুশীল সমাজ সবসময় বি.এন.পি.-জামায়াতের পান থেকে চুন খসলেই চিৎকার দিয়ে উঠত তারা আজ এ অরাজক পরিস্থিতিতে কোন কথা বলেনি। সরকারের দোষত্রুটির সমালোচনা করার জন্য একটি পত্রিকার সম্পাদককে কারাগারে নিক্ষেপ করা, ডজনে-ডজনে মানহানির মামলা দেয়া, পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া, সংসদে বা সংসদের বাইরে সরকারের সমালোচনার কারণে বিরোধী দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে শতশত মামলা করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলার মতো ঠুনকো অভিযোগের মামলায় বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা, শ্যোন এরেষ্টের অপব্যবহার, বিরোধী দলের যে কোন কর্মসূচীতে ১৪৪ ধারা জারি, রাজশাহীর এক ঘটনা নিয়ে একটি ছাত্রসংগঠনের সারাদেশের হাজারো নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা, যুদ্ধাপরাধ নামের ৪০ বছর আগের একটি মীমাংসীত বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে দেশকে বিভক্ত করা সহ সরকারের নানা রকম অপকর্মের সমালোচনা তথাকথিত সুশীলরা করেনি।

তারা হয়তো এসব দেখে মুখ বুঝে হেসেছে, বা চুপ থাকাটাকে নিরাপদ মনে করেছে। আমরা সবাইকে সরকারের এই সব ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে বলেছি। কিন্তু সুশীলরা তা করেনি। শেষ পর্যন্ত তারা কিছু কথা বলেছে। সরকারের সামান্য দূর্নীতির প্রকাশ যখন করেছে তখন সুশীলদের উপর সরকারের মন্ত্রীরা হামলে পড়েছে, বিভিন্ন জায়গায় তথাকথিত মানহানি মামলা শুরু হয়েছে তখন তারা কিছু কথা বলেছে।

(দেশে আইনের শাসন নেই: হাফিজউদ্দিন, সুত্রঃ bdnews24.com)। উনারা আরো অনেক কিছুই বলেছেন। কিন্তু যে কথাটা আমরা গত দুই বছর থেকে বলে আসছি তা উনারা বলা শুরু করেছে মাত্র গতকাল থেকে। তাও নিজেদের উপর হামলা আসার কারণে। তথাকথিত সুশীলদের এরকম নিশ্চুপ থাকাটা জাতির জন্য হতাশার।

এই হতাশার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিছেন জার্মানি চিন্তাবিদ মার্টিন তার এক লেখায়। জার্মান চিন্তাবিদ মার্টিন নায়মোলার প্রথম মহাযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ইউ বোট (সাবমেরিন) ক্যাপ্টেন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি নাৎসি ডিক্টেটরশিপের কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। সে জন্য ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু আদালত তাকে হাল্কা সাজা দিয়ে ছেড়ে দিলে ক্রুদ্ধ হিটলার ব্যক্তিগতভাবে তাকে বন্দিশিবিরে আটক রাখার নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তিনি সে শিবিরে আটক ছিলেন­ প্রায় নিঃসঙ্গভাবে।

সে সময় জার্মান বুদ্ধিজীবীদের নিস্ক্রিয়তা ও সাহসের অভাব কিভাবে নিজেদের ও বিশ্বের সর্বনাশ করেছে, সেটা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় লিখেছেন মার্টিন নায়মোলার : প্রথমে ওরা এসেছিল কমিউনিস্টদের ধরতে, আর আমি প্রতিবাদ করিনি­; কারণ আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না; তারপর তারা সোশ্যালিস্টদের ধরতে এসেছিল, আমি প্রতিবাদ করিনি; কারণ আমি সোশ্যালিস্ট ছিলাম না; তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়নপন্থীদের ধরতে, আমি প্রতিবাদ করিনি­; কারণ আমি ট্রেড ইউনিয়নপন্থী ছিলাম না; তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে, তখনো আমি প্রতিবাদ করিনি­; কেননা আমি ইহুদি ছিলাম না; তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো; তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করতে কেউ অবশিষ্ট ছিল না। ’ জার্মানির বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করেননি, তারা নিস্ক্রিয় ছিলেন। তার পরিণতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে, পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ মারা গেছে, এমনকি মানব সভ্যতাও বিপন্ন হয়েছিল। মার্টিন নায়মোলারের অনুশোচনার কথাগুলো সে জন্যই গভীর অর্থবহ। আমাদের দেশেও বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী ও দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজ কথা বলেনি।

চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া হলো, সংবাদ প্রকাশের জন্য পত্রিকার সাংবাদিকদের ডজনে ডজনে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হলো, সাংবাদিকদের উপর হামলা করা হলো, সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের লিখনির মাধ্যমে বিরোধীতার কারণে আমারদেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, ১/১১ কায়দায় গোয়েন্দা সংস্থা চাপ দিয়ে মামলা করে সে মামলায় পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার করা হলো, কিন্তু আমাদের সুশীল সমাজ, সাংবাদিক সমাজ, বুদ্ধিজীবিরা প্রতিবাদ তার করেনি। তারা হয়তো মনে করে নিয়েছিল আওয়ামী লীগের এই নির্যাতন তাদেরকে স্পর্শ করবেনা। কিন্তু আমরা আশংকা করেছিলাম তাদের এই নিস্ক্রিয়তার কারণে একদিন এই ফ্যাসিবাদ তাদের সহ পুরো দেশকেই গ্রাস করে ফেলবে। তার লক্ষণ আজ ফুটে উঠছে। আমাদের সুশীল সমাজ হয়তো মনে করেছিল ক্ষতি হলে সাধারন মানুষের হচ্ছে, বিরোধী দলের হচ্ছে।

ধ্বংস হলে শিবির-জামায়াত হচ্ছে। কিন্তু এই আপদ যখন সবশেষে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে তখন আর কাউকেই মার্টিন নায়মোলার কথা মতো নিজেদের পক্ষে থাকার জন্য পাওয়া যাবেনা। তাই এখনই সময় সকলের কথা বলার। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার। এখনই সময় সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়ার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।