আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই পড়ার ফায়দা

গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রদূত গ্রীকরা। গ্রীসের থিবসের লাইব্রেরির দরজায় খোদাই করা আছে যে কথাটি সেটি হলো, ‘আত্মার ওষুধ’। অর্থাৎ তাদের বিশ্বাস বই হলো আত্মার চিকিৎসার প্রধাণ উপকরণ। অন্যদিকে, চীনারা বলতো, বই হলো এমন একটা বাগান যা পকেটে নিয়ে ঘোরা যায়। গ্রীকদের পাশাপাশি, এই নাকবোচা জাতিদের কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

এরা শুধু বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাচীন সভ্যতাই নয়, আধুনিক সভ্যতাও বটে। যারা দ্বীন-দুনিয়ার হাল হকিকত জানেন, তারা স্বচোক্ষেই দেখেছেন, টের পেয়েছেন, চীনারা কিভাবে বিশ্বটাকে দখল করে ফেলেছে। আপনার ঘড়ের ফ্রিজ, টিভি, মোবাইল, ব্যাটারি, কলম, পেন্সিল থেকে শুরু করে কতো দরকারি আর অদরকারি জিনিসে যে মেইড ইন চায়না লেখা আছে তা আপনি নিজেও হয়তো জানেন না। প্রযুক্ত আর বাণিজ্যের এই ভয়াবহ উন্নতির আড়ালে কিন্তু আছে তাদের সহ¯্র বছরের জ্ঞান চর্চার ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় পনেরশ বছর আগে লেখা স্যুন যু’র আর্ট অব ওয়ার এখনও বিশ্বের নানা দেশের সামরিক বাহিনীতে সমর বিদ্যার অবশ্য পাঠ্য।

কনফুসিয়াস না-পড়লে বিশ্ব দর্শনের অনেকটাই না-জানা থেকে যায়। প্রাচীন ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আর সংস্কৃতিতে চীনাদের অগ্রগামিতা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। তাই, সৌন্দর্যপ্রেমী চীনারা যখন পকেটে বাগান নিয়ে ঘুরতে বলে, আর এই মোবাইল বাগানটা যখন হয় বই, তখন নিশ্চিতই বলা যায় এমন একখান বাগান সঙ্গে থাকলে সৌরভ, সৌন্দর্য কোন অভাব হবে না। আর কে না জানে, আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় সৌরভ আর সৌন্দর্যও বিক্রি হয় ভালো দামেই। কাজেই বই পাঠের বিক্রয় মূল্যটাও কম হওয়ার কথা না! দুনিয়াটাই এখন ফায়দার হয়ে গেছে।

কার সাথে কার লিঁয়াজো আছে, কে কাকে ব্যবসা দিতে পারবে, কোথায় কতটুকু লাভ-লোকশান আছে এই সব হিসাব করতে সবাই ব্যস্ত। এই ব্যস্ত দুনিয়ায় ঠিক মতে চলতে গিয়ে আপনার কিন্তু নির্দোষ বন্ধু লাগবে, লাগবে শক্তিশালী খুঁটির জোড়। বই হতে পারে সেই নির্দোষ বন্ধু আর শক্ত খুঁটি। আর্নেস্ট হেমিয়ংওয়ে তো বলেই গেছেন, বইয়ের মতো বিশ্বস্ত আর কোন বন্ধুই নাই। ওমর খৈয়াম আবার এই বিশ্বস্ত বন্ধুকে অনন্ত যৌবনাও বলেছেন।

আর বালজাক বলেছেন, বই আমাদেরকে অচেনা বন্ধু এনে দেয়। এখন যখন সময়টা খারাপ, কেই কাউকে নিঃশর্ত বন্ধু বলে মানতে ভয় পায়, তখন নির্ভয়ে বইকে বন্ধু হিসাবে মেনে নেয়া যায়। অন্তত বই এমন একজন বন্ধু যে কখনো বেঈমানী করবে না। কারণ পৃথিবীতে ভুল মানুষ আছে, কিন্তু ভুল বই নেই। জ্যাঁ জেনের ব্যক্তি জীবন যাই হোক, তার লিখিত বই যথার্থই পবিত্র।

এমনকি হিটলারের লেখা আত্মজীবনী থেকেও আপনি পেতে পারেন কাজের জ্ঞান। আমাদের মধ্যে যাদের পলিটিকাল জোড় নাই, মামা-চাচার জোড় নাই, ইন্টারভিউ বোর্ডে তাদের জন্য বই-ই ভরসা। পাঞ্জেরি কিংবা প্রফেসর গাইডই হোক, জে কে রাউলিং কিংবা কাফকা-কাম্যুই হোক, নিজের বাজার দর বাড়াতে এগুলোর ভূমিকা কম নয়। ভিকারুন্নেসা, আইডিয়াল স্কুল থেকে শুরু করে আইবিএ, বিসিএস-এর ভর্তি পরীক্ষাতে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ফায়দা এসে দিতে পারে বই। যারা স্বার্থপর, কেবল জাগতিক ফায়দার জন্য কিছু করতে রাজী আছেন, তাদেরকে বিশেষ করে বলছি, বই পড়াটা আপনার উন্নতির জন্য সবচেয়ে শর্টকাট রাস্তা।

ইহকাল পরকাল দুটোর রাস্তাই মসৃণ করে দিতে পারে বই পড়া। আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, পুলিশ Ñ যাই হোন না কেন রবীন্দ্রনাথের যে কোন একটি বই আপনার জন্য ফায়দা এনে দিতে পারে। আপনার পেশাগত কিংবা নেশাগত ক্ষেত্রে বই আপনার দক্ষতাই বাড়বে। কেমন করে ভাল ব্লাডি মেরি, স্ক্রু ড্রাইভার, রাশিয়ান সালাদ বানাতে হয়, কিভাবে টেনিস বল থেকে শুরু করে পৃথিবীর মাপ আর ওজন নেয়া যায়, কোথায় অক্টোপাসের সালাদ থেকে শুরু করে বাতাসে সীসা পাওয়া যায়, এমনি অসীম সব জ্ঞান আপনি পাবেন বই পড়েই। একটা টাই, একটা স্যুট, একটা ব্র্যান্ডেড শার্টের চেয়ে একটা ভাল বই আপনাকে বেশি স্মার্ট করবে।

মালিক বা ম্যানেজার যাই হোন না কেন নিজের কাজের জগতটাকে বড় করে জানতে চাইলে বইয়ের কাছে হাত পাতুন। ফায়দা হবে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষক ও অধ্যাপক এনি ই কামিংস তার হোয়াট রিডিং ডাস ফর দ্য মাইন্ড নামক গবেষণা পত্রে প্রমাণ করেছেন, যারা বই পড়া স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে স্মার্ট করে, বয়স কমিয়ে দেয়। যে কোন বয়সে যে কোন বই পড়াই একজন মানুষকে উন্নতি আর সুখ দেয়। তার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যারা অধিক জিপিএ প্রাপ্ত তারা নিজের পাঠ্যতালিকার বাইরেও নিয়মিত বই পড়ে থাকে।

বই পড়া আপনার দুঃশ্চিন্তাকেও কমিয়ে দেয়। বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় কিংবা হেমিংওয়ের ওল্ড ম্যান এ- দ্য সী পড়তে বসুন। দেখুন, আপনার দুশ্চিন্তা-দূর্ভাবনা কখন কোথা দিয়ে পালিয়ে গেছে আপনি টেরও পাবেন না। আপনার ঘরে অতি তিড়িংবিড়িং টাইপের ছানাপোনা আছে? কোন চিন্তা নেই। ভাল দেখে একটা কমিকস কিংবা ছবির বই ধরিয়ে দিন, দেখবেন কোন যাদু মন্ত্রে শান্ত হয়ে ঘরের কোনে বসে আছে, কেবল তার চোখ আর মগজটা বইয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাকী শরীরটা আঠা দিয়ে জায়গাতেই আটকানো।

ট্রেজার আইল্যান্ড কিংবা দিলুর গল্প আপনাদের শৈশব কৌশরের অনেক অস্থিরতাই কাটিয়েছিলো। শুধু দুঃশ্চিন্তা বা চাপই কমায় না, বই পড়া মানুষকে শান্তিও দেয়। বিশ্বের মাদক ব্যবসায়ী ও নারী পাচারকারীর হাতে বই তুলে দিতে পারলে হয়তো পুরো চিত্রটাই পাল্টে যেতো। একবার ভাবুন, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা টিভি চ্যানেলে ঝগড়া ফ্যাসাদের সময়টুকুতে হাইরিখ হাইন কিংবা হেলাল হাফিজ পড়লে কতো ভালোই না হতো! যে কোন কারণেই হোক (আমার ধারণা কারণটা আমাদের মুরব্বিরা) ছোটবেলাতেই অনেকের মনে বইটা ভয় হয়ে দেখা দেয়। রসগোল্লাও যদি জোর করে গেলানো হয় কার ভাল লাগে! আমাদের মাস্টার আর মুরব্বি বই বিষয়ে সিরিয়াস সব কথা বলে আমাদের অবস্থা অনেক সময় সিরিয়াস করে দেয়।

বই পড়া যে একটা বিরাট বিনোদন এটা বহু আঁতেলরাও বুঝতে চায় না। রিডিং ফর প্লেসার ব্যাপারটা আমাদের অনেকেই বোঝে না। ছোটবেলায় আমরা পড়েছি, লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। লেখাপড়া করলে আয়-উন্নতি হবে, গাড়ি-প্লেন (এখন তো আর ঘোড়ার দিন নেই) ইত্যাদি চড়া হবে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু পড়া-লেখার যে একটা নিজস্ব আনন্দ আছে সেটা বোঝাটা সবচেয়ে জরুরি।

বইয়ের ঘ্রাণ আর কালো অক্ষরের বর্ণিল বাণীগুলো স্বয়ং যে কোন পাঠকের জন্য বড় প্রাপ্তি হতে পারে। ¯্রফে পরীক্ষা আর ক্যারিয়ারের জন্য পড়তে গিয়ে আমরা পড়াটাকেই বিরক্তিকর বোঝার পর্যায়ে নিয়ে যাই। আমি তো এমনি এমনি পড়ি, পড়ার আনন্দেই মাতি Ñ এমন করে ভাবনার লোক কই! সাঁতার কাটলে শরীর পরিস্কার হয়, স্বাস্থ্য ভাল হয়, কিন্তু জোড় করে সাঁতার কাটাতে গেলে কেবল পরিশ্রমটাই হয়। কাজেই বড়দের বোঝানো উচিত, পানিতে দাপাদাপির আনন্দেই আমরা সাঁতার শিখেছি, বই পড়াটাও অজানা জগত বিরচণের আনন্দে কাটালে মন্দ কি। বিনোদন কিংবা নেশা হিসাবে বই পড়াটা হতে পারে সবচেয়ে সুলভ আর মহৎ।

কম খরচে এমন উপকারী বিনোদন আর কী হতে পারে! অনেক এক কাঠি সরেস লোক বলেন, পড়ব কোথায়, সময় পাই না! আরে ভাই, টিভি দেখার সময় থাকলে বই পড়ার সময় থাকবে না! মোবাইলে গেমস খেলার সময় আছে, ফেসবুকে পড়ে থাকার সময় আছে আর আসল বুক খুলে দেখার সময় নাই! এই সব ধাপ্পাবাজির কথা বলে নিজিকেই ঠকানো হয়। সমকালীন মার্কিন সমাজবিদ লেখক এন্ড্রু রস বলেন, The smallest bookstore still contain more ideas of worth than have been presented in the entire history of television টিভি চ্যানেল কিন্তু একটা লাইব্রেরির বিকল্প হতে পারে না। গড়পরতার টিভি চ্যানেলের নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, গান আর সংবাদ আর যাই হোক জেমস জয়েস কিংবা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বইয়ের জায়গা নিতে পারবে না। কাজেই বিবিকে নিয়ে টিভি দেখার আগে একটু বইয়ের কথাও ভাবুন। কেননা, বই আর বউ কোনটার গুরুত্বই কিন্তু কম না।

বর্ণমালার শ্রেণীক্রম হিসাবে অবশ্য বউ এর আগে বইয়ের গুরুত্ব, অভিধানেও তাই, কেননা ‘উ’-এর আগে ‘ই’ আসে। বই নিয়ে আপনি ভ্রমণ করতে পারেন তাতে ভ্রমণের আনন্দ ও জ্ঞান দুটোই বাড়ে, বউ নিয়ে গেলে আনন্দ বাড়তে পারে, ঝামেলাও হতে পারে, খরচ তো বাড়বেই। আর এতো কিছু চিন্তা না-করে তেমন একটা বই পড়তে পড়তেই আপনি আমাজানের জঙ্গল কিংবা মঙ্গল গ্রহও ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসে। এমন বিনা পয়সায় ভিসা ছাড়া ভ্রমণের দূর্দান্ত সুযোগ হারাবেন না আশা করি। অনেকে বলবেন, পয়সার কথা।

আমি বই কিনে কেউ দেওলিয়া হয় না এমন রেডিমেড বাক্য বলবো না । পয়সা তো একটু লাগবে। আপনার ঘরের ময়লা পরিস্কার করতেও পয়সা লাগে, টয়লেটে যেতে পয়সা লাগে, মোবাইলে রিংটোন ডাউনলোড করতে পয়সা লাগে আর বই কিনতে একটু পয়সা লাগবে না! কিন্তু সেই পয়সা তো উসুল হয়ে যায়। একটা ভাল বই তো এক ধরণের লগ্নীও। দুশ টাকা দিয়ে শরৎ কিংবা বঙ্কিম রচনাবলীর একটা খ- কিনে পড়ে ফেলুন, দেখবেন, সেই পড়াটাকে কাজে লাগিয়ে কয়েক হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।

আর বই তো আইসক্রিম না যে কিনে খেয়ে ফেললেন, নইলে গলে গেলো। বই হলো অনন্ত যৌবনা, পুড়িয়ে না-ফেলা পর্যন্ত আপনার সম্পদ হয়ে থাকলো। আর একবার পড়ে ফেললে তারপরও পুড়িয়ে ফেললেও ক্ষতি নেই। কারণ বইটা তখন আপনার অংশ হয়েই থাকলো। বই আক্ষরিক অর্থেই চিরস্থায়ী।

হিটলার বাবাজি কতো চেষ্টা করেছেন বই পোড়ানোর, লাভ কী হয়েছে! যে আমলে কাগজ কালি আবিষ্কার হয়নি সেই আমলের বই আমরা পড়ছি। অন্ধ হোমার থেকে দস্যু বাল্মিকী এখনও আমাদের কাছে টিকে আছেন বইয়ের তাকে আর মননের কুঠুরিতে। খরচের কথা ভাববেন না। একটা সিনেমা দেখতে যাওয়া কিংবা বসুন্ধরা সিটিতে দই ফুচকা খেতে যাওয়ার চেয়ে কম খরচে চিরকালের জন্য একটি চিরন্তনী বই পেতে পারেন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই, বই কেনার টাকা নেই, তাহলে ধার করুন।

ইন্টারনেটে বইয়ের বিশাল স্তুপ পড়ে আছে বিনা-পয়সায়। দেশি-বিদেশি বিনা পয়সার ই-বুক সাইটগুলোতে ঢু মারুন। গুটেনবার্গ ডট অর্গকে ই-মেইল করুন। কয়েক হাজার বই ডিভিডিতে করে তারা আপনাকে মাগনা পাঠিয়ে দেবে। প্রতিদিন পড়লেও কয়েক বছরে পড়ে শেষ করতে পারবেন না।

আর বই পড়ার গুরুত্বটা অনুভব করলে সময় আপনা আপনি বের হয়ে যাবে। মনের দরজা কিংবা জীবন বোধ বাড়াতে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। যারা বলে জীবন একটা, তাদের জন্য পরামর্শ হলো, বই পড়–ন। এক জীবনে বহু জীবনের স্বাদ একমাত্র বই-ই দিতে পারে। বই হলো তারহীন নেটওয়ার্ক যা কালিদাস থেকে মার্কেজ পর্যন্ত সবাইকে সংযুক্ত করে রাখে।

সরলা এরিন্দা আর শকুন্তলা আমাদের কাছে আপন হয়ে ওঠে বইয়ের মাধ্যমেই। কথা বলে, বই প্রেমী কখনো একা বিছানায় যায় না। তার বুকের উপর একটা বই থাকে, বইয়ের ভেতরে অসংখ্য চরিত্র থাকে, নয়া জগত থাকে। এলিস ইন ওয়ান্ডার ল্যান্ড কিংবা নেভারল্যান্ডের মতো জগত আমাদের সম্মুখে খুলে যায়। শরীরের যেমন ব্যয়াম লাগে, মন কিংবা মগজেরও লাগে।

আর সেই ব্যায়ামটা করা যায় বই পড়ে। বই পড়লে আপনার শব্দ ভা-ার বাড়বে, ভাবনা আর কল্পনার জগ বড় হবে, সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটবে, স্মরণ শক্তিও বাড়বে। যারা নিয়মিত পড়ে দেখবেন তাদের ভা-ারে কতোই কিছুই না জমে থাকে। মগজকে কাজে লাগানো আর মনের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করার শ্রেষ্ঠ উপায় বই পড়া। ¯্রফে বই পড়ে নিজের জীবন পাল্টে দিয়েছেন এমন লোকের অভাব এই দুনিয়াতে নেই।

ঈশ্বরচন্দ্র তো রাস্তার আলোতে বই পড়েই বিদ্যার সাগর হয়েছেন। সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত হওয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বই পড়া। এটা অনেকটা ঘরে বসে ডিগ্রী অর্জনের মতো। কোন সিলেবাস নেই, ক্লাস নেই, নম্বর নেই, সময় নেই, যখন যেভাবে খুশি বউ পড়–ন আর নিজের উন্নতি ঘটিয়ে যান। একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, এখন ডিজিটাল গ্যাঞ্জামের যুগ।

থ্রিডি মুভি, আইফোন, আইপ্যাড, ওয়াইফাই, ব্লুটুথের ভিড়ে বই পড়াটা যেন হারিয়ে না-যায়। লক্ষণীয় যে, সভ্যতার রিলে রেসের কাঠিটা আমরা যুগ থেকে যুগে নিয়ে যাচ্ছি আর এই কাঠিটা হলো বই। পাথরে খোদাই করা কিংবা মুখে মুখে বলা সাহিত্য আজ ছাপাখানার বদৌলতে সারা বিশ্বে বই আকারে পৌঁছে গেছে। ডিজিটাইলাজ হয়ে সেই বই এখন নেটে নেটে ঘুরছে সাইবার ওয়ার্ল্ডে। যে আকারে আর যে ভঙ্গিতেই থাকুক না কেন, বইকে ছাড়া যাবে না।

বইকে সবচেয়ে বেশি করে যাদের ধরে রাখতে হকে তারা হলেন লেখক। একেকটা বই যদি হয় হীরার খনি, লেখক তার অনুসন্ধানী অভিযাত্রী। লেখকরাই আবিষ্কার করে, মূল্যায়ন করে, কোন বইটি সেরা, কোন বইটি আবশ্যকীয়। লেখক হওয়ার একটা বড় শর্তও বই পড়া। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সফোক্লিস, গ্যাটে সবারই পড়ার পরিধিটা বিশাল ছিলো।

সমুদ্র মন্থন করে তারা মুক্তা তুলে এনেছেন এবং নিজেদের মতো করে কতো মালাই না গেঁথেছেন। কাজেই আপনিও পড়–ন। পড়তে পড়তে পাঠক হোন, পাঠক থেকে লেখক হোন। পড়তে পড়তে যদি এমন মনে হয় যে, পৃথিবীতে এমন বিষয়ও আছে যা নিয়ে কোন বই লেখা হয়নি, তাহলে নিজেই সেটা লিখে ফেলুন। নোবেলজয়ী কৃষাঙ্গ লেখিকা টনি মরিসন বলেছিলেন, if there’s a book you really want to read but it hasn’t been written yet, then you might write it|  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।