আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেশ ও উইকিলিকস

নাজমুল ইসলাম মকবুল

আমার দেশ ও উইকিলিকস অধ্যক্ষ তোফায়েল আহাম্মদ তানজীর গ্রাম্য প্রবাদে আছে ‌'আগলো বেটির লাজ নাই দেখল বেটির লাজ'। গ্রামের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষের প্রবাদটির তাত্পর্য এতদূর পর্যন্ত চলে গেল? আমেরিকান কূটনীতির কূট কৌশল প্রকাশ করে দিল উইকিলিকস নামে একটি ওয়েবসাইট। সমস্ত পৃথিবী হায় হায় করে উঠল। আমেরিকার সমস্ত ছলচাতুরী চিকিং ফাঁক! বন্দি নির্যাতনের নৃসংশতার পাশাপাশি ইসরাইলের প্রতি লেহন নীতি, ফিলিস্তিনের প্রতি দমন নীতি, ভারতের প্রতি প্রশ্রয় নীতি, পাকিস্তানের প্রতি ধমক নীতিসহ সবাই দেখলেন জাতিসংঘের প্রতি নিয়ন্ত্রণ নীতিকেও! কিন্তু এত লাখ লাখ অন্যায় ও অনিয়মের পরও ন্যূনতম ক্ষমা প্রার্থনা, দুঃখ প্রকাশ কিংবা লজ্জাবোধ তো দূরে থাক সব দোষ উইকিলিকস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের। বাহ! সমস্ত পৃথিবীর মোড়লদের কি চমত্কার বিচার! গ্রামের অত্যাচারী স্বামী যখন কোনো যুক্তিতে স্ত্রীকে কাবু করতে না পারে শেষে বলে আরে জানি তোর বাপ চাল বেচে খায়! এ কথা বলে যুক্তিবাদী বউকে দমনের চেষ্টা করা হয়।

সেই গ্রাম্য স্বামীরূপী কি অদ্ভুত সরকার আমরা পেলাম যারা সঠিক যুক্তিকে গ্রহণ তো করেই না উল্টো চাল বেচে ভাত খাওয়ার অজুহাত দাঁড় করিয়ে দমন করতে চায়! কেন সরকার বুঝতে চাচ্ছে না যে, যেখানে যুক্তি দিয়ে টিকে থাকা যায় না সেই যুক্তিহীন রাজ্য কি মগের মুল্লুক নয়? মানুষ কি দিন বদল চেয়েছিল নাকি মগের মুল্লুক? উইকিলিকস কিংবা অ্যাসাঞ্জকে কি দমন করা সম্ভম? এরা তো এখন সমস্ত পৃথিবীর মানুষের মুখপত্র হয়ে গেছে। আর সাময়িক দমন করে রাখলেও কি আমেরিকা তাদের পতন ঠেকাতে পারবে? উইকিলিকস কিংবা অ্যাসাঞ্জকে কে চিনত? এখন তো তাদের নাম বিশ্বের মিডিয়ার কল্যাণে মানুষের মুখে মুখে। যদি আমেরিকা তাদের অন্যায়গুলোর জন্য সমস্ত পৃথিবীর মানুষের সামনে ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতের জন্য শুধরে যায় তাহলেই হবে সমাধান, নয়তো কত উইকিলিকস কিংবা অ্যাসাঞ্জের জন্ম হবে কতজনকে আমেরিকা বন্দি করবে? বন্দি করে কি মানুষকে ধ্বংস করা যায়? বঙ্গবন্ধুকে তো কতবারই বন্দি করা হয়েছিল। তার উপর নির্যাতন করে তো বাংলার স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল শাসকগোষ্ঠী! শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যদি বন্দি না হতেন, জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি না দাঁড়াতেন তাহলে কি তার স্বর্ণালী সময়ের উন্নয়ন দেশবাসী দেখতে পেত? মাননীয় আদালত মাহমুদুর রহমানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। আমরা সবাই জানি তিনি একজন দেশপ্রেমিক সফল জ্বালানি উপদেষ্টা, সাবেক আমলা, সফল ব্যবসায়ী।

কিন্তু তাকে সাংবাদিক হিসেবে জগেজাড়া খ্যাতি এনে দেয়ার কৃতিত্ব তো তাকে জুলুমকারীদের কিছুটা দিতেই হবে! কারণ, আদালতের জবাব তো তিনি তার আপসহীন কাজের মাধ্যমেই দিয়েছেন। মাথা নোয়াননি, আপস করেননি সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে। আসলে মাহমুদুর রহমান কিন্তু এখন আর শুধু আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক নন, তিনি হয়ে গেছেন জুলুমের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের প্রতীক। আমার এক স্যারের কাছে শুনেছি, তিনি এরশাদ সরকারের প্রথমদিকে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই স্বৈরাচারের সঙ্গে করমর্দন করতে বাধ্য হয়েছিলেন অফিসিয়াল কারণে। কিন্তু করমর্দনের আগে তিনি তার নিজের হাতে থুথু দিয়ে তারপর এরশাদের সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, খুব ছোট হলেও এটা এরশাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ। প্রতিবাদকারীর হারাবার কিছু নেই। কি আশ্চর্য, দুটি রিপোর্টের জন্য আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া? আর তা না পেরে মাহমুদুর রহমানকে এভাবে নির্যাতন? আমেরিকা ও আমাদের সরকারকে বলতে চাই, কম্পন হলে তো শব্দ হবেই, আর শব্দ হলে মানুষ তো কানের মাধ্যমেই শুনবে। কান মানুষকে শব্দ শোনাতে মাধ্যম হিসেবে সাহায্য করে। শব্দের উত্পত্তি বন্ধ না করে কান কেটে ফেললে কি হবে? দুর্নীতির খবর পত্রিকায় দেখে পত্রিকার উপর রাগ না করে দুর্নীতি বন্ধ করে দিলেই তো হয়! দুর্নীতি বন্ধ না করলে আদালত, পুলিশ, সন্ত্রাসী, হাতুড়ি কোনো কিছুতেই সংবাদ চেপে রাখা যাবে না।

মাহমুদুর রহমান, অ্যাসাঞ্জ, আমার দেশ, উইকিলিকস কত কী মাধ্যম আসবে!! Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।