আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের কীর্তিকলাপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ (দেলোয়ার হোসেন সাঈদীঃরিপোষ্ট)

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে এই ব্লগে একটি সিরিজ লিখেছিলাম ইংরেজী থেকে অনুবাদ করে, যেখানে শীর্ষস্থানীয় কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের কুকর্মের বর্ণনা ছিল। ঐ সিরিজ থেকে রাজাকার সাঈদীর অংশটুকু আজকের প্রাসঙ্গিকতায় রিপোষ্ট করলাম। সাঈদীর অংশটুকু দুইটি পর্বে দিয়েছিলাম, এখানে দুই পর্বই একসাথে দিলাম, সাথে মূল লেখার লিংকও আছেঃ প্রথম পর্ব দেলোয়ার হোসেন সাঈদীঃ দেলোয়ার হোসেন সাঈদী নামটি এখন সরকারীভাবে উচ্চারিত হয় এবং গত বিএনপি সরকারের আমলে একজন ইসলামী পন্ডিত এবং ধর্ম প্রচারক হিসেবে লাল কুটনৈতিক পাসপোর্ট বহন করতো, সে প্রথমদিকে ছিল একজন উগ্র ধোঁকাবাজ এবং বরিশাল জেলার একটি ছোট শহর পিরোজপুরের একটি স্থানীয় পতিতালয়ের পতিতাদের দালাল।

সেখানকার স্থানীয় লোকেরা তাকে এখনও দেলু (দেলোয়ারের সংক্ষিপ্ত রূপ) দালাল নামে ডাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার কারণে সাঈদীকে দেলু রাজাকার নামে ডাকা হতো। সাঈদী কখনো কোন ইসলামিক বা সাধারণ স্কুলে পড়েছিল, এমন কোনো রেকর্ড নেই। অনেক ভন্ড ইসলামিক নেতার মতো সাঈদীকে রাতারাতি সাঈদী উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং সেই অনুযায়ী পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানী সিভিল এফেয়ার্স বিভাগে পদোন্নতি দেয়া হয়। সা্ঈদীর ব্যক্তিগত আদর্শ অবশ্যই হিটলার ছিল, কারণ তারা উভয়ই তাদের বাগ্মীতার বদৌলতে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চেয়েছিল।

তারা উভয়েই তাদের প্রাথমিক জীবন শুরু করে রাস্তার হকার হিসেবে। জার্মান হিসেবে হিটলার রাস্তায় ভূঁয়া চিত্রকর্ম বিক্রি করতো, আর সাঈদী হাতুরে ডাক্তারের মতো যৌনরোগের তরল ঔষধ বিক্রি করতো। রাস্তার হকারের পাশাপাশি সাঈদীর দ্বিতীয় কাজ ছিল পতিতালয়ের দালালী করা। ঐতিহ্যগতভাবে বেশীরভাগ হাতুরে ডাক্তার বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে পতিতালয়ের দালাল হিসেবে কাজ করতো। এটি একটি লাভজনক ব্যবসা, তারা দালালদের কাছ থেকে কমিশন নেয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে এবং যখন গ্রাহকরা বিভিন্ন যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত হয়, তখন তারা ঐসব হাতুড়ে ডাক্তারদের নিয়মিত রোগী হয়ে যায়।

পরে সাঈদী উপলব্ধি করল যে, সস্তা যৌনরোগের ঔষধ বিক্রি করার চেয়ে ধর্মীয় ঔষধ বিক্রি করা বেশী লাভজনক। সে আরো উপলব্ধি করল যে, পেশা হিসেবে হাতুড়ে ডাক্তারী করার পথে যৌনরোগের তরল ঔষধ বিক্রি করার চেয়ে আধ্যাত্নিক অসুস্থতা ব্যবসায় উন্নতি করার একটি বড় সুযোগ। তাই সাঈদী তার নতুন ভূমিকা জামায়াতে ইসলামীর অধীনে ইসলামের প্রচারক হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু সাঈদী ইসলামের কঠোর নিয়মনীতিগুলো প্রচার করেনি, সে ইসলামকে কুরুচিপূর্ণভাবে ব্যাখা করে তার দলকে ভুল পথে পরিচালিত করতো। তার এই পদ্ধতি তাকে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরের মুসলমানদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইসলাম প্রচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশে তার হাজার হাজার অডিও ক্যাসেট বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, সাঈদীর মতবাদ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরের অনেক অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশীর নৈতিক আদর্শকে পাকাপোক্ত করে। নিজামীর আদর্শিক মতাদর্শের প্রসার ঘটিয়েছে সাঈদী। নিজামী শিক্ষিত কিন্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন মুসলমানদের জন্য এবং সাঈদী অশিক্ষিত ও অপরিশুদ্ধ মুসলমানদের জন্য ফাঁদ পেতেছিল। তবে সাঈদী বাংলাদেশের প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কিন্তু দার্শনিক দিক দিয়ে অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য খুবই দক্ষ ছিল।

সাঈদী প্রতিবছর বিদেশ থেকে হাজার হাজার ডলার আয় করে। ঐসব বাংলাদেশী প্রবাসীরা দক্ষ অভিবাসী। তারা দক্ষ কিন্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন, তা নাহলে কিভাবে তারা সাঈদীর প্রচারণায় অংশ নেবে যখন একজন কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের পক্ষে এরকম কুরুচিপূর্ণ ভাষণের সন্মুখীন হওয়া অসম্ভব? সতীর্থ নিজামীর মত সাঈদীও মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুটপাট, অন্যায়ভাবে অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক অন্যের সম্পদ আহরণ করা এবং বাজেয়াপ্ত করা প্রভৃতি অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। উভয়ক্ষেত্রেই হিন্দু বাঙ্গালী এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে যুক্ত মানুষরা তাদের শিকার ছিল। ১৯৭১ সালে সাঈদী এবং তার দোসররা মিলে পিরোজপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল।

সে এবং তার দল একদিন আবদুল আজিজ নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা(ইপিআর/বর্তমান বিডিআর এর একজন সাবেক সদস্য)কে তার বাড়ীতে গোপনে আসার সময় তাকে আটক করে। সাঈদী জনাব আজিজকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়, পাকিস্তানীরা পরে তাকে নির্যাতন করার পর হত্যা করে। তার জীবনবৃত্তান্তে এরকম অনেক হত্যা, নির্যাতন, লুটপাটের বিবরণ আছে। ইসলাম ধর্ম প্রচারকের ভূমিকায় থাকাকালে সে একজন বিশ্বাসঘাতক এবং ঘৃণ্য পিশাচ ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। ১৯৭১ সালে সাঈদীর অপরাধের কিছু হলঃ ১. ১৯৭১ সালে সাঈদী কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত ছিলনা, কিন্তু একজন আত্মস্বীকৃত ইসলামিক ধর্মযোদ্ধা হিসেবে সে তার নিজের ক্ষমতা দিয়ে তার কর্মকান্ড পরিচালনা করতো।

অভিযোগ আছে যে, সাঈদী বেসামরিক বাহিনী গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীকে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি কাজে সক্রিয় সাহায্য করতো। যুদ্ধের সময় সে তার চার সহযোগিদের নিয়ে পাঁচজনের তহবিল নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলে। এই সংস্থার প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা এবং বাঙ্গালী হিন্দুদের সম্পত্তি লুট করে অধিগ্রহণ করা। সে ঐসব লুটকৃত সম্পত্তি বিক্রি করতো ঐসব বিক্রি করে একটি লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করতো। ২. “ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সাঈদী মদন নামের একজন হিন্দু বাঙ্গালীর দোকান ধ্বংস করে এবং তার সকল সম্পত্তি নিয়ে যায়।

সাঈদী পাড়ের হাট স্টীমার স্টেশনে নিকটবর্তী হিন্দু মালিকানাধীন একটি মুদি দোকান থেকে লুন্ঠনকৃত মালামাল দিয়ে একটি দোকান চালু করে। ” বলেছেন মিজান নামের পাড়ের হাট ইউনিয়ন কমান্ডের একজন প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধা। দ্বিতীয় পর্ব দেলোয়ার হোসেন সাঈদী(বাকী অংশঃ) ৩. "১৯৭১ সালে সাঈদী বিপীন সাহা নামের একজন হিন্দু ব্যক্তির বাড়ী জোরপূর্বক দখল করে এবং পুরো সময়টা জুড়ে সে সেখানে বসবাস করতে থাকে, বিভিন্ন সমাজবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে, সন্দেহভাজন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের আত্নীয়দের একটি তালিকা তৈরী করে এবং সেটি নিকটস্থ পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে প্রেরণ করে, নিকটস্থ গ্রামগুলো থেকে যুবতী মেয়েদের অপহরণ করে সেই পাকিস্তানী ক্যাম্পে সরবরাহ করে, দখলদার সেনাদেরকে সাহায্য করার জন্য সাঈদী পাড়ের হাটের ফেরী বন্দর জ্বালিয়ে দেয়, সে স্থানীয় যুবকদেরকে আল-বদর বাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করেছিল, কেউ যোগদানে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যা করা হতো। " - বলেছেন পিরোজপুরের এডভোকেট আবদুর রাজ্জাক খান। ৪. হিমাংশু বাবু নামের একজন হিন্দু ও তার পরিবারের হত্যার পিছনে সাঈদী জড়িত ছিল।

পিরোজপুরের অসাধারণ মেধাবী ছাত্র গণপতি হালদারকেও সে হত্যা করে। বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতার সন্দেহে বহু বুদ্ধিজীবি ও মধ্যপদের সরকারী কর্মকর্তাদের হত্যার পেছনে সাঈদী মূল ভূমিকা পালন করেছিল। এদের মধ্যে ছিলেনঃ (ক)সাব-ডিভিশনাল পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান, যিনি ছিলেন লেখক ও রসায়নের অধ্যাপক হুমায়ুন আহমেদ এর বাবা; (খ) ভারপ্রাপ্ত সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক ; (গ) ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা মিজানুর রহমান, (ঘ) শিক্ষক আবদুল গাফফার মিয়া (ঙ) সমাজকর্মী শামসুল হক ফরায়েজী, (ঙ) অতুল কর্মকার। ৫. "সাঈদীর নির্দেশে তার স্যাঙ্গাতরা মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সরবরাহের অভিযোগে ভাগীরথী নামের একজনের পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে তাকে মোটরসাইকেলের বেঁধে পাঁচ মাইল টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়", বলেছেন পিরোজপুরের গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট আলী হায়দার। ৬. পিরোজপুর অধিবাসী বেণী মাধব সাহা’র মতে, সাঈদী এবং তার লোকেরা কৃষ্ঞ কান্ত সাহা, বণী কান্ত শিকদার, তারানি কান্ত শিকদার প্রভৃতি লোকদের অপহরণ ও হত্যা করে।

তিনি আরো বলেন, সাঈদী এবং তার দল হরি সাধু ও বিপিন সাহা’র মেয়েদের উপর নির্যাতন চালায়। তালুকদার নামের এক হিন্দু পরিবারের বাড়ী লুট করার পর সাঈদী ২৫ জন মহিলাকে অপহরণ করে এবং তাদেরকে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। মাওলানা সাঈদী দ্বারা নিহত লোকদের তালিকাঃ ফয়জুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, মিজানুর রহমান, আল গাফফার মিয়া, সামশুল হক ফরায়েজী, বণি কান্ত শিকদার, কৃষ্ন কান্ত সাহা, তারানি কান্ত শিকদার, বিপিন সাহা, হরি সাধু, অতুল কর্মকার, ভাগীরথী, হিমাংশু বাবু, গণপতি হালদার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.