আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা, তোমার জন্য ভালোবাসা

এক শব্দ প্রতিবাদী, "অবিভক্ত ঢাকা চাই। । । " ঠিক কোথা থেকে শুরু করব, বলতো!!! আমার জীবনের পরতে পরতে যার ভালবাসার ছোঁয়া, সেই মানুষটির ভালবাসার কথা কি এই কটি শব্দে লেখা যায়, না প্রকাশ করা যায়। যখন কোনো কারণে খুব মন খারাপ হয়, বা যখন কোনো ঝামেলায় পড়ে অসহায় লাগে, তখন চোখ বুজলেই কার চেহারা চোখে ভাসে, জানো? তোমারই।

আম্মু, মনে আছে তোমার, আমার এসএসসি ফল প্রকাশের কথা, সে দিন কেউ যায়নি তোমার এই হতভাগ্য ছেলেটার সাথে। যাবেই বা কেন? আমি ফেল করব, সেত জানা কথা। আমিও সে দিন নীচের দিক থেকেই আমার ফলাফল দেখা শুরু করেছিলাম, দুই বিষয় ফেল- এক বিষয় ফেল- সি গ্রেড-, নাহ, কোথা আমার নাম নেই, স্কুলের ৭৫০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২৫০-২৬০ জন পাস। সারা বাংলাদেশে পাসের হার মাত্র ২১%, সেখানে আমার মত ব্যাক-বেঞ্চার ছেলের ফেল করাই সাভাবিক, তা ওআবার এমন ফেল, যে রেজাল্ট শিটে নামই নেই। আমাদের ব্যাক-বেঞ্চার ৮ রত্নের ৬ জনই ফেল তাও তাদের নাম আছে, একজন পাস আর আমি তো আমিই।

যখন আমার চোখের আর নাকের পানি এক,তখন পিঠের পিছনে সুজনের থাপ্পড়। আবার পড়িমরি করে দৌড় রেজাল্ট শিট দেখার জন্য,রেজাল্ট শিটের প্রথম পেজে আমার নাম। যেখানে সারাদেশে মাত্র ৫টা এ-প্লাস, সেখানে আমার রেজাল্ট আসলেই ভাল। বাসায় এসে তোমার প্রশ্ন ছিল আমি পাস করছি কিনা। তোমাকে যখন বুঝাতে পারলাম গ্রেডিইং সিস্টেম কি, আমাকে জড়ায়ে ধরে তোমার চোখের পানিতে আটকে থাকা খুশি আমি ঠিকই দেখে ছিলাম।

সেদিন কেউ ফোন করে নি, তোমার এই ছেলের রেজাল্ট জানার জন্য, তুমি ফোন করেছিলে সবাইকে। আম্মু জীবনে আমি কোনদিন এই সময়টাকে ভুলব না, আমার জীবনের সেরাদিন-সেরা সময়। স্মৃতির ঘড়িতে যদি আর একটু পিছনে যাই, সে সেই সেন্ট্রাল কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের ফেল করা রেজাল্ট নিয়ে এসে তোমার হাতের মার খাওয়া, মাটিতে বসে তোমার কাছে সেই পরীক্ষা আবার দেয়া, চাচুর সাথে তর্ক করার অপরাধে তোমার আমার পিঠে কাপড়ের হ্যাঙ্গার ভাঙ্গা, ভর-দুপুরে ক্রিকেট খেলার জন্য তোমার হাতের লাঠিতে আমার পিঠে বসে যাওয়া কিছু দাগ, অথবা ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করে তোমার মারের ভয়ে দাদুর পিছনে গিয়ে লুকানো। তখন বুঝতাম না তোমার মারের পিছনে লুকিয়ে থাকা ভালবাসাটাকে, যদি বুঝতাম আরও বেশি করেই মার খেতাম। খুব ছোট্টবেলা থেকেই ভাত খাওয়া নিয়ে খুব জ্বালাতাম তোমাকে, এমনকি এই বড়বেলাতেও খাওয়া নিয়ে জ্বালাতে ছাড়তাম না।

সেই আমিই এখন হোটেলের অখাদ্য নিজের হাতে খাই। কখনো খেতে পারি, কখনো অর্ধেকটা খেয়েই ওঠে পরি। আমরা যারা মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকি, তারা প্রত্যেকেই খুব ভালোভাবে বুঝি, মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা ঠিক কিরকম। মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকা প্রতিটা সন্তানের অনুভূতি একইরকম, একটুও রকমফের নেই। কেউ মাকে কাছে না পেয়ে প্রকাশ্যে কাঁদে, কেউ বা লুকিয়ে, কিন্তু বোধহয় এমন কেউনেই মাকে কাছে না পেয়ে যার অন্তরটা কাঁদেনা।

কারো মা যখন ফোন করে, তখন তার চেহারায় যে একটা খুশির ঝিলিক লাগে,তা দেখেই অন্যদের মন ভরে যায়। প্রতি সকালে যখন ঘুম থেকে উঠি, তোমার ডেকে দেয়াটা খুবমিস করি। অফিসে যাবার আগে নাস্তা করার তাগাদা নেই, তোমার আদরমাখা বকাটা খুব মিস করি। এখন অফিসে যাবার সময় কেউ একশবার বলে না "সাবধানে থাকিস", অফিস থেকে ফিরে এলেই ভাত খেতে তাগাদা দেয় না। যা খুশি করতে পারি, কেউ বকে না।

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তোমার মুখটা দেখতে খুব মন কেমন করে। জ্বরের ঘোরে ছটফট করে যখন তোমার হাতটা কপালে অনুভব করি, তখন খুব কান্না পায়। অফিস থেকে বাসায় ফিরার তাড়া নেই, কেউ আমার জন্য চিন্তাকরে না। রাতে বাসায় ফিরার জন্য উদ্ধিগ্ন হতে হয় না, জানি রাতে কেউ চাবি হাতে আমার জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করছে না। আম্মু জানো আজকে কোন দিন ? মনে করতে পারছ না; আমিই বলি আজ বিশ্ব মা দিবস।

মনে আছে আম্মু ঢাকায় থাকতে কি করতাম ? আমার বিছানার উপর কার্ড আর ফুল রেখেবাসা থেকে বের হয়ে যেতাম। মাঝে মাঝে জীবনরে পিছনে তাকালে নিজেই থমকে দাড়াই; কি এক অসীম ভরসায় আমাকে এগিয়ে নিয়েছ। কোথায় পেতে এত ভরসা আমাকে নিয়ে? যখনই সবাই আমাকে নিয়ে মজা করত; তখনই তোমার আচল ছিল আমার জন্য উন্মক্ত। যখনই তোমার সব ভরসাকে ছাই করে দিতাম; তখনই আবার তুমি নতুন আশায় আমার হাত ধরে এগিয়ে দিতে জীবনরে স্রোতে। সবাই নাকি মাকে এক এক রুপে পায়; কক্ষনো বন্ধু, অভিভাবক, খেলার সাথী, আরওকত।

কিন্তু আমার জীবন নদীর প্রতিটি বাকেই আমি তোমাকে একই রুপে পেয়েছি “মা” শুধুইমা। তোমার আদর ভালবাসায় কোনদিন মনে হয়নি যে তুমি আমার বন্ধু, বা খেলার সাথী বাঅভিভাবক; আমার শুধু একটি কথাই মনে হত “মা”, যার জন্য সব করা যায়; স্বর্গ ছেঁড়ে পৃথিবীকে থাকা যায়। আম্মু মনে আছে, ক্লাস ৪-য়ে আমি পরীক্ষা দিয়ে একবার আমার এক বন্ধুর বাসায়চলে গেছিলাম। সারাদিন ওই বন্ধুর বাসায় রাতে ভাইয়া যখন অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমাকে নিয়ে ফিরল; আমি তোমাকে দেখে ভয়ে আবার পিছন দিকে পালিয়ে ছিলাম। একটু পর যখন ফিরলাম, দেখি তুমি কাঁদছ।

আমাকে কোলে নিলে, আদর করলে, সমস্ত গালে মুখে বিশ্বের সেরা স্নেহমাখা চুমুগুলো এঁকে দিলে, হাত- পা দু’টি ধুয়ে নিজেই খাবার মুখে তুলে দিলে, আর জানলাম তুমি সেই দুপুর থেকে না খাওয়া। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ছিলাম আর তুমি শুধু আমার দিকে ছল ছল নয়নে তাকিয়ে ছিলে। ‘মা, তুমি আমাকে অনেক ভালোবাস!!! মাগো আমি তৃষ্ণার্ত দাঁড় কাকের মতো এখানে ওখানে তোমার আদর খুজে ফিরি কিন্তু পাই না, কি করে পাবো বল তুমিত তুমিই। সারাদিন পরিশ্রমের পর শুষ্ক মুখে ঘরে ফিরি কিন্তু কেউ আমার বলে না, মুখখানি শুকনো দেখা যাচ্ছে সারাদিন কিছু খাও নাই ? কর্ম শেষে রুমে গেলে অশ্রুসজল চোখে তোমাকে অনুভব করি। রুমে তোমার অভাব প্রতি পদে পদে অনুভব করি।

মায়ের হাতেররান্না সবার ভাল লাগে, কতদিন খাইনি তোমার হাতের খিচুড়ি, ভুনা গরুর মাংস, ছোট মাছের টমেটো মাখা ঝোল, শিম আলু কপির তরকারি, মাছ ভাজা, আর কত কি। আম্মু মনে পরে সেই দিনের কথা; আমি দুপুরের আগেই ক্লাস শেষ বাসায় ফিরে এসেছিলাম। তুমি আমি একসাথে দুপুরের ভাত খেতে বসে দেখি তুমি সাদা ভাতে পানি দিয়ে খাচ্ছ; অথচ টেবিল ভর্তি খাবার। তুমি বললে তুমি কিছু খেতে পারবে না, কারন ডাক্তার তোমায় নিষেধ করেছে। আমি না খেয়ে উঠে গিয়েছিলাম।

ছুটে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর কাছে তোমার জন্য একটা খাদ্য তালিকা বানাতে। আম্মু, জান কেন গিয়েছিলাম; না, তোমার জন্য না, আমার জন্য; আমার অস্তিত রক্ষার জন্য। তুমি ছাড়া আমার কোন অস্তিত নেই। আম্মু জানি না কেন, সেদিন মনে হচ্ছিল প্রভু আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে; আম্মু একদিন পরের তোমার সেই তৃপ্ত হাসি আজও আমার চোখে লেগে আছে; আমিও মুচকি হেসেছিলাম হয়ত প্রভুও হেসেছিলেন, বুঝেছিলেন প্রতিদন্ধী অনেক কৌশলী। কেনই বা হব না এযে আমার মা।

আম্মু মনে পরে রনির মামার কথা, যিনি আমার গৃহ শিক্ষকছিলেন। একদিন বাসায় ফিরে বিকালের চা সাথে থাকা বিস্কুটি আমার হাত থেকে পড়ে গেল;কেউ দেখেনি কিন্তু তোমার নজর এড়াতে পারে নি। তুমি ঠিকই ধরে ফেলেছিলে আমার তীব্র ব্যাথায় কুঁকড়ে জাওয়া আঙ্গুলটি। তুমি তো পারবেই, সব কিছুর উপরেই যে তুমি “মা”, প্রভুই যে তোমায় গড়ছে পরম মমতায়। বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা নামছে, খুব আলতো করে, পাখির পালকের মত নরম কোমল বিষণ্ণ মায়াময় সন্ধ্যা।

আস্তে আস্তে জ্বলে উঠছে হাজারো নিয়ন বাতি, আলো ঝলমলে শপিং কমপ্লেক্সের ডানে প্রশস্ত আঙ্গিনায় কফি শপ, খোলা আকাশের নীচে , সব কাজ কর্ম শেষ করে দিয়ে একা বসে আছি আমি। চারপাশে যাপিত জীবনের কোলাহল । তরুন তরুণীর সংখ্যাই বেশী। ক্ষণিকের ভুলে বিভ্রমে যারা আঁকড়ে আছে হাত, চোখে চোখ , ঝলমলে হাসিতে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে এই শেষ বিকেলের গহীন নিস্তব্ধতা। আমার সামনে এক কাপ চা।

উষ্ণ ঠিকই। গাঢ় নয়, টি- ব্যাগের চা, আহামরি কিছু নয়। এখানকার টলটলে স্বাদহীন, গন্ধহীন চায়ে আমি কি খুঁজছিলাম জান ? তোমাকে ? চায়ের উষ্ণ স্পর্শে আমি তোমার স্পর্শ খুজছিলাম ? চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁইয়ে আমি তোমার মুখ,তোমার গহন মায়ার মুখ ছুঁয়ে দেখতে চাচ্ছিলাম ? আজকাল কি একটুস্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি আমি ? নিজেকে নিয়ে মগ্ন ? কিন্তু এই বিকেলে কত কি ভেসে আসছে মনের পাতায় ,চোখ ভিজে যাচ্ছেঅবাধ্য জলে, আমার বুকের কষ্ট কান্না হয়ে অদৃশ্য বৃষ্টির জলে মিলে মিশে যাচ্ছে। আমি তোমাকে খুব মিস করছি, খুব। আমি তোমাকে ভেবে অনেক কষ্ট পাচ্ছি।

আজ আমি দূরে আছি,শত সহস্র যোজনদূরে, ভুলে আছি তোমায়, ৪টি ভাই বোন পৃথিবীর তিন প্রান্তে আছি । একা রেখেছি তোমায় , কিন্তু এই অসম্ভব নিস্তব্ধ বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় এক কাপ চায়ের পেয়ালা হাতে আমি এক মনে আছি তোমার সাথে, সামনে ল্যাপটপ , কাজে মন নেই , মন চলে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মনের মানুষটির কাছে । তোমার কাছে, আমার ভালবাসার কাছে। এই এক জনম কেটে যাচ্ছে ভুলে বেভুলে মিথ্যে মায়ার পেছনে, সামান্য চাকরীর জন্য ভুলে আছি অসামান্য তোমাকে, এর ক্ষমা নেই, নিজের কাছে নিজেকে প্রবোধ দেয়ার আজ কিছু নেই। জানি পৃথিবীর সব আলো নিভে যেতে পারে, সব আশ্রয় আমার শূন্য হয়ে যেতে পারে, তোমার মমতার আশ্রয় কখনো শেষ হবার নয়,তুমি যে মাসর্বশক্তি বাজি রেখেছ আমাদের স্বপ্ন পূরণে , আমাদের জয়ী করে দিতে ।

আমার সমস্ত ভালোরজন্য তোমার প্রার্থনা চলে অবিরাম আমি জানি, আজ আমি প্রার্থনায় আছি,খুব ভাল থাকো তুমি। মহান স্রষ্টার কাছে তোমার সুস্থতা চাই। তোমার সুখ আর বুক ভরা আনন্দ চাই। তোমার মনের শুদ্ধআলোয় পবিত্র করো ধরণী যুগের যুগের পর যুগ । শত সহস্র বছরের পরমায়ু হোক তোমার ।

"তোমাকে খুব ভালোবাসি,মা, খুব বেশি। " মা দিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা তোমায়। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।