আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রিয় শিল্পী শচীন দেব বর্মন

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই ক্লাশ ফোরে যখন শচীন কর্তার গান প্রথম শুনি তখনই কেন যেন আমার মনের মধ্যে উনি পাকাপোক্ত আসন গেড়ে নিলেন। কারো সাথে সঙ্গীত বিষয়ক আলোচনা করতে গেলেই আমি জানিয়ে দিতাম শচীন দেব বর্মন আমার প্রিয় শীল্পী। শচীন কর্তা কে ছিলেন? এই বর্ননা আমি দেবার আগে ততকালীন দুই মহারথীর কথা শুনুন।

সেই সময় লোক সঙ্গীতের রাজা ছিলেন আব্বাসউদ্দীন আর রাগ সঙ্গীতের রাজা ছিলেন ভীস্মদেব চট্টোপাধ্যায় তবে একই সঙ্গে উভয় সঙ্গীতে মহারাজা ছিলেন একজন তিনি শচীন দেব বর্মন। সেই জন্য উভয়েই তাকে গভীর শ্রদ্ধা করতেন। তবে রাগ সঙ্গীতে সিদ্ধ শীল্পী ছিলেন না শচীন দেব বর্মন। তাও হতে পারতেন যদি রাগ সঙ্গীতের প্রতি তার একনিষ্ট থাকত। তার মূল মনোযোগ ছিল কাব্যগীতি, লোকগীতি এবং রাগ সঙ্গীতের সম্ভব শ্রেষ্ট মিশ্র সাধনের প্রতি।

তবে এই প্রতিশ্রুতিশিল সঙ্গীত বিপ্লবের ইতি ঘটল কেবল শচীন দেবের কলকাতা ত্যাগের কারনেই নয়- ১৯৪২ সালে নজরুলের চেতনালোক ত্যাগ, ১৯৪৩ সালে অজয় ভট্টাচার্যের এবং ১৯৪৪ সালে হিমাংসু দত্তের ইহলোক ত্যাগের কারনেও বটে। ছোটবেলা তাঁর জন্ম কুমিল্লায় ১৯০৬, ১লা অক্টোবর, ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। তৎকালীন ত্রিপুরার অন্তর্গত কুমিল্লার রাজপরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। মা মণিপুরি রাজবংশের মেয়ে নিরুপমা দেবী।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ঐ কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। খ্রিস্টাব্দে ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ তে ভর্তি হন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করতে শুরু করেন।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্যারালিটিক স্ট্রোক হয়ে কোমায় ছিলেন পাঁচ মাস। ৩১ অক্টোবর, ১৯৭৫ তাঁর প্রয়াণ হয়। বংশ পরিচয় কুমিল্লার ঐতিহাসিক অভয় আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক সংগীত প্রাণ প্রায়াত শ্রী পরিমল দত্তের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, শহরের চর্থা এলাকার গোল পুকুরের দণি পাড়ের এই বাড়িটি ছিল তৎকালীণ ভারত বর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুরের সৎভাই মহারাজ নবদ্বীপ কুমার দেব বর্মন বাহাদুরের। ত্রিপুরার এই মহারাজার স্ত্রী ছিলেন বেশ কয়েকজন। তার মধ্যে পাটরাণী পুত্র মহারাজা নবদ্বীপ কুমার দেব বর্মন বাহাদুরকে আরেক রাণীর পুত্র বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর হত্যা করতে উঠে পড়ে লাগলে উপায়ান্তর না দেখে মহারাজ নবদ্বীপ রাজ বাড়ির কর্মকর্তা শ্রী কৈলাস সিংহের পরামর্শে সপরিবারে কুমিল্লায় চলে আসেন।

জানা যায়, বিখ্যাত ‘রাজমালা’ গ্রন্থটি কৈলাশ সিংহ রচনা করেছিলেন। কৈলাস সিংহের পরামর্শে মহারাজ নবদ্বীপ সিংহাসনের দাবীও এ সময় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কুমিল্লা শহরের পূর্ব চর্থায় অবস্থিত এ বাড়িটি তৎসময়ে নির্মিত হয়েছিল। বাড়িটি দেখতে কুমিল্লা শহরের ব্রিটিশ আমলে তৈরী বাড়িগুলোর মতোই মনে হয়। কোন রাজ প্রসাদের মত দেখতে এ বাড়িটি নয়।

এই কুমার দেব বর্মন বাহাদুরের পুত্রই হলেন শচীন দেব বর্মন। কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণ বীরচন্দ্র মাণিক্যের অর্থানুকূল্যে, কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমি নিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্র। এই প্রাসাদে ১৯০৬ সালের পয়লা অক্টোবর তাঁর ছোট সন্তান শচীন দেববর্মণের জন্ম। ১৯১০ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঠাকুরপাড়ার সুরলোক, কান্দিরপাড়ের সবুজ সংঘ নাট্যদল, দি গ্রেট জার্নাল থিয়েটার পার্টি, ইয়ংম্যান্স ক্লাব ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল কুমিল্লার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। ত্রিপুরার মহারাজারা কুমিল্লায় তৈরি করেছেন টাউনহল, নাট্যশালা, লাইব্রেরি এবং নানা সংস্কৃতিক কেন্দ্র।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে শচীন দেবের বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন সুরসাগর হিমাংশু দত্ত, অজয় ভট্টাচার্য, মোহিনী চৌধুরী, সমরেন্দ্র পাল, কাজী নজরুল ইসলাম, শৈলবালা দাম, ধ্রুপদীয়া সৌরেন দাশ, সুধীন দাশ প্রমুখ। সেখানে নিয়মিত আসতেন চলচ্চিত্র পরিচালক সুশীল মজুমদার, ননী মজুমদার, ব্রজেন ব্যানার্জি, জিতু দত্ত, অরুণ মহলানবিশ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। গানের ধরণ ছিল ভোরকীর্তন, নগরকীর্তন, কবিগান, ঢপযাত্রা। সাহিত্যিক, সুরকার, গীতিকার, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞগণ একত্রিত হতেন ইয়ংমেন্স ক্লাবে। আড্ডা থেকে ভেসে আসত নজরুল ও শচীন দেবের গান।

নজরুল কুমিল্লা এলে থাকতেন তালপুকুরের পশ্চিমপাড়ে একটি ঘরে। কুমিল্লা থেকে শচীন দেব কলকাতা চলে আসেন ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে। কর্মজীবন সদ্য সুর করা গান গাইছেন তরুণ সঙ্গীতপরিচালক। সুরের সমস্ত লালিত্য ঢেলে গান শেষ করলেন, তাকালেন আসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্রোতা, ফিল্মিস্তানের কর্ণধার এস. মুখার্জীর দিকে। এস. মুখার্জী শুধু শ্রোতা নন, বিচারকও।

কেননা তার রায় পেলেই মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটা হিল্লে হয়ে যেতে পারে কোলকাতা থেকে আসা সঙ্গীত পরিচালকের। কিন্তু এস মুখার্জী গান শুনলে তো! তিনি তো নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছেন! পরের দিন আবার হারমোনিয়াম নিয়ে বসা হলো। শুরু হলো গান। শেষও হলো। গায়ক তার কাজ শেষ করে যথারীতি তাকালেন শ্রোতাদের দিকে।

সেই লোক রীতিমতো হুইসেল বাজিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এভাবে চললো পাক্কা দু’মাস। প্রযোজকের গান শোনা হয়না, মুম্বাইতে (তখনকার বোম্বে) কাজও শুরু করা হয় না সঙ্গীত পরিচালকের। তো একদিন রুটিনমাফিক গান শেষ করে হতাশ গায়ক ভাবছেন, ‘এখানে আর নয়। ফিরে যাবো কোলকাতায়।

যা হয় হবে…। ’ অমনি ভাবনায় ছেদ টেনে এস মুখার্জী বলে উঠলেন, ‘গানটা রেকর্ড করিয়ে ফেলুন না। ’ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে না পেরে গায়ক জানতে চাইলেন, ‘আমাকে কিছু বললেন?’ জবাব এলো, ‘হ্যাঁ, আপনার এ গান আমার খুব পছন্দ হয়েছে। রেকর্ড করিয়ে ফেলুন। ’ রেকর্ড করানো হলো।

মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের নিচে মাটি পেয়ে গেলেন সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেব বর্মন, উপমহাদেশের সঙ্গীতভুবন যাকে ‘শচীন কত্তা’ নামে চেনে। সেটা ১৯৪৪ সালের কথা। ফিল্মে অভিনেতা ও গায়ক হিসেবে তার অভিষেকও হয়েছিল হতাশা দিয়ে। ইহুদি কি ল্যাড়কি (১৯৩৩) ছবিতে তার গাওয়া গান নতুন করে গাওয়ানো হয় পাহাড়ি স্যান্যালকে দিয়ে। তাতে অবশ্য মুষড়ে পড়েননি।

রাজপরিবারের সদস্য হয়েও ছোটবেলা থেকে নানা প্রতিকূলতাকে জয় করেই আসতে হয়েছে। রণে ভঙ্গ দেয়ার মানসিকতা তার ছিলনা। তাই বাংলা ও হিন্দি গানে নিজের একটা জায়গা হয়েছে। আজ উপমহাদেশের গানের জগতে শচীন দেব বর্মনকে না চেনা তাই লজ্জা পাওয়ার মতো অজ্ঞতা। শচীন দেব বর্মনের জন্ম ত্রিপুরার রাজপরিবারে।

বাবা নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মন ছিলেন রাজসিংহাসনের সরাসরি উত্তরাধিকারী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট শচীন অবশ্য রাজকীয় জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন না। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নবদ্বীপ চন্দ্রকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়। এমনিতেও সিংহাসনের প্রতি তার কোনো আকর্ষণ ছিল না। ধ্রুপদ সঙ্গীত, সেতার বাজানো আর ভাস্কর্য তৈরিকেই ধ্যান-জ্ঞান মানতেন।

শচীন দেবের প্রথম সঙ্গীত-গুরুও তিনি। পরে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার জন্য কোলকাতা গেলে উস্তাদ বাদল খান, আলাউদ্দীন খান, আব্দুল করিম খান, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় আর মান্না দে’র কাকা দৃষ্টিশক্তিহীন শিল্পী কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র কাছে তালিম নেয়ার সৌভাগ্য হয় তার। কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র শিক্ষা শচীন কত্তার সফল শিল্পী, সুরস্রষ্টা আর সঙ্গীত পরিচালক হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সম্ভবত বাংলার লোকগান। হিন্দি ছবির অমর কিছু গানের সুর তিনি লোকগানের বিশাল ভাণ্ডার থেকেই নিয়েছিলেন।

মোহাম্মদ রফির গাওয়া ‘তু কাঁহা ইয়ে বাতা’, ‘তেরে ঘরকে সামনে’, ‘দিলকা ভঁওয়ার কারে পুকার’সহ অসংখ্য গানে বাংলার লোকগানের প্রভাব খুব স্পষ্ট। কিশোর কুমারের ‘রূপ তেরা মাস্তানা’ আর নিজের গাওয়া ‘কাহেকো রোয়ে, চাহেযো হোয়ে’র মতো তুমুল জনপ্রিয় গানের সুরেও আছে লোকগীতির ছোঁয়া। রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি বা বাংলার অন্য কোনো গানের সুন্দর সুর নিয়েও হিন্দি ছবির গানকে সমৃদ্ধ করেছেন শচীন দেব বর্মন। এর মধ্যে নজরুলগীতি ‘অরুণ কান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ অবলম্বনে মান্না দে’র গাওয়া ‘পুছো না ক্যায়সে ম্যায়নে র্যা য়েন বিতায়ি’ (ফিল্ম : মেরি সুরত তেরি আঁখে, ১৯৬৩) তো মুম্বাই ফিল্ম ইতিহাসের সেরা গানগুলোর মাঝেই জায়গা করে নিয়েছে। একজন সেরা পেশাদার সঙ্গীত পরিচালকের মাঝে যেসব গুণ না থাকলেই নয় তার সবই ছিল শচীন দেব বর্মনের।

নিজে ক্লাসিক্যালে তালিম নিয়েছেন দীর্ঘদিন। ফলে শিল্পী হিসেবে নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে একবার (১৯৩৪) অল বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক কনফারেন্সে স্বর্ণপদকও লাভ করেন। ফঈয়াজ খান, আলাউদ্দীন খান, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো সঙ্গীতগুরুরাও অংশ নিয়েছিলেন সেখানে। তো ক্লাসিক্যালে এমন দখল ছিল যার তিনি কিন্তু সুরসৃষ্টিতে প্রাধান্য দিয়েছেন সাধারণ মানুষের মনে দোলা দেবে এমন সুরকেই। তার কথাই ছিল, ফিল্ম হচ্ছে সাধারণ মানুষের মাধ্যম, এখানে উচ্চ-মার্গীয় সঙ্গীত মাঝে মাঝে চলতে পারে, সবসময় নয়।

তাই বলে নিজেকে শুধু জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই সফল করতে চাননি। সেরকম চাইলে প্রচলিত ধারাকে মেনে নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করাই হতো শ্রেয়, যা কখনোই করেননি। তাই রফি যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে সেসময় তার কথা ভেবে সুর করা ‘জ্বলতে হ্যায় যিসকে লিয়ে’ (ফিল্ম : সুজাতা, ১৯৫৯) গানটি গাইয়েছেন তালাত মাহমুদকে দিয়ে। সে গান অমরত্বও পেয়েছে। উল্টোটাও হয়েছে।

চিত্রগুপ্ত ছবির জন্য তালাত মাহমুদ গাইলেন ‘যা উড় যা রে পনছি’। কিন্তু ছবি মুক্তি পাওয়ার কদিন আগে সেই গান নতুন করে রেকর্ড করানো হলো মোহাম্মদ রফিকে দিয়ে। ওই গানটিও এখন মাস্টারপিস। সে আমলে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শচীন দেব বর্মনের এত এগিয়ে যাওয়া আসলেই বিস্ময়কর। সম্ভব প্রায় সব উপায়ে প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেউ যে এত সফল হতে পারেন তখন সেটা ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার।

সে যুগে নিয়ম ছিল গীতিকার আগে গান লিখবেন, সুরকার তাতে সুর দেবেন। শচীন দেব বর্মন নিয়মটা উল্টে দিলেন। সেই থেকে শতকরা কমপক্ষে আশি ভাগ গানের সুর হয় আগে, তারপর কথা। উপমহাদেশের সঙ্গীতে এসডি (মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শচীন দেব বর্মন এই নামে বেশি পরিচিত) যে এমন যুগান্তকারী পরিবর্তনও এনে দিয়েছেন সে খবর ক’জন জানেন? শচীন দেব বর্মনের সবচেয়ে প্রিয় শিল্পীদের একজন ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। লতাজীর তখন দোর্দণ্ড প্রতাপ।

একটা গান রেকর্ডিংয়ের পর পছন্দ না হওয়ায় লতাকে দিয়ে আবার গাওয়ালেন শচীন কত্তা। এবারও পছন্দ হলো না। আবার রেকর্ড করাতে বললে লতা জানালেন, সেদিন তার পক্ষে সময় দেয়া সম্ভব নয়, সুতরাং আরেকদিন…। ক্ষেপে গেলেন এসডি। তার ছবিতে লতাজীকে আর না নেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন।

এ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন অনেকদিন। আশা ভোঁসলের ইন্ডাস্ট্রিতে তাড়াতাড়ি স্থায়ী আসন করে নেয়ার সেটাও একটা কারণ। তখন হিন্দি ছবিতে নায়কের সব গান গাইতে হতো একজন শিল্পীকে। মুকেশ গাইবেন রাজ কাপুরের জন্য, কিশোর কুমার দেবানন্দের জন্য আর মোহাম্মদ রফি গাইবেন শাম্মি কাপুর আর দিলীপ কুমারের গান, এটা একেবারে অবধারিত ছিল। এসডি এ নিয়মও মানেননি।

তাই ‘অভিমান’ ছবিতে (১৯৭৩) অমিতাভ বচ্চনকে ঠোঁট মেলাতে দেখা গেল কিশোর কুমার, মোহাম্মদ রফি আর মুকেশের গাওয়া গানে। আবার ‘মঞ্জিল’ ছবিতে (১৯৬০) রফি, কিশোর আর মান্না দে গাইলেন দেবানন্দের জন্য। এমন কি ততদিনে নায়ক -গায়ক গিসেবে সুখ্যাতি পেয়ে যাওয়া কিশোর কুমারকেও ‘নটি বয়’ ছবিতে (১৯৬২) ঠোঁট মেলাতে হলো মান্না দে’র গানে। দর্শক কিন্তু শচীন দেব বর্মনের এসব এক্সপেরিমেন্ট মেনেও নিলো। নিয়ম ভাঙতে গিয়ে যত এক্সপেরিমেন্টই করুন, শচীন কত্তা কিন্তু অযৌক্তিভাবে, বেপরোয়া কিছু করতেন না।

বরং ছবির স্বার্থে এমন সিদ্ধান্তও নিতেন যা আর কেউ পারতেন কিনা সন্দেহ। ফিল্মের গানেও শিল্পী হিসেবে তার দক্ষতা, উপযোগিতা বা গ্রহণযোগ্যতা তো প্রমাণিত। ফিল্মে গেয়ে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন শচীন দেব বর্মন (গান : কাহেকো রোয়ে, ১৯৭২)। কিন্তু এ সাফল্য তার মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি। মনে করতেন, তার কণ্ঠের গান নায়কের ঠোঁটে মানাবে না।

তাই কোনোদিন কোনো ছবিতে নায়ককে সরাসরি শচীন দেব বর্মনের গান গাইতে দেখা যায়নি। এমনকি নিজের যেসব জনপ্রিয় বাংলা গানের হিন্দি সংস্করণ হয়েছে সেগুলোও গাইয়েছেন অন্য শিল্পীদের দিয়ে। আসলে শচীন দেব বর্মন সঙ্গীতকে, নিজের পেশাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাই ভালো গানের স্বার্থে, ভালো ছবি নির্মাণে ভূমিকা রাখার প্রয়োজনে যতটুকু করার তা করতে কখনো দ্বিধা করেননি। নিজের সৃষ্টির প্রতিও শচীন কত্তার ছিল অগাধ ভালোবাসা।

স্বল্প পরিসরে সব তো বলা সম্ভব নয়, তাই শেষ করা যায় একটা সত্যি ঘটনা দিয়ে। গভীর রাত। মুম্বাইয়ের রাস্তায় কয়েকজন পাঁড় মাতালের আড্ডা। সুখ-দুঃখের কথার ভীড়ে এক মাতাল দুঃখ সইতে না পেরে গাইতে শুরু করলো, ‘সুন মেরে বন্ধুরে, সুন মেরে মিতোঁয়া’। হঠাৎ কাছের একটি বাড়িতে আলো জ্বলে উঠল।

দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন একজন। ভদ্রলোক করজোড়ে মাতালদের বললেন, ‘তোমরা যা খুশি তা-ই কর, শুধু গানকে রেহাই দাও। অন্তত এই গানটা তোমরা গেয়ো না, প্লিজ। ’ মাতাল তরুণেরা রেগেমেগে জানতে চাইলো, ‘কেন? কে আপনি?’ লম্বা, রোগা লোকটি জানালেন, ‘আমি শচীন দেব বর্মন। তোমরা যে গানটির ইজ্জত লুটছো, আমি সেই গানের অভাগা গায়ক, কম্পোজার!’ অন্য শচীন দেব বিখ্যাত বেশ কিছু গানের স্রষ্টা হিসেবেই শচীন দেব বর্মনকে জানেন অনেকেই।

কিন্তু এর বাইরেও তার আরও অনেক পরিচয় আছে, ইতিহাসের ফেরে সেগুলিই হয়তো হতে পারত তার মূখ্য পরিচয়। এছাড়াও তার জীবন জুড়ে অসংখ্য মজার সব ঘটনা ছড়ানো আছে। এখানে কয়েকটি তুলে ধরা হলো: খেলাপাগল শচীন দেব : সব ভুলে গেলেও কী ভুলতে পারতেন না শচীন কত্তা? টাকডুম টাকডুম বাংলাদেশের ঢোল ? বাংলামায়ের কোল? খাঁটি বাঙ্গালী মনটার কোণে ওসব তো থাকতোই, তবে ফুটবলও খুব টানতো তাকে। একসময় নিজেও ছিলেন তুখোড় খেলোয়াড়। টেনিস তো এত ভালো খেলতেন যে তার ভেতরে ভারতের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কেও দেখতেন অনেকে।

আর নিয়মিত ফুটবল খেলায় সঙ্গীত সাধনার ক্ষতি হতো বলে একবার গুরু কৃষ্ণ চন্দ্র দে তো জানতেই চেয়েছিলেন, ‘তুমি খেলোয়াড় হতে চাও নাকি সঙ্গীত শিল্পী?’ শচীন কত্তা সেদিন সঙ্গীতের দিকটাই নিয়েছিলেন। তবে খেলাপাগল মনটা বেঁচে ছিল দেহাবসানের আগ পর্যন্ত। শচীন দেব বর্মন ফুটবল আর ইস্টবেঙ্গল বলতে ছিলেন অজ্ঞান। কলকাতা ফুটবলের ‘জায়ান্ট’ ইস্টবেঙ্গলের প্রতি তার ভালোবাসার একটা দৃষ্টান্ত শুনলে যে কোনো ক্রীড়াপ্রেমীই অভিভূত হবেন। মৃত্যুর আগের প্রায় এক বছর শচীন দেব বর্মন কোমায় ছিলেন।

বোধশক্তি আছে বলে কখনো মনেই হতো না। আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল যেদিন চিরপ্রতিদ্বন্ধী মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারালো, রাহুল দেব বর্মন খবরটা ছুটে গিয়ে জানিয়েছিলেন বাবাকে। প্রায় প্রাণহীন শরীরে প্রাণ ফিরেছিল, শচীন কত্তা নাকি খুশিতে একটুখানি হেসেছিলেন! ক্রিকেটে তার স্থায়ী আসন : খেলা ছেড়ে সঙ্গীতকে চিরদিনের সাথী করে নিলেও শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে ক্রিকেটের কিন্তু একটা চিরস্থায়ী সম্পর্ক হয়ে গেছে। মুম্বাইয়ে এক ভদ্রলোক ছিলেন পেশায় শিক্ষক। মারাঠিতে উপন্যাস লিখেও বেশ নামডাক হয়েছে তার।

ভদ্রলোক ছিলেন শচীন দেব বর্মনের অন্ধভক্ত। তো শচীন কত্তা মারা যাওয়ার দু’বছর আগে তার একটা ছেলে হলো। রমেশ টেন্ডুলকার তার নামের আগে শচীন দেবের শচীন লাগিয়ে ছেলের নাম রাখলেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ক্রিকেট থেকে শচীন টেন্ডুলকারের নাম কি কোনোদিন মোছা যাবে? আর টেন্ডুলকার থাকলে তার সঙ্গে শচীন দেব বর্মনও কি থাকবেন না? রসিক শচীন কত্তা : রিমিক্সের এই যুগে ‘ছোড় দো আঁচল জমানা কেয়া ক্যাহেগা’ গানটি শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। আশা ভোঁসলে-কিশোর কুমারের এই গানের পেছনে মজার একটা ইতিহাস আছে।

শিল্পীদের জন্য রেওয়াজ যতটা গুরুত্বপূর্ণ কখনো কখনো ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ‘মুড’। বিশেষ করে পারফর্ম করার সময় তো মুড ভালো না থাকলে কিছুই জমে না। আশা ভোঁসলেরও ঠিক জমছিল না সেদিন। রিহার্স করছেন ঠিকই, কিন্তু প্রাণ পাচ্ছেন না। মন খারাপ করে বসে আছেন।

হঠাৎ তার মাথায় কে যেন একটা ‘চাটি’ দিয়ে বসলো। সঙ্গে সঙ্গে আশা’র মুখ থেকে বেরিয়ে এলো বিরক্তিসূচক শব্দ, ‘আহ্!’ তাকিয়ে দেখলেন চাটি মারা লোকটি আর কেউ নন, স্বয়ং শচীন দেব বর্মন। হাসিমুখে এগিয়ে এসে তিনি চাটি মারার রহস্যটাও খুলে বললেন, ‘আমি তোমার কন্ঠে ঠিক এই অভিব্যাক্তিটাই (এক্সপ্রেশন) চাচ্ছিলাম। ’ আশা ভোঁসলে বুঝলেন ওই ‘আহ্’ দিয়ে শুরু করলেই গানটা একেবারে খুলে যাবে। গেলও।

‘ছোড় দো আঁচল’-এর আবেদন এখনো তাই একশভাগ অটুট। শচীন দেব বর্মনের গাওয়া বাংলা গান নিজের (শচীন দেব বর্মন) লেখা ১. অবোধ মেয়ে ২. বিদেশীরে উদাসীরে ৩. কে যেন কাঁদিছে গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ১. আমি পথ চেয়ে রবো ২. বাজে না বাঁশিগো ৩. বাঁশি শুনে আর কাজ নাই ৪. দূর কোনো পরবাসে ৫. ঘুম ভুলেছি নিঝুম এ নিশিথে ৬. মালাখানি ছিল হাতে ৭. ও জানি ভোমরা কেন ৮. না না নারে ফুটোনারে ফুল ৯. খুলিয়া কুসুম সাজ, শ্রীমতি যে কাঁদে ১০. কেন আলেয়ারে বন্ধু ১১. আঁখি দুখে ঝরে ১২. আজো আকাশের পথ বাহি মীরা দেব বর্মনের লেখা কিছু গান ১. ভাঙ্গিতে তব নেশা ২. বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে ৩. বিরহ বড় ভালোলাগে ৪. ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান ৫. কালা সাপে দংশে আমায় ৬. কে যাসরে ভাটি গাং বাইয়া ৭. কী করি আমি ৮. না আমারে শশী চেয়োনা ৯. নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক ১০. গানের কলি সুরের ১১. রাতের আতরে ভিজিয়া আদরে ১২. রাধার ভাবে কালা হইল গোরা ১৩. শোনগো দখিন হাওয়া ১৪. শ্রীমতি যে কাঁদে ১৫. টাকডুম টাকডুম বাজে ১৬. সুবলরে বল বল ১৭. কই কইরে ঘুঙ্গুর ১৮. যে না জানে ১৯. ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা রবি গুহ মজুমদারের লেখা ১. আমি সইতে পারি না বল্ ২. বনে ফাগুন মনে আগুন ৩. দোলে রাধা, মধু বৃন্দাবনে ৪. যে না জানে বিরহের মানে ৫. যদি ডাকি অকারণে ৬. মন দিলনা বঁধু ৭. তুমি আর নেই সে তুমি ৮. কেন সে যে হায় অজয় ভট্টাচার্যের লেখা ১. আলো ছায়া দোলা ২. আমি ছিনু একা ৩. ঝন ঝন ঝন ঝন মঞ্জির বাজে ৪. কাঁদিবোনা ফাগুন গেলে ৫. প্রেম যমুনার পারে ৬. তুমি যে গিয়াছ ৭. আমার মিলন মালতি ৮. চম্পক জাগো জাগো ৯. এই মহুয়া বনে ১০. গোধূলির ছায়াপথে ১১. কে যাবি চল বৃন্দাবনে ১২. মেঘ ঝরে যায় ১৩. মম মন্দিরে এলে কে ১৪. মন দুখে মরিরে ১৫. নতুন ফাগুন যবে ১৬. ওরে বন্ধুরে মনের কথা ১৭. ফুলের বনে থাকো ভ্রমর ১৮. পোহালো রাতি জাগিয়া ১৯. প্রিয় আজো নয় ২০. স্বপন দেখেছি ২১. তোমার সাথে সুরে পরিচয় ২২. তুমি যে ছিলে মোর ২৩. তুমি নি আমার বন্ধু ২৪. বাঁশুরিয়া রে ২৫. বন্ধু এসো মধুরাতে ২৬. বল বল বল বন্ধু ২৭. জাগো মন সহেলীগো ২৮. কন্ঠে তোমার দুলবে বলে ২৯. কথা কও দাও সারা ৩০. সাজি নওল কিশোর মোহিনী চৌধুরীর লেখা ১. ভুলায়ে আমারে ২. এই চৈতি সন্ধ্যায় ৩. গায় যে পাপিয়া ৪. হায় কী যে করি মন ৫. জাগার সাথী মম ৬. ঝিলমিল ঝিলমিল বাজেরে ৭. কে আমারে আজো ৮. পিয়া সনে মিলন ৯. প্রেম যমুনায় হয়তো ১০. সেই যে দিনগুলি ১১. তুমি তো বন্ধু জানো আরো কিছু গান ১. পদ্মার ঢেউরে (গীতিকার : কাজী নজরুল ইসলাম) ২. মেঘলা নিশিভোরে ( কাজী নজরুল ইসলাম) ৩. কুহু কুহু কোয়েলিয়া (কাজী নজরুল ইসলাম) ৪. চোখ গেল চোখ গেল ( কাজী নজরুল ইসলাম) ৫. তুই কি শ্যামের বাঁশি (গীতিকার : দুয়াইদনকার (উঁধরফধহশধৎ) ও জসিমুদ্দীন) ৬. রঙ্গিলা রঙ্গিলা রঙ্গিলারে (দুয়াইদনকার ও জসিমুদ্দীন) ৭. যদি দখিনা পবনে (গীতিকার : হিমাংশু দত্ত) ৮. শ্যামরূপ ধরিয়া (শৈলেন রায়) ৯. প্রিয় রজনীগন্ধা বনে (কমল ঘোষ ১০. প্রেমের সমাধি তীরে (শৈলেন রায়) ১১. কী মায়া লাগলো (শৈলেন রায়) ১২. জনম দুখী সীতা (শৈলেন রায়) ১৩. ও কালো মেঘ বলতে পারো ( হেমেন্দ্র কুমার রায়) ১৪. এই পথে আজ এসো ( হেমেন্দ্র কুমার রায়) ১৫. ডাকরে কোকিল রোজ বিহানে ( হেমেন্দ্র কুমার রায়) ১৬. মলয় চল ধীরে (শিশির সেন) ১৭. ধিক ধিক আমার এ জীবন (গিরীন চক্রবর্ত্তী) গীতিকারের নাম জানা যায়নি এমন কিছু গান ওরে সুজন নাইয়া তুমি তো বন্ধু এলে না স্বপন না ভাঙ্গে যদি পিঞ্জিরার পাখীর মতো ফিরে গেছি বারে বারে নতুন ঊষার সৈনিক নীরবে আঁখি জলে ভরে মরমিয়ারে উদাস ললিতা মরমি কোকিলারে গেয়োনা কেন হায় স্বপন কে দিলো ঘুম ভাঙ্গায়ে কাল সাগরের যবে আলোকের ফুল ঝুলনে ঝুলিছে শ্যামরাই এই কাননের ফুল নিয়ে ছিল মাধবি রাতিগো বুঝি আমার প্রাণ যায় বন্দর ছাড়ো যাত্রীরা বন্ধু বাঁশি দাও মোরে গৌররূপ দেখিয়া হইয়াছি পাগল বঁধু গো এই মধুমাসে বিদায় দাওগো মোরে বাসরের ফুল গেল যে বাংলার মেয়ে আমার কী হলো আজ রাতে কে আজ দোল দিলো কে শচীন দেব বর্মণের সুর করা কিছু হিন্দী ছবির গান ১. হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা, না জানে ইয়ে কিসিসে আয়েগা (ছবি : সোলভা সাল, শিল্পী : হেমন্ত কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ২. যায়ে তো যায়ে কাহা, সমঝেগা কওন ইয়াহা (ছবি : ট্যাক্সি ড্রাইভার, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : সাহির) ৩. যায়ে তো যায়ে কাহা, সমঝেগা কওন ইয়াহা (ছবি : ট্যাক্সি ড্রাইভার, শিল্পী : তালাত মাহমুদ, গীতিকার : সাহির) ৪. এক লাড়কি ভিগিভাগিসি (ছবি : চলতি কা নাম গাড়ি, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৫. হাল ক্যায়সা হ্যায় জনাবকা (ছবি : চলতি কা নাম গাড়ি, শিল্পী : কিশোর কুমার ও আশা ভোঁসলে, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৬. বাবু সমঝো ইশারে (ছবি : চালতি কা নাম গাড়ি, শিল্পী : কিশোর কুমার ও মান্না দে, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৭. মানা জনাব নে পুকারা নেহি (ছবি : পেয়িং গেস্ট, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৮. ছোড় দো আঁচল (ছবি : পেয়িং গেস্ট, শিল্পী : কিশোর কুমার ও আশা ভোঁসলে, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৯. চান্দ ফির নিকলা (ছবি : পেয়িং গেস্ট, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর , গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ১০. জীবনকে সফরমে রাহে মিলতে হ্যায় বিছাড়যানেকো (ছবি : মুনিমজী, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : সাহির) ১১. দিলকা ভাঁওয়ার কারে পুকার,পেয়ারকা রাজ সুনো (ছবি : তেরে ঘরকি সামনে, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : হাসরাত জয়পুরী) ১২. জ্বালতে হ্যায় যিসকে লিয়ে (ছবি : সুজাতা, শিল্পী : তালাত মাহমুদ, গীতিকার :মাজরুহ সুলতানপুরী) ১৩. জ্বালতে হ্যায় যিসকে লিয়ে (ছবি : সুজাতা, শিল্পী : তালাত মাহমুদ, গীতিকার :মাজরুহ সুলতানপুরী) ১৪. রূপ তেরা মাস্তানা, পেয়ার মেরা দিওয়ানা (ছবি : আরাধনা, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : আনন্দ বকশি) ১৫. ইয়ে দিল না হোতা বেচারা, কদম না হোতা আওয়ারা (ছবি : জুয়েল থিফ, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ১৬. হোঠোমে অ্যায়সি বাত (ছবি : জুয়েল থিফ, শিল্পী :লতা মঙ্গেশকার, ভুপিন্দর, কোরাস; গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ১৭. রুলাকে গ্যায়া সপ্না (ছবি : জুয়েল থিফ, শিল্পী :লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ১৮. উয়াহা কওন হ্যায় তেরা (ছবি : গাইড, শিল্পী :শচীন দেব বর্মন, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ১৯. কেয়া সে কেয়া হো গ্যায়া (ছবি : গাইড, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ২০. সাঁইয়া বেঈমান (ছবি : গাইড, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ২১. ফির জিনেকি তামান্না (ছবি : গাইড, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ২২. গাতা র্যািহে মেরা দিল (ছবি : গাইড, শিল্পী : কিশোর কুমার ও লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ২৩. তেরে মেরে সপ্নে (ছবি : গাইড, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ২৪. দিন ঢল যায়ে হ্যায় (ছবি : গাইড, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ২৫. চান্দ ফির নিকলা, মগর তুম না আয়ে (ছবি : পেয়িং গেস্ট, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ২৬. চুপ হ্যায় ধরতি, চুপ হ্যায় চান্দ (ছবি : হাউজ নাম্বার ফরটিফোর, শিল্পী : হেমন্ত কুমার, গীতিকার : সাহির) ২৭. তেরি দুনিয়ামে জিনেসে (ছবি : হাউজ নাম্বার ফরটিফোর, শিল্পী : হেমন্ত কুমার, গীতিকার : সাহির) ২৮. দুখি মন মেরে (ছবি : ফান্টুশ, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ২৯. খিলতে হ্যায় গুল ইয়াহা, খিলতে বিছাড়নেকো (ছবি : শার্মিলি, শিল্পী কিশোর কুমার, গীতিকার : নীরজ) ৩০. ফুলোকে রংসে (ছবি : প্রেম পূজারী, শিল্পী : কিশোর কুমার, গীতিকার : সাহির) ৩১. মন মোর হুয়া মাতওয়ালা (ছবি : আফসার, শিল্পী : সুরাইয়া, গীতিকার : নরেন্দ্র শর্মা) ৩২. সুনো গাজার কেয়া গায়ে (ছবি : বাজী, শিল্পী : গীতা দত্ত, গীতিকার : সাহির) ৩৩. জানে উয়ো ক্যায়সে লোগ থে (ছবি : পেয়াসা, শিল্পী : হেমন্ত কুমার, গীতিকার : সাহির) ৩৪. সার যো তেরা চাকরায়ে (ছবি : পেয়াসা , শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : সাহির) ৩৫. ম্যায় সিতারোকা তারানা (ছবি : চালতি কা নাম গাড়ি, শিল্পী : আশা ভোঁসলে ও কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৩৬. হাম বেখুদিমে তুমকো (ছবি : কালাপানি, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৩৭. চ্ছাজি ম্যায়নে হারি (ছবি : কালাপানি, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি ও আশা ভোঁসলে, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৩৮. লিখা হ্যায় তেরি আঁখোমে (ছবি : তিন দেবিয়া, শিল্পী : কিশোর কুমার ও লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৩৯. ক্যাহি বেখায়াল হোকার (ছবি : তিন দেবিয়া, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৪০. পিয়া তোসে ন্যায়না লাগেরে (ছবি : গাইড, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৪১. আজ ফির জিনেকি তামান্না হ্যায় (ছবি : গাইড, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৪২. গাতা র্যানহে মেরা দিল (ছবি : গাইড, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর ও কিশোর কুমার, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৪৩. তেরে বিন সুনে (ছবি : মেরি সুরত তেরি আঁখে, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি ও লতা মঙ্গেশকর, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৪৪. পুছো না ক্যায়সে (ছবি : মেরি সুরত তেরি আঁখে, শিল্পী : মান্না দে, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৪৫. ও যানে ওয়ালে হো সাকে তো (ছবি : বন্দিনী, শিল্পী : মুকেশ, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৪৬. টাক ঢুম টাক ঢুম (ছবি : বোম্বাই কা বাবু, শিল্পী : মান্না দে, কোরাস গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরি) ৪৭. তুম জিয়ো হাজার সাল (ছবি : সুজাতা, শিল্পী : আশা ভোঁসলে, কোরাস, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরি) ৪৮. সুন মেরে বন্ধুরে (ছবি : সুজাতা, শিল্পী : শচীন দেব বর্মন, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরি) ৪৯. হাওয়া ধীরে আনা (ছবি : সুজাতা, শিল্পী : গীতা দত্ত, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরি) ৫০. বাচপান কে দিন ভি কেয়া দিন (ছবি : সুজাতা, শিল্পী : গীতা দত্ত ও আশা ভোঁসলে, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরি) ৫১. খোয়া খোয়া চান্দ (ছবি :কালা বাজার, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৫২. ওয়াক্ত নে কিয়া (ছবি : কাগজ কে ফুল , শিল্পী : গীতা দত্ত, গীতিকার : কাইফি আজমি) ৫৩. চান্দসা মুখরা কিউ শরমায়া (ছবি :ইনসান জাগ উঠা, শিল্পী : আশা ভোঁসলে ও মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৫৪. আঁখোমে ক্যায়া জী (ছবি : ন’ দো গেয়ারা, শিল্পী : আশা ভোঁসলে ও কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৫৫. আরে ইয়ার মেরি তুমভি (ছবি : তিন দেবিয়া, শিল্পী : আশা ভোঁসলে ও কিশোর কুমার, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৫৬. কাভি বেখায়াল হো কার (ছবি : তিন দেবিয়া, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৫৭. এক ঘর বানাউঙ্গা (ছবি : তেরে ঘরকে সামনে, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি, গীতিকার :হাসরাত জয়পুরী) ৫৮. ইয়ে রাতে ইয়ে মওসম (ছবি : দিল্লি কা ঠাগ, শিল্পী : আশা ভোঁসলে ও কিশোর কুমার, গীতিকার : শৈলেন্দ্র) ৫৯. দেখো রুঠা না কারো (ছবি : তেরে ঘরকে সামনে, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি ও লতা মঙ্গেশকর , গীতিকার : হাসরাত জয়পুরী) ৬০. তু কাহাঁ ইয়ে বাতা (ছবি : তেরে ঘরকে সামনে, শিল্পী : মোহাম্মদ রফি , গীতিকার : হাসরাত জয়পুরী) ৬১. দিলকি মঞ্জিল (ছবি : তেরে ঘরকে সামনে, শিল্পী : আশা ভোঁসলে, গীতিকার : হাসরাত জয়পুরী) ৬২. তুম ন্ াজানে কিস জাঁহা (ছবি : সাজা, শিল্পী : লতা মঙ্গেশকর , গীতিকার : সাহির) ৬৩. না তুম হামে জানো (ছবি : বাত এক রাতকী, শিল্পী : হেমন্ত কুমার , গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) ৬৪. রাত আকেলে হ্যায় (ছবি : জুয়েল থিফ, শিল্পী : আশা ভোঁসলে , গীতিকার : মাজরুহ সুলতানপুরী) শচীন দেব বর্মনের গাওয়া কিছু হিন্দি ছবির গান ১. প্রেম কি পেয়ারি নিশানি (ছবি: তাজমহল) ২. উমীদ ভরা পন্ছি (এইট ডেইজ) ৩. বাবু বাবুরে, দিলকো বাঁচানা (এইট ডেইজ) ৪. সুন মেরে বন্ধুরে, সুন মেরে মিতোয়া (সুজাতা) ৫. ও মাঝি মেরে সাজন হ্যায় উস পার (বন্দিনী) ৬. মেধ দে পানি দে ছায়া দেরে রামা (গাইড) ৭. কাহেকো রোয়ে, চাহে যো হোয়ে (আরাধনা) ৮. মেরি দুনিয়া হ্যায় মা তেরে (তালাশ) ৯. প্রেম কে পূজারী হাম হ্যায় ( প্রেম পূজারী) ১০. ডোলি মে বিঠায়কে (অমরপ্রেম) ১১. পিয়া তুনে কিয়া কেয়ারে (জিন্দেগি জিন্দেগি) ১২. জিন্দেগি অ্যায় জিন্দেগি (জিন্দেগি জিন্দেগি) ১৩. ছোটে ছোটে সপ্নে হামার (সাগিনা) ১৪. ফুলোয়া মাঙ্গাও জারা ( তেরে মেরে সপ্নে) ছবির বাইরের কিছু হিন্দি গান ১. আজ ম্যায় সরন তুমহারি ২. বালাম মুঝসে রুঠকে ৩. চালে চালো প্রেমকে সাথী ৪. ধীরে সে যানা বাগিয়ামে ৫. ইন দিনো বাস র্যা হি হ্যায় ইয়াদ ৬. যানে ওয়ালে সুনতা যা ৭. কওন আয়া সপ্নোমে ৮. কওন নগরী যাওরে ৯. মেরি জওবন কি ১০. মেরি প্রীতম পিয়ারে ১১. মেরে শ্যাম সুনো মেরি বিনতি ১২. ন্যায়নো কো সুলঝাকে ১৩. ন্যায়েন মোরে দর্শন ভিখারি ১৪. ও সাইয়া ফুল ১৫. পিলে হরি নামকা পেয়ালা ১৬. প্রিত ম্যায় হুয়ি বদনাম ১৭. প্রীতম বুরি ভালা হ্যায় প্রীত ১৮. প্রেম কা পিন্জিরা হো গ্যায়া ১৯. প্রেম কে ইয়ে দিন-রাত না যায়ে ২০. রিমঝিম রিমঝিম ২১. সব দেস কি জনতা ২২. উড় গ্যায়া ভঁওরা কালি উদাস ৪৩ বছরের সঙ্গীত জীবনে শচীন দেব বর্মন প্রায় ২০০ বাংলা ও হিন্দি লোক সঙ্গীত, রাগপ্রধান ও ভজন- স্বকন্ঠে রেকর্ড করেন। ১৫টি বাংলা ও ৮৯টি হিন্দি ফিল্মের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সঙ্গীত চর্চার অভিজ্ঞতা নিয়ে শচীন দেবের ‘সারগম নিখাদ’ ১৯৭০ সালে কলকাতার দেশ পত্রিকায় ৯ কিস্তিতে প্রকাশিত হয়। কিছুকাল আগ পর্যন্ত আমার জ়ানা মতে বই আকারে প্রকাশিত হয় নি।

বাংলাদেশের কোন প্রকাশক ও উদ্দ্যেগী হয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারেন। অনেকদিন ধরে ইচ্ছে ছিল শচীন কে নিয়ে একটা পোষ্ট দেব। লেখাও প্রায় শেষ করে এনেছিলাম এমন সময় নেট ঘাটতে যেয়ে দেখলাম আশীষ চক্রবর্তী শচীন দেব কে নিয়ে একটি লেখা দিয়েছেন যেখানে আমার অধিকাংশ তথ্যের সাথে মিলে যায়। আমার কষ্ট অনেক কমে গেল উনার ওখান থেকে বেশ কিছু তথ্য আমি নিয়ে নিলাম। ওনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

উইকি থেকে কিছু তথ্য নিয়েছি। আর নানা জনের কিছু গবেষনা থেকে, তাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.