আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪৫ লাখ টাকার প্রেস মেশিন কিনতে খরচ পৌনে ২ কোটি টাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুর্নীতি



ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সংঘটিত নানা অনিয়মের ধারাবাহিকতায় এবার বেরিয়ে এসেছে প্রেস মেশিন কেনার নামে কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। ৪৫ লাখ টাকা দামের প্রেস মেশিন কিনতে এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা খরচের মাধ্যমে এ মোটা অঙ্কের টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ, ব্লাংক রিসিভিং ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণ এবং কৌশলে আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষাসহ নানা জালিয়াতি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) প্রেসের একটি মেশিন বাবদ এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। অথচ ওই মেশিনের দাম ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার বেশি হতে পারে না বলে রাজধানীর কয়েক প্রেস মালিক জানিয়েছেন।

তা ছাড়া দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে নিম্নমানের কমদামি মেশিন বুঝে রাখার জন্য মেশিন আসার আগেই এবং মেশিন না দেখে ব্ল্যাঙ্ক রিসিভিং ফরমে রিসিভিং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে রাখে ইফা কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, ব্ল্যাংক রিসিভিং ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নেয়ার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি পরিবর্তন করে সেখানে ডিজির অনুগত লোককে বসানো হয়েছে। সূত্রমতে, দরপত্রে দামি মেশিন কেনার কথা বলা হলেও মেশিনের যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমদামি মেশিন বুঝিয়ে দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এদিকে যেদিন মেশিন কেনার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে সেদিনই আবার মেশিন বুঝে পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে কাগজে-কলমে। ২৩ মে মেশিন কেনার জন্য গ্লোবাল কালার স্ক্যান নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মেশিন সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

গ্লোবাল কালার স্ক্যানের চালানমূলে মেশিন সরবরাহের তারিখও লেখা আছে ২৩ মে। এটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, ১০ মার্চ ইফা প্রেসের জন্য একটি ওএমআর মেশিন, একটি ফয়েল প্রিন্টিং মেশিন, টু ইউনিট হাই স্পিড ফ্লাটবেড নেটওয়ার্ক অ্যান্ড স্ক্যানার এবং একটি ওয়ান ইউনিট সুইং মেশিন ক্রয়ের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফাউন্ডেশনের পছন্দের প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ায় ঠুনকো অজুহাতে টেন্ডার বাতিল করে ২৬ এপ্রিল আবার টেন্ডার করা হয়। টেন্ডারে অংশ নেয়া ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় গ্রাফিক্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড (এক কোটি ৬২ লাখ ৭১ হাজার টাকা)।

দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয় গ্লোবাল কালার স্ক্যান (এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা)। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা গ্রাফিক্স অ্যাসোসিয়েটসকে কাজ না দিয়ে কাজ দেয়া হয় গ্লোবাল কালার স্ক্যানকে। আর গ্লোবাল কালার স্ক্যানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য একের পর এক জালিয়াতির আশ্রয় নেয় ইফা কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, গ্রাফিক্স কর্তৃপক্ষ ফাউন্ডেশন বরাবর মেশিনের যে ক্যাটালগ জমা দিয়েছে তাতে কোথাও ওএমআর লেখা নেই। কিন্তু গ্লোবাল কালার স্ক্যান যে ক্যাটালগ জমা দিয়েছে তাতে ওএমআর কথাটি লেখা আছে।

ফাউন্ডেশন যেহেতু দরপত্রে ওএমআর মেশিন কেনার কথা উল্লেখ করেছে এবং গ্লোবালের ক্যাটালগেও ওএমআর লেখা আছে তাই তাদেরই কার্যাদেশ দেয় ইফা। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গ্লোবাল কালার স্ক্যান মিনি অফসেট মেশিনের জন্য যে ক্যাটালগ জমা দিয়েছে তাতে ওএমআর কথাটি লেখা থাকলেও যে প্রতিষ্ঠানের ক্যাটালগ তারা জমা দিয়েছে তাদের সেই মূল ক্যাটালগে কোথাও ওএমআর লেখা নেই। গ্লোবাল ভারতের তামিলনাড়ুর অটোপ্রিন্ট মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স প্রতিষ্ঠানের ক্যাটালগ জমা দিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, গ্লোবাল যে মেশিনের ক্যাটালগ জমা দিয়েছে সেই মেশিনের ক্যাটালগে ওএমআর লেখা নেই। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ওএমআর লেখা ক্যাটালগটি স্থানীয়ভাবে টেম্পারিং করে মুদ্রণ করা হয়েছে।

যেহেতু ফাউন্ডেশন ও এমআর মেশিন চেয়েছে তাই সাধারণ মিনি অফসেট মেশিনের ক্যাটালগে ওএমআর লিখে জমা দেয়া হয়েছে। গ্লোবাল কালার স্ক্যান প্রথম দরপত্রে যে ক্যাটালগ জমা দিয়েছিল, তাতে একই মেশিনের ক্যাটালগ জমা দিলেও সে ক্যাটালগে ওএমআর লেখা ছিল না। সাধারণ মিনি অফসেট মেশিন সম্পর্কে অভিজ্ঞরা জানিয়েছে, বিশ্বের কোনো কোম্পানির সাধারণ মিনি অফসেট মেশিনের ক্যাটালগে ওএমআর লেখা থাকে না। ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, ইফা কর্তৃপক্ষ দরপত্রে ওএমআর মেশিন কেনার কথা বললেও মেশিনের যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সাধারণ মিনি অফসেট মেশিনের বৈশিষ্ট্য। দরপত্রে ওএমআর মেশিনের কথা বলে বিরাট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য সাধারণ মিনি অফসেট মেশিন কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গ্রাফিক্স অ্যাসোসিয়েটসের ক্যাটালগে ওএমআর কথাটি লেখা না থাকার কারণে তাদের নন-রেসপনসিভ করা হয়েছে, যদিও তারা সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল। প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ মেশিনের ক্যাটালগে ওএমআর লিখে গ্লোবাল কালার স্ক্যানকে কাজ দেয়ার অভিযোগ এনে ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গ্রাফিক্স অ্যাসোসিয়েটস। এ বিষয়ে দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে এরই মধ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত ১২ জুলাই থেকে ৩ মাসের জন্য মেশিন কেনার কার্যাদেশ দেয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ কৌশলে এ নির্দেশনা উপেক্ষা করতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে মেশিন বুঝে পেলেও ৩০ জুন স্বাক্ষর দিয়ে ব্ল্যাংক রিসিভিং ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে রাখে।

মেশিন আসার আগেই এবং মেশিনপত্র না দেখে ব্ল্যাংক রিসিভিং ফরমে স্বাক্ষর দেয়া বাবদ কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হয়েছে বলে ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে। প্রেসে মেশিন কেনা বাবদ দুর্নীতির সঙ্গে খোদ ফাউন্ডেশনের ডিজি ছাড়াও ছাপাখানার উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েক কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক হালিম হোসেন খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, যা কিছু হোক তার ডকুমেন্ট উড়ে যায়নি, সবই আছে। দৈনিক পত্রিকা খেকে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।