আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুধ গ্রহ কাহিনী...

আমি একজন মেকানিক্যাল ইন্জ্ঞিনিয়ার

বুধ গ্রহের তাপমাত্রা আমাদের পৃথিবীর মতো স্থিতিশীল নয়। কারণ পৃথিবীর মতো বুধে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। বুধপৃষ্ঠদেশের গড় তাপমাত্রা ৪৫২ কেলভিন বা ৩৫৩.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৭৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় টিন ও সিসা পর্যন্ত গলে যেতে পারে। তবে এই মান স্থানভেদে ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিনে উঠানামা করে।

এই হিসাব থেকে বোঝা যায় বুধপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬১০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করে যেখানে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৮০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। একে তো বুধে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, তার ওপর পৃথিবীর তুলনায় বুধপৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির তীব্রতা ৬.৫ গুণ বেশি। তবে এই সমানুপাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি সৌর ধ্রুবক রয়েছে যার মান ৯.১৩ কিলোওয়াট/বর্গ মি.। বুধের বায়ুমণ্ডলের অভাবে এ তাপমাত্রা রাতে মাইনাস ১৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত নেমে যায়। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হচ্ছে অর্ধ সৌরবিন্দু এবং শীতলতম স্থান হলো এর মেরুর কাছে অবস্থিত খাদসমূহের নিম্নবিন্দু।

মজার বিষয়, বুধপৃষ্ঠের এত উচ্চ তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও বুধে বরফ থাকতে পারে। বুধের মেরুর কাছে অবস্থিত কিছু গভীর খাদের সমতলে সূর্য রশ্মি কখনো সরাসরি পেঁৗছায় না। এতে সেখানকার খাদগুলোর তাপমাত্রা সবসময়ই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। এর ফলে সেখানে বরফের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী থেকে বিজ্ঞানীদের প্রেরিত রাডার সংকেত বুধগ্রহের মেরুর সনি্নকটে অবস্থিত বরফ খণ্ড থেকে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে।

তবে এই সংকেত প্রতিফলনের কারণ বরফ ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এটি বরফ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ধারণা করা হয়, বুধ গ্রহের মেরুর সনি্নকটে অবস্থিত খাদগুলোতে বরফের আবরণের পুরুত্ব মাত্র কয়েক মিটার। আশা করা হচ্ছে, সেখানে ১০১৪ থেকে ১০১৫ কেজির মতো বরফ রয়েছে। পৃথিবী ও মঙ্গলের সঙ্গে এই বরফের পরিমাণের তুলনা করলে দেখা যাবে_ পৃথিবীর এন্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ ৪১০১৮ কেজি আর মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে বরফের পরিমাণ প্রায় ১০১৬ কেজি।

বুধ গ্রহে বরফের উৎপত্তির কারণ এখনো অজানা, তবে দুটি সম্ভাব্য কারণ ব্যখ্যা করা হয়। গ্রহের অভ্যন্তরভাগ থেকে পানি চুবিয়ে চুবিয়ে বেরিয়ে আসে এবং ঠাণ্ডায় জমে বরফে পরিণত হয়। ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে জমা হওয়া পানি ও অন্য বস্তু থেকে বরফের উপাদান। প্রধান গ্রহগুলোর মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে উৎকেন্দ্রিক। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ৪ কোটি ৬০ লাখ থেকে ৭ কোটি কিলোমিটারের মধ্যে।

নিজের কক্ষপথে চারদিকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ৮৮ দিন। চিত্রটিতে বুধের কক্ষপথের ওপর উৎকেন্দ্রিকতার প্রভাব দেখানো হয়েছে। আমরা জানি, বুধের আবর্তন কাল ৮৮ দিন। কিন্তু পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যায়, এর কক্ষপথের ধীর পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বুধের অনুসূর বিন্দুর পরিবর্তনের মাধ্যমে।

এ ঘটনাটি বুধের অনুসূরের অগ্রগমন নামে চিহ্নিত। এর পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ১ ডিগ্রি ৩৩'২০''। এ অগ্রগমনের একটি কারণ হচ্ছে ভূ-কক্ষের বিষুব বিন্দুর অগ্রগমন। এই কারণটিই মুখ্য। এছাড়া শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ অগ্রগমনের কারণ হচ্ছে অন্যান্য গ্রহের আকর্ষণ।

প্রতি একশ বছরে বুধের অনুসূর বিন্দু ৪৩ পরিমাণ অগ্রসর হয়। নিউটনীয় বলবিজ্ঞানের সাহায্যে এর কোনো ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব হয়নি। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করতেন বুধ ও সূর্যের মাঝে অন্য কোনো গ্রহ আছে। পরবর্তীতে আলবার্ট আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে বলেন, সূর্যের অবস্থিতির জন্য স্থান-কাল মহাশূন্যে একটি বক্রতার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ নিউটনীয় নীতি এই বক্রতারই ফল। সূর্যের চারদিকে ওই বক্রপথে যেতে বুধের কক্ষের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে এর অনুসূর বিন্দুর অগ্রগমন ঘটে।

এ তত্ত্ব অনুসারে অগ্রগমনের পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ৪৩.০৩ যা মূল পরিমাণের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলে যায়। তাই বুধের অনুসূরের অগ্রগমন বর্তমানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের একটি প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।