আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উইকিলিকসে 'বাংলাদেশ' প্রকাশ্য - 'জঙ্গিদের মূলধারায় আনতে চেয়েছিলো ডিজিএফআই'

‘ন্যায় যুদ্ধে বাঙালি’
উইকিলিকসের ফাঁস করে দেওয়া মার্কিন গোপন নথিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই) জঙ্গিবাদী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির (হুজি) সদস্যদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সমর্থন দিয়েছিলো। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ডিজিএফআই'র তৎকালীন নেতৃত্ব এ রকম তৎপরতা চালিয়েছিলো বলে মার্কিন নথিতে লেখা রয়েছে। নথিতে বাংলাদেশের মার্কিন স্থাপনায় হামলার হুমকিতে ভয় পাওয়ার কথাও আছে। আছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের ওপর নজরদারির অভিপ্রায়। সে সময়কার নথিতে বলা হচ্ছে, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) সদ্য আত্মপ্রকাশ করা একটি দল।

ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) এর জ্যেষ্ঠ সদস্যরা নতুন এই দল গঠন করে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই) হুজি-বিকে মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আইডিপি গঠনে সমর্থন দেয় এবং এর কর্মকাণ্ড তীক্ষèভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস আইডিপি গঠনের জোর বিরোধিতা করে। দূতাবাসের আশঙ্কা ছিলো, এই দলটি মার্কিন মিশন ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা ও এর প্রতি সমর্থন দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে হুজি-বি তার একটি রাজনৈতিক শাখা গঠনের সর্বাত্মক চেষ্টা করছিলো।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, এই দল গঠন করে উগ্রপন্থীরা একটি মধ্যপন্থী সংগঠনের লেবাসে সহজেই জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। মার্কিন দূতাবাসের গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা খালেদা জিয়ার ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। হুজি-বি এর বর্তমান সদস্যরা সম্ভবত বিষ্ফোরক বা বোমা তৈরি ও ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জন করেছে। সংগঠনটি তার পশ্চিমা ও ভারতবিরোধী অবস্থান প্রকাশ্যেই জানান দিয়েছে। হুজি-বি এর ক্ষমতা সম্পর্কে ডিজিএফআই, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও এনএসআই'র মূল্যায়নে মতান্তর সুস্পষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্র মার্চের প্রথম দিকে হুজি-বি কে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর র‌্যাবের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, হুজির নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় এর নেতৃত্ব কাঠামো এবং ক্ষমতা বলয় অনেকখানি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর তীক্ষ্ম নজরদারির কারণে সংগঠনটি জঙ্গি তৎপরতা চালাতে সক্ষম হবে না। ডিজিএফআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনার জন্য সংগঠনটি হুমকিস্বরূপ নয়। অবশ্য এনএসআই'র প্রতিবেদনে বলা হয়, হুজি-বি তাদের লক্ষ্যস্থল এবং ঢাকায় মার্কিন স্থাপনায় হামলা চালাতে এখনো সক্ষম।

ঢাকায় কূটনৈতিক পাড়ায় বিদেশিদের ওপর হামলার আশঙ্কা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় কয়েকটি কূটনৈতিক মিশনে হামলার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিলো। উইকিলিকসের ফাঁস করে দেওয়া মার্কিন গোপন নথিতে কুয়েত ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা 'দ্য রিভাইভাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (আরআইএইচএস) বিশেষ করে বাংলাদেশে এর শাখাগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিক ও'ব্রিয়েন অর্থ জালিয়াতি রোধ এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তহবিলের (এমএমএল/সিটিএফ) বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কুয়েত সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি কুয়েত ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা 'দ্য রিভাইভাল অফ ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি (আরআইএইচএস) বিশেষ করে বাংলাদেশে এর শাখাগুলোর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা জানান।

ও'ব্রিয়েন আরআইএইচএস-এর শাখাগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। তিনি আরো জানান, আরআইএইচএস-এর শাখাগুলো যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে সে সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ ও তা কুয়েত সরকারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য মার্কিন সরকার বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। তবে বাংলাদেশ বলছে, মার্কিন সরকার যে সব অভিযোগ উত্থাপন করেছে তার সঙ্গে তাদের মতের মিল নেই। নথিগুলোতে যুক্তরাজ্যে মুসলিম স¤প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,দেশটিতে সাত বছরে মুসলিমদের সংখ্যা ১৬ লাখ থেকে বেড়ে ২০ লাখে দাঁড়িয়েছে।

মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার এ ভাবে চলতে থাকলে ২০১১ সালে দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা ২২ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যে সার্বিকভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে তবে বৃদ্ধির হার কম। দেশটিতে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর তালিকায় নিচের দিক থেকে মুসলিমরা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই জন্ম যুক্তরাজ্যের বাইরে। ৪৬ শতাংশের জন্ম যুক্তরাজ্যে।

৩৯ শতাংশের জন্ম এশিয়ায়। ৯ শতাংশের জন্ম বাংলাদেশে। ৭৪ শতাংশ মুসলিম এশীয় বংশোদ্ভূত। এর মধ্যে বাংলাদেশি ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওপর নজরদারির অভিপ্রায়ের কথা রয়েছে মার্কিন সরকারের গোপন এই নথিতে।

জাতিসংঘে যারা কাজ করতে যাবেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদানের বিষয়ে বিশ্ব সংস্থায় মার্কিন দূতাবাসের গবেষণা শাখাকে প্রতিবেদন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের যোগদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের নাম, বিজনেস কার্ডে উল্লেখ নাম, পদবী ও অন্যান্য তথ্য, টেলিফোন, সেল ফোন, পেজার ও ফ্যাক্সের সংখ্যা, যোগাযোগ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য, টেলিফোন নম্বরসমূহ (সম্ভব হলে সিডি বা ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে), ই-মেইলের তালিকা; ইন্টারনেট ও ইন্ট্রানেট যোগাযোগ, ইন্টারনেট ই-মেইল ঠিকানাসমূহ, ওয়েবসাইট ঠিকানা-ইউআরএল, ক্রেডিট কার্ড একাউন্ট নম্বরসমূহ, ঘনঘন বিমান যাতায়াতের একাউন্ট নম্বর (ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লাইয়ার নম্বর), কর্ম তালিকা এবং পরিচয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য। সূত্র: Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.