আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মলম পার্টি, সিএনজি, এবং আমি

সন্দেহের আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকাও অনেক ভাল।

১৬ই ডিসেম্বর রাত ১২ টা। একটা কাজে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল। আমি দাড়িয়ে আছি কাঁচপুর বাস ষ্টেশনে, বাসের জন্য অপেক্ষা। প্রায় আধা ঘণ্টা দাড়িয়ে থেকেও বাসের দেখা নেই, হয়তবা শীতের রাত তাই।

শেষে বিরক্ত হয়ে সিএনজির কাছে গেলাম। তিনটা সিএনজি পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে। তিনটাই খালি। আমি জানি এখান থেকে ৫ জন করে শেয়ারের সিএনজি আমার গন্তব্যস্থল ভূলতা যায়। আমি এর আগেও কয়েকবার গিয়েছি।

তো আমি মাঝখানের সিএনজির দিকে এগিয়ে গেলাম। সেই সিএনজিতে আগেই দু'জন লোক বসে আছে। তাদেরকে আমি ওঠতে দেখিনি। একটু সন্দেহ হল কিন্তু তেমন পাত্তা দিলাম না। কারন আমার কাছে তেমন কিছু নেই।

থাকার মধ্যে ২ শত টাকা এমনকি মোবাইলটাও নেই। চিন্তা করলাম যদি সিএনজিতে একা যাই তাতেও দুশ টাকাই লাগবে কিন্তু এরা যদি ছিনতাইকারী না হয় তাহলেতো ৩০ টাকায় হয়ে যাবে। যাই হোক গিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলাম। আমি মাঝখানে গিয়ে বসলাম কারন খুব শীত লাগছিল আর আমার গায়ে একটা পাতলা শার্ট ছাড়া কিছুই নেই। সিএনজি ভরতে আরও ২ জন দরকার।

আরও দুইজন আসল এবং জিজ্ঞেস করল, "ভুলতা কত করে। " ড্রাইভার জবাব দিল, "৩০ টাকা জনপ্রতি। " তারা বলল, "২০ টাকায় যাবেন?" সাধারণত ভাড়া ২০ টাকাই। চালক তাদের মানা করে দিল এবং সিএনজি স্টার্ট দিল বাকি ২ জন ছাড়াই। তখন আমি মুচকি হাসলাম আর মনে মনে বললাম যে আজকে আমার খবর আছে।

১ কিলোমিটার যাওয়ার পর আমার বাম পাশের জন হাত পিছনে নিয়ে রাখল। একটু নির্জন যায়গা আসতেই বামপাশের জন আমার মুখ আর ডানপাশের জন হাত চেপে ধরল। আমার মানসিক প্রস্তুতি থাকায় তেমন ভয় পেলাম না। কিন্তু একটু আশঙ্কা ছিল যদি অজ্ঞান করে তাহলে একটা বিশ্রী ব্যপার হবে। আনুমানিক ১০-১৫ সেকেন্ড যাওয়ার পর আমি মুখ চাপা অবস্থায়ই বললাম, "আমাকে কিছু করতে হবেনা আমি যা আছে তা বের করে দিচ্ছি।

" তখন আমার মুখ থেকে হাত সরানো হল এই শর্তে যে তারাও আমার কিছু করবেনা আর আমিও কোন ঝামেলা করবনা। বাম পাশেরজন আমার বা পকেটে হাত ঢুকাল কিন্তু কিছুই পেল না। তখন সে জিজ্ঞাসা করল, "তোমার কাছে কত আছে?" "২০০ টাকা" আমার জবাব। "ঠিকআছে মানিব্যগ আমার কাছে দাও" বাপাশের জন বলল। এতক্ষণ পর্যন্ত চালক বা ডানপাশেরজন একটা কথাও বলেনি।

আমি তার কথামত মানিব্যগ এগিয়ে দিলাম। সে আমার মানিব্যগ তন্নতন্ন করে খুজেও ২০০ টাকা ছাড়া আর কিছু পেলনা। তারপর আমার হাতে তা ফেরত দিল ATM card সহ। তারপর আমার সবগুলো পকেট খুঁজে দেখল কিন্তু আর কিছুই পেলনা। "আমাকে ৩০ টাকা দেন রিক্সা ভাড়া" আমি সাহস করে বললাম।

এই রাতে হেটে যেতে পারবনা। কিন্তু আশ্চর্য আমাকে ঠিকই ৩০ টাকা দেওয়া হল। "তুমি মোবাইল ইউজ করনা ?" আগের জনই আবার জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম যে কয়েকদিন আগে চুরি গেছে। "ছিনতাই ?" এই প্রথম ডানপাশেরজন কথা বলল।

"না চুরি। আপনাদের মত সাহসী না। " আমি একটু তেল মারলাম। যদিও জানি এরা ভিতুর ডিম কারন এখন পর্যন্ত আমার হাত ছাড়তে সাহস পাচ্ছেনা। তখন আমি খেজুরে আলাপ জুড়ে দিলাম।

"বাড়ি কোথায়" "ধানমন্ডি" (ডাহা মিথ্যা কথা। শহর ছেড়ে শহরতলীতে। ) "আমার পরে আর কয় খেপ দিবেন" "৩ টা" "যদি সেই দুই লোক উঠত তাহলে কি করতেন" "ওদের মোয়া বানাইতাম। পিছনে চাইয়া দেহ আমাগো আরেক গাড়ি। " প্রথমবারের মত চালকের জবাব।

আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম চালক মিথ্যা বলছেনা। "তোমারে কোনে নামাইলে চলব? এককাজ কর বরপা নেমে যাও। " চালক আবার বলল। "কি বলেন, আমি এই শীতের মধ্যে এত রাস্তা হেটেহেটে যাব নাকি?" আমি আতকে উঠে বললাম। "ব্যাটা কিসের খবর আনছস? এর কাছে নাকি হাজার হাজার টাকা? ২টা গাড়ি, ৬ জন লোক আর মাত্র ২০০ টাকা।

আমরা ছ্যাঁচোর না। নামার সময় এর টাকা এরে দিয়া দিবি। " চালক বলল কিন্তু কোনজনকে উদ্দেশ্য করে তা বুঝলাম না। "কি করবেন আপনাদের ভাগ্যই খারাপ। " আমি টিপ্পনী কাটলাম।

"তুমি কর কি?" "ছাত্র" জবাব দেয়ার সাথে সাথে আমার খেয়াল হল আমরা বরপা ছাড়িয়ে এসেছি আমার আমার বাসায় যাওয়ার একটা শর্টকাট রাস্তা আছে কিন্তু ১ কিলোমিটার যেতে হবে পায়ে হেটে। "আমাকে একটু সামনে নামিয়ে দেন" আমি বললাম। "ঠিক আছে। এই দেখত পিছনে ক্লিয়ার আছে কিনা?" ডানপাশেরজন পিছনে দেখে বলল, "না, সামনে থেকে উল্টা নেন" চালক বলল, " সম্ভব না, সামনে পুলিশ চেকপোষ্ট আছে। " তারপর চালক আবার u-turn নিয়ে বরপার দিকে যেতে লাগল।

"ভাল করে লেখাপড়া করবে" ডানপাশেরজন জ্ঞ্যান দিল। আমি মনে মনে বললাম, শালা তোরা এই কাজ করে বেড়াস......... আবার u-turn নিয়ে ভুলতার দিকে যাচ্ছিল সিএনজি। শেষে আমার শর্টকাট রাস্তার কাছে এসে আবার সিএনজি u-turn নিল। বামপাশের জন পিছনে দেখে নিয়ে বলল, "বামে সাইট করে নামায় দেন। " আমি চিন্তা করলাম নেমেই নাম্বারটা দেখতে হবে।

তারপর মনে পড়ল শালারা নামানোর আগে চোখে মলম দেয়। মনে পরা মাত্র আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম আর সাথে সাথে বামপাশেরজন চোখের পাতায় মলম ঘষে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলাম যে পানি দিতে হবে কিনা। "ঐ যে পানি" বলে সিএনজি বেরিয়ে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষন পরে চোখ খুলে দেখলাম রাস্তার পাশে একটা পুকুর, আমিও সাথেসাথে নিচে নেমে চোখে পানি দিতেই শুরু হল তীব্র জ্বলুনি।

পাতার উপরের মলম ভিতরে যেতেই এই বিপত্তি। চোখ ধুয়ে উপরে উঠে এলাম। বাঁ পাশ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম আর একটু পরেই ভুলতাগামী "মেঘলা" বাস পেয়ে গেলাম, আর হাঁটতে হলনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।