আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২২ ক্যারেটের ২ ভরি স্বর্ণ এবং আমি ..................।

গত ঈদুল আযহার পর বাড়ি থেকে ঢাকা আসি । এর পর অফিসে কাজের চাপ এতো বৃদ্ধি পায় যে কোন ভাবে ছুটি পাচ্ছিলাম না বাড়ি যাওয়ার জন্য । অবশেষে ২০ ফেব্রুয়ারি আমি বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাই। কিন্তু চিন্তায় পড়ে যাই কিভাবে যাবো। আমার বাড়ি কুমিল্লা ।

কুমিল্লা যাওয়ার পথে দাঊদকান্দি এবং মেঘনা ব্রিজ এর মেরামত এর কাজ চলতেছে। একবার ভাবলাম ট্রেন এ যাবো পরে চিন্তা করলাম একসাথে সরকারি তিনদিন ছুটি ট্রেনে ভিড় হবে, দাঁড়িয়ে থাকতে হবে পুরু রাস্তায়। পরে বাসা থেকে বের হলাম সায়দাবাদ এর উদ্দেশ্যে । যথারীতি মিরপুর থেকে বাসে উঠলাম বিকাল তিনটায় । কিন্তু শাহবাগ আন্দোলন এর কারণে গাড়ি কাঁটাবন মোড় দিয়ে চলে যায় ।

এমন ভয়াবহ জ্যাম গাড়ি কোনভাবেই চলছেনা। BUET এর সামনে আসলে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম । প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর গুলিস্থান পোঁছাই। এরপর রিক্সা নেই। সায়দাবাদ পর্যন্ত ৩০ টাকা।

রিক্সায় উঠে বসি । রিক্সা দুই মিনিট চলার পর হঠাৎ রাস্তায় দেখি দশ টাকার একটি নোট রাবার দিয়ে প্যাঁচানো । রিক্সাওলা বলল স্যার নিবো । আমি বললাম নেও। সে টাকা থেকে রাবার খুলে দেখে একটি চিঠি ।

সে বলল স্যার পড়েন তো এর মধ্যে কি লিখা আছে। আমি চিঠি পড়ে দেখি এর মধ্যে লিখা আছে, এক ব্যক্তি তার বড় মেয়েকে দিয়ে ২২ ক্যারেটের ২ ভরি স্বর্নের বার পাঠিয়েছে অন্য জুয়েলারর্স এ লকেট সহ দুটি চেইন বানানোর জন্য । তারপর রিক্সাওলা আমাকে স্বর্নের বারটি দেখায়। আমিতো প্রথমে অবাক । পরে ভাবলাম গরিব মানুষ পেয়েছে ।

ওর কাজে লাগবে। রিক্সাওলা বলল স্যার এটার দাম কত হবে। আমি বললাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হবে। সে বলে স্যার ভাল করে দেখেন এর মধ্যে ঠিকানা লিখা আছে কিনা । আমি দেখলাম কোন ঠিকানা লিখা নাই ।

আমি বললাম তুমি গাড়ি চালাও । কিন্তু সে আমার কথা বিশ্বাস করলো না। সে আমার কাছ থেকে চিঠি নিয়ে রাস্তার একটা লোককে চিঠিটা দেখায় । রাস্তার লোকটি চিঠি পড়ে বলে আমি বিক্রি করে দিব। আমার বুঝার বাকি রইলো না যে এই লোকটি ধান্দাবাজ ।

আমি রিক্সাওলাকে ও রাস্তার লোকটিকে দমকি দিলাম । তারপর রিক্সাওলাকে বললাম তুমি রিক্সা চালাও। মনে মনে শুধু একটি কথা ভাবলাম কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল রাখা যায় । ভাবনা গুলো এলোমেলো হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর রিক্সাওলা আবার জিজ্ঞাসা করে স্যার এটার দাম কত।

আমি বললাম । ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তখন রিক্সার গতি কমে যায় , সে বলে স্যার আপনি বাসে চলে যান । আমাকে টাকা দেওয়া লাগবে না। আমি আবার রিক্সা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম।

আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পেরেছি । কারণ আমি হয়তো পাঁচ দশ হাজার টাকা দিলে দুই ভরি আমার হয়ে যেত। আল্লাহর কাছে হাজার শোকরিয়া , আমি লোভ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছি। এই ঘটনা যখন আমি অনেকের সাথে শেয়ার করি । কেউ বলেছে আমি বোকামি করছি, কেউ বলেছে আমি ভালো করেছি।

........................ । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।