আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই সব দিনরাত্রি

~ ভাষা হোক উন্মুক্ত ~
দাদীর আঁচলের গিটটা ধরে পুকুরপাড়ে গিয়ে দাড়িয়েছি। পাড়ে আর জলের মাঝে খেলা করছে শত খানেক হাঁস। কোনটা সাদা, কোনটা ছাই রঙের, কোনটা কালো। দাদীর হাতে গামলা ভরা চালের কুড়া দিয়ে মাখানো ভাত। কয়েকটা হাঁস দাদীকে দেখা মাত্র এগিয়ে আসতে শুরু করলো।

দাদী তখন বাকি গুলোকে ডাকলেন "আয় ... তই তই তই"। আলোড়ন পড়ে গেল পুকুরের পানিতে। হাঁস গুলো দৌড়ে, কয়েকটা আবার উড়ে, একে অন্যের পিঠের ওপর দিয়ে ছুটে এল দাদীর দিকে। আমি ভয়ে দাদীকে জাপটে ধরে তার পেছনে গিয়ে লুকোলাম। দাদী হাতের গামলাটা নামিয়ে রেখে আমার হাত ধরে একটু সরে দাঁড়ালেন।

বললেন - "তুমি ছেলে মানুষ না? ছেলে মানুষ এত ভয় পায়"? তাতেও আমার ভয় কাটেনা, হাঁস যদি তার এত্তবড় ঠোট দিয়ে কামড়ে দেয় বয়স তখন কত হবে? পাঁচ কিংবা ছয়? নিশুতি রাত। প্রচন্ড ঠান্ডা। বাড়ীর উঠোনে পোড়া মাটির বড় গামলাটায় আগুন জ্বেলে তার চারপাশে বসে আছি আমরা। আমরা মানে আমি, মা বাবা, ছোট চাচা, ফুফু, দাদু দাদী আরও কে কে যেন। আমি বসেছি দাদুর কোলে।

মা'র কোলে ছোট্ট বোনটা, ঘুমিয়ে গেছে মনে হয়। দাদী তার ছোট মাটির চুলাটায় পিঠে ভেজে যাচ্ছেন, ভাজা হতেই তুলে দিচ্ছেন কারও না কারও পাতে। আমাকেও দিয়েছেন একটা, গরমে হাত ছোঁয়াতে পারছিনা আমি, অথচ সবাই খাচ্ছে মজা করে। দাদু বুঝতে পারলেন আমার সমস্যাটা। আমার পাত থেকে পিঠে ছিড়ে ফু দিয়ে জুড়িয়ে এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।

আমি ভয়ে ভয়ে পিঠের কোণাটা ধরে দেখলাম, নাহ, ঠান্ডা হয়ে গেছে। তারপর গোটা টুকরোটাই একবারে মুখে ভরে দিলাম। সবাই হেসে উঠলো আমার পিঠে খাওয়া দেখে। দাদীর পানের বাটাটা আমার কাছে একটা জাদুর সিন্দুক বলে মনে হতো। কত কত জিনিস যে ভেতরে।

পান, শুপারী, চুন, খয়ের, জর্দা, তামাক পাতা, পানের আট দশ রকমের মশলা, চুন খাবার জন্য রাখা পানের বোটা, একটা ছোট কাঁচি আরও কত কি। আমার লোভ ছিল পানের মিষ্টি মশলাটার উপর। দাদী পান সাজতেন এক সাথে সাত আটটা করে। একদিন বায়না ধরলাম আমিও পান খাব। দাদি আমাকে ছোট্ট করে একটা পান বানিয়ে দিলেন, কিন্তু অন্য পানগুলোতে যে সব জিনিস দিলেন, আমারটাতে সে সব গুলো দিলেন না, শুধু পান মশলা দিলেন।

আমি বললাম - "ও দাদী, ওই খেয়েরীটা রঙেরটা দেন নাই তো, আর এই চুনও দেন নাই"। দাদী হেসে বললেন - ওগুলা বড় মানুষ খায়, ছোটরা শুধু মশলা দেয়া পান খায়, তুমি বড় হলে এইগুলা দিয়ে খাবা"। আমি ভাল বাবুর মত ঘাড় কাত করে আমার পানটা মুখে ঢুকিয়ে দেই। অলস অবসরে মাঝে মাঝে মন চলে যায় সুদুর অতীতে। খুব সাধারণ কোন ঘটনা অথবা পরিচিত কোন শব্দ আমাকে কয়েক ঘন্টার জন্য সেই অতীতে ছোট্টটি করে আটকে রাখে।

কিছুতেই মাথা থেকে যায়না এসব স্মৃতি। আমার এই ব্লগটা উৎসর্গ করলাম ছোট্ট আপুনি, নতুন ব্লগার রাজকুমারী তই কে। ওর তই নামটা দেখেই নস্টালজিয়ার শুরু। সবাইকে শুভেচ্ছা ... ভাল থাকবেন সবাই
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।