আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এল খুশির ঈদ

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাড়ায়-মহল্লায় বাজতে থাকে এই উৎসবের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই গানটি- ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’।
এর সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিল সিয়াম সাধনার রমজান মাস, সেই সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি।
ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের এই উৎসবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।
সরকারি ছুটিতে নগর ছেড়ে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী অনেকে প্রতিবারের মতো এবারো সপরিবারে গেছেন গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে।

এই যাত্রায় অনেক দুর্ভোগও ছিল।
তবে সব দুর্ভোগ মেনে নিয়েই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার খবর শোনার পর উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।
আকাশ মেঘলা থাকায় রাজধানীতে নতুন চাঁদ কেউ দেখতে পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। তবে সন্ধ্যার পরপরই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদ দেখার খবর আসতে থাকে।
তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর সভায় বসা চাঁদ দেখা কমিটিকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

 
বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে খবর নিয়ে সংশয় কাটিয়ে সন্ধ্যায় সোয়া ৭টায় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭-১০ মিনিটে বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। শুক্রবার থেকে পবিত্র শাওয়াল মাস গণনা শুরু হবে। শুক্রবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ”
ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কমিটির সভার পর এই ঘোষণার সঙ্গে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছাও জানান প্রতিমন্ত্রী।
মধ্যপ্রাচ্যে বুধবার শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জর্ডান, মিশর, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় ঈদ উদযাপিত হয়েছে।


রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রীর শুভেচ্ছা
ঈদুল ফিতরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও  বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ঈদ সব মানুষের মধ্যে গড়ে তোলে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন। এদিন ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয় এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয়।
“শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ গঠনে ঈদ-উল-ফিতরের আবেদন তাই চিরন্তন। ”
প্রধানমন্ত্রী জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


বাণীতে তিনি বলেন, ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে সব মানুষকে।
ঈদের দিন শুক্রবার সকালে গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
বিরোধীদলীয় নেতা ঈদের শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন, “হানাহানি, হিংসা,বিদ্বেষ ও তিক্ততার গ্লানি থেকে মানুষের মনকে এক স্বর্গীয় শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনা দান করে ঈদুল ফিতরের উৎসব। তাই আজকের এই উৎসবের দিনে প্রতিটি মুসলমান নর-নারী  সৌহার্দ্যরে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আনন্দকে একত্রে উপভোগ করতে হবে।


ঈদের দিন সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট জনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ঈদ জামাত
দেশের কোটি কোটি মুসলিম সারাদেশে অসংখ্য স্থানে ঈদগাহে কিংবা মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ একসঙ্গে পড়বেন।
দেশের প্রধান ঈদ জামাত হবে সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে। রাষ্ট্রপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠেয় এই জামাতে শরিক হবেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে এক ঘণ্টা অন্তর পাঁচটি ঈদ জামাত হবে।


প্রতিবারের মত এবারো দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতটি হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদের ইমামতিতে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় এই জামাতে অংশ নেবে লাখো মুসল্লি।
বিপুল সংখ্যক মুসল্লির জন্য সঙ্কেত হিসেবে সেখানে নামাজ শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি ও ১ মিনিট আগে ১টি শটগানের গুলি ফোটানো হয়।
দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিদের আসার সুবিধায় ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একটি ট্রেন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অন্যটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।

নামাজ শেষে ট্রেন দুটি পুনরায় দুপুর ১২টায় গন্তব্যে ছেড়ে যাবে।
সরকারি কর্মসূচি
ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সেফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো ঈদের দিন ধরে কয়েকদিন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। ঈদ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যাও ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।


ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকিটে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ)-এর আওতাধীন সব শিশুপার্কে ঢুকতে পারবে। তারা বিনা টিকিটে দেখতে পারেবে ঢাকা জাদুঘরও।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে মহানগরীতে প্রীতি ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনি অনুষ্ঠান হবে।
জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেশব্যাপী ঈদের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।