আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার বাড়ি ফেরা

যা পাবেন সবই ঋণাত্মক , এটা শুধু ঝটকা দেবে আকাশের মনটা খুব খুশি খুশি লাগছে। মা আজ রাজশাহী থেকে বাড়ি আসতেছে। আকাশের মা মিসেস নীলিমা হাসান, রাজশাহীতে এক স্কুলের হেডমিস্ট্রেস। আজ অনেক দিন পর বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন। বাড়িতে তার ১২ বছরের ছেলে বসে আছে।

বাড়ি তার ঢাকাতে। মেঘ চৌধুরী, আকাশের বাবা, ঢাকার এক নামকরা কলেজের প্রফেসর। আকাশ আজ স্কুলে যাবে না । মা আজ একমাস পর আসছে। সে গোছানো শুরু করেছে তার গল্পের ভাণ্ডার।

মা যাবার পরদিন বাবার সে কি কষ্ট, লুকিয়ে লুকিয়ে বাবা চোখ মুছছিল কিন্তু আকাশ চুপি চুপি দেখে ফেলেছিল। মাকে বলতে হবে, মানে জিজ্ঞাসা করতে হবে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু দেখা বা করা ভালো কিনা? মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক না। তার দুইদিন পর যখন আকাশ পড়তে যাচ্ছিলো রাস্তায় দুইটা মেয়ে ওকে দেখে সামনে এগিয়ে এসে বলেছিল, ভালো আছো। মেয়েদুটুকে আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি তোমরা কেমন আছো। যাই হোক আরেক দিন জানা যাবে তবে মাকে বলতে হবে মেয়ে দুইটা খুব সুন্দর।

নাহ , এইটা বলা মনে হয় ঠিক হবে না। তবে এটা বলতেই হবে, মটকা একটা ছেলে নাম তুষার বেতা সারাদিন আমার পিছে লেগে থাকে, সেদিন অর পিছনে বসেছিলাম, দাগিয়ে দাগিয়ে অর শার্টটা নষ্ট করেছি। আমার সাথে লাগতে আসার মজা টের পাবে। আমরা তো আরেকদিন বুড়িগঙ্গা ঘুরতে গিয়েছিলাম। স্কুল থেকে নিয়ে গিয়েছিল, পিকনিকের মত।

খুব মজা করেছি। নৌকায় আমি গান গেয়েছিলাম,নাও ছাইড়া দে পাল উড়াইয়া দে, উহ সবার কি টান, সবাই মিলে গলা ছেড়ে গান গাইবার মজাই আলাদা। হটাত আকাশের বাবা এসে মুখ গোমরা করে এসে আকাশকে ডাক দিল। ঃআকাশ ঃ হ্যাঁ, বাবা ঃতোমাকে একটু বাইরে যেতে হবে রেডি হয়ে নাও। ঃ কোথায় যাবে বাবা? ঃ তোমার জানতে হবে না।

আকাশ ধমক খেয়ে রেডি হয়ে নিলো। একটা হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামল। বাবা এখানে কে আছে? আস, টেনে একটা বেডের সামনে নিলেন, সেখানে আকাশ দেখল সেখানে একজন মহিলা শুয়ে আছেন। তার মুখটা বুঝা যাচ্ছে, আর হাত পা সব পুড়ে গেছে আগুনে, আর সেই মহিলাটা আকাশের মা। আকাশ কি করবে কিছুই বুঝতে পারতেছে না,না পারতেছে কাঁদতে না পারতেছে কিছু বলতে, মা তার দিকে তাকিয়ে বলল, “বাবু আমায় মা দিবসের শুভেচ্ছা জানাবি না।

” আমি তোর জন্য এত দূর থেকে আসলাম। আজ ২০৫০ সাল। মা আমার পাশে নেই, সেই দুর্ঘটনার পর মা আর বছর পাঁচেক বেঁচেছিল। বাবা তাকে আর আগের মত গ্রহন করতে পারে নি। আমিও কখন যে মার থেকে দূরে সরে গেছি বুঝতে পারিনি।

আমার মা আমাকে এক নজর দেখার জন্য ছুতে চলে এসেছিলেন, আর আজ মা হতে চায় না কেউ। বলে আমি কেন একটা প্রান আনবো? আমার ক্যারিয়ার আছে, একটা লাইফ আছে। সে দিনের সেই দিনটাতে ছিল হরতাল, আমার মা এটা উপেক্ষা করে আমার মুখে সরাসরি শোনার জন্য চলে আসছেন, আর আসতে যেয়ে হরতালকারীদের মধ্যে পড়ে এই অবস্থা। সেদিন অই ট্রেন পুরুটাতেই আগুন দেয়া হয়, আজ বাংলাদেশ উন্নত দেশ, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার মাকে আমার পুরানো দিনগুলী। কেও কি পারবেন ফিরিয়ে দিতে আমার মাকে যার সাথে আমি আমার সেই না বলা কথাগুলু প্রান খুলে বলতে পারব।

দেশ ঠিক হল কিন্তু আমার অঙ্গ খানি নিয়ে গেল!!! একটি অতৃপ্ত আত্মা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।