আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসএমএস এবং একটা “সম্ভবত” প্রেমের অপমৃত্যু (১ম পর্ব)

একটি বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়ীক ও ঐক্যবদ্ধ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি

"শালার বাস আসে না কেন? আজকে আবার পরীক্ষা, ধুড়। " "কি পরীক্ষা? আর তুমিই বা কবে থেকে পরীক্ষা নিয়ে সিরিয়াস হলে!!!" পাশে তাকায় ত্রিলোক, শায়লা আপু। "না মানে এই আরকি আপু, গত সেমিস্টারে গ্রেড ব্যাপক খারাপ আসছে, বুঝেনি তো। কেমন আছেন আপনি? অনেকদিন দেখা নাই, আংকেল আন্টি কেমন আছেন?" "আংকেল আন্টি আছেন ভালোই, আমিও ভালোই আছি। বোনের খবর রাখার কি আর সময় আছে আপনার।

" "কি যে বলেন!!!! " "হইছে, আর আদিখ্যতা করা লাগবে না। ওই যে বাস আসছে মনে হয়। " আসলেই বাস এসেছে। গেটে পরিচিত ভাই-বেরাদার, এবং যথারীতি সবাই উত্তেজিত। বাসে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করে যা জানা গেলে তা হল মিরপুরে কোন এক প্রাইভেট কারের সাথে লাগছে।

ড্রাইভাররে নাইমা ব্যাপক একটা ধোলাই দেওয়া হইছে। ড্রাইভারের অপরাধ সে নাকি গালি দিসে !!! “বোকা ড্রাইভার” ত্রিলোক ভাবে মনে মনে “আর নয় তো এই রোডে নতুন চালায়”। গেটে কিছু নতুন পাবলিক দেখা যাচ্ছে। ফার্স্ট ইয়ার মনে হচ্ছে। এরা একটু বেশিই উত্তেজিত এবং কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে গাড়ি ভাংতে না পেড়ে কিছুটা হতাশও।

"কি অবস্থা ত্রিলোক, অনেকদিন দেখি না তোমারে, কি ভার্সিটি কি ছাইড়া দিলা নাকি!!!" ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় ত্রিলোক, সফিক ভাই ডিপার্টমেন্টের ফোর্থ ইয়ারের বড় ভাই। “না ভাই” হেসে জবাব দেয় সে “একটু ব্যাস্ত ছিলাম। ” "হুমম, ফেসবুকেও তোমারে দেখি না, ঘটনা কি? কোনো সমস্যা?" "না ভাই, তেমন কিছু না, ফেসবুকে বসি নাই কারণ নেট নাই, টাকা পয়সারও টানাটানি, বুঝেনি তো। তার উপর আবার পরীক্ষা। মাইক্রো ম্যাডাম তো জান ছেড়াবেরা কইরা ফেলল।

" "তোমাদের মাইক্রো যেন কে নেয়?" "নাজ ম্যাডাম। " "ও, উনি!!! উনি তো ব্যাপক পেরা দেয়। আমাদের ক্লাস নিছিল কয়দিন, একটা পরীক্ষাও নিছিল, সবাই শূন্য পাইছে সেই পরীক্ষায়। পরে কি যেন হইছিল উনি আর ক্লাস নেয় নাই। " “ওই মামা রঙ সাইড দিয়া যাও” গেট থেকে কেউ চিৎকার করল।

সম্ভবত সাইক। “চৈতালী” বাস যখন এসে পৌছল কলা ভবনের গেটে তখনও পরীক্ষার এক ঘন্টা বাকী। যদিও মিডটার্ম, কিছুই পড়া হয় নাই ওর। “যা থাকে কপালে আগে শ্যাডোতে যাই, একটা সিগারেট টানি, মাথা ঠান্ডা করি। তারপর পড়া যাবে” ভাবতে ভাবতে শ্যাডোতে যায় ত্রিলোক।

সিগারেট ধরিয়ে টানতে না টানতেই এসএমএস । কে ভাবতে ভাবতে মোবাইল বের করে দেখে অপরিচিত নম্বর, লেখা “আই লাভ ইউ” বাহ!!! সকাল সকাল কার এত এনার্জি যে ফাইজলামি শুরু করল। মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল ওর, রিপ্লাই করল “মি টু………” এর মধ্য বাকী গ্যাং মেম্বাররাও চলে এসেছে শ্যাডোতে সবার সিগারেট খাওয়া হলে সেমিনারে গিয়ে কিছুক্ষন দেখল তারপর পরীক্ষা দিল। কি দিল সে নিজেও জানে না, তবে পরীক্ষা শেষ হইছে এইটাই অনেক আনন্দের। তার উপর আবার কোরবানির ছুটি, মজাই মজা!!! হল থেকে বের হয়ে আবার ক্যাম্পাস শ্যাডো, যেতে যেতে ঐ নম্বরে কল দিল, একবার রিং হওয়ার পরে কেটে দিল ওপাশ থেকে।

একটু পরে আবার এসএমএস, লেখা “আমি তোমাকে কল দিতে চাই না, কারণ আমি তোমার পত্রমিতালী হতে চাই। সবাইতো কথা বলে, দেখা করে প্রেম করে। আমরা তাদের থেকে আলাদাভাবে প্রেম করব। তাই প্লিজ আমাকে কল দিবা না আর কখনো কল করতে অনুরোধও করবা না” মনে মনে হাসল ত্রিলোক। লিখল “ আচ্ছা জানেমান, তুমি যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে” আর নম্বরটা বেকুব নামে সেভ করে রাখল।

পরদিন সকাল ১১টায় এসএমএস, “জানেমান শুভ সকাল, নাস্তা করছ?” ক্লাস না থাকায় ঘুম থেকে দেড়ি করেই উঠেছে সে, এই মেয়ে (বা ছেলে) যে তার চাইতেও অলস এটা ভেবে কিছুটা হতাশই হল কিন্তু কোনো রিপ্লাই করল না। একটু পরে বের হল বাসা থেকে, মাঠে গেল সিগারেট টানল। পোলাপানের সাথে আড্ডা দিল। প্লান হল আজকে রাতে আহসানুল্লাহতে থাকবে। সেই মত রাতে ত্রিলোক আর ত্রিদিব বের হল।

ও এর মাঝে আরো দু’টো এসএমএস আসছে, দুপুরে এসেছে “জানেমান লাঞ্চ করছ” আর রাতে “জানেমান কি করছ?” স্বাভাবিকভাবেই এইসব বিরক্তিকর এসএমএস এ ত্রিলোক একটু বিরক্ত, ওর মন মেজাজ খারাপ। ফ্রামগেট বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিগারেট কিনছে একটু পরে রিক্সায় উঠবে এই সময়ে আবার এসএমএস। বের করে দেখে আই’টপ, দশ টাকা। আমি আবার কখন টাকা ভরলাম!!! আমার তো টাকা আছেই। সাথে সাথেই আরেকটা এসএমএস …………… “টাকা পাঠাইছি, পাইছ? এইবার লেখ কি করছ, ব্যাল্যান্স না থাকলে বলবা, টাকা পাঠিয়ে দেব” এইবার ঘাড়ের রগ দপদপ করে ফুটতে লাগল ত্রিলোকের, সাথে সাথেই কল দিল, ধরে না, আবার কল দিল ধরে না, আবারও কল দিল……………………ধরে না।

মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করতেছিল তখন ওর। একটা এসএমএস আসল “তোমাকে না বলছি এসএমএস করতে, কল দিতে না, প্লিজ” নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করল, অনেকখন পরে মাথা যখন ঠান্ডা হল তখন রিপ্লাই করল, “কে তুমি? তোমাকে কি আমি চিনি? আমাদের কি দেখা হইছে কখনো? আমার নম্বর কোথায় পাইছ?” এর মধ্যে ওরা আহসানুল্লাহতে পৌছে গেল। রাতের আহসানুল্লাহ অসাধারণ পরিবেশ, তার সাথে আবার অনেক পরিচিত মুখ। স্কুল আর কলেজের অনেক বন্ধু পড়ে ত্রিলোকের এখানে। সবার সাথে দেখা করে গল্প করা আর কার্ড খেলতে খেলতেই সময় পার হতে লাগল।

অনেক নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হল। আহসানুল্লাহ’র তিন তলার টেরেসে (আর্কি’র চিপায়) খুব সুন্দর একটা জায়গা আছে। খুব সুন্দর বাতাস আর উপরে বিশাল আকাশ। গানের আসর জমল। বাধন গান ধরল “সুন্দরীতমা আমার তুমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে ....................বলতে পারো এই আকাশ আমার” জেমসের গান এত সুন্দর ওঠে ওর কন্ঠে।

একের পর এক গান চলল। ত্রিলোকের মনটা অবশ্য প্রথম গানটা শোনার পর থেকেই বিষন্ন হয়ে আছে। নিদ্রার কথা মনে পড়ে গেছে ওর। নিদ্রা, ওর ভালবাসা, যদিও এক-পক্ষিয়, কিন্তু তারপরও তো ভালোবাসা। শুনেছে বিয়ে হয়ে গেছে ওর।

তাতে কি তারপরও তো ওর ভালোবাসাই। কি বা যায় আসে ওর ভালোবাসা বা না বাসায়, ওর বিয়ে করায়। ও তো চিৎকার করে বলতেই পারে “হতে পারে সারা দুনিয়াটা তোমার কিন্তু তুমি আমার, শুধু আমার। ” আবার মেসেজ টোন বেজে ওঠে, রিপ্লাই এসেছে, লেখা আছে, “আমি তোমার হৃদয়, ভালবাসা, আমি একজন মানুষ, প্লিজ রাগ করো না, শুভ রাত্রি। ” এরকম একটা মূহুর্ত নষ্ট করার অপরাধে এসএমএস দাতাকে খুন করা যায়, আর কি এসএমএসের কি জবাব!!! যাই হোক, পরদিন সকালে বাসায় আসার পথে আরো কয়েকটা এসএমএস পেল ত্রিলোক, “কি রাগ কমেছে? একবার আই লাভ ইউ লিখে এসএমএস করো না প্লিজ।

”, “ আচ্ছা আমি তোমাকে এসএমএস করলে তুমি কি বিরক্ত হও, তুমি না আমাকে ভালোবাসো? প্লিজ একটা এসএমএস করো প্লিজ”, “কি হল আমার টাকাগুলো নষ্ট করতে কি খুব ভালো লাগতেছে, তোমার কি কোনো লাভার আছে?” পরপর তিনটা মেজাজ বিগরাণো এসএমএস পাওয়ার পর, কিছু একটা লেখা দরকার তাই লিখল, “এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ, আসলে আমার মনের জমি খালি নাই, তাই অফ গেলে খুশি হই। ” সাথে সাথে রিপ্লাই “আমার সমস্যা নাই, তুমি ওর সাথে লাইভ আর আমার সাথে এসএমএস এ প্রেম করবা…………” এইটা তো ব্যাপক “পেইন” ভাবে ত্রিলোক, পুরাই ত্যাক্ত-বিরক্ত কইরা ছাড়তেছে। চিন্তা করে আর কোনো এসএমএস এর রিপ্লাই করবে না ও। তারপর কি ভেবে লেখে “আম্মু অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু খাইতে, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে, এমনকি এসএমএসও করতে নিষেধ করছে” রিপ্লাই আসে, “তুমি তোমার আম্মুকেও বলছ???!!! আর আমি তো তোমার অচেনা না, আমি তো তোমার জনম জনমের সাথী, আমি তোমার সব” রাস্তায় ছিল ত্রিলোক, আরেকটু হলেই গাড়ির নিচে পড়ত এই এসএমএস পড়ে। এত্ত ক্ষেত একটা মানুষ হইতে পারে!!! এস্কেপ রুট খুজতে থাকে সে, লেখে, “আমার সব কিছু তো একজনের জন্যে জানেমান, সেখানে তো ২ জনের জায়গা হবে না।

তবে, বিয়ের পর ২/৩ জন ব্যাপার না, তখন লাইন দিও চান্স পাইলেও পাইতে পারো। ” এসএমএস টা করে মনে মনে সান্তনা দেয় যে এত অপমান করার পর নিশ্চয়ই থামবে, এসএমএস বন্ধ হবে। সত্যি এরপর সারাদিনে আর কোনো এসএমএস আসেনি। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচে ত্রিলোক। রাত ১২টা বাজে তখন, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে ত্রিলোক।

চমৎকার জোৎস্না বাইরে। ঢাকা শহরের বাড়ি ঘর মানেই এক চিলতে আকাশ। কোনো কোনো বাসায় তো সেই সৌভাগ্যটাও নেই। ত্রিলোকের সৌভাগ্য ওদের বারান্দা থেকে আকাশ এবং সেই আকাশে প্রায়ই জোৎস্না দেখা যায়। জোৎস্না ওর সবসময়ই ভালো লাগে, যদিও ওর চরিত্রের সাথে রোমান্টিকতা একদমই নেই বললেই চলে তবুও চাঁদ দেখলেই ওর ভালো লাগে।

জোৎস্না দেখলে দুই ধরণের অনুভূতি হয় ওর। ওকে জোৎস্না দেখানো শিখিয়েছে নিদ্রা। প্রতি জোৎস্নাতেই ওকে ফোন করে বলত বারান্দায় গিয়ে জোৎস্না দেখতে। মজার বিষয় হচ্ছে জোৎস্না রাতে নিদ্রা ওর সাথে কথা বলত না। ওর সাথে কথা ছিল জোৎস্না দেখা হলে যে অনুভূতি হয় সেগুলো লিখে ওকে দিতে হবে।

ত্রিলোক লিখত। অবাক হয়ে দেখত যেই ওর হাতে লেখা বের হয় না, সেই ওই কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখছে। কখনও সেটা গল্প হয়েছে, কখনো বা কবিতা, কখনো হয়তো কিছুই হয়নি, কিন্তু পড়তে খারাপ লাগত না কখনোই। এখন আর জোৎস্না ভালো লাগে না ওর। নিদ্রার সাথে সকল যোগাযোগ শেষ হয়ে যাবার পর থেকেই ও জোৎস্না দেখা বাদ দিয়েছে।

বাদ দিয়েছে লেখালেখিও। তাড়াতাড়ি সিগারেটটা শেষ করে ভেতরে যায়। “Inception” দেখতে হবে। পাক্কা তিন মাস এই মুভিটার জন্যে অপেক্ষা করেছে ভালো প্রিন্ট না পাওয়ায় দেখা হয়নি। আজকে দেখতে হবে।

ছবিটা নাকি ব্যাপক হইছে। মোবাইল সাইলেন্ট করে দেখতে বসল ও। যখন দেখা শেষ হল কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল ও। মোবাইল চেক করতে গিয়ে দেখল একটা এসএমএস, “বাইরে কি চমৎকার জোৎস্না দেখছ? জোৎস্না তোমার কেমন লাগে??? এখন কিন্তু কেমন লাগে সেটা বলবা না, এখন শুধু চিন্তা করবা, তারপর যখন চিন্তা করা শেষ হবে তারপর লিখবা, আমি কালকে সকালে উঠে দেখব। আর একটা কথা তোমার প্রেমিকার নাম কি? সে কি আমাদের ব্যাপারে জানে?”(চলবে) বিঃদ্রঃ এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র, ঘটনা কাল্পনিক।

যদি কারও সাথে মিলে যায় তবে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র। এর জন্যে আমি “লেখক” দায়ী নই একদম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.