আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শী তে র প দা ব লী : সাহিত্যে শীতকাল (প্রথম কিস্তি)

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
"বৃদ্ধা পৌষ-শীত-জর্জর, শিরে কুহেলির জটা, / মিটিমিট করি মেলিয়া আকাশে ঝাপসা দৃষ্টি কটা; / প্রভাতে প্রদোষে লতা-পাতা-ঘাসে শিশিরের জাল বোনে- / কভু উদাসীন, রোদে পিঠ দিয়া বসি'রয় আনমনে৷" –যতীন্দ্রমোহন বাগচী শীতের আগমনী বার্তা আমরা পেয়ে যাই পৌষ আসার দুই মাস আগেই ৷ হেমন্তের আগমনের সাথে সাথে শিশির পড়া শুরু হয় ৷ হালকা হালকা হিমেল হাওয়া আসতে থাকে ৷ শিশিরে সিক্ত হয়ে আসে প্রকৃতি ৷ সারারাত কুয়াশায় ডুবে থাকে সে ৷ প্রকৃতির কী ঠান্ডা লাগে না? না কি প্রকৃতির কোনও হিমশীতলতার ভীতি নেই ৷ আসলে প্রকৃতিই তো পৌষকে ডেকে এনেছে শীতের উত্তাপ গায়ে মেখে ছড়িয়ে দিতে সবখানে ৷ এতে কেন সে নিজেকে গুটিয়ে নেবে ৷ সেই তো জড়িয়ে নিয়েছে হিম অনুরাগ ৷ গাছগুলো ঝরাপাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৷ ধানকাটা আর ফসলের উত্সবে চারিদিকে মুখরিত থাকে ৷ শীতের রসে যোগ হয় বাড়তি আয়োজন ৷ পিঠার ধুম ৷তবুও শীতের আগমনে আমাদের চারপাশে কেমন যেন গুটিয়ে পড়া পরিবেশ দেখতে পাই ৷ শীত মানুষকে কাবু করে ফেলে ৷ শীত আসলে সব কিছু জবুথবু হয়ে পড়ে যেন ৷ শীত সব কিছুকে সংকুচিত করে আনে ৷ কাজে কর্মে একটু আড়ষ্টভাব লক্ষ্য করা যায় ৷ তবে শীতের সকালের সোনা রোদ আর পিঠার কথা কেউ ভোলে না ৷জীবনানন্দ দাশের কবিতায় - "পৌষ ফিরে আসে নরম জামের মতো চুল নিয়ে, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুলে ৷ / পউষের শেষ রাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে / ফিরে এলো; রঙ তার কোমলতা জানে ওই টসটসে ভিজে জামরুল, / নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল; / পউষের শেষ রাতে নিমপেঁচাটির সাথে আসে সে যে ভেসে / কবেকার মৃত কাক পৃথিবীর পথে আজ নাই সে তো আর; / তবুও সে ম্লান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব সোহাগে, / এলিন পাখনা তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাখায় ; / তখন এ পৃথিবীতে কোনো পাখি জেগে এসে বসেনি শাখায় ৷" আর গ্রামে শীতে রাতভর টপটপ পড়ে রসের ফোঁটা ৷ শীতের ফল ও সবজি ওঠে বাজারে ৷ আমাদের হাট ভেঙে গড়ে উঠেছে বাজার ৷ সেখানে খেজুরের রস পাওয়া যায় ৷ শীতের পাখিও ৷ পৌষ মাসে উত্তর দিক থেকে হিমেল বাতাস বইতে থাকে ৷ গ্রামের লোকজন পুকুর পাড়ে গোসল করতে গিয়ে অনেকক্ষণ রোদে বসে শরীর গরম করে, তারপর পানিতে নামে ৷ বিকেল বেলা এই হিম বাতাস জোরে বইতে থাকে৷ "উত্তর বায় এলোমেলো / পউষ এল ! পউষ এল ! / হিমেল হাওয়া শিরশিরিয়ে / এল অচিন সড়ক দিয়ে / মাঠ, ঘাট, বন ঝিরিয়ে গেল / পউষ এল ! পউষ এল ! " শীত থেকে বাঁচতে কাজী নজরুল ইসলাম নিজেকে হাঁড়িতে চড়িয়ে চুলার উপর রাখার কথা বলেছিলেন ৷ তার রসবোধ ছিল প্রবল ৷ যে কোনও কিছুকেই সহজে তিনি ব্যাঙ্গাত্মক করে তুলতে পারতেন ৷ শীতের প্রচন্ডতা সম্পর্কে তার প্রমাণও আমরা দেখতে পাই ৷ তিনি বলছেন, "হাঁড়িতে চড়িয়ে আমায় / উনুনে রাখ গো ত্বরায় ৷" কবির এই ইচ্ছা বাস্তবে বাস্তবায়নের চেয়ে বড় সত্য হলো শীত যখন জেকে বসে তখন প্রায় সকলেরই মনে হয় মানসিকতা এমনটাই হয় ৷ চোখ বাদে সমস্ত শরীর ঢেকেও যেন শীতকে মোকাবিলা করা যায় না ৷ যদিও এরকম শীত শহর এলাকায় বলা যায় বেশ দুর্লভ ৷ শীতের দিনটা আসলেই মজার ৷ শীতের সকালে পিঠে ও খেঁজুরের রস খেতে কতই না মজা লাগে ! তবে শীত সবার জন্য মজা বয়ে আনে না ৷ যারা শীতের কাপড় পায় না তাদের জন্য এ ঋতু খুবই কষ্টের ৷ মানুষ ছাড়াও বনের পশুপাখিও শীতকে তাই ভয় করে ৷ কথায় আছে মোষের গায়ে শীত লাগায় পৌষ ৷ শীতকালে শহরাঞ্চলে লেপ-কাঁথা একটু দেরিতে বের হলেও গ্রামাঞ্চলে শীতের কাঁপন লেগে যায় এসময় মানুষের শরীরে ৷ সেই কাঁপন থেকে বাঁচতে যে যার সামর্থ্যের মধ্যে চেষ্টা করে থাকে ৷ পথে ঘাটে যেখানে পারা যায় সেখানেই কিছু মানুষ, ছেলেপুলে একত্রে জড়ো হয়ে আগুন জ্বালায় শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে ৷ আগুন দিয়ে শীতের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার প্রতিযোগিতা চলে ৷ শীত কেমন তা সবাই জানি ৷ কাজী নজরুল ইসলামও জানেন ৷ তবুও তার জানা একটু অন্যরকম ৷ সেটি তার জানাকে একটি কবিতায় একটু ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন৷ শীতের আগমন ও তার তীব্রতাকে ব্যাঙ্গাত্মক উপস্থাপনায় খুব সুন্দরভাবে তার কবিতায় দেখতে পাই- "একি হাড়-ভাঙা শীত এলো মামা / যেন সারা গায়ে ঘ'ষে দিচ্ছে ঝামা / হইয়া হাড়-গোড় ভাঙা দ'/ ক্যাঙারুর বাচ্চা যেন গো, / সেঁদিয়ে লেপের পেটে / কাঁপিয়া মরি, ভয়ে থ ! / গিন্নি ছু'টে এসে চাপা দেয় যে ধামা" কিংবা "বাঘা শীত, কাঁপি থরথর, / যেনে গা মালোয়ারীর জ্বর, / বেড়ালে আঁচড়ায় যেন / শাণিয়ে দন্ত নখর, / মা গো দাঁড়াতে নারি, চলি দিয়ে হামা ৷" শীতের এই রূপ চিরন্তন ৷ শীত পড়লে ঠিকই বোঝা যায় শীত ঋতু এসে গেছে, যেটা কিছু কিছু ঋতুর ক্ষেত্রে তেমন টের পাওয়া যায় না ৷ শীত নিয়ে মানুষের চিন্তাভাবনার শেষ নেই ৷ আহসান হাবীব-এর 'শীতের সকাল' কবিতা থেকে কবির শীত সম্পর্কে ভাবনা জানা যায় ৷ "রাত্রিশেষ ! / কুয়াশায় ক্লান্তমুখ শীতের সকাল- / পাতার ঝরোকা খুলে ডানা ঝাড়ে ক্লান্ত হরিয়াল ৷ / ... / শিশির স্নাত ঘাসে মুখ রেখে শেষের কান্নায় / দু'চোখ ঝরেছে কার, / পরিচিত পাখিদের পায় / চিহ্ন তার মোছেনি এখনো, / আছে এখনো উজ্জ্বল - / কান্নার মাধুরীটুকু ঘাসে ঘাসে করে টলোমল ৷"
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।