আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম...’

শুক্রাবাদ, ঢাকা

মাদকের কারনে মায়ের চোখের সামনে সন্তানের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে শুনেছি। মাদক গ্রহন না করতে পেরে জানালার কাচ ভেঙ্গে নিজের বুকে বিদ্ধ করে আত্বহত্যা করার কথা শুনেছি স্কুল পড়–য়া কিশোরের। মাদকের টাকা জোগারের জন্য নিজের বাসায় নিচতলায় টিনশেডে ভাড়া দেওয়া রিকশা চালকের কাছে দেহ বিক্রি করতে শুনেছি বাসার মালিকের মেয়ের। মাদকাসক্ত সন্তানের অত্যাচারে মা তার সন্তানকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করাতেও শুনেছি । মাদকের টাকার জন্য আজ শুনলাম নিজের হাতে কুপিয়ে এবং খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করেছে এক সন্তান তার মাকে।

গতকাল সকাল ১০ টার দিকে ঘটেছে মর্মস্পর্শী এই ঘটনা। দুর্ভাগা নূরজাহান বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তারই ছেলে তানভীর হাসান শোভন। কদমতলী থানার রায়েরবাগের মেরাজনগরের ১০৪৪ নম্বর বাড়িতে মা,বাবা, মেয়ে এবং শোভন বাড়িতে থাকতেন। হরতালের কারণে বাবা (মাহমুদুর রহমান) সকাল ১০ টার দিকে সায়েদাবাদের দোকানের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। এর মিনিট চারেক পরেই শোভন মায়ের কাছে গিয়ে টাকা চান।

প্রায়ই বাইরে আড্ডাবাজির খরচের জন্য টাকা যোগাড় করতে মাকে চাপ দিত শোভন। মা নানা রকম বকাঝকা করলেও নিজের জমানো টাকা দিতেন। যথারীতি মায়ের বকাবকি চলতে থাকে, পাশাপাশি হুমকি ধামকি চালাতে থাকে। কিন্তু ৪/৫ মিনিট যেতে না যেতেই মায়ের তীব্র আর্তনাদ শুনে দরজা খুলতেই দেখি মার গলা- বুক-পিঠ ও পেটে একের পর এক কোপানো হচ্ছে। গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়ায় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে দেখে আমি নিজেও দিশেহারা হয়ে পড়ি....আমি এভাবে রক্ত দেখিনি, এভাবে ছুরি মারতেও দেখিনি কাউকে।

ভাইয়াকে থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ভয়ে আমার হাত-পা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছিল। দিশেহারা অবস্থায় নিজের রুমে গিয়ে মোবাইল ফোনে বাবাকে কল দেই... বাবা, শোভন ভাইয়া মাকে মেরে ফেলতেছে। নিজেও উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠি, খুলে দেই বাড়ির সদর দরজা। আপন বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কলেজছাত্রী মিতু আক্তার (১৮)।

‘এরপর আর কিচ্ছু আমি জানি না, আর কিচ্ছু আমি বলতে পারবো না। শুধু জানি আমার মা শেষ। আমাদের সব কিছু শেষ। ’ কাঁদতে থাকেন মিতু। চোখের সামনে মাকে খুন হতে দেখে খেই হারিয়ে ফেলা মিতু শুধু বলতে পারলেন, ‘আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম...’ জানা যায়, শোভন বিমানবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর থেকেই মানসিক সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে।

বেকার থাকা নিয়ে প্রায়ই মায়ের সঙ্গে শোভনের বাদানুবাদ হতো। স্থানীয়রা জানান, শোভন নিয়মিতই এলাকার বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মাদক সেবনের পাশাপাশি আড্ডা দিত। নেশার খরচ যোগাতে মায়ের ওপর প্রায়ই চাপ সৃষ্টি করতো। ঝগড়াঝাটিসহ সংসারের জিনিসপত্র ভাংচুরসহ নানা অশান্তি করতো শোভন। এমন শোভন দের গল্প আর আমরা শুনতে চায় না।

আর কোন বোন কে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে শাক্ষি দিতে যেন না হয়। এই কপাল যেন কারো না জোটে। আমাদের এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সচেতন হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।

আর কোন ভাই বোন বা বাবা মাকে যেন মাদকের অভিসাপের জন্য অকালে ঝরে যেতে না হয়। আসুন মাদক প্রতিরোধে আমরা এগিয়ে আসি। তথ্য সূত্র : বাংলানিউজ২৪.কম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।