আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাল কয়েন (গল্প)



দাবানলের মত হঠাৎ একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ল দেশজুড়ে। পিতলের মত দেখতে এক টাকার কয়েন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও একশ টাকায়, কোথাও দেড়শ। আবার কোথাও কোথাও নাকি একটি কয়েনের দাম পাঁচশত টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এর কারণটি এখনো কেউ খোলাসা করে বলতে পারছে না।

তবে যে ক’টি কারণ এ পর্যন্ত বাজারে এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, স্বর্ণের খাদ দেয়ায় নাকি এই কয়েন ব্যবহার করা হবে। রেল স্টেশনে রাত কাটানো অনেকের মধ্যে বহু পুরনো একজন বাসিন্দা, বুড়ো ভিক্ষুক ওমর আলী। সে গুনে দেখল তার কাছে প্রায় তিনশ’র মত কয়েন রয়েছে। অর্থাৎ একশ টাকা করে বিক্রি করতে পারলেও, তিনশ টাকার বদলে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। মাগো কত্ত টাকা! তার সঞ্চিত টাকার সঠিক পরিমাণ সে নিজেও জানে না।

তাছাড়া টাকা-পয়সা ছাড়াও তার একটি স্থায়ী সম্পত্তি রয়েছে। সম্প্রতি সে বেশ দাম দিয়ে এক চিলতে জমি কিনেছে; আজিমপুর গোরস্থানে। মানব জনমের প্রথম অধ্যায়তো রাস্তাঘাটে মানুষের লাথি খেয়ে কেটেছে, তাই শেষ অধ্যায়টি ভালভাবে কাটাতে চায় সে। এক টাকার কয়েন সংগ্রহে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন যখন পাগল প্রায়, তখন এক যুবক লক্ষ্য করল, স্টেশনের এক কোণে মোটা পিলারের নীচে হেলান দিয়ে বসে কয়েন গুনছে এক বুড়ো। এগিয়ে যায় সে।

বুড়োর কাছে অনেক কয়েন আছে জানতে পেরে সব কিনে নিতে চায় যুবকটি। রাত তখন প্রায় এগারটা। ওই সময়ে যুবকটির সাথে অত টাকাও ছিল না। যুবক জানাল, পরদিন এসে টাকা দিয়ে পয়সাগুলো নিয়ে যাবে সে। বুড়ো দরদাম নিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করেছিল খানিক।

অবশেষে সে-ঝামেলাও মিটিয়ে নিল যুবক, প্রতি কয়েনে দেড়শ টাকা। যুবকটি হিসেব কষে জানাল, বুড়োর কাছে যে পরিমাণ পয়সা আছে তার বিনিময় মূল্য হবে প্রায় ছেচল্লিশ হাজার টাকা। সে বুড়োকে অনুরোধ করে পঁয়তাল্লিশে রাজি করিয়ে গেছে। যুবক চলে যাবার পর বুড়ো পড়ে গেল মহা দুশ্চিন্তায়। স্টেশনের আশপাশ চোর ছ্যাচড়ে ভরা।

বুড়োর সাথে এক লোকের দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা হয়েছে, তা নিশ্চয় অনেকে লক্ষ্য থাকবে। লোকটি কেন এসেছে তাও হয়তো জানা হয়ে গেছে সবার কাছে। বিশেষ করে গুজবের এই গোলমেলে সময়ে ব্যাপারটা আঁচ করতে কারো দেরী হওয়ার কথা নয়। হয়তো অনেকেই ঘাপটি মেরে বসে থাকতে মনস্থির করে ফেলেছে এতক্ষণে; কখন ওমর আলী ঘুমুবে। বুড়ো ওমর আলী সিদ্ধান্ত নিল, আজকের রাতটা না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে।

মোটে তো একটি রাত। এ রাত ভোর করতে কষ্ট হবে না তেমন। তবে নির্ঘুম থাকাটা তার জন্য বিপদজনকও বটে। বুড়োর আবার হাই প্রেসার। পরদিন আসল ঘটনা প্রকাশ পেল।

পত্র-পত্রিকায় লাল কালিতে শিরোনাম দিয়ে খবর ছাপা হলো; কয়েনের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভূঁয়া। হয়তো কোন প্রতারক চক্র মিথ্যে এ গুজবটি ছড়িয়ে থাকবে। মোবাইল ফোনের এ যুগে যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। স্টেশনের বুড়োর কাছ থেকে যে যুবকটি কয়েন কিনতে চেয়েছিল, সঙ্গত কারণে তাকে আর আসতে হল না পরদিন। তবে এলে সে দেখতে পেত, পিলারে হেলান দিয়ে, কোলে একগাদা কয়েন নিয়ে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুড়ো ওমর আলী।

তার মুখের ভিতর মাছিরা ঘোরাঘুরি করছে পরম নিশ্চিন্তে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।