আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হায় কয়েন! সোনালি রঙের কয়েন!



ঈদের পর যখন মানুষের হাতে টাকা ছিল না। শীতের সকালে শিশির বিন্দুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের কপালে জমা হচ্ছিল ঘামের আনাগোনা সেই সময়ে একটা ঝড় এল। এবং এদেশের মানুষের পকেটে খুচরা পয়সার মধ্যবিত্ত ঝননানিকে পেছনে ফেলে মোটামুটি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাপক আওয়াজে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ডলারের মূল্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ সাতগুণ। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এক টাকার এক কয়েন মানে ৭ ডলার পর্যন্ত গিয়েছিল।

এক টাকার কয়েন সমান পাঁচশ টাকা। এ এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। তার আগে লেখার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা কাটাই। প্রসঙ্গটা কিয়ার করি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখন কোরবানি পরবর্তী সময়ে গবাদিপশুর রক্ত, বর্জ্য ক্লীয়ার চলছিল।

ঈদে আমন্ত্রিত মেহমানদের যাওয়ার পর যখন ঘরবাড়ি ক্লীয়ার চলছিল ঠিক সেই সময় এক গুজবে দেশ থেকে ক্লীয়ার হয়ে যাচ্ছিল এক টাকার সোনালি কয়েন। কিন্তু কেন ক্লীয়ার হয়ে যাচ্ছিল এ কয়েন, সে বিষয়টি ক্লীয়ার হচ্ছিল না। সবাই না জেনে এক টাকার কয়েনের মূল্যসূচক দেখে তা সংগ্রহে নেমেছিল। যার যা আছে, তাই নিয়ে ছুটেছিল। কিনেছিল।

বিক্রি করেছিল। সব মিলিয়ে সবাই লাভেই ছিল। দেশের কয়েন বেচাবিক্রির সংবাদ পত্রপত্রিকায় পড়ে তাই দেখা যায়। যদিও আমি দেখেছি আরও কিছু ভালো চিত্র। আমার পরিচিত এক ছোট ভাই এক এলাকায় এক কাজে গিয়ে শিকার হয়েছিল পকেটমারের।

মানিব্যাগ হাওয়া। বাড়িফেরা যখন তার হুমকির মুখে, পকেটে মাত্র দুই টাকা নিয়ে যখন তিরিশ কি.মি রাস্তা হেঁটে আসার দুঃস্বপ্নে তার মাথা খারাপ তখন এ ঘটনা। এবং বুদ্ধিমান সে মুহূর্তেই দুই কয়েন চারশ’ টাকায় বিক্রি করে দুপুরে একটা হোটেলে ভাত মাংস খেয়ে বাসের বদলে সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরেছে। খাওয়ার পর বাসে আসাটা তখন তার কাছে ঠিক বলে মনে হয়নি। একটু গা এলিয়ে আরাম করে আসা আরকি।

যদিও এর আগে ওই পথে সে টাকার কথা চিন্তা করে চিরকাল লোকাল বাসের হ্যান্ডেলে ঝুলে ফিরত। অমার এক বন্ধু তার মাটির ব্যাংকে সংগৃহীত শ’ পাঁচেক সোনালি কয়েন বিক্রি করে তার সঙ্গে আরও কিছু টাকা যোগ করে এখন শেয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আরেক বড় ভাইয়ের কথা জানি, তিনি কয়েনের এ কেনাবেচার সময়ে বেশকিছু কয়েন নিয়ে মজুতদারি ফর্মুলায় ব্যবসা শুরুর চিন্তা করছেন। তিনি বেশকিছু কয়েন আটকে রেখেছেন এ ভাবনায় সেটার দাম আরও বাড়বে। দেখা যাক তিনি কয়েন নিয়ে ঠিক কবে এ ব্যবসায় জয়েন করেন! যে বাজারে পাঁচশ’ টাকার নোটও তার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছে।

এত এত কাহিনী যা নিয়ে আমরা আসলে কেউ জানি না এ কয়েন কই যাচ্ছে। কারা কিনছে? শোনা যায়, স্বর্ণের খাদ, রাইফেলের বাট, বুলেটের জন্য এ কয়েন ব্যবহƒত হয়। কিন্তু এ শোনা কথাও কুয়াশার প্রকৃতির মতোই অস্বচ্ছ। তবে সবচেয়ে মজার খবর। এ কয়েন ব্যবসায় অতিমাত্রিক প্রচলনে তার বিরুদ্ধে নেমেছিল নিরাপত্তাবাহিনী।

কয়েনসহ অনেকে ধরা পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। দুঃখের এ খবর পড়ে না হেসে পারিনি। তবে দুঃখের খবর এ সময় আমার কাছে একটা সিঙ্গেল কয়েনও ছিল না। তাই বিভিন্ন জায়গায় আমি যেখানে টাকা পয়সা পেতাম সেখানে জানিয়ে দিয়েছিলাম চাহিবা মাত্র আমার পাওনা টাকা এক টাকার সোনালি কয়েনে পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

থাক বাদ দেই। বাদ নেন। আচ্ছা আপনারা একটা কথা শোনেন তো, আপনাদের কারও কাছে কি কয়েন হবে? ভয় পাইয়েন না, ভালো দামই দেব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।