আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালির ধর্মচিন্তা, আধ্যাত্ত্ববাদের ঐতিহ্য এবং সাম্প্রদায়িকতার উত্থান

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র

৭৫০ থেকে ১১৭৪ সাল পর্যন্ত বাঙলায় ছিল পাল শাসনামল। বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক রাজবংশ ছিল পাল বংশ। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রায় ১০০ বছর প্রচীন বাঙলায় যে অরাজকতার যুগ ছিল তাকে বলা হয় মাৎসন্যায়। মাৎসন্যায়এর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাঙলার জনপদ গুলো প্রাচীন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গোপাল কে রাজা নির্বাচিত করে। পাল শব্দের অর্থ হলো রক্ষক।

গোপাল তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বাঙলায় শান্তি আনয়ন করেন এবং বহিঃশত্রুদের হঠিয়ে দিয়ে বাঙলার সার্বভৌমত্ত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করেন। গোপাল পুত্র দেবপাল তৎকালিন ভারতবর্ষের প্রধানতম শহর মগধ জয় করেন এবং পুরো উত্তর ভারতকে নিজের শাসনাধিনে আনেন, দেবপাল আসাম থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দেবপালের পুত্র ধর্মপাল দক্ষিন ভারতের বড় অংশ জয় করে যে বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন তার সাথে শুধুমাত্র মৌর্য এবং মুঘল সাম্রাজ্যেরই তুলনা চলে। পাল রাজাদের সময় বাঙলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ চলে, পাল রাজারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন বলে জানা যায়। বাঙলায় তখন রাষ্ট্রধর্ম জাতীয় কিছু না থাকলেও পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং ঐতিহাসিকদের মতে পাল আমলে বাঙলার সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্টি ছিল বৌদ্ধ।

পাল আমলেই আদী বাঙলা ভাষার জন্ম হয় যার নিদর্শন হলো চর্যাপদ। সেসময় গ্রাম বাঙলায় সহজিয়া বৌদ্ধ দর্শন অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। চর্যাপদ এই সহজিয়া বৌদ্ধদেরই রচনা। সহজিয়া বৌদ্ধ মত মূলত দেহতাত্ত্বিক আধ্যাত্ত্ববাদী ধর্মমত যার মূল লক্ষ্য জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলন। ১২ শতকে পাল রাজারা যখন রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরে তখন বাঙলার শিংহাসন দখল করে নেয় কর্ণাটক থেকে আগত ভিনদেশী এবং ব্রাক্ষ্ম ক্ষত্রিয় বলে পরিচয় দান কারী সেন রাজারা।

সেন রাজারা ছিলেন কট্টরপন্থী ব্রাক্ষ্মন্যবাদী হিন্দু। সেন রাজারা কঠোর ভাবে জাতিভেদ প্রথা প্রবর্তন করেন। সেন রাজারা খুব একটা ধনী ছিলেন না, অন্যদিকে বাঙলার বনিক সমাজ অর্থ বিত্তে ছিল অনেক ধনী। বনিক সমাজ রাজত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে মনে করে সেন রাজারা ধর্মের দোহাই দিয়ে সমুদ্র যাত্রা নিষিদ্ধ করেন, এর ফলে বাঙলা শুধু অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থই হয় নাই, বরং প্রাচিন কাল থেকে এ অঞ্চলের বনিক শ্রেণীর যে সমুদ্র যাত্রার যে ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্যের একরকম মৃত্যু ঘটে। সেন রাজারা ১০০ বছরেরও বেশি সময় বাঙলা শাসন করেন।

এসময় এদেশের বৌদ্ধ এবং নিন্মবর্ণের হিন্দুরা ছিল প্রবলভাবে লাঞ্চিত এবং শোষিত। সহজিয়া বৌদ্ধদের বড় অংশই এসময় বাঙলা ত্যাগ করে তিব্বত এবং চীনে হিজরত করেন। প্রাচীন বাঙলা সাহিত্যের নিদর্শন এই কারণে বাঙলার চেয়ে তিব্বত এবং চীনেই পাওয়া যায় বেশি। সেন আমলের শেষদিকেই বাঙলায় সুফিদের আগমন ঘটতে থাকে। সহজিয়া ঐতিহ্যের সাথে চিন্তা চেতনায় মিল থাকায় সুফিরা ছিলেন গনমানুষের কাছে সমাদৃত।

তবে এ অঞ্চলে ইসলামী সামরিক অভিযানের শুরুটা হয়েছিল রক্তক্ষয়ের মাধ্যমেই। বখতিয়ার খিলজি ১১৯৩ সালে বিহারে অবস্থিত এক কালের বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষাঙ্গন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে দেন। এর কিছুদিন পরই তিনি বাঙলার সেন রাজধানী নদিয়া দখল করেন। তবে বখতিয়ার খিলজি পুরো বাঙলা জয় বাদ দিয়ে তিব্বত অভিযান করতে যান এবং ব্যর্থ অভিযানের অল্পকিছুদিন পরই মৃত্যুবরণ করেন। খিলজি পরবর্তি বাঙলায় অবশ্য ধর্মীয় নিপিড়ন এবং জোর পূর্বক ধর্মান্তকরণএর ঘটনা বিরল।

মুসলিম শাসকরা দরবার রাজনীতি নিয়ে যতটা ব্যাস্ত ছিলেন, ধর্ম নিয়ে অতটা চিন্তা ভাবনা তাদের ছিলনা। তবে মুসলিম শাসকদের সহায়তায় এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে সুফি দরবেশদের কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়। ফলে ব্যাপক হারে বৌদ্ধ এবং নিন্মবর্ণের হিন্দুরা ইসলাম গ্রহণ করে। অনেক উচ্চ বর্ণের হিন্দু আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলাম গ্রহণ ব্যাক্তিগত পর্যায়ের বদলে ছিল অনেকটাই দলীয়।

মাজহাবের দিক থেকে সুফি দরবেশরা বেশিরভাগই হানাফি মতাবলম্বী হওয়ায় বাঙলার মানুষ সাধারণত নিজেদের হানাফি সুন্নি বলে মনে করে। তবে উচ্চ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং দরবারী পন্ডিত বাদে বাঙলার সাধারণ মানুষ মধ্যযুগে যে ধরণের ইসলাম ধর্ম পালন করতো পৃথিবীর আর কোথাও সে ধরণের ইসলাম খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ ধরণের ইসলামের প্রাথমিক রূপ খুঁজে পাওয়া যাবে বৌদ্ধ কবি রামাঞ্চি পন্ডিত রচিত শুন্য পূরাণে। রামাঞ্চি পন্ডিত তার শুন্য পূরানে মুসলমানদের আগমনকে অভিবাদন জানান। শুন্য পূরানের কবিতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী চরিত্র যেমন মোহাম্মদ, ফাতেমা আলী ইত্যদিকে তিনি কৃষ্ণ, রাম, সিতা ইত্যাদির সাথে গুলিয়ে ফেলেন।

এ ধারা অব্যাহত থাকে আধুনিক যুগের আগমন পর্যন্ত। মুসলিম কবিদের লেখায় যেমন হিন্দু দেব দেবীর স্মরণ পাওয়া যায় তেমনি হিন্দু লেখকের লেখায় পাওয়া যায় আল্লাহ, মোহাম্মদ, আলীর স্মরণ। পুরো মধ্যযুগ ধরেই বাঙলার গনমানুষের ধর্ম চেতনা ছিল এমন। সুফিবাদের আগমনে সহজিয়াবাদের আবার একধরণের পূনর্জন্ম ঘটে। সুফিবাদী চেতনার এহেন উত্থানে বর্ণবাদী এবং ব্রাক্ষ্মন্যবাদী হিন্দু সমাজ জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করলে হিন্দু সমাজেও সংস্কারবাদের ধাক্কা লাগে এবং আবির্ভাব ঘটে শ্রী চৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণববাদের।

সহজিয়া, সুফি এবং বৈষ্ণববাদ এসময় অগ্রসর হাত ধরাধরি করে। মুসলিম সুফি সাহিত্যিক রচিত “ইউসুফ জুলেখা”র কাহিনির সাথে কোরআনের কাহিনীর কোন মিল নাই, ইউসুফ জুলেখার যে প্রেম কাহিনী কবি বর্ণনা করে গেছেন তা মৌল ইসলামের হিসাবে রীতিমত ধর্মবিরোধী বিষয়। কিন্তু বাঙালি সুফিবাদী কবি তার ধার ধারেন নাই, বরং ইউসুফ এবং জুলেখার আদলে জীবাত্ত্বা এবং পরমাত্ত্বার প্রেমাকাঙ্খার কাহিনীর রুপক বর্ণনা করেছেন। একি ঘটনা ঘটেছে বৈষ্ণববাদে, রাধা এবং কৃষ্ণ হয়ে গেছে যথাক্রমে জীবাত্ত্বা আর পরমাত্ত্বার রুপক। বাঙালি হিন্দু সমাজে যেমন বর্ণভেদ ছিল তেমনি মুসলিম সমাজেও ছিল আশরাফ-আতরাফ ভেদ।

কিন্তু সংখ্যালঘু উচ্চ বর্ণের হিন্দু আর মুসলিম আশরাফের সাথে নিন্ম বর্ণের এবং আতরাফ গোত্রিয় মানুষের ধর্ম চেতনার ছিল বিশাল ফারাক। বাঙলার গ্রামে গঞ্জে মানূষ ফকির সন্যাসিদের আধ্যাত্বিক মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। এক হিসাবে এই ফকির সন্যাসিরাই ছিল মধ্যযুগীয় বাঙলার গণমানুষের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর বাঙলায় প্রথমে পরোক্ষ এবং পরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম হলে এই ফকির-সন্যাসীরাই প্রথম তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা এবং এদেশীয় শুরুর দিকের ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত ঐতিহাসিকরা ফকির সন্যাসিদের বিদ্রোহকে জনবিচ্ছিন্ন, অরাজনৈতিক এবং লক্ষ্যহীন বলে দাবি করলেও বাস্তবতা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন।

ফকির সন্যাসিরা লুট তরাজের বদলে একাধিক বার ব্রিটিশ কুঠি দখল করার পর জীবন দিয়ে সেই দখল বজায়ে রাখার চেষ্টা করেছে, লুটতরাজকারী ডাকাতরা যা কখনোই করবেনা। একিভাবে ফকির নেতা মজনু শাহ রানী ভবানীর কাছে যে চিঠী লেখেন তাতে তার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চেতনা অত্যন্ত প্রবলভাবে ধরা পরে। ফকির সন্যাসী বিদ্রোহ জনবিচ্ছিন্নও ছিল না। একাধিক স্থানে জনগণকে সাথে নিয়ে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কোথাও কোথাও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণই তাদের স্মরণাপন্য হয়েছে।

সম্ভ্রান্ত বংশীয় এবং উচ্চবর্ণের পক্ষ থেকে উপযুক্ত সহযোগিতা না পাওয়ায় প্রবল ব্রিটিশ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফকির সন্যাসীরা সফল হতে পারে নাই। এছাড়াও ফকির এবং সন্যাসীদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরাও ছিল অন্যতম কারণ। এ বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বাঙলার হাজার বছরের পূরণো এই আধ্যাত্ববাদী ধারা যে রূপে টিকে থাকে বা আত্মপ্রকাশ করে তা এখন পরিচিত বাউলবাদ নামে। ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক ভেদ বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়, উচ্চ-নিন্ম এবং আশরাফ-আতরাফ বিভেদ প্রবল হয়, সমাজের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত্ব হিন্দুরা ব্রিটিশ শাসকদের সহোযগিতার পথ বেছে নেয়, পরবর্তিতে মুসলমানরাও তাদের পথেই হাটে। সমাজের এহেন অবস্থায় আগমন ঘটে এক মহামানবের, তিনি মহাত্বা লালন ফকির।

বাঙলার আধ্যাত্ববাদী দর্শনের হাজার বছরের ঐতিহ্যের এক পরিপূর্ণ বিকাশ খুঁজে পাওয়া যায় লালনের দর্শনে। শুধু আধ্যাত্ববাদী দর্শনের সাধনা এবং প্রচারেই লালন আত্মনিয়োগ করেন নাই, গানে গানে সচেষ্ট হয়েছেন সামাজিক অন্যায়, অসাম্য, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে, হিন্দুত্ব কিংবা মুসলমানিত্ব না তিনি প্রচার করেছেন বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদি আধ্যাত্ববাদ। তবে সে আমলে ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত্ব সমাজ এ বাউল আন্দোলনের কোন কদর করে নাই, একে গণ্য করেছে চাষা ভুষা ও নিন্মবর্ণের মানুষের শিল্প চর্চা হিসাবে। অথচ শিল্প, দর্শন আর হারমেনিউটিক আধ্যাত্ববাদের মিশেলের যে বিরল উদাহরণ খুজে পাওয়া যায় লালনের দর্শনে তার উদাহরণ দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। একি সময়, অর্থাৎ সেই ব্রিটিশ শাসনামলেই বাঙলায় প্রবলভাবে আগমন ঘটে কট্টরপন্থী সুন্নি ইসলামের।

এর পেছনে প্রভাব রেখেছে তৎকালিন দুনিয়ার প্রভাবশালী ইসলামী সংস্কার আন্দোলন ওয়াহাবি ইসলাম। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজ়ী শরীয়তউল্লাহ (১৭৭৯-১৮৪০) বিশ বছর মক্কায় অবস্থান করেন ইসলাম বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার উদ্দেশ্যে। সেসময় মক্কা ছিল ওয়াহাবি মতবাদের কেন্দ্র। ১৮১৮ সালে শরীয়তউল্লাহ দেশে ফিরে শুরু করেন সংস্কার আন্দোলন, যা ইতিহাসে ফরায়েজি আন্দোলন বলে পরিচিত। ফরায়েজি আন্দোলনের পূর্বে বাঙলায় উৎসব এবং দিবস পালনের ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম বিভেদ করা কঠিন ছিল।

ফরায়েজি আন্দোলন মুসলমানদের উৎসব এবং দিবস পালনের ক্ষেত্রে হিন্দু বা এদেশীয় ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জোর প্রচারণা চালায়। এছাড়াও ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পীর দরবেশের বিরোধীতা। বাঙলায় তৎকালিন সময়টা ছিল ব্রিটিশ শাসনের শুরুর ভাগ, এসময় বেশিরভাগ জমিদারই ছিলেন হিন্দু এবং বাঙালি মুসলমান সমাজের সবচেয়ে শোষিত শ্রেণীতে পরিণত হওয়ায় ফরায়েজি আন্দোলন অনেক ক্ষেত্রেই জমিদার এবং নীলকরদের বিরুদ্ধে বাঙালি মুসলমানদের সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ফরায়েজি আন্দোলন ছাড়াও একি সময় সিদ্দিক হোসেন খান ও নাজির হুসাইনএর হাত ধরে শুত্রপাত ঘটে আহলে হাদিস আন্দোলনের। আহলে হাদিস পন্থীরা অনেকদিক থেকেই ওয়াহাবিবাদ দ্বারা প্রভাবিত।

উল্লেখ্য, ওয়াহাবিদেরও আহলে হাদিস নামে ডাকা হয়। ফরায়েজি আন্দোলন বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসকদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ফরায়েজি মতবাদ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষকে দারুল হারব অর্থাৎ বিধর্মীদের অধীনে শাসন বলে গন্য করে। ফরায়েজি আন্দোলন সরাসরি কোন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু না করলেও তাদের এই মতবাদ ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনার জন্য সহায়ক হতে পারে বলে ব্রিটিশ শাসক গোষ্টি ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতি রুষ্ঠ হয়ে ওঠে। ফরায়েজি আন্দোলনের দ্বিতীয় নেতা শরিয়তউল্লাহর পুত্র দুদু মিয়া একারণে একাধিক বার গ্রেফতার হন।

তবে ফরায়েজি আন্দোলনের বিরোধী শক্তিশালী ধারা গড়ে তোলেন মাওলানা কারামত আলি। কারামত আলি এবং তার সমমনারা ফরায়েজি আন্দোলনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এর পেছনে কারণ ছিল কারামত আলি গোষ্ঠির ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সমর্থন। কারামত আলি বলেন যে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে যেহেতু মুসলিমদের ধর্ম পালনে কোন সমস্যা হচ্ছে না, তাই ব্রিটিশ শাসন দারুল হারব না, বরং দারুল ইসলাম। সুতরাং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা হবে দারুল ইসলামের সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা।

শরিয়তউল্লাহ এবং কারামত আলির এই বিরোধ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত্ব সমাজে এই দুই ধারার মুসলমানের সংখ্যাই প্রবল। এক ধারা যাদেরকে বর্তমান সময়ে মৌলবাদী ইত্যাদি আখ্যা দেয়া হয়, এরা মূলত কট্টর সুন্নি ইসলামপন্থী এবং দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে এবং অপর ধারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের মুসলমানিত্বে নানান রকম রদ বদল করে নেয়, এই দ্বিতীয় শ্রেণীই মূলত আমাদের দেশে মডারেট মুসলিম বলে গণ্য। এই দুই শ্রেণীই দেশের আপামর জনসাধারণকে কখনো ধর্মের নামে আবার কখনো আধুনিকতার নামে বিভ্রান্ত করতে সদা তৎপর। অন্যদিকে বাঙলায় জনপ্রিয় সুফিবাদ তার মানবতাবাদী অবস্থান হারিয়েছে অনেক আগেই, বরং তার যায়গায় স্থান করে নিয়েছে পরিবারতান্ত্রিক ভন্ডামি।

এহেন অবস্থায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই অশিক্ষা, কুশিক্ষায় নিমজ্জিত এবং নানাপন্থী উচ্চবিত্ত্ব এবং মধ্যবিত্ত্ব শ্রেণীর রাজনৈতিক ভন্ডামির শিকার হচ্ছে। [সম্প্রতি ব্লগে এক বছর পার হইলো। আজকে প্রোফাইল পিকচারও পরিবর্তন করলাম। একটু আগে রাজসোহান ফোন দিয়া কইলো এই উপলক্ষে যাতে একটা পোস্ট দেই। সর্বশেষ পোস্টে মনির হাসান ভাইও বলছিলেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নাস্তিকদের অবস্থান নিয়া একটা পোস্ট দিতে।

এই দুইজনের কাছেই ক্ষমা চাহিয়া নতুন কোন পোস্ট দেয়ার অপারগতা প্রকাশ করলাম এবং আমার অন্য একটি লেখা যা ব্লগে প্রকাশ হয় নাই তার অংশবিশেষ এইখানে তুলিয়া দিলাম]

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.